![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বই পড়তে ভালবাসি । কবিতার বই হলে কথাই নেই । হেলাল হাফিজের অন্ধ ভক্ত ।
আজ ভারতে আমার দশম দিন ৷ দিল্লীতেই আছি ৷ গতকাল প্রায় ৫০০ কিলোমিটার যাত্রার পর আজ শরীরটাকে অতটা চাপ দিতে চাই নি ৷ প্রলয় দা আজ কলকাতা ফেরত গেলেন ৷ লোকটা এই যাত্রায় যা করেছেন তা বলে শেষ করা যাবে না ৷ আমাদের দিল্লী, কলকাতা, আগ্রা সব জায়গায় আগলে রেখেছিলেন ভদ্রলোক ৷ এক অর্থে আমাদের নিরামিষাশী বানিয়ে দিয়ে গেলেন ৷ ডিম, ডাল ছাড়া দিল্লীর ছয় দিনে কোন প্রোটিন খাই নি ৷ মানে পশুজাত প্রোটিন খাই না প্রায় সপ্তাহখানেক! আমার জন্য এটা প্রায় অলঙ্ঘনীয় রেকর্ড ৷ আশ্চর্য ওভাবে মাছ-মাংসের কথা মনেও পড়ছে না ৷ সবই সাই বাবা ভোজনালয়ের অবদান ৷ ওরকম ভেজ খাবার হতে পারে জানাই ছিল না ৷ তবে আজকের অভিজ্ঞতা ভিন্ন ৷ অন্যান্য দিনের মত নয় ৷ সকালটাই শুরু হল ভিন্নভাবে ৷ ঘুম থেকে উঠে দেখি সঙ্গী সাথীদের কেউ নেই ৷ সকাল তখন সাতটা পেরোয় নি !
প্রলয় দা গেছে 'তৎকাল' টিকেট নিতে ৷ এজেন্টকে বলা ছিল ৷ তৎকালটা হল যেটা ২৪ ঘন্টা পূর্বে কাটা হয় ৷ এটা ছাড়া রিজার্ভেশন প্রায় মাসদুয়েক আগেই শেষ যায় ৷ ট্রেনের টিকেটের যা চাহিদা এখানে ! আর মুকুল ভাই গেছে তার আগের দিনে রিচার্জ কেন হয়নি তার হিসেব নিতে ৷ সকাল সকাল উঠে এরা চলে যাবে কী করে জানব ? তাছাড়া এরা কাজের দিনেও ন'টার আগে উঠে না, আজ বিশ্রামের দিনে নাই ! অফিসের নিত্যদিনের মেইল পাঠিয়ে শাওয়ারে গেলাম ৷ রাতের ঘুমটা ভাল হয়েছে ৷ চারটায় উঠে আধা ঘণ্টার জন্য শুধু ঐদিনের অভিজ্ঞতা লিখেছিলাম ৷ আজ বিশ্রাম মানে ঘরে বসে থাকা নয় ৷ বিশ্রাম মানে নতুন দিল্লীর বাইরে না যাওয়া ! সকালে নাস্তা করলাম নতুন এক জায়গায়, পুরো পেট ভরে খেয়ে ২০ রূপি হল ! স্ট্রীট ফুড খেতে মজা, দামেও সস্তা ৷ সিদ্ধান্ত নিলাম আজ নতুন দিল্লীর অলিগলিতে খেয়ে বেড়াব ৷ বলার মত কিছু পেয়েও যেতে পারি, পেলামও তাই ৷ আজকে এসবের কথাই বলব ৷ রাস্তার পাশের খাবার আর নতুন দিল্লীর মানুষের কথা ৷
প্রথমে বলব একটা গাড়ির কথা ৷ ঢাকার মতই ভ্যানে করে বিক্রি করছে ৷ লুচির সাথে সবজি, ডাল, চাটনি, সালাদ পনের টাকা ৷ আপনার সামনেই বানাবে ৷ একটা প্লেটে দিচ্ছে, এদের প্লেটগুলো ভাগ ভাগ করা ৷ আমাদেরগুলোর মতন না ৷ দুটো লুচি খেয়ে আরো দুটো লুচি নিলাম ৷ সবজি-টবজি সব ফ্রি ৷ দাম জিজ্ঞেস করতে বলল, "বিস রূপাইয়া মালিক ৷" দিয়ে দিলাম ৷ কথা বললাম আরও কিছুটা সময় ৷ এসেছেন এও ইউপি থেকে ৷ মার্জিত আবার এ লোক ৷ আসলে মানুষের চরিত্র নিয়ে সরলীকরণ সবসময় সত্যটা বলবে না আপনাকে ৷ এর পর চা খেলাম পাঁচ রূপী দিয়ে ৷ হাঁটতে লাগলাম ৷
নতুন দিল্লীর স্টেশনের বাহির হবার গেট দিয়ে বের হয়েই যে রোড গ্যাছে ওটার নাম মেইন রোড ৷ মেইন রোডের মুখ দিয়েই ডানে একটা আর বামে একটা রোড চলে গেছে ৷ বামের রোডটার নাম কৃষ্ণা গলি ৷ কৃষ্ণা গলি একটা খনি ৷ গলির মুখেই একটা দুধ-মালাই-লাচ্ছির দোকান ৷ কত লিটার দুধ যে বিক্রি হয় তা বলা দুরূহ ঘটনা ৷ এখানকার লোকজন দুধ এত খায় ! এরা প্রাণিজ আমিষ খায় না বলে এসব খায়- পরে জানলাম ৷ যে লোকটা লাচ্ছি বানিয়ে দিচ্ছে সে কোনই কথা বলে না ৷ বললাম লাচ্ছি দিতে, দিল ৷ প্রতি গ্লাস ২৫ টাকা ৷ পাঞ্জাবি গ্লাস ৷ বিশাল বড় গ্লাস ৷ খেয়ে পেট ঢোল হয়ে গেল ৷ এরা লাচ্ছি বানানোর পর এর উপর সরের একটা পুরু স্তর দেয় ৷ আমি চা কফিতে চিনি না খেলেও লাচ্ছি, ফালুদায় চিনিতে কোন আপত্তি আমার নেই ৷ এরা অনেক চিনি দেয় লাচ্ছিতে ৷ খেতে ভালই লাগল ৷ মালাই রাগড়া/রাগঢ়া বলে আরেকটা খাবার বিক্রি করছে ৷ রাতে খেলাম ৷ এটা বেশ ভাল ৷ রেসিডেনসিয়াল মডেলে যখন আমাদের মালাই দিত তখন খুশির শেষ থাকত না, ঐ সময়ের কথা মনে পড়ে গেল ৷ কত যে ভাল ছিলাম ! হাঁটতে হাঁটতে কত রকমের মানুষ যে দেখলাম ৷কেউ কেউ দেখলাম শুধু সানগ্লাস বিক্রি করছে ৷ কেউ কাউবয় হ্যাট বিক্রি করছে ৷ দেখছি, ওদের কোন ক্লান্তি নেই ৷ রোজ সকালে আসে, রাতে যায় ৷ সবাই মোদি মোদি করছে ৷ "আচ্ছে দিনের অপেক্ষায় এরা " ৷ দেখা যাক এদের ভাগ্য পরিবর্তিত হয় নাকি ৷ হোক, হলেই ভাল ৷
দুপুরে খেলাম 'রুচি ভেজিটেরিয়ান ক্যাফে' তে ৷ নাম শুনে যা মনে হচ্ছে বিষয়টা মোটেও তা না ৷ মানে অবস্থা বারিস্তা ক্যাফের মতন না ৷ তবে খাওয়া ভাল ৷ ৫০, ৬০, ৭০ টাকার অফার আছে ৷ ভাতের লিমিট নাই ৷ অস্থির লাগল খেতে ৷ এরকম ভেজ পেলে আমি আর নন-ভেজের ওদিকে যেতাম না ৷ ওয়েটার এসেছে উড়িষ্যা থেকে ৷ ব্যবহার খুব ভাল ৷ আমাদের হিন্দুস্তানী ভেবেছিল প্রথমে ৷ পরে পরিচয় জেনে আধো বাংলা, উড়িয়া বলতে লাগল ৷ বুঝতে আরও অসুবিধে হল ৷ কিছু বুঝতে না পারলে মাথা ঝাকিয়ে হাসতে লাগলাম ৷ নাহ, এবার আসলে আপুর সাথে বসে হিন্দি সিরিয়ালের দুটো পর্ব দেখে আসতে হবে !
সন্ধ্যের দিকে ডিমের সাথে পাউরুটি দিয়ে ভেজে ওমলেট দিল ৷ এটা বোধহয় দেশেও পাওয়া যায় ৷ খাওয়া হয় নি ৷ তবে এখানে দুটো ডিম দেয়ার পরও দাম ১৫ রূপি ৷ একটু কমই ৷ রোদের তাপ বেড়েই চলছিল ৷ চামড়া পুড়ে যাচ্ছিল ৷ রোডগুলোর মোড়ে মোড়ে বার আছে ৷ দাম লাগয়ে রেখেছে বাইরে ৷ কলকাতায় চিলড বিয়ার ১৮০ রূপী, নতুন দিল্লীতে ৭৫ রূপী ৷ ব্র্যান্ড কোনটারই জানি না ৷ ভেতরে গেলে জানা যেত, কিন্তু যাওয়া হয় নি কোনটাতেই ৷ ব্র্যান্ড অন্য হলেও এত ফারাক তো হবার কথা নয় ৷ যাক সে কথা ৷ নতুন দিল্লীর অলিগলিতে অবস্থা উন্নতি খুব হয় নি ৷ রাস্তার উপরের নতুন দিল্লী আর গলির ভেতরের নতুন দিল্লীর তফাৎ অনেকই ৷ এখান থেকে দুই কিমি দূরেই রাজিব চকের অবস্থা দেখে দিন তিনেক আগে আমার মাথা ঘুরে গেছিল ৷ এদিকের মানুষ হাসে, কথার উত্তর দেয় ৷ বড় রাস্তায় সবাই কানে ইয়ারফোন নাহলে হাতে মোবাইল চাপতে থাকে ৷
আজকের দিনে উপলব্ধি; আপনি টাকা দিয়ে সব কিনতে পারবেন, এমনকি সুখও ৷ তবে টাকা দিয়ে সত্যিকারের হাসিসহ বন্ধু পাওয়া দুরূহ ! খরচ কম হলো, মানুষ দেখা হলো ৷ খাওয়া দাওয়া হলো, অন্য নতুন দিল্লী দেখা হলো ৷ হাঁটলাম প্রচুর ৷ দিন শেষে হোটেল রূমে এসে সাকিবের বোলিংয়ের হাইলাইটসও দেখা হলো ৷ সব মিলিয়ে দিনটা মন্দ নয় !
মে ১৮, ২০১৪
রাত এগারটা বেজে বায়ান্ন
হোটেল লর্ডস, পাহাড়গঞ্জ
নতুন দিল্লী ৷
©somewhere in net ltd.