![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট
অনেক সময় আমি মজা করে বলি- ভারতের সীমান্ত সম্পর্কিত যত সমস্যা আছে তা সমাধানের দায়িত্ব নিয়েছে বলিউড অভিনেতা সানি দেওয়াল। সেটা রসিকতা করে বললেও, বর্তমান পৃথিবীর কর্মকান্ড দেখলে যে কোন ব্যক্তির মনে হওয়াটা স্বাভাবিক, পৃথিবীতে যত সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হচ্ছে তার সমাধানের দায়িত্ব এক এবং একমাত্রই যুক্তরাষ্ট্রের। যদিও তাকে কেউ এই দায়িত্ব আনুষ্ঠানিক ভাবে দেয়নি। ঐযে কথায় আছে না- “গাঁও মানে না আপনে মোড়ল”
বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ দেশকে দেখলে আমার অনেক সময় অট্ট হাসি পায়। কারণ তারা হচ্ছে দন্তহীন সাপ। বিষ আছে কিন্তু তা প্রয়োগ করার জন্য দাঁত নেই। সম্পদ আছে কিন্তু বন্টন করতে হলে অনুমতি লাগে। অস্ত্র আছে ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা। আর সবচেয় বড় ব্যাপার হল বিবেক থাকলেও বিবেক প্রয়োগে স্বাধীনতা নেই।কারণ এ সমস্ত ঘুড়ির মূল সুতাটা তো পৃথিবীর সবচেয় বড় সমাজসেবক অ্যামেরিকার কাছে। মধ্যপ্রাচ্যে যে দেশগুলো এই মোড়লের কাছে নিজের মেরুদন্ড বিক্রি করে দিয়েছে, আজকে শুধুমাত্র তারাই শান্তিতে আছে। সন্ত্রাস তাদের কাছে যায় না। তাদের অবস্থা দেখে মনে হয় মধ্যপ্রাচ্যে কেউ অ্যামিরিকার অনুমতি ছাড়া নিজের বিয়ে করা স্ত্রীর হাত ধরা আর ধর্ষণ করা সমান অপরাধ। শুধু কি মধ্যপ্রাচ্য!!! নিজের স্বার্থে আঘাত আসায় সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভেঙ্গে কি অবস্থা করেছে তা আমাদের সকলের জানা আছে। ইউক্রেন রাশিয়ার সাথে এক হতে চায়, কিন্তু তাতে বাঁধা দিচ্ছে ইউএস। অবস্থা এমন আমার ভালো আমি বুঝি না, বুঝে শুধু লাল মিয়া। ঠিক আছে মেনে নিলাম লাল মিয়া নামক ইউএস’ই শুধু শান্তি প্রতিষ্ঠায় এক্সপার্ট। তাহলে একনজরে একটু দেখে নেয়া যাক আজকে আফগানিস্তানের কি অবস্থা? আজকে লিবিয়ার কি অবস্থা? তারা কি আগের থেকে ভালো আছে?তাদের ইকোনমি বর্তমানে কেমন?
এবার একটু জঙ্গি দল গুলোর দিকে নজর দেই। লস্কর-ই-তৈয়েবা, তালেবান, আইএস, তেহরিক-ই-তালেবান ইত্যাদি দলগুলো এক এক সময় এক এক নামে আসছে। আর যখনই তাদের উত্থান হচ্ছে, দেখা যাচ্ছে তারা যেকোন দেশের সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার সামর্থ রাখে। এ দলগুলো কি একদিনে হয়ে যায়!! তারা এসব অস্ত্র ক্রয় করার টাকা পায় কোথা থেকে? তাদের কাছে কারা এসব অস্ত্র বিক্রি করছে? কোন দেশের সীমানা দিয়ে তাদের কাছে চলে যাচ্ছে? এসকল প্রশ্নের সমাধান না করে আমি যদি শুধু মাত্র সেই অস্ত্র বহনকারি একজন জঙ্গিকে মেরে ফেলি, সেটা কি প্রকৃত সমাধান???
এসকল জঙ্গিদের উত্থান অত:পর তাদের দমন অভিযানের পর কোন দেশটির সবচেয় বেশি উপকার হয়? জানি উত্তরটা একটি শিশু বাচ্চাও দিতে পারবে। অর্থাৎ সেই মোড়ল দেশটি নিজস্ব স্বার্থের জন্য ইচ্ছেকৃত একটি যুদ্ধাবস্থা তৈরি করে। অবশ্য শক্তিশালিরা সবসময়ই দুর্বলদের উপর এমন রাজনৈতিক চাল দেয় যেন তারা চাপে থাকে, এটাই স্বাভাবিক। ঠিক এ লাইনটি লিখতে গিয়ে মোড়ল দেশ অ্যামেরিকার একজন বিখ্যাত ইকোনমিস্ট পল ক্রগম্যানের একটি উক্তি মনে পড়লো- “Politics determine who has the power, not who has the truth."
বর্তমানের সিরিয়া ইস্যু নিয়ে ইউএস অনেক তৎপর। আইএস দমনে জিরো টলারেন্স। একদম ইউরোপের সাথে এক হয়ে ন্যাটো বাহিনী তৈরি এবং খেয়ে না খেয়ে আক্রমন। ভালো কথা সেই আইএস দমনে যখন রাশিয়া এবং ইরান এক হয়ে আক্রমন করতে চায়, তখন তোমাদের গায়ে আগুন লাগার কারণ বুঝতে পারছি না। রাশিয়া যখন আক্রমন করলো তখন ইউএস বিবৃতি দিয়েছে- রাশিয়া আইসএস নয়, যারা বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে তাদের ওপর আক্রমন করেছে। যদি এটাই হয় তাহলে আমরা কি ধরে নিবো আপনারাও আইএস নয় বরং যারা বর্তমান প্রেসিডেন্ট এর পক্ষে তাদের ওপর আক্রমন করছেন? আসল খেলাটা কি এখানে? মোটেই না…সিরিয়া মিশনের পরই ধরা হবে ইরানকে। আর সেটা ইরানও ভালো ভাবে বুঝে গেছে। যে সোভেয়েত ইউনিয়নকে ভেঙ্গে দিতে পেরেছে অ্যামেরিকা, সেই রাশিয়াকে সব শেষে ধরবে না সেই গ্যারান্টি স্বয়ং ভ্লাদিমির পুতিনও দিবে না। তবে কেন আমরা মনে করবো অর্থনৈতিক ভাবে চীন অ্যামেরিকার ওপরে চলে যাওয়ার লক্ষন থাকা সত্ত্বেও মোড়ল ইউএস তাদের ছেড়ে দিবে!!!
ইউএস এর এ খেলা বুঝতে পেরেই আজকে পুরো অ্যামেরিকা, ইউরোপ একদিকে আর রাশিয়া, চীন এবং ইরান অন্যদিকে। তারা কোন ভাবেই তাদের মিত্র বাশার আল আসাদকে হারতে দিতে চায়না। কারন বন্দুকের পরের গুলিটিতেই তাদের নাম লিখা আছে। এ লক্ষ্যবস্তু থেকে কোন অংশে বাদ যাবে না ভারত, কারণ উপমহাদেশে রাজত্ব কায়েম করতে হলে ভারত-চীন কে বশ করা ছাড়া কোন উপায় নাই। আর সেই বাঘের থাবা থেকে বাংলাদেশ কোন ভাবে বেঁচে যাবে সেটা ভাবা হচ্ছে আমাবস্যার রাতে পূর্ণীমার চাঁদ খোঁজা। কারণ এরই মধ্যে ইতালির নাগরীক হত্যার পরপরই আইএস সে দায় স্বীকার করা/ রেড এলার্ট জারি করা, অনেকটা তারই লক্ষণ।
সব মিলিয়ে বর্তমানে ইউএস’র টার্গেট সিরিয়ায় ধর্মভিত্তিক জঙ্গি সরকার গঠন করে, নিজের স্বার্থ হাছিল করা। কারণ ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়ার কারণে সেই নব্য জঙ্গি সরকার কোন দিন অ্যামেরিকার বিপক্ষে যাবে না, আর অ্যামেরিকাকে খুশি করার জন্য নিজেদের মধ্যে হানাহানি করবে। তবে যে ফর্মূলা নিয়ে ইউএস লিবিয়া পর্যন্ত সফলতা পেয়েছে, এবার আর তা পাবে বলে আমি মনে করি না এবং বিশ্বাসও করতে চাই না। কারণ লিবিয়ার সময় ইরান এবং রাশিয়া কোন পদক্ষেপ নেয়নি। যদিও তার পিছনে গাদ্দাফির কিছু আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত এবং একগুয়ে মানসিকতা দায়ি ছিল। তবে এবার কোন ভাবেই সিরিয়াকে হারতে দিবে না রাশিয়া,চীন, ইরান এবং নেপথ্যে থেকে ভারত।
পরিশেষে শুধু একটি কথাই বলবো, যুক্তরাষ্ট্রের এই নোংরা রাজনীতি দেখে, ব্রিটেনের এক্স প্রধানমন্ত্রী উন্সটন এর একটি কথা আমি সবসময় মন থেকে অনুভব করি, তিনি বলেছিলেন- “ Politics is almost as exciting as war, and quite as dangerous. In war you can only be killed once. But in politics many times."
অসংখ্য ধন্যাবাদ আমার লিখাটি পড়ার জন্য। ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.