![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট
১৯৭১ সালের ১ মার্চ:
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের তারিখ পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ এর মধ্যেই ১৯৬৬ সালের ঘোষিত ৬দফার সব শর্ত পুরোপুরি যদি পশ্চিম পাকিস্তান মেনে না নায় তাহলে আওয়ামীলীগ একাই এগিয়ে যাবেন বলে ঘোষনা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই পরিষদের বাহিরে রাজনৈতিক নেতাদের একটা সমঝোতায় আসার জন্য আরো বেশি সময় দেয়ায় ছিলো প্রেসিডেন্টের এমন সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য। কিন্তু এরমধ্যেই ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু সারাদেশে ধর্মঘট আহ্বান করলেন...
২ মার্চ ১৯৭১:
এই দিনটি ঢাক ছিলো মিছিল,হরতাল, কারফিউর নগরী। পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ দলে দলে যোগ দিতে শুরু করলো বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হওয়া অসহযোগ আন্দোলনে। এই দিনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেলা ১১টায় উত্তোলন করা হল প্রথম বারের মত জাতীয় পতাকা আর বঙ্গবন্ধু ঘোষনা করলেন রেইসকোর্স ময়দানে আগামী ৭ই মার্চ হবে জনসভা। যা পরবর্তীতে ঐতিহসিক জনসভা হিসেবে পরিচিতি পায় বিশ্বের কাছে। এদিন বঙ্গবন্ধু সন্ধ্যায় তাঁর প্রেস কনফারেন্সে বারবার বাংলাদেশ শব্দটি উচ্চারণ করেন। আর তারপর থেকেই বাঙ্গালিরাও আস্তে আস্তে “পূর্ব পকিস্তান” শব্দটি মুছে ফেলে এ দেশটিকে বাংলাদেশ বলা শুরু করে। ................
৩ মার্চ ১৯৭১:
গত দুই দিন ধরে শুরু হওয়া অসহযোগ আন্দোলনে সারাদেশে বেশ কিছু মানুষ নিহত হয়। ফলে আজকের এইদিনটি পালন করা হয় জাতীয় শোকদিবস হিসেবে। পাঠ করা হয় স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম ইশতেহার। ছাত্রলীগের তখনকার সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ এ ইশতেহার পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও। তিনি উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন- বিশৃঙ্খল আন্দোলনে শুধু মরতেই হবে, দাবি আদায় করা যাবে না। গত কদিন ধরে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও অরাজকতায় জড়িতদের যে কোনো মূল্যে প্রতিরোধের আহবান জানিয়ে ৭ মার্চ রমনা রেসকোর্সে চূড়ান্ত কর্মসূচী ঘোষণা করবেন বলেও জানান তিনি। তার আগে ইয়াহিয়া খান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ১২ জন নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে ১০ মার্চ ঢাকায় এক আলোচনাসভার যে প্রস্তাব দেন তা প্রত্যাখান করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, শহীদদের রক্তের উপর দিয়ে কোনো আলোচনা হতে পারে না। হয় বাঙালীদের গুলি করা বন্ধ করতে হবে, নয়তো সাড়ে সাত কোটি বাঙালীকে তাদের মতো থাকতে দিতে হবে।
৪ মার্চ ১৯৭১:
গণবিক্ষোভে উত্তাল সারাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সারা দেশে চলছে লাগাতার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। এ দিন সামরিক জান্তার সান্ধ্যআইন ভঙ্গ করে রাজপথে নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে খুলনাসহ দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে সংঘর্ষ হয়। এদিন খুলনায় ৬জন এবং চট্টগ্রামে প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়ায় ১২১ জনে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে এদিন “রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্র” নাম পরিবর্তন করে দেয়া হয় “ঢাকা বেতার কেন্দ্র” এবং “পাকিস্তান টেলিভিশন”, ‘ঢাকা টেলিভিশন’ হিসেবে সম্প্রচার শুরু করে। বেতার-টেলিভিশন শিল্পীরা ঘোষণা করেন, যতদিন পর্যন্ত দেশের জনগণ ও ছাত্রসমাজ সংগ্রামে লিপ্ত থাকবেন ততদিন পর্যন্ত ‘বেতার ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তাঁরা অংশ নেবেন না।’ এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন,’ চরম ত্যাগ স্বীকার ছাড়া কোনদিন কোন জাতির মুক্তি আসেনি। তিনি উপনিবেশবাদী শোষণ ও শাসন অব্যাহত রাখার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আহবানে সাড়া দেয়ায় সকলকে অভিনন্দন জানান’ পাশাপাশিি আগামী ৫ ও ৬ মার্চ আবারো সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল পালনের আহবান জানিয়ে বলেন, ‘যেসব সরকারি ও বেসরকারি অফিসে কর্মচারীরা এখনো বেতন পাননি শুধু বেতন প্রদানের জন্য সেসব অফিস আড়াইটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত খোলা থাকবে’। পূর্বপাকিস্তানের এমন অবস্থায় নড়েচড়ে বসেন করাচীর বড় সাহেবরা। এক সাংবাদিক সম্মেলনে এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান চলমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের কাছে অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান। পিডিপি প্রধান নূরুল আমীন এক বিবৃতিতে ১০ মার্চ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে প্রেসিডেন্টের প্রতি অবিলম্বে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ঢাকায় আহবান করার দাবি জানান। আর পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ভুট্টো করাচীতে আরেক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘দেশের সংহতির জন্য তাঁর দল যতটুকু সম্ভব ৬-দফার কাছাকাছি হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। যা ছিল দুই পাকিস্তানের মানষের ধোকাবাজি কথা ছাড়া আর কিছু না। .................
*ক্ষোভে, প্রতিরোধে উত্তাল ৫ মার্চ, ১৯৭১*:
বাঙালীর চোখে শুধুই স্বাধীনতার স্বপ্ন। দেশজুড়ে মিছিল, মিটিং, বিক্ষোভ। আগুনঝরা মার্চের তারিখ এগোনের সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের গতি তীব্র হচ্ছিল। চারদিকে স্বাধিকার আন্দোলন জোরদার করার কাজ চলছে। অসহযোগের মাধ্যমে আন্দোলন এগিয়ে যায় স্বাধীনতার অবশ্যম্ভাবী ও যৌক্তিক পরিণতির দিকে। মুক্তিকামী বাঙালী পথে নেমেছে। ‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’-স্লোগানে প্রকম্পিত টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার রাজপথ। পাশাপাশি মৃত্যুর সংবাদ আসছে প্রতিদিন। এদিকে বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের ডাক এবং স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠের পর নড়েচড়ে বসে করাচির শাসক গোষ্টি। অন্যদিকে ভুট্টোর বাসভবনে ইয়াহিয়া-ভুট্টো বৈঠক করে ষড়যন্ত্র করে যে, ২০ হাজার বাঙালীর লাশ হলেই আন্দোলন থেমে যাবে- ভুট্টোর এই অভিলাষ বাস্তবায়ন করতে নেমে পড়ে পাক হানাদার বাহিনী। রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। একাত্তরের এই দিনে, ৫ মার্চ চট্টগ্রামে স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দেন ২২২ বীর বাঙালী।আগের দিনও যার সংখ্যা ছিলো ১২১ জনে। টঙ্গীতে গুলিবর্ষণে হতাহত হয় ১৮ জন। যশোরেও নিহত হন মুক্তিকামী এক বাঙালী যুবক। এমন গণহত্যার সংবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। এ দিনে ঘটে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ভেঙ্গে ৩২৫ কয়েদি মিছিল করে শহীদ মিনারে চলে আসে এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেয়। অবশ্য কারাগারের ফটক ভাঙ্গার সময় প্রহরীর গুলিতে সাত কয়েদিকে প্রাণ হারাতে হয়। জনতার ওপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে একাত্তরের এই দিনে পালিত হয় দেশব্যাপী সর্বাত্মক হরতাল। অন্যদিকে, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার ঘোষণাকে অবাঞ্ছিত ও অগণতান্ত্রিক ঘোষণা করে বেলুচিস্তান ন্যাপ। ..............................................................……........
৬ মার্চ ১৯৭১:
ঢাকায় ষষ্ঠ দিনের মতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন শেষে করে সর্বস্তরের জনতা। তাঁরই নির্দেশে বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক এবং যেসব বেসরকারি অফিসে বেতন দেয়া হয়নি সেসব অফিস বেতন প্রদানের জন্য খোলা থাকে। এদিন পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান দুপুরে এক বেতার ভাষণে ২৫ মার্চ জাতীয় পরষদের অধিবেশন আহবান করে বলেন, যাই ঘটুক না কেন য্তদিন পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমার হুকুমে রয়েছে এবং আমি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান রয়েছি ততদিন পর্যন্ত আমি পূর্ণাঙ্গ ও নিরঙ্কুশভাবে পাকিস্তানের সংহতির নিশ্চয়তা বিধান করবো’। প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণের পরেই বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাখার ওয়ার্কিং কমিটির এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণের আলোকে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ইয়াহিয়া খানের বেতার ভাষণের পরপরই ঢাকা ও নারায়নগঞ্জে বেশ কয়েকটি প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। রাওয়ালপিন্ডিতে পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ভাষণকে স্বাগত জানিয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, তাঁর দল ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনের আগেই আলোচনার মাধ্যমে শাসনতন্ত্রের মোটামুটি একটি কাঠামো স্থির করতে চায়। লাহোরে কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতা এয়ার মার্শাল নূর খান এক সাক্ষাৎকারে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ-শাসনের বৈধ অধিকার রয়েছে। ক্ষমতা হস্তান্তরের সব বাধা অবিলম্বে দূর করতে হবে। প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণে পরিস্থিতি অবনতির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর দোষারোপ করায় নূর খান দুঃখ প্রকাশ করেন। আর প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান লে. জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিযুক্ত করেন। অন্যদিকে ছাত্রলীগ ও ডাকসু নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দান থেকে সরাসরি বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাংলাদেশের সকল বেতার কেন্দ্র থেকে রিলে করার দাবি জানান। .........................................................................................................
৭ মার্চ ১৯৭১:
দীর্ঘ ৫ দিনের আন্দোলনের পর আসলো সেই ঐতিহাসিক দিন, ৭ মার্চ। আজ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষন দেবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। রেসকোর্স ময়দানে সেদিন লাখ লাখ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন, কারণ তারা সামনের দিনের দিক নির্দেশনা চায়, চায় স্বাধীনতা। বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু মঞ্চে উঠলেন। তারপর ১৯ মিনিটের এক অলিখিত ভাষণ দিলেন; ভাষণে যেন বাংলার মানুষের বুকের কথাগুলোই বঙ্গবন্ধুর মুখ থেকে উচ্চারিত হলো। পক্ষান্তরে সেই ভাষনটি’র মাধ্যমেই চূড়ান্ত ভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছিলো বাঙ্গালি জাতির করনীয় কি...বলে দেয়া হয়েছিলো “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”.. এরপর বাঙ্গালি জাতির আর বুঝতে বাকি ছিলো না স্বাধীনতার জন্য সামনে তাদের যুদ্ধ করতে হবে একদম মাঠে নেমে। শুধু বঙ্গবন্ধুর ইশারার বাকি ছিলো।কারণ বঙ্গবন্ধূ সেদিন আরো বলে ছিলো তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো,মনে রাখবা রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ । অর্থাৎ তার ফাইনাল গ্রিন সিগনালের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলে ছিলেন।তবে আযব ব্যপার হল, লাখো মানুষের এই সমাবেশ পরদিন কোন গুরুত্ব পায়নি পাকিস্তানের ডন পত্রিকায়। যদিও অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়ে ছিলো তৎকালের পূর্ব পাকিস্তানের সকল পত্রিকা গুলোতে শুধু মাত্র দৈনিক সংগ্রাম (জামাতে ইসলাম) ছাড়া। .................................
©somewhere in net ltd.