নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একটিই লক্ষ্য- ডিজিটাল বাংলাদেশের এবং মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে অনিরপেক্ষতা..।

তানভীর এলিন

ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট

তানভীর এলিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিহাসের পাতা থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা

১৬ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:২০

স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে সবসময় আমরা অহেতুক একটি বিতর্ক তৈরি করি। সেটা অনেক সময় আওয়ামীলীগ- জিয়া কে ছোট করতে গিয়ে, আবার বিএনপি- জিয়াকে বেশি বড় করতে গিয়ে। তবে বিএনপি’র বিষয়টি তাও মানা যায়, কারণ তাদের দলের নেতার তো ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সকল আন্দোলনের কোথাও কোন ভূমিকা নেই, একটি মাত্র ভূমিকাই আছে তা এই ঘোষণা পত্র পাঠ। আর তার পরবর্তী সময়ে তো তিনিও সকল সেক্টর কমান্ডারদের মতই একজন সেক্টর কমান্ডার হিসেবে মুজিবনগর সরকারের অধীনে মাসিক বেতনে যুদ্ধ করেছেন। যাই হোক, যেই স্থানটি থেকে এই তিনি ঘোষণা পত্র পাঠ করেছেন, সেই স্থানটি কি জিয়া উর রহমান সাহেব নিজে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?? উত্তর “না”। এই স্থানটি তৈরির পিছনে যে ব্যক্তিদের ভূমিকা ছিলো তারা হলেন: বেলাল মোহাম্মদ, আব্দুল্লাহ আল ফারুক, আবুল কাসেম সন্দীপ, আ.ম শারফুজ্জামান, কাজী হাবিব উদ্দিন আহম্মদ, মোস্তফা আনোয়ার। আর এই বেতার কেন্দ্রটির প্রথম নাম ছিলো স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র, পরে যার নাম হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র।
চলুন দেখি এনাদের মধ্যে যিনি বেলাল মোহাম্মদ, তিনি তাঁর নিজের লেখা বইতে কি লিখেছেন এই ঘোষণা পত্র পাঠ নিয়ে।
******১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতের অপারেশন সার্চ লাইট করার মাধ্যমে ঘুমন্ত বাঙ্গালীকে হত্যার পর দিন ২৬ শে মার্চ সকাল থেকে হঠাৎ বন্ধ করে দেয়া হয় চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের প্রভাতী অধিবেশন। চালু করা হয় সামরিক নির্দেশনা। বেলাল আহমেদ সেদিন সকালে ছিলেন এনায়েত বাজার ডাক্তার শফী মুশতারীর বাসায়। শফী ছিলেন মাসিক “বান্ধবী’র” সম্পাদিকা আর বেলাল সাহেব ছিলেন পরিচালক। ২৫ মার্চ রাতে তারা টেলিফোন পেয়েছিলেন ঢাকা থেকে, যে সেখানে গুলি শুরু হয়েছে, সে কথা শেষ না হতেই কেটে যায় ফোনটি। পরের দিন বেতার বন্ধ। সব মিলিয়ে তারা চিন্তায় পড়ে যান। এক পর্যায় বেলাল সাহেব প্রথম ডা. শফীকে প্রস্তাব দেন তারা রেডিওটি নিজেদের করে চালাতে পারেন। এতে তিনিও উৎসাহ প্রকাশ করেন। বেলা ১১টায় আবুল কাসেম সন্দ্বীপ আর আব্দুল্লাহ আল ফারুককে সঙ্গে নিয়ে বেড় হলেন, গন্তব্য আওয়ামীলীগ অফিস। স্টেশন রোডের রেস্ট হাউসে জহুর আহমদ চৌধুরীর দপ্তর। এম আর সিদ্দিকী , জহুর আহমদ চৌধুরী, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ ও অধ্যাপক নরুল ইসলাম চৌধুরী-- এনাদের আনুকূল্য পেলেই তবে বেলাল সাহেব চালু করতে পারবে বেতার।
অবশেষে আওয়ামীলীগ অফিসে প্রবেশ। সেখানে কর্মিরা সবাই ব্যস্ত। আওয়ামীলীগ নেতা এড. রফিক টেলিফোন নিয়ে ব্যস্ত। বেলাল মোহাম্মদ ভিড় ঠেলে গেলেন তার কাছে। নিজের পরিচয় দিয়ে তার উদ্দেশ্যটা বলেছিলেন। বলেছেন, আগ্রাবাদ বেতার কেন্দ্র এবং কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে কয়েকজন শক্তসমর্থ কর্মি নিয়োগ করা দরকার এবং ভবন দুটি দখল করে সেখানে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ-গণসঙ্গীত-ঘোষণা পত্র প্রচার করতে পারি।
কিন্তু কিছুতেই রফিক সাহেব তার কথায় মনোযোগ দিতে পারছিলেন না। বারবার বেজে উঠছিলো ফোন। এক পর্যায় হতাশ হয়েই কক্ষের বাইরে এসেছেন। এমন সময় দেখা অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের বুদ্ধিজীবী সৈনিক। তিনি তার পরিকল্পনাটি শুনে লুফে নিলেন। নিজের প্রভাব খাটিয়ে একটি জিপ জোগাড় করলেন। তাকে বেলাল সাহেব জানালেন প্রথমে ঐ দুই ভবনে প্রহরা মোতায়েন করা দরকার। তিনি পরামর্শ দিলেন ই-পি-আর কমান্ডার রফিক তার পরিচিত,সেখানে যাওয়া যেতে পারে। কমান্ডার রফিক সাহেব এই পরিকল্পনা শুনে গুরুত্ব দিলেন এবং বললেন আপনারা চলে যান এক ঘন্টার মধ্যে ২০ জন জোয়ান আগ্রাবাদে এবং ১৫ জন কালুরঘাটে পৌঁছে যাবে।
এবার অন্য প্রস্তুতি। কারণ বেতার চালু করলেই তো হবে না। চালু করার পর কি প্রচার করবেন তা ঠিক করতে হবে এবং প্রচারের জন্য সুন্দর কন্ঠস্বর লাগবে। তাই এবার যোগাযোগ করা হল কিছু ব্রডকাস্টারের সাথে। এখন প্রাথমকি সম্প্রচার করার জন্য প্রকৌশলীর দরকার তাই সরাসরি চলে গেলেন আগ্রাবাদ বেতার কেন্দ্রে। কিন্তু সেখানে থাকা প্রকৌশলী কোন ভাবেই মানছেন না। কারণ তার ভয় এরপর পাকিস্তানের রক্তচক্ষু থেকে কে বাঁচাবে। এরপর ফোন করা হল আঞ্চলিক প্রকৌশলী মীর্জা নাসিরকে। তিনি বললেন, দেখুন: দুপুরবেলা আওয়ামীলীগের হান্নান সাহেব আমাদের জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে শেখ সাহেবের স্বাধীনতা ঘোষণা প্রচার করলেন। তারপর সরে গেলেন। তারা তো আমাদের দিয়ে কাজ করাবেন। পরে আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কে নেবে। বেলাল সাহেব চিনতেন না চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান সাহেবকে। এর মধ্যেই এম এ হান্নান ২৬ মার্চ দুপুরে মীর্জা নাসিরুদ্দীন এবং বেতার প্রকৌশলী আবদুস সোবহান, দেলওয়ার হোসেন ও মোসলেম খানের সহযোগিতায় পাঁচ মিনিটের স্থায়ী একটি বিক্ষিপ্ত অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করে ছিলেন।

পরবর্তীতে আঞ্চলিক প্রকৌশলী মীর্জা নাসিরকে বুঝানো হল ই-পি-আর থেকে আমাদেরকে নিরাপত্তা দেয়া হবে, আপনার চিন্তার কারণ নেই। এরপরও তিনি লিখিত কিংবা মৌখিক কোন অনুমতি দিতে চাচ্ছিলেন না। এক পর্যায় বেলাল মোহাম্মদ রেগে গিয়ে বললেন: কথা বাড়িয়ে লাভ নেই, আপনি ট্রান্সমিটারে টেলিফোন করে ওদেরকে অনুমতি দিয়ে দেন। তখন তিনি বললেন আমি অনুমতি দিতে পারছি না কারণ আমার সিনিয়র আছে, আপনি আরডি নাজমুল সাহেবের কাছ থেকে অনুমতি নেন। ঠিক সেই মূহুর্তে এই কক্ষে প্রবেশ করলেন, আবুল কাসেম সন্দ্বীপ ও আবদুল্লাহ আল ফারুক। এক পর্যায় আরডি সাহেবের কাছে ফোন করে রিসিভারটি ধরিয়ে দেন আবুল কাসেম সন্দ্বীপের হাতে। আরডি সাহেব কে পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে বলার পর তিনি অনুমতি দিলেন এবং বললেন, আপনারা আগ্রাবাদে থাকবেন না, কারণ এখান থেকে এয়ারপোর্ট খুব কাছে যেকোন সময় এ এলাকার পতন ঘটতে পারে। ভালো হবে কালুরঘাটে চলে যান, সেখানে একটা ক্ষুদে স্টুডিও আছে। তখনি আওয়ামীলীগের একজন কর্মি ডাক্তার আনোয়ার আলি জিজ্ঞাসা করলেন, বেতার তো চালু করবেন, কিন্তু কি প্রচার করবেন? বেলাল সাহেব বললেন- সে তো ঠিক করাই আছে, বঙ্গবন্ধু এবং স্বাধীনতা। এর বেশি আর এ মূহুর্তে প্রচার করার কিছু নেই। তখন আনোয়ার আলি একটি সাইক্লোস্টাইল করা ক্ষুদে হ্যান্ডবিল এগিয়ে দিলেন। শিরোনাম “জরুরি ঘোষণা”। নিচে ‘স্বাক্ষর করা শেখ মুজিবুর রহমান।’

বক্তব্যর বিষয়: “অদ্য রাত ১২টায় বর্বর পাক-বাহিনী ঢাকার পিলখানা এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইনে অতর্কিত হামলা চালায়। লক্ষ লক্ষ বাঙালি শহীদ হয়েছেন। যুদ্ধ চলছে। আমি এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি এবং সমস্ত বিশ্বের স্বাধীনতাকামী দেশসমূহের কাছ থেকে সাহায্য প্রার্থনা করছি। জয় বাংলা।”........সাথে সাথে বেলাল মোহাম্মদ খুশি হয়ে গেলন। আর বললেন এটা দিয়েই অনুষ্ঠান প্রচার শুরু করবেন।

এদিকে বিকাল গড়িয়ে গিয়েছিলো। এখন কালুঘাটে যাওয়ার উপায় কি। এগিয়ে আসলেন ডাক্তার আনোয়ার আলি। তার গাড়ি ছিলো। তিনিই তাদের পৌঁছে দিতে পারেন। পথে জনতার মধ্যে থেকে গাড়িতে উঠলেন প্রবীণ কবি আবদুস সালাম। হাতে খোলা কলম। খোলা খাতার পাতায় বেতার ভাষণের খসড়া। চলন্ত গাড়িতেই সংশোধন ও শব্দান্তর করে নিয়েছিলেন। সে ভাষণের বক্তটি ছিলো এমন: “দেশবাসি ভাই-বোনেরা!.....সমস্ত প্রকার অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকুন। যারা নিরস্ত্র তারা অন্তত সোডার বোতল বাজি প্রস্তুত করে মরিচের গুড়ার ঠোঙ্গা বানিয়ে ওদের (অবাঙ্গালি সৈনিক) প্রতি নিক্ষেপ করলে টিয়ার গ্যাসের কাজ করবে। বিজলি বাতির বাল্বে এসিড ভরে তা-ও নিক্ষেপ করুন।” ইত্যাদি।
যাই হোক এবার সন্ধ্যার কিছু আগে তারা এসে হাজির হল কালুরঘাটে। এখন তৈরি করতে হবে ঘোষণা লিপি। এক খন্ড কাগজে লিখলেন “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র”। আবুল কাসেম সন্দ্বীপ তখন বলছিলেন- বেলাল ভাই, “বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র” বললে ভালো হতো না? তিনি চিন্তা করে বললেন, বেশ ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র”। অবশ্য দু’দিন পর ২৮ মার্চই কেন্দ্রের নাম থেকে “বিপ্লবী” শব্দটি বাদ দেয়া হয়। এখন কাগজ পত্র গুছিয়ে স্টুডিওতে যাবার জন্য প্রস্তুত সবাই। এমন সময় টেলিফোন বেজে উঠলো। ফোন করেছেন বার্তা সম্পাদক সুলতান আলি। বললেন- বেলাল সাহেব আপনারা দেরি করছেন কেন? যা পারেন, প্রচার শুরু করে দিন। এখন সাড়ে সাতটা। মানুষ রেডিওর কাঁটা ঘোরাচ্ছে। পৌনে ৮টা বাজলেই ‘আকাশ-বাণী’ ধরবে। আপনাদেরটা কেউ শুনবে না।

ঠিক সন্ধ্যা ৭.৪০ মিনিটে আবুল কাসেম সন্দ্বীপের কন্ঠে প্রচারিত হয়েছিল: ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে বলছি।’ একই নাম ঘোষণা পরে আব্দুল্লাহ আল ফারুক এবং সুলতানুল আলমের কন্ঠেও প্রচারিত হয়েছিলো সেই অধিবেশন। ডাক্তার আনোয়ার আলীর কাছ থেকে পাওয়া হ্যান্ডবিলটিও বারবার প্রচারিত হয়েছিল তাদের বিভিন্ন কন্ঠে। অনুষ্ঠান চলাকালে একজন ব্যক্তি বেলাল মোহাম্মদকে ডেকে বাহিরে নিলেন। সেখানে দু’জন আগন্তুক দাঁড়িয়েছিলেন। এদের মধ্যে একজনকে তিনি আগের থেকেই চিনতেন ডাক্তার আবু জাফর। অন্যজন এম এ হান্নান,বললেন আপনারা মাইকে নাম ঘোষণা করুন, আমি বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা পত্র প্রচার করবো। বেলাল সাহেব রাজি হলেন। তবে বলে দিলেন আপনার নামটা প্রচার করা হবে না। কারণ হিসেবে তাকে বুঝানো হলো: দুপুর বেলা আপনি চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার করেছেন, এখন তা নয়।বর্তমানে এটি গুপ্ত বেতার কেন্দ্র। এখান থেকে নিয়মিত অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে। তাই কোথায় এর অবস্থান তা শত্রুদের বুঝতে দেয়া ঠিক হবে না। একপর্যায় তিনি মানলেন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি প্রচার করলেন দ্বিতীয়বার। প্রায় আধা ঘন্টা প্রচার হয়েছিলো এ অধিবেশনটি। সমাপ্তির সময় পরদিন সকাল ৭টার পর আবার অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে, এই ঘোষণাও দেয়া হয়। সবশেষ করে ভাবাবেগে আপ্লুত হয়ে আবুল কাসেম সন্দ্বীপ বললেন: বেলাল ভাই, বঙ্গবন্ধু সারাজীবন রাজনীতি করে পাকিস্তানের কাছে দেশদ্রোহী হয়েছেন। আর আমরা আজ একটি মাত্র ঘোষণা প্রচার করেই দেশদ্রোহী হলাম। বেলাল মোহাম্মদ বললেন: দেশ প্রেম বা দেশদ্রোহী যাই হই, এখন আর পিছু হটবার পথ নেই। এগিয়ে যেতে হবে।

এদিকে, কালুরঘাট ট্রান্সমিটার ভবন অরক্ষিত। ওখানে পূর্ণ দখল প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। কি করা যায় চিন্তায় মগ্ন ছিলেন বেলাল মোহাম্মদ। এ অবস্থায় মূল্যবান তথ্য এবং উপদেশ দিয়েছিলেন চন্দপুরার তাহের সোবহান। বললেন- পাহারার জন্য দরকার রাইফেলধারী জোয়ান। আমার জানামতে পটিয়ার একদল বাঙ্গালি সৈনিক আছে। একজন মেজরও আছেন সেই দলে। ক্যান্টনমেন্টের বাইরে যারা আছে, তারা সবাই বঙ্গবন্ধুর সাপোর্টার। তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন পটিয়া গিয়ে।

রাত ১২টার পর মাহমুদ হোসেনকে টেলিফোন করেন বেলাল সাহেব। বলেন একটি গাড়ি লাগবে পটিয়া যেতে চান এবং তিনি গাড়ির ব্যবস্তা করে দেন। অবশেষে যাওয়া হয় পটিয়া। সেখানকার থানার ওসি ছিলেন বেলাল সাহেবের পরিচিত। তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এখানে যে মিলিটারিরা আছেন, তাদের সিনিয়র অফিসার কে? তিনি উত্তর দিলেন মেজর জিয়াউর রহমান।এক পর্যায়ে তার সাথে দেখা করার সুযোগ করে দেন ওসি সাহেব। ভিতরে প্রবেশ করার পর জানলেন, মেজর সাহেব তাদের অনুষ্ঠান শুনেছেন আগের রাতে। তাকে বলা হল কালুরঘাট ট্রান্সমিটার ভবনটির নিরাপত্তার প্রয়োজন। আপনি যদি ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। তিনি সব শুনে রাজি হলেন।

তিনটি লরিতে জোয়ানরা সজ্জিত হয়েছিলেন। একটু আগে পরে যাত্রা করা হয়। সামনে মেজর জিয়াউর রহমানের জিপ।কালুরঘাট ট্রান্সমিটারে পৌঁছাতে বিকাল ৫টা বেজে গিয়েছিলো। তারা পৌঁছাবার আগেই জোয়ানরা পৌঁছে যায় এবং এলাকাটির পরিখা খনন করে পজিশন নিয়েছিলেন। অতঃপর অফিস কক্ষে বেলাল সাহেব ও মেজর জিয়া। এক পর্যায় বেলাল সাহেব মেজর সাহেব কে বললেন, আচ্ছা, মেজর সাহেব, আমরা তো সব মাইনর, আপনি মেজর হিসেবে স্বকন্ঠে কিছু প্রচার করলে কেমন হয়। কথাটা তিনি নিতান্তই রসিকতা করে বলেছিলেন। কিন্তু মেজর সাহেব নিয়েছিলেন গুরুত্ব দিয়ে। সঙ্গে সঙ্গে বললেন- হ্যাঁ। কিন্তু কি বলা যায়, বলুন তো। তারপর বেলাল সাহেব এক পাতা কাগজ এগিয়ে দেন। আর প্রথমেই মেজর সাহেব লিখলেন- I Major Zia do hereby declare independence of bangladesh. বেলাল সাহেব তখন বললেন- বঙ্গবন্ধুর পক্ষে থেকে বলবেন কি? তিনি তখন বলেছিলেন- হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন- তারপর নিজের নামের শেষে তীর চিহ্ন দিয়ে লিখেছিলেন- on behalf of our great national leader Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman......এবং সেই দিন কয়েকবার মেজর জিয়াকে দিয়ে এটি পাঠ করানো হয়।
মোটামোটি ভাবে এই ছিলো ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করার ইতিহাস এবং কারা, কখন, কিভাবে ঘোষণা পত্রটি পাঠ করে তার ইতিহাস....আর রেফারেন্সটা দিলাম এমন একজন ব্যক্তির বই থেকে যিনি সরাসরি জড়িত এই কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠার পিছনে। তাই দয়া করে কেউ স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করবেন না। কারণ জিয়াউর রহমান সাহেব নিজেও বেঁচে থাকতে কোন দিন এটি দাবি করেননি। আর ইতিহাসের পাতা থেকেই আমরা জানতে পারি, তিনি ঘোষণা পত্রটি পাঠ করেন ২৭ তারিখ সন্ধ্যায়। আর আমরা কিন্তু স্বাধীনতা দিবস পালন করি ২৬শে মার্চ, কারণ প্রথম প্রচারটি কালুরঘাটও নয়, চট্টগ্রাম বেতার থেকে প্রচার করা হয়েছিলো, আর যা করেছিলেন এম এ হান্নান। তবে এটিও অস্বীকার করার কোন উপায় নেই, জিয়াউর রহমান সাহেব যদি সেই দিন থেকে পরবর্তী কিছু দিন নিরাপত্তা না দিতেন, তবে এই ট্রান্সমিটারটি বাঁচিয়ে রাখা অনেকটা অসম্ভব ছিলো। তাই তার অবদানটুকুও কেউ ছোট করে দেখা ঠিক না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.