![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট
আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামটি হঠাৎ একদিনে হয়নি। তার পেছনে ছিল বহু কারণ। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগ হওয়ার পর এই বাংলার মানুষ মনে করেছিলো তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টোটাই পরিলক্ষিত হয়। আর তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সংগঠিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। এই স্বাধীনতা সংগ্রামের পেছনে অনেক গুলো কারণ এর মধ্যে একটি বিশেষ কারণ ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্য।যা একদিনে বলে শেষ করা যাবে না।তবে আজ সেই অর্থনৈতিক বৈষম্যের কিছু কথা সংক্ষেপে পাঠকদের উদ্দেশ্যে লিখছি।
পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিষয়টি প্রথম আলোচনায় ওঠে আসে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদদের মধ্যে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ এ বিষয়ে প্রথম অবদান রাখে। অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান এবং ড. মাহমুদ হোসেন সর্বপ্রথম দুই অঞ্চলের বৈষম্যের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে দেশবাসির চোখের সামনে এই বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরেন। বিশেষ করে ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী কর্তৃক সর্বাধিক প্রচারিত বিষয়টি “জতীয় একীভবন নীতি” বাস্তবায়ন সম্পর্কিত। এর মূলে ছিল দুই পাকিস্তানের মধ্যকার আন্তঃঅর্থনৈতিক সম্পর্কে ভারসাম্য বজায় রাখা। এটিকে তারা (পশ্চিম পাকিস্তানীরা) “এক পাকিস্তান অর্থনীতি” তত্ত্ব বলে অর্থনৈতিক সংহতির কথা প্রচার করতেন।তবে তার পাশাপাশি ষাটের দশকের আগ থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদদের কাছে পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের মধ্যকার অর্থনৈতিক বৈষম্যের মারাত্মক অবনতিশীল পরিস্থিতির চিত্রটি ধরা পড়ে এবং তাদের মধ্যে দুই অর্থনীতি তত্ত্বের যৌক্তিক বিশ্বাসের প্রসার ঘটে পশ্চিম পকিস্তানি শাসক ও শোষক গোষ্ঠির।
যে কারণে “অর্থনৈতিক একতা, আঞ্চলিক সহযোগিতা, অর্থনীতির সম্ভাব্য সর্বোচ্চ একীভূতকরণ” ইত্যাদি বহুল প্রচারিত জনপ্রিয় শব্দগুলো প্রচার করত। কিন্তু বাঙালি অর্থনীতিবিদরা তার চিত্র উন্মোচন করে দেন।
এর ফলে আইয়ুব খান পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নতির মাত্রার অসমতা দূর করার বিষয়টি শেষ পর্যন্ত ১৯৬২ সালে সাংবিধানিক নীতি হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলো। তবে তা ঐ পর্যন্তই। বরং এরপর থেকে অর্থনৈতিক বৈষম্যের মাত্রা আরো বেড়ে যেতে থাকে এবং এক পর্যায়ে এসে পূর্ব পাকিস্তানের জনমনে আলাদা হয়ে যাওয়ার চিন্তা অত্যন্ত দ্রুত প্রসার লাভ করে।
আর এ চিন্তা প্রসারের কারণ ছিল অত্যন্ত যৌক্তিক। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কার্যকালে পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়নে মাথাপিছু ব্যয়ের পরিমান ছিল ৮০টাকা আর পশ্চিম পাকিস্তানের ছিল ২০৫ টাকা। দ্বিতীয় পরিকল্পনায় অবশ্য দুই প্রদেশের মাথা পিছু ব্যয়ের বৈষম্য কিছুটা কমানো হয়েছিল। তাতেও দেখা যায় পূর্ব পাকিস্তানে মাথা পিছু ১৯০ টাকা আর পশ্চিম পাকিস্তানে ছিল ২৯২ টাকা। ১৯৬০-৬১ সাল আর ১৯৬৪-৬৫ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যয় হয়েছিল ৯৭০ কোটি টাকা আর পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যয় হয়েছিল ২ হাজার ১শ ৫০ কোটি টাকা। অথচ আয়ের ক্ষেত্রে দুই প্রদশের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত।
বর্হিবাণিজ্য: প্রথম দশ বছরে পশ্চিম পাকিস্তানে যেখানে ৪০৭ দশমিক শূন্য ছয় কোটি টাকার ঋনাত্মক ভারসাম্য ছিল, সেখানে পূর্ব পাকিস্তান ৪৬৮ দশমিক শূন্য নয় কোটি টাকা ধনাত্মক ভারসাম্য বজায় রাখে। কেন্দ্রীয় সরকারের ট্রেজারিতে পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় পূর্ব পাকিস্তানের ২০০ কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা জমা দেয়। আর এর পুরষ্কার স্বরূপ কেন্দ্রীয় সরকার সে সময়ে প্রতি বছর প্রায় ৪০ কোটি টাকার বিদেশি দ্রব্য আমদানির ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানকে বঞ্চিত করে। পশ্চিম পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋণের বোঝা মেটানো হতো পূর্ব পাকিস্তানের ধনাত্মক আয় থেকে অর্থাৎ পশ্চিম পাকিস্তানের ঘাটতি মেটানোর বাজার হিসেবে ব্যবহৃত হয় পূর্ব পাকিস্তান। এ ছাড়াও সে সময় পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে সম্পদ পাচার হতে থাকে। অর্থনীতিবিদদের মতে ১৯৫৬ সালের আগ পর্যন্ত প্রতি বছর পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে জাতীয় আয়ের প্রায় ২% পাচার হতো।
এ বৈষম্য যে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল তা না। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং চাকুরী ক্ষেত্রেও ছিল প্রকট।
বিভিন্ন বৈষম্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক এমন বৈষম্য বাঙ্গালি জাতি মেনে নিতে পারেনি কিছুতেই। যারই বিষ্ফোরণ হয় ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষনের মধ্য দিয়ে। বাঙ্গালি জাতি ঝাপিয়ে পড়ে পাকিস্তানিদের উপর। আর ছিনিয়ে নেয় পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ। কিন্তু ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের মাধ্যমে কতটা অর্থনৈতিক মুক্তি পেয়ে ছিলো এ জাতি?? ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সময় পেয়েছিলেন মাত্র তিন বছর। এর মধ্যে তাকে কাজ করতে হয়েছিলো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। একটি সংবিধান প্রনয়ন থেকে শুরু করে, বিশ্বের দরবারে ঘুরে ঘুরে বাংলাদেশের জন্য স্বীকৃতি। জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ থেকে শুরু করে। ১৯৭৪ সালের দূর্ভিক্ষ মোকাবেলা। পাশাপাশি অভ্যন্তরীন সন্ত্রাসী গ্রুপ সর্বহারাদের দমনসহ নানা দিক নিয়ে কাজ করতে হচ্ছিলো তার। আর সকল কাজের শুভ সমাপ্তির আগেই দেশি ও বিদেশি চক্রান্তে হত্যা করা হয় জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সপরিবারে। তারপরই আবারো মুখ থুবরে পড়ে এদেশের অর্থনৈতিক গতিধারা। তবে আজ ২০১৬ সালে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যার হাত ধরে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অর্থনৈতিক ভাবে মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশের দিকেই একটু একটু করে হেটে যাচ্ছে আমাদের দেশ। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে আশা করা যাচ্ছে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। ভিশন রাখা হয়েছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে।ইতোমধ্যেই বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্য দেশ ডিজিটাল কান্ট্রি হিসেবে উদাহারণ দেয়। এমন বাংলাদেশ দেখার আশায়ই তো মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়ে ছিলো ত্রিশ লাখ শহীদ। তাই সেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হলেও বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আর যার যোগ্য নেতৃত্বে আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তাকে সর্বদা সাহয্য করতে হবে। বিশ্বাস রাখতে হবে শেখ হাসিনার উপর।
পরিশেষে সবার শুভ কামনা করে বিদায় নিচ্ছি। দেশকে ভালোবাসুন, দেশের শত্রুকে ঘৃণা করুন। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ চিরজীবি হোক।
©somewhere in net ltd.