নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজকে আজও আবিষ্কার করতে পারিনি।

টি এ চৌধুরী

স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি ভেঙ্গে গেলে কষ্ট পাই না। ভাঙ্গা স্বপ্নে খুজি স্বপ্ন গড়ার মন্ত্র।

টি এ চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"তনু আর ফিরে আসবে না"

৩০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৩৮

গতরাতে একটা তামিল মুভি দেখছিলাম “কিক-২” । মুভির এক দৃশ্যে জনৈক ভিলেনর ছেলে নিজেকে পরুষ প্রমানিত করতে এক ঘরোয়া পার্টীতে সকলের সামনে গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণ করার পর নির্মম ভাবে মেরে ফেলে। এমন কাজ শেষে ছেলে বাবাকে বলছে “দ্যাখা বাবা ম্যা মর্দ বনগাঁয়া”। আর তখন তনুর কথা মনে হয়। এমনই কিছু কাপুরুষের নির্মমতার শিকার তনু। এরা মানুষের মুখোশ পরিহিত অমানুষ, এরা নর পশুর চেয়ে অধম।
উল্লেখ্য ২০১৩ থেকে পত্রিকা পড়া ছেড়ে দিয়েছি। এইসব পড়তে আর ভাল লাগে না। পত্রিকা খোলতেই মৃতুর সংবাদ, লাশের ছবি, সাজানো লেখায় নানান অরাজগতার খবর। তাই পত্রিকা পড়তে ইচ্ছে হয় না। তনু বিষয়টা বিভিন্ন ফেইস বুক পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারি। ওরা কি নির্মম ভাবে মেয়েটাকে মেরে ফেললো। ওরাও কোন নারীর সন্তান, ওরাও কোন বোনের ভাই। শুধু ওরা মানুষ নয়, দুপায়া পশু।
তনু মেয়েটাকে আমি কখনো দেখিনি। তার সাথে এমন পাশবিক কিছু না ঘটলে কোনদিন তাকে চেনাও হতো না। সেও হয়তো মধ্যবিত্ত পরিবারের অন্য দশটা মেয়ের মতো বিপুল স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠতো তার মতো করে। গুটি কয়েক মানুষকে নিয়ে সাজাতো তার পৃথিবী। তখন আমরা কেউই তনুকে চিনতাম না। আজ আমরা সবাই তনুকে চিনি, কিন্তু কেউ তিনুকে ফিরিয়ে আনতে পারবনা। সত্যি করে বলতে গেলে এইসব নির্মমতা, মানুষের পাশবিক আচরণ আমাকে অনেক পীড়া দেয়। তাই অনেকটা পাশ কেটে যেতে চাই। কিন্তু আজ সারাদিন মেয়েটার কথা অনেকবার মনে হয়েছে, আর যতবার মনে হয়েছে ততবার আশ্চার্যজনক ভাবে মন খারাপ হয়েছে।
আমার কোন বোন নেই। বোনের অভাব আমি সব সময় বোধ করি। যখন দেখি বন্ধুরা কেউ বোনের সাথে কথা বলছে কিংবা কারো বোন ফোন করে তার খুজ খবর নিচ্ছে আমার কেমন যেন আক্ষেপ হয়। মনে হয় আমার যদি একটা বোন থাকতো। আজ বারবার মনে হচ্ছে আমার একটা বোন থাকলে হয়তো দেখতে তনুর মতো হতো। আমার কাছে অনেক ছোট ছোট আবদার করতো, টেলিভিশনের রিমোট নিয়ে দুজনের সারাক্ষণ ঝগড়া হতো, খুনসুটি অভিমান হতো, হয়তো মাঝে মাঝে শাসন করার মধুর অপচেষ্টাও চালাতো। তনুও হয়তো এর সবই করতো তার ভাইয়ের সাথে। তার ভাইয়ের বুকের ব্যথা আমি আজ অনুভব করতে পারছি। হয়তো সে এখন বলে তনু তুই ফিরে আয় দেখিস আমি আর টিভির রিমোটে হাত লাগাবো না, এই পাগলী দেখ আমি আজও বাইরে থেকে এসে পা না ধুয়ে বিছানায় উঠেছি তুই আমাকে শাসন করবি না, দেখ ফেরিওয়ালা এসেছে আমি সত্যি সত্যি আজ তোকে চুলের ফিতার টাকা দিব নিবি না। নির্মম সত্য হল কোন কিছু তনুকে আর ফিরিয়ে আনতে পারবে না।
মধ্যবিত্ত পরিবারের ১৮/১৯ বছরের একটি মেয়ে, নিজে পড়ে অন্যদের পড়ায়। দুটো টিউশানি করে, যেন বাবার উপর কিছুটা আর্থিক চাপ কমে। তার মায়ের কথা ভাবতে কষ্ট হয়, তার বাবা হয়তো পাথর হয়ে আছেন। তনুর মাও হয়তো অন্য মায়েদের মতো মেয়েকে টেনে এনে মাথায় তেল দিয়ে দিতেন, চুলে বেণী করে দিতেন, ঘরের কাজে হাত দিতে চোখ রাঙ্গাতেন। বাবা হয়তো মায়ের আড়ালে নিয়ে মেয়ের অভিমান ভাঙতেন, মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন। তনুও হয়তো বাবার ময়লা শার্টের কলারের দাগ উঠাতে নানান চেষ্টা চালাতো, টিউশানির বেতন পেয়ে বাবার জন্য শার্ট কিনেছে, মাকে কিছু টাকা দিয়ে বলেছে মা তুমি রান্না ঘরের চুলোটা এবার চেঞ্জ করে ফেলো এতো পুরনো চুলোয় রান্না করাটা নিরাপদ না। এমন সোনার মেয়েটি আজ নেই। কেমন থাকবেন তনুর বাবা মা? কিভাবে বাঁচবেন বাকি জীবন।
তনু আর ফিরে আসবে না। আজ আমরা গুটা দেশ তনু হত্যার বিচারের দাবীতে মিছিল, বিক্ষোভ করছি। কিন্তু কাদের কাছে আমরা বিচারের দাবি করছি। সর্ষের মধ্যেই যে ভূত। আমাদের মাটিতে তনু হত্যাকারীদের সঠিক বিচার নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। আমি শুধু মেয়েটির জন্য সুন্দর পরকাল এবং তার পরিবারকে যেন আল্লাহপাক এই শুক সহ্য করার শক্তি দেন এই প্রার্থনা করি। আর নর পশুদের বলছি তোদের ধ্বংস অনিবার্য।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৩৪

বিজন রয় বলেছেন: মরা কেউ ফিরে আসে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.