নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তানভীর এফ আখতার

ভালো নেই . আপনি কেমন আছেন!

তানভীর এফ আখতার › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি ঘুম ভাঙা স্বপ্নের পথে!

১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৫

ঢাকা থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে নাবিল

পরিবহনে চড়লাম ।রাতের বাসে ।তখন শীতকাল।

জীবনে প্রথম উত্তরাঞ্চলের দিকে যাচ্ছি।

আমি আর আমার চাচা(বয়সে তরুন এবং তৎকালীন

অবিবাহিত ) ।চাচার ও এটা প্রথম এই

দিকে যাত্রা ।দু জনেরই দিনাজপুর

সম্পর্কে একটাই আইডিয়া ছিল ।প্রচন্ড

হাড়কাপানো শীত !বেচে থাকা কঠিন! তাই

চাচা আপন প্রাণ ও তার ভাতিজার প্রান

বাচানোর জন্য মোটা একটা কম্বল

নিয়ে বাসে উঠল !বাসের নিয়মিত উত্তরাঞ্চলের

যাত্রীরা আমাদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে !!

তবে যে যাই বলুক বাসে কম্বল

গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে সত্যিই অচাম লেগেছিল। এখন

তো লজ্জায় কম্বল নিয়ে উঠি না, যেহেতু এক

হিসেবে উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দা ।রাতে প্রচন্ড

কুয়াশা দেখে আমি আর আংকেল বাস

থেকে নেমে সাইবেরিয়ার শ্বেতভাল্লুক দেখার

স্বপ্ন দেখতে লাগলাম! তারপর একসময়

দক্ষিনবঙ্গের এই আমি উত্তরবঙ্গে পা রাখলাম!

যেন

উত্তর মেরু জয় করলাম!

এরপর দুই জনে একটা রিকশা নিয়ে মেডিকেলের

দিকে যাত্রা করলাম ।ছোট্ট, পুরাতন

এবং কিছুটা অনুন্নত মনে হচ্ছিল শহর

টাকে( অতটা নয় ,যথেষ্টই উন্নত আমি মনে করি)

।রিকশাওয়ালাদের সাথে সবসময়ই চাচার খুব ভাব

জমে যায় ।কিছু মানুষের কেন

জানি এটা একটা নেশা! গম্ভীর লোক। কিন্তু

রিকশায় উঠলেই দুনিয়ার প্যাচাল শুরু !

তো চাচা রিকশা ওয়ালাকে জিগ্যাসা করল,"

দিনাজপুর কিসের জন্য বিখ্যাত"!

রিকশাওয়ালা খুব দার্শনিক টাইপের উত্তর দিল!

চাল ,লিচু আর মেয়ে!!

আমি মনে মনে ভাবলাম ,চাল আর লিচুর

সাথে মেয়ে! বড্ড বেমানান ।চাল আর লিচু

নিয়ে আংকেল এর তেমন আগ্রহ দেখা গেল না।

আংকেল জিগ্যাসা করল ,মেয়ে দের জন্য কেন!

রিকশাওয়ালা দাত কেলিয়ে বলল, খোব সুন্দর

বে!!

আমি আংকেল কে বললাম, মিয়া অনেক তো হল!

বিয়া তাইলে এই জায়গাই করেন! আংকেল

কিছুটা লজ্জা পেল না কার কথা ভাবল বুঝলাম

না !!

মেডিকেল এরিয়ার ভেতর ঢুকে হাসপাতাল

দেখে তো আমার মাথাই নষ্ট ।ইংল্যান্ডের

হাসপাতাল মনে হচ্ছিল! তারপর মেডিকেল কলেজ

টাকে বাইরে থেকে দেখে আমি সত্যিই

প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম ।অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল।

আমার বরিশালের বান্ধবীদের ছাড়ব নাকি এই

নয়নাভিরাম কলেজ কে ছাড়ব

সেটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে মেডিকেল গেট এ

পৌছলাম

পেট টা চো চো করছিল ।তাই দু জনেই কিছু

খেয়ে নেবার চিন্তা করলাম ।একটাই দোকান

খোলা মেডিকেলের সামনে! গেস হোয়াট! দি অন

এন্ড অনলি "বকুল "!খুব খাতিরের

সাথে মামা আমাদের কে ভিতরে নিয়ে গেল।

পড়াটা আর ডিম কোনমতে খেলাম ।তারপর দু

জনে দু কাপ চায়ের অর্ডার দিলাম ।গরুর দুধের

চা আমরা আসলে খেয়ে অভ্যস্ত না ।তারপর ও

খেলাম !এ অঞ্চলে এসেছি, অভ্যস্ত তো হতেই

হবে! চা টা খাওয়ার সময় কেমন যেন লাগল!

স্পেশাল চা ভেবে পাত্তা দিলাম না!

খেয়ে বাইরে আসলাম

আংকেল বিড়বিড় করে বলল, দুধ টা মনে হয় কয়েক

দিনের বাসি ছিল! গন্ধে পেট

টা মোরাইয়া উঠতেছে !আমি আংকেল কে বললাম,

আংকেল ওইটা কিছু না! দিনাজপুরে তো লিচুর

দেশ ।তাই সবকিছুতেই লিচুর একটা ফ্লেভার!!

কিন্তু সত্যিই বলতে এর পর এক সপ্তাহ

আমি ওই ফ্লেভার পেতাম সব জায়গায় !সিনিয়র

ভাইদের জিগ্যাসা করতাম ,"ভাই ,দিনাজপুরের

বাতাসের মনে হয় অন্য রকম একটা ফ্লেভার

আছে! তারা হাসত আর বলত, হতে পারে!

দিনাজপুরী হাওয়া!!!

যাই হোক এক সিনিয়র ভাই কে ফোন দিলাম।

তিনি এসে আমাদের কে নিয়ে গেলেন ।অবাক

চোখে ক্যাম্পাস টার দিকে তাকালাম। ঘুম

ভাঙা এক স্বপ্ন যেন! তারপর পা বাড়ালাম গেটের

ভিতর দিয়ে ।আমার প্রথম পদক্ষেপ !সবাই হয়ত

এভাবেই পা বাড়িয়েছে স্বপ্নের পথে ।কে জানত,

সেই স্বপ্নের বাধনে জড়িয়ে যাব!!

উৎসর্গঃ সেই রিকশাওয়ালা !এমন আর

কাউকে পাই নি! তাকে এখনো খুজি!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.