নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দের ক্যানভাসে চিন্তা আঁকা, একটি চিরকুট...

তানজীম আফরোজ

শব্দের ক্যানভাসে যদি চিন্তা আঁকা যায় তবে কোটি বছরের পুরোনো চিরকুটও জীবন্ত লাগে। কারণ, সময়কে আটকানো যায় অক্ষরের ভাঁজে ভাঁজে...।

তানজীম আফরোজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

১৪ ই ফেব্রুয়ারি কার ছিল? বসন্তের নাকি ভালোবাসার

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৩৪


চোখ মনের আয়না কিভাবে হয় তা আমি এখনও বুঝে উঠতে পারিনি। হয়তো হয়...তবে অনুভূতিশূণ্য চোখও তো আছে! যে চোখগুলো একদম বরফখন্ডের মতো ঠান্ডা হয়...। এই চোখের দিকে তাকালে নিজের চেহারা একটু আধটু দেখা ছাড়া এর বেশি কিছু দেখা যায় না...সাধারণ আয়নার মতো। যে দুই ধরনের মানুষ চেনা সবচাইতে কঠিন, তারা এই দলেই পড়ে....।
খুব জটিল কিংবা খুব সরল মানুষ...।

সরল জটিলের মারপ্যাঁচে পৃথিবী যখন মানুষের অর্ধেক মুখ ঢেকে দিলো... তখন চোখ ছাড়া আর উপায় থাকলো না।চোখ কিছু কথা আসলেই বলে। চোখ সত্য আর মিথ্যেটুকু বলে। আর যে কথাটা সবচাইতে ভালো বলে তা হলো.... "ক্লান্তি"।
এক টুকরো কাপড়ে মুখ আড়াল করা শহরে আমি সত্য মানুষ মিথ্যে মানুষ দেখে বেড়াই....আর সবচাইতে বেশি দেখি ক্লান্ত মানুষ।
একদিন একটা আট-দশ বছরের মেয়ে তার মায়ের সাথে ইশারায় কথা বলছে...সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে...। তার চোখে ক্লান্তি ছিলো...। কত অল্প সময়ে সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে...পৃথিবীকে তার কথাটুকু বোঝাতে বোঝাতে। অর্ধেক মুখ ঢাকা না থাকলে হয়তো তার ক্লান্তিটা দেখা দিত না।

মাঝে মাঝে বইয়ের শহরে ঢু মারার মজাটা হচ্ছে মানুষের প্রকাশিত কথা আর প্রকৃতির অপ্রকাশিত কথার মিশ্রণে তৈরি করা একটি ঘোরের সৌন্দর্য অনুভব করা যায়। বসন্তের প্রথম দিন যখন একটি মাঝারি সাইজের গাছের নিচে বসে বইয়ের শহরের নতুন ঠিকানা ভালো না লাগার কারণ খুঁজছিলাম তখন রঙিন মানুষের আনাগোনায় উৎসব টের পেলাম। বসন্ত গায়ে জড়িয়ে লাল ভালোবাসায় মত্ত মানুষেরা ব্যস্ত। তারা ব্যস্ত তাদের ভালোবাসা "বলতে", "দেখাতে", "বোঝাতে" তবে.... "বুঝতে" নয়। প্রকৃতির বসন্তের আভাটা বাতাসে ছড়িয়ে ছিলো, কিন্তু সে বাতাস কাউকে স্পর্শ করেনি। কারণ, মানুষগুলোর চোখে ক্লান্তি ছিলো...কিছু চোখে ছিলো মিথ্যে...আর কিছু চোখ ছিলো নিষ্প্রাণ, ঠান্ডা। যেটা প্রয়োজন ছিলো, সেটা কারও কাছে, কোথাও ছিলো না।
সব মিলিয়ে এক উদ্ভট মন খারাপ নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। এই জাদুর শহর ব্যস্ত মানুষগুলোকে আর যাই হোক জাদু দেখাতে পারেনি।কৃত্রিম বর্ণালীর ভীড়ে যখন আসল বর্ণালী কর্পূরের মতো উড়ে যায়... তখন তারা বসন্ত কিংবা ভালোবাসা কোনোটাই হয়তো ছুঁতে পারে না।

নানান সব জটিল ভাবনায় হঠাৎ বাঁধা দিয়ে একটি সাধারণ দৃশ্য চোখ থামিয়ে দেয়...।
খুব সাধারণ দুজন মানুষ। জীবনের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তারা বসন্ত দেখছে....চামড়া কুঁচকে যাওয়া দুজনের হাত এক করে। হালকা সোনালি আলোকচ্ছটায় মাখা হাসি আর গল্পে কি ছিলো তাদের ? হয়তো স্মৃতিচারণ কিংবা পেরিয়ে আসা বহু বসন্তের গল্প! খুবই সাধারণ একটি দৃশ্য। বিশেষত্বটা হচ্ছে, তাদের চোখে "মুগ্ধতা" ছিলো।মনে হচ্ছিলো ভালোবাসার সব লাল কিংবা বসন্তের সব রঙের আভা এক করে নিয়ে এই দুজন মানুষ বসে আছে, যাদের বয়সের সংখ্যা কিংবা দায়িত্বের আঁচে পোড়া চোখে ক্লান্তি নেই, মিথ্যে নেই...শুধু মুগ্ধতা আছে। বসন্তের বাতাসে তারা মুগ্ধতা উদযাপন করছে, যে মুগ্ধতা হাজার রঙের ভিড়ে খুঁজে পাওয়া যায়নি....।
শেষমেষ আমার সেই উদ্ভট মন খারাপ বদলে দুজন সাধারণ বৃদ্ধ,অচেনা মানুষের দেয়া এক মুঠো রঙের আভা নিয়ে ঘরে ফেরার ভালোলাগাটাও অদ্ভুত সুন্দর। বসন্ত এই সাদাকালো ভালোবাসার জন্যই বোধহয় মাঝে মাঝে লাল হয়ে আসে....রোদমাখা এক গুচ্ছ লাল গোলাপের মতো...❤

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.