নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ হওয়ার সাধনা আমার চির বহমান, যদি চূড়ান্ত নিশ্বাসেও না হতে পারি তবে ক্ষমা করো বিধাতা, ক্ষমা করো হে প্রভু আর রহমান। ক্ষমা করো তোমরা যারা পেয়েছো আঘাত, তোমরা যারা পাবে অথচ থাকবে নিরাপরাধ।
গতকাল খুব কাছের এক বন্ধু আমাকে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েছে যে, দাদা একটা লেখা লেখ যেটার শিরোনাম হবে ”অর্থনীতিতে বেকারদের আবদান”। আমি পড়তেই থমকে গেলাম। ভাবনার জগৎ কেঁপে উঠলো। বাকী লাইনগুলো পড়তেই আমাদের বেকারদের কষ্টের ষোল কলা কিভাবে পূর্ন হচ্ছে তা উদাহরণ সহ বুঝে গেলাম। কথাগুলো হাড়ে হাড়ে অনুভব করতে শুরু করেছিলাম সেই পড়াশোনা শেষ করার পর থেকেই, আজ আবার মুচরে উঠলো মন যেমন টা উঠে প্রতিনিয়ত নিয়োগ পরীক্ষা দেবার সময়।
অবদান-১
চাকরির আবেদনের ফিঃ আচ্ছা এই আবেদন ফী কি বেকারদের কাছে থেকে নেয়া খুব দরকার? বিশেষ করে সরকারী চাকুরীর ক্ষত্রে আবেদন করার জন্য ফী নেয়া হয়ে থাকে। দেশে এত টাকা লোপাট হয়,দূর্নীতি হয় আর কিনা বেকারদের কাছে থেকে টাকা নিয়ে চলতে হয় সরকারের?নিশ্চই জেনে থাকবেন সব সরকারী চাকরীতে ব্যাপক ভাবে আবেদন ফী নির্ধারণ করা হয়। রাষ্ট্র কি এই বেকারদের এটুকু দায়িত্ব নিবে না? রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যে পরিমান দূর্নীতি হচ্ছে তা রোধ না করে সেই সব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য বেকারদের কাছে থেকে আবেদন ফী নেয়া হচ্ছে।অথচ রাষ্ট্র যদি সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে দূর্নীতি কমাতো তবে দেশের সামগ্রিক চিত্র যেমন ভাল থাকতো তেমনই বেকারদের কাছে থেকে এই টাকা নেবার কোন প্রয়োজনও হতো না।যারা চাকরী পেতেন তারাও একটি সুষ্ঠু পরিবেশের মাঝে দূর্নীতি মুক্ত কর্ম জীবন শেষ করতে পারতো। বর্তমানে বি সি এস পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে সাড়ে সাত শত টাকা লাগে, ব্যাংক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে আবেদন করতে তিন শত থেকে পাঁচ শত টাকা লাগে কমপক্ষে। এত টাকা বেকাররা কোথায় পাবে যে মাসে মাসে আবেদন করবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে?অবশ্য এসব ক্ষত্রে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আবেদন ফী নিয়ে থাকেনা সাধারণত। তারপরও কিছু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান আবেদন করতে টাকা নেয়। রাষ্ট্রের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম এসব অবদান আমরা আর কতদিন রেখে যাব এবং সাংসদরা আর কতদিন শুল্ক মুক্ত গাড়ি কিনে যাবে?
অবদান-২
যাতায়াত খরচঃ বেশির ভাগ চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা হয় ঢাকাতে। কিছু কিছু নিয়োগ পরীক্ষা হয় বিভাগীয় শহরে আর সামান্য কিছু চাকরীর নিয়োগ পরীক্ষা হয় জেলা শহরে।যারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল অথবা ঢাকার বাহিরে থাকেন তাদের ঢাকা এসে পরীক্ষা দিতে হয়। এতে বিপুল পরিমান অর্থ ব্যায় হয়। যা একজন বেকারের পক্ষে ব্যায় করা অসম্ভব প্রায়। একটি উদাহরণ দেই।ধরুন একজন রাজশাহী থেকে ঢাকায় এসে একটি ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষা দিবে। রাজশাহী থেকে ঢাকার বাস ভাড়া পাঁচ শত টাকা। তাহলে তাকে শুধু যেতে,আসতে বাস ভাড়াই দিতে হবে এক হাজার টাকা। এর সাথে বাসে উঠতে ও বাস থেকে নামার পর নানান ভাড়া মিলিয়ে প্রায় আরো এক হাজার টাকা খরচ হবে। তাহলে এই দুই হাজার টাকা একজন কোথায় পাবে? কারো যদি মাসে দুইটা পরীক্ষা দিতে ঢাকা আসতে হয় তাহলে তার কি হবে? এতো গেলো রাজশাহী থেকে ঢাকা আসার উদাহরণ। এছাড়াও দেশের নিভৃত প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চাকরী প্রার্থী ঢাকায় আসে। তাদের এর চেয়েও বেশী ব্যায় করতে হয়। যা একজন বেকারের পক্ষে কতটা কঠিন তা কেবল ভুক্ত ভোগী মাত্রই জানে। রাষ্ট্রের কাছে প্রশ্ন,মাগো তোমার নেতানেত্রী বিদেশ ভ্রমণ করতে পারে তোমার টাকায় কিন্তু কেন তোমার বেকার সন্তানদের নিয়োগ পরীক্ষা দিতে আসতে হয় কষ্ট করে বাস ভাড়া দিয়ে?
অবদান-৩
হোটেল ভাড়া,খাওয়া খরচঃ অনেক নিয়োগ প্রার্থী আছে যাদের ঢাকা বা বিভাগীয় শহরে পরিচিত কেউ নেই। তাদের বাধ্য হয়ে হোটেলে থাকতে হয়। টাকা দিয়ে খাবার কিনে খেতে হয়। এই অসহায় বেকারদের কেউ দেখার নেই। এমনও ঘটেছে যে কোন পরীক্ষার্থী টাকার অভাবে কোন মসজিদে অবস্থান নিয়েছে থাকার জন্য।কেউ কেউ বাড়ি থেকে চিড়া,মুড়ি নিয়ে আসে যদি দুটো টাকা বাচিয়ে পরবর্তীতে আরেকটা চাকরীর আবেদন করা যায় সেই আশায়।
এসব খরচ ছাড়াও আরো অনেক খরচ আছে যা একজন নিয়োগ প্রার্থীকে করতে হয় নিয়োগ আবেদন থেকে শুরু করে শেষ অবধি।বেকারদের এই দুঃখ-কষ্ট কেউ শুনতে পায় না,শুনতে চায়ও না। রাষ্ট্র বিদেশ ভ্রমণে ব্যস্ত, রাষ্ট্রের মন্ত্রীরা সেলফি তুলতে ব্যস্ত,রাষ্ট্রের জাতীয় নেতা-নেত্রীরা বোমা মারতে ব্যস্ত,বুদ্ধিজীবিরা টকশোতে ঝগড়া করতে ব্যস্ত, লাল-নীল-বেগুনী দল নিয়ে ব্যস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা, ছাত্রনেতারা চাঁদাবাজী আর টেন্ডারবাজী নিয়ে ব্যস্ত। রাষ্ট্রকে খুব প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে ও আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি, তুমি কি আমায় ভালবাসো?
কৃতজ্ঞতাঃ বন্ধু আল-হেলাল মণ্ডলকে।
লেখকঃ তানজির খান
কবি,ব্লগার ও উচ্চ শিক্ষিত বেকার
[email protected]
৩০ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:০০
তানজির খান বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই
২| ৩০ শে জুন, ২০১৫ ভোর ৪:৩০
সপ্নময় তপু বলেছেন: ভাই, আমি আপনার প্রতিটি শব্দ পড়ে বাক রুদ্ধ হয়েছি।আমি নিজেই গত চার বছর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় গিয়ে কত যে পরিক্ষা দিয়েছি। আমার প্রায় লাখ খনেক টাকা গেছে। এরপর ঢাকায় গিয়ে প্রস্ন ফাস, এস এম এস দেখে কিছু লোকের উত্তর দেওয়া তো আছেই। পরিক্ষা দেওয়া বন্ধ করেছি এখন । বি সি এস ও আর দিব না। যদি আরো এক বছর বয়স আছে। প্রাইভেট চাকুরে হয়েই দিন কাটানো ভাল। বাই দ্য অয়ে আমি চারটি সরকারি ব্যাংক সহ পাচটি ভাইবা দেওয়ার দুয়ার পর্যন্ত গেছি। সেখানে আরেক বানিজ্য। এই দেশে এখন মাতসান্যয় চলছেরে ভাই। টাকা বা লবইং বা অন্ধ পড়ার ক্ষমতা না থাক্লে পরিক্ষা না দেওয়াই ভালো। তবে এটা আমার মত ব্যার্থের ব্যাক্তিগত মত
৩০ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:০৩
তানজির খান বলেছেন: তপু ভাই এটাই আসলে আমাদের মত মানুষের ভাগ্য। তারপরও চেষ্টা করছি। আল্লাহ আপনাকে,আমাকে,আমাদের সবাই কে কাঙ্খিত জীবন দিক সেই দোয়া করি। অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
৩| ৩০ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:২৮
অব জার ভার বলেছেন: "রাষ্ট্রকে খুব প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে ও আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি, তুমি কি আমায় ভালবাসো?"-------চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না রে ভাই
৪| ৩০ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৫
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: পুরো দেশ ডিজিটাল হলেও, কিছু কিছু এনালগ সিস্টেম রয়েই গেছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে চাকুরীর আবেদনের জন্য পে অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাফ্ট করা। কবে যে এসব বন্ধ হবে? সার্টিফিকেটই যথেষ্ট চাকুরীর আবেদনের জন্য। আসলেই প্রাইভেট জবগুলো এখন কত সহজ হয়ে গেছে, কমপক্ষে এই আবেদন করার প্রেক্ষাপটে। যেমন, বিডিজবস এর বেশীরভাগ সার্কুলারে এপ্লাই অনলাইন এ ক্লিক করে পাসওয়ার্ড আর কাঙ্ক্ষিত সেলারি দিয়ে দিলেই ল্যাঠা চুকে যায়। নিন্দুকেরা বলেন বিডিজবস টাইপের সাইট হতে কোন চাকুরী পাওয়া যায় না। মজার ব্যাপার আমি কিন্তু দুটো জবস পেয়েছি বিডিজবস থেকেই। আর সরকারী বা ব্যাঙ্কে চাকুরীর ইচ্ছা কোন কালেই ছিল না, কক্ষনো চেষ্টাও করিনি।
যাই হোক একদিন অবস্থা পাল্টাবে এই আশা রাখি, আমাদের বেকারসমাজ এসব হয়রানি থেকে মুক্তি পাবে।
ভালো থাকুন সবসময়, শুভকামনা রইল।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে জুন, ২০১৫ ভোর ৪:০৯
শাহেদা শেলী বলেছেন: ভালো