![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আবিষ্কৃত সমস্ত মন্দ গুণাবলি আমাকে বর্ণনা করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে যাবে।
‘স্যার, তৃতীয় মুক্তিযুদ্ধ তো শুরু হয়ে গেছে। হলের বড় ভাইয়েরা দল বেঁধে অস্ত্র হাতে জাফলঙ্গের ওদিকে রওনা হয়ে গেছে রাতেই। ভার্সিটির সব স্যারেরা মিলে সকালে চলে গেছে রাতের দলটার সাথে যোগ দিতে। আমরা ফার্স্ট ইয়ারের ব্যাচ এখনই রওনা দিব। আপনি যাবেন না স্যার?’ তীব্র উত্তেজনায় এক নি:শ্বাসে কথাগুলো বলে হাঁপাতে লাগল ছেলেটা।
একনিবিষ্ট মনে একটা খেলনা প্লেনের ওপর ঝুকে কী কারিকুরি যেন করছিলেন স্যার। হাতে স্ক্রু–ড্রাইভার, পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কিছু বোল্ট আর সেগুলোর নাট। ছেলেটার দিকে চশমার ফাঁক দিয়ে একবার তাকিয়েই আবার মুখ নামিয়ে নিলেন তিনি।
‘এখনি না!’ কাঁপাকাঁপা গলায় বলে উঠলেন স্যার। আচমকা ছাত্রের আগমন আর তার এই প্রশ্ন, দুইয়ের কারনে হাত থেকে একটু হলেই ফসকে গিয়েছিল স্ক্রু-ড্রাইভারটা। প্রচন্ড এক আতংকে পেটের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠেছিল তার, সেটার রেশ এখনও যাচ্ছেনা। ‘আমি এখানে ড্রোন বানাচ্ছি।’ ফ্যাসফ্যাসে কণ্ঠে বললেন তিনি। ‘গোলা আর বোম নিয়ে এটা আকাশে উড়বে, উড়ে গিয়ে হানাদার বাহিনির ঘাঁটি ধ্বংস করে দিবে। আমাদের ক্যাযুয়াল্টিযের পরিমাণও কম হবে।’ প্লেনের ওপর থেকে মুখ না তুলেই বলছেন স্যার। ‘আর আমাকেও একটু থিতু হতে দাও। আমি কিছুদিনের মধ্যে চা বাগানের ভেতরে যেই ক্যাম্প আছে আমাদের, সেখানে লেফট-রাইট শিখতে যাব।’
‘ও...আচ্ছা স্যার।’ আধা মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে হাবা হাবা হয়ে যাওয়া চেহারায় জবাব দিল ছেলেটা।
‘আর শোন,’ নিজেকে সামলে নিয়ে স্যার বলতে লাগলেন ‘হুটহাট করে যখন তখন আমার রুমে এসে এসব প্রশ্ন করবেনা। ড্রোন না বানিয়ে এখনই যদি তোমাদের সাথে আমি চলে আসি, তবে এটা বানাবে কে? এখন যাও আর যাওয়ার আগে দরজা লক করে যাও। যুদ্ধের পর এসে দেখবে আমার ড্রোন বানানো প্রায় হয়ে গেছে।’
----------------
ঘর থেকে বের হয়ে দরজা লাগিয়ে চলে আসল স্যারের ছাত্রটা। হাঁটছে, আর বিড়বিড় করে আনমনেই আওড়াচ্ছে ছোটবেলায় পড়ে আসা নন্দলালকে নিয়ে লেখা কবিতাটা। একরাশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবতে লাগল, বেঁচে থাকলে দেশের কোন এক দৈনিকে একদিন হয়ত সে দেখতে পাবে স্যারের লেখা কলাম, “সাদাসিধে কথাঃ তোমরা যারা এবারের মুক্তিযুদ্ধে যাওনি”।
বি.দ্রঃ
(১) স্যার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যাননি। সাড়ে আট মাস ধরে পালিয়ে বেড়িয়ে ‘একটু’ থিতু হওয়ার পর যখন তিনি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য ইচ্ছে পোষণ করলেন, ঠিক তখন তার এই ইচ্ছের প্রভাবেই শুধু পাক বাহিনী ১৩ দিনের মাথায় বাপ বাপ করে আত্মসমার্পন করে ফেললো।
(২) স্যার কিন্তু শাহবাগের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। একদিনের কিছু অংশ সময় সেখানে থেকে যুদ্ধও করেছিলেন।
(৩) বাস্তবের কোন চরিত্রের সাথে আমার গল্পের স্যারের চরিত্র মিলে যাওয়াটা একেবারেই কাকতালীয়।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:৩২
নুর ইসলাম রফিক বলেছেন: বাস্তবের কোন চরিত্রের সাথে গল্পের স্যারের চরিত্র মিলে যাওয়াটা একেবারেই কাকতালীয়।হাহাহাহাহাহা