নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যের সন্ধানে.......

নূরুল্লাহ তারীফ

নূরুল্লাহ তারীফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামী শিক্ষা বনাম সাধারণ শিক্ষা

০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:২৮

বান্দার দ্বীনদারি ও পরহেযগারির কেন্দ্রবিন্দু হলো- কল্যাণকর জ্ঞান ও নেকআমল, এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। অনুরূপভাবে সর্বস্তরের মুসলমান এ কথা স্বীকার করেন, সে জ্ঞান ও আমল নির্ভরশীল হতে হবে আল্লাহ্র কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহ্র (আদর্শ) ওপর। যে কিতাব বাতিলের ধরা-ছোঁয়ার ঊর্ধ্বে এবং যে রাসূলকে (সাঃ) আল্লাহ্ তাআলা সঠিক নির্দেশনা ও সত্য ধর্ম দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যেন সকল ধর্মের উপরে তিনি এই ধর্মকে বিজয়ী করতে পারেন। কিতাবটির হেফাযতের দায়িত্ব আল্লাহ্ তাআলা নিজেই নিয়েছেন, তিনি বলেন: "নিশ্চয় আমরা স্মরণিকা (কুরআন) নাযিল করেছি, নিশ্চয়ই আমরা এর হেফাযতকারী।"[সূরা হিজর, আয়াত ১৫:৯] আর সুন্নাহ্কে হেফাযত করার জন্য প্রখর ধীশক্তির অধিকারী একদল চৌকষ ব্যক্তিবর্গকে সামর্থ দিয়ে যাচ্ছেন, যারা বেদাতীদের বিকৃতি থেকে, সুযোগ সন্ধানীদের অপদাবী থেকে এবং মূর্খদের অপব্যাখ্যা থেকে রাসূলের সুন্নাহ্কে রক্ষা করে আসছেন।
কুরআন ও সুন্নাহ্কে আঁকড়ে ধরার কারণে এ উম্মতের শুরুরকালটা ছিল সোনালী যুগ। আর এদুটোকে ছেড়ে দেয়ার সাথে সাথে দুর্গতি শুরু হয়। অতএব এ উম্মতের শেষ প্রজন্মের সংশোধনও পুনরায় সেভাবে সাধিত হবে যেভাবে প্রথম প্রজন্মের সংশোধন সাধিত হয়েছিল। যতদিন উম্মতে মুসলিমা এ দুটোকে আঁকড়ে ধরে রেখেছিল ততদিন ধর্মীয় ব্যাপারে তারা নিরাপদে ছিল। কিন্তু হিজরী দ্বিতীয় শতকের শেষ দিকে এসে উম্মাহ্ এদুটো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অষ্টম শতকের আল্লামা, ইসলামের সূর্য, হাদীসের হাফেজ মুহাম্মদ বিন আহমাদ যাহাবী তার "তাযকিরাতুল হুফ্ফাজ"- 'হাদীসের হাফেজদের স্মারক' নামক গ্রন্থে [খ:১, পৃ:৩২৮] বলেন, "দ্বিতীয় শতকের প্রারম্ভে মামুন খেলাফত লাভ করার পর শিয়াবাদ মাথাছাড়া দিয়ে উঠে, এ মতবাদের আসল চেহারা প্রকাশ পায়, যুক্তিশাস্ত্রের প্রকাশ ঘটে, প্রাচীনদর্শনশাস্ত্র ও গ্রিকতর্কবিদ্যার আরবী অনুবাদ করা হয়, জ্যোর্তিবিদ্যার সূচনা ঘটে- এভাবে সম্পূর্ণ অভিনব নিষ্ফলা ধ্বংসাত্মক এক শাস্ত্রের জন্ম হয় যে শাস্ত্রের সাথে নবুয়তী জ্ঞানের কোন সাযুজ্য নেই, মুমিনদের একত্ববাদের কোন মিল নেই- অথচ এর আগে উম্মাহ্ এসব আপদ থেকে নিরাপদে ছিল।" আরেকটু অগ্রসর হয়ে যাহাবী বলেন, "তালিবে ইলমের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়, হাদীস ও সুন্নাহ্র শত্রুরা তালিবে ইলমকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ শুরু করে। তৎকালীন আলেমসমাজ ইসলামের শাখা বিধানগুলোর ক্ষেত্রে কোনরূপ বাছ-বিচার ছাড়াই পূর্ববর্তীদের অনুকরণে (তাকলীদে) ব্যাপকভাবে আসক্ত হয়ে পড়ে এবং প্রাচীনদর্শন ও যুক্তিবাদীদের যুক্তির প্রতি ঝুঁকে পড়ে, অথচ এসব দর্শন ও যুক্তিমালার অধিকাংশই ছিল তাদের কাছে অবোধ্য।"

আধুনিক জ্ঞানের প্রসার:[/sb[/sb
এভাবে হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর পর থেকে যাহাবীর যুগ পেরিয়ে আমাদের যুগাবধি কুরআন ও সুন্নাহ্র জ্ঞান বিলুপ্ত হতে থাক। কিন্তু বিগত প্রতিটি শতাব্দীতে আল্লাহ্ তাআলা কোন না কোন একজন আলেমকে নিয়োজিত করেছেন কুরআন ও সুন্নাহ্র সংরক্ষণে এবং এ দুটির হারানো ঐহিত্যকে পুনরূদ্ধারে। "এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত উম্মতের একটি দল সঠিক পথে অটল থাকবে।"
সময় যত অগ্রসর হচ্ছে, এ উম্মতের অবস্থা ততই খারাপে যাচ্ছে - এটাই তো বান্দার জন্য আল্লাহ্ তাআলার চিরন্তন নিয়ম- আমরা দেখতে পাচ্ছি- সময় বদলে গেছে। মানুষ নবুয়তী জ্ঞান বাদ দিয়ে নিরেট বস্তুবাদী জ্ঞানে দীক্ষিত হচ্ছে। এ যুগেকার মানুষের মাঝে আল্লাহ্র বাণীর সত্যতা ফুটে উঠেছে- "অতঃপর যা দিয়ে তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হতো, তারা যখন তা ভুলে গেল, তখন আমরা তাদের জন্য সবকিছুর দরজা উন্মোচন করে দিলাম।"[সূরা আনআম ৬:৪৪] আজ জ্ঞান বলতে বুঝায় পদার্থবিদ্যা, ধাতব্যবিদ্যা, রসায়নশাস্ত্র, প্রকৌশলবিদ্যা, অর্থনীতি, ব্যবসায় শিক্ষা, নির্মাণশাস্ত্র। এসব জ্ঞানের পথ উন্মুক্ত হওয়ার পর মানুষের মাঝে কল-কারখানা, শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার হিড়িক পড়ে যায়। এভাবে অর্জিত হয় অঢেল সম্পদ ও অবাধ বিলাসিতা। "যারা দুনিয়া ও এর শোভা কামনা করে আমরা দুনিয়াতেই তাদের কর্মফল পুরোপুরি দিয়ে দিই, এখানে তাদেরকে কম দেয়া হবে না।"[সূরা হুদ ১১:১৫]

এহেন পরিস্থিতিতে মুসলিম সমাজে "ইল্ম-ঈমান ও নেকআমলের অস্তিত্ব আশা করা যায় কিভাবে? অথচ এ দুটি ছাড়া একজন মুসলমানের দুনিয়া ও আখেরাতে নাজাত হবে না। সত্যি, আজ কুরআন-সুন্নাহ্র নামটা ছাড়া আর কিছু বাকী নাই, এ দুইয়ের আমল বলতে শুধু কপিকরণটাই আছে। এ যেন নবীজির (সাঃ) এর বাণীর বাস্তব প্রমাণ- "ইসলামের শুরুটা ছিল নিঃসঙ্গ, এবং অচিরেই ইসলাম সঙ্গীহীন হয়ে পড়বে, ঠিক যেভাবে শুরু হয়েছিল।" নিকট অতীতে আপদটা ছিল- অর্বাচীন সব বিদ্যা নিয়ে মেতে থাকা। আর আজকের আপদ হলো ভোগবাদী বিদ্যাগুলো নিয়ে ব্যস্ত হওয়া। আর এ দুটিই হচ্ছে- সকল অনিষ্টের মূল।

সঠিক অবস্থান কী হওয়া উচিত?
অনুগ্রহমণ্ডিত এ উম্মাহ্র অধিকাংশ ব্যক্তি উম্মাহ্র গৌরবময় জ্ঞানভান্ডারের ব্যাপারে বেখবর। বস্তুবাদী জ্ঞানের চাকচিক্যে, পৃথিবীর সুমিষ্ট স্বাদ পেয়ে তারা তাদের নবীর রেখে যাওয়া কুরআন ও সুন্নাহ্র জ্ঞানের কথা বেমালুম ভুলে গেছে। কিন্তু এতে আল্লাহ্র, অথবা আল্লাহ্ মনোনীত বান্দাদের কিছু আসে যায় না। কারণ ইলম ও ঈমান তাদের স্বমর্যাদাতে অটুট আছে। এ দুয়ের ধারণকারীরা এদের মর্যাদা সম্পর্কে সম্পক অবহিত। "অতএব এরা যদি এসবকে (কিতাবসমূহ, হিকমত ও নবুয়তকে) অস্বীকার করে, তবে আমরা এসবের (সুরক্ষার) দায়িত্ব এমন সম্প্রদায়ের উপর ন্যস্ত করেছি যারা এসবের অস্বীকারকারী নয়।"[সূরা আনআম ৬:৮৯]
পুরাকালের বা আধুনিকযুগের প্রকৃত জ্ঞান কোনটি? আল্লাহ্ তাআলা তার রাসূলদেরকে যা দিয়ে পাঠিয়েছেন এবং যার মাধ্যমে তিনি সৃষ্টিকুলকে তার ধর্মের ও ধর্মীয় অনুশাসনের পথ দেখিয়েছেন তা ছাড়া অন্য আর কী? আলেম (জ্ঞানী) কারা? জ্ঞানের চাহিদামাফিক আমলদার, আল্লাহ্ভীরু ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ কী? "আল্লাহ্র বান্দাদের মধ্যে একমাত্র আলেমরাই তাঁকে ভয় করেন।"[সূরা ফাতির ৩৫:২৮]
এই জ্ঞানের বিপরীতে রয়েছে আধুনিক জ্ঞান। যে জ্ঞান তার ধারককে পৃথিবীতে অমরত্ব লাভের, কুপ্রবৃত্তির অনুসরণের পথ দেখায়। এ জ্ঞানের সর্বশেষ অর্জন হচ্ছে গণবিধ্বংসী আনবিক বোমা আবিষ্কার।[প্রবন্ধটির জন্মলগ্নে পারমানবিক বোমা আবিষ্কৃত হয়নি] এ বোমা আবিষ্কার শেষ হতে না হতেই তারা অনুতপ্ত হয়েছে। "তাদের কাছে যখন তাদের রাসূলেরা সুস্পষ্ট প্রমানাদি নিয়ে আগমন করলেন, তখন তারা তাদের জ্ঞান গরিমার দম্ভ প্রকাশ করেছিল। এবং তারা যে বিষয় নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত সেটাই তাদেরকে গ্রাস করে নিল।"[সূরা মুমিন, ৪০:৮৩]

যেহেতু এ যুগে এসব জ্ঞান না শিখলে মুসলমানদের জীবন ও জীবিকার চাকা বন্ধ হয়ে যাবে, তারা সমরশক্তিতে পিছিয়ে পড়বে, শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারবে না, সেহেতু এসব জ্ঞান অর্জন করা ছাড়া মুসলমানদের কোন গত্যন্তর নাই। তাই অন্যান্য বৈষয়িক উপায়-উপকরণের মত এসব জ্ঞান আয়ত্ব করাতে কোন দোষ নেই। "(হে রাসূল) বলুন, আল্লাহ্ তার বান্দাদের জন্য যে সাজ উৎপাদন করেছেন এবং পবিত্র খাদ্যসমূহ হারাম করেছে কে? আপনি বলুন, এসব নেয়ামত পার্থিব জীবনে মুমিনদের জন্য।"[সূরা আরাফ, ৭:৩২] আল্লাহ্ তাআলা বলেন, "তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সাধ্যানুযায়ী সকল শক্তি প্রস্তুত রাখ।"[সূরা আনফাল, ৮:৬০]

মুমিনদের জন্য আধুনিক জ্ঞান অর্জন করা যখন বৈধ তবে কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান অর্জন না করলেও কী চলে? নাকি তাদেরকে কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান অর্জন করতেই হবে? জবাবে বলা হবে- যে জ্ঞানের উপর নির্ভর করে আছে মুমিনদের ধার্মিকতা, তাদের ইহকালীন ও পরকালীন যাবতীয় কল্যাণ, এমন জ্ঞান অর্জন না করলে কিভাবে চলবে? সুতরাং সব কিছুর আগে তাদের উপর কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান অর্জন করা ওয়াজিব। কিন্তু আধুনিক জ্ঞান কতটুকু শিখতে হবে?

এ দুই জ্ঞানের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা
যদি আমরা দুনিয়ার জীবনকে, মৃত্যুর পরের যে জীবনের অপেক্ষায় আমরা আছি সে জীবনের সাথে তুলনা করি তাহলে এর সঠিক জবাব পাওয়া যাবে। সত্তাগতভাবে আধুনিক জ্ঞান নিছক দুনিয়ার সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান এমন নয়। বরং কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে সঠিক পথের দিশা দেয়। তাছাড়া আধুনিক জ্ঞানের বিকাশে, প্রযুক্তি বিদ্যা প্রণয়নে, প্রযুক্তির ব্যবহারে কাফের-মুসলিম সবাই সমান। কিন্তু কাফের ব্যক্তি এ জ্ঞানগুলোকে নিছক দুনিয়াবী স্বার্থে ব্যবহার করে। পক্ষান্তরে মুসলিম ব্যক্তি অপরাপর বিষয়ের ন্যায় এ জ্ঞানগুলোকেও তার দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণে ব্যবহার করে।

কুরআন ও সুন্নাহ্র জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ্কে জানা, তার একত্ববাদকে জানা, এককভাবে তার ইবাদত করার পদ্ধতি শেখা। এ লক্ষ্যেই দুনিয়া এবং এর মধ্যস্থিত সবকিছুকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ কারণেই জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করা হয়েছে। আর আধুনিক জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য হলো- ঐ অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য মাধ্যম হিসেবে নশ্বর বস্তুবাদী সুবিধা অর্জন। আর এ দুই উদ্দেশ্যের মাঝে ফারাক হলো- ইউসুফ (আঃ) কে ক্রয় ও গুটিকতক দিরহামের মাঝে যে তফাৎ সে তফাৎ। এ দুটির ফারাক হলো- আল্লাহ্র যিকির, তাঁকে ভালোবাসা এবং পানাহার ও পরিধানের মাঝে যতটুকু তফাৎ ঠিক ততটুকু তফাৎ। দ্বিতীয়টি- আল্লাহ্ যাদেরকে ভালোবাসেন অথবা যাদেরকে ভালোবাসেন না, সবাই পেতে পারে। কিন্তু প্রথমটি কেবল আল্লাহ্ যাদেরকে ভালোবাসেন তারাই পেয়ে থাকে। এতেই বুঝা যায় কোন জ্ঞান অগ্রাধিকার পাবে? এবং দুটির মর্যাদার তারতম্য কতটুকু?
অতএব মুসলমানকে যেহেতু আধুনিক জ্ঞানও শিখতে হবে এবং কুরআন ও সুন্নাহ্র জ্ঞান অর্জন করাও তার জন্য আবশ্যকীয় সুতরাং তার উচিত উল্লেখিত তারতম্যটাকে মনে রেখে এ দুটোর উপরই গুরুত্ব দেয়া। উদাহরণত যদি কোন ছাত্র গণিত, কৃষিশিক্ষা ও রসায়ন অধ্যয়নে এক ঘন্টা সময় ব্যয় করে তাহলে কুরআন, হাদীস ও ফিকাহ অধ্যয়নে তার ন্যূনতম দুই ঘন্টা সময় ব্যয় করা উচিত। এর বিপরীতটা করা সমীচীন হবে না।

সাধারণ শিক্ষা কারিকুলাম থেকে দ্বীনি শিক্ষা উঠিয়ে দেয়ার কুফল
ছাত্র সে যে স্তরেরই হোক না কেন, ইসলামী শিক্ষাকে বাদ দিয়ে শুধু বৈষয়িক শিক্ষায় তার সম্পূর্ণ সময় ব্যয় করবে, এ চিন্তাও করা যায় না। ইদানিং ইউরোপ ও আমেরিকার অধিবাসী পাশ্চাত্যের জাতিসমূহের অনুকরণে মুসলিম বিশ্বে যেসব বিদ্যালয়-মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হতে লেগেছে সেগুলোতে এটাই হচ্ছে। এর ফলে ছাত্ররা কল্যাণকর জ্ঞান ও নেক আমল থেকে বঞ্চিত হবে। কারণ মানবাত্মা নগদের প্রতিই বেশী আগ্রহী; বিশেষত সে নগদটা যদি পার্থিব কিছু হয়। আর বাকীর প্রতি বিরাগী। আল্লাহ্ তাআলা বলেন, "কক্ষনো নয়, বরং তোমরা ইহকালকে ভালোবাস। আর পরকালকে উপেক্ষা কর।"[সূরা কিয়ামাহ্, ৭৫:২০,২১] এ কারণে রাসূল (সাঃ) কুরআনের হাফেজকে মুখস্তকৃত অংশটাকে বিরতহীনভাবে পুনঃ পুনঃ পাঠ করার উপর জোর তাকিদ দিয়েছেন। যেহেতু কুরআনে কারীম লাগামের জন্য প্রস্তুতকৃত উটের চেয়েও অবাধ্য।
হ্যাঁ, পরিপূর্ণভাবে পার্থিব জ্ঞান অর্জনে আত্মনিয়োগ করা তাদের জন্য সমীচীন হবে যাদের জন্য আখেরাতে কোন প্রাপ্তি নেই, যারা আল্লাহ্র সাক্ষাৎ প্রত্যাশা করে না। দুনিয়ার জীবন নিয়ে যারা সন্তুষ্ট ও নিশ্চিন্ত। আর মুমিন, যিনি দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ প্রত্যাশী, তার তো সে সুযোগ নাই। যেহেতু মুমিন এমন এক ব্যবসার আশ্বাসী যে ব্যবসাতে লোকসান নাই।
মুসলমানেরা জাগতিক জ্ঞান নিয়ে যতই মগ্ন থাকুক না কেন, কল-কারখানা ও পরীক্ষাগারে জাগতিক জ্ঞানের যতই প্রয়োগ ঘটাক না কেন, কোন অবস্থাতে কোন সময়ে ফরজ ইবাদত আদায়ের ব্যাপারে তাদের গাফেল হওয়ার সুযোগ নেই। আর ইলমে দ্বীন তাদেরকে তাদের ইবাদত-বন্দেগী আদায়ের সঠিক নির্দেশনা প্রদান করে। বিশেষভাবে আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের কথা উল্লেখ করছি। নামাজ হচ্ছে ইসলামের ভিত্তি। কোন গবেষণা ল্যাবে, অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অথবা অফিস-আদালতে থেকে নামাজ পরিত্যাগ করার কোন সুযোগ নাই।

ইসলামে নামাজের মর্যাদা:
কুরআন ও সুন্নাহ্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশটি হচ্ছে- নামাজ কায়েম করা। উমর ফারুক (রাঃ)- যিনি ছিলেন ইসলামের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক শাসক- নামাজের মর্যাদাকে যেভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আর কেউ সেভাবে করতে পারেননি। তিনি তার অধীনস্থদের কাছে লিখতেন "আমার কাছে তোমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- নামাজ। যে ব্যক্তি নামাজের হেফাযত করে, নামাজকে রক্ষা করে সে যেন গোটা দ্বীনকে রক্ষা করে। আর যে ব্যক্তি নামাজের খেয়ানত করে, সে অন্য ক্ষেত্রে আরো বেশী খেয়ানতকারী।"
কুরআন ও সুন্নাহ্র জ্ঞানের এটাই মূলদাবী। কিন্তু বড় আশ্চর্যের ব্যাপার হলো- ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায় ইসলামী নিদর্শনগুলোর মধ্যে সর্বাগ্রে বিলুপ্ত হয় নামাজ। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবীজির আমলে মানুষের অবস্থা যেমন ছিল সে অবস্থার পরিবর্তন দেখে, বিশেষত নামাজ কায়েমের ব্যাপারে মানুষের অবহেলা দেখে তিনি আফসোস করেছেন এবং এ অবস্থার নিন্দা করেছেন। এ কথা জানা যায়- নামাজের প্রাণ, নামাজীর একাগ্রতা সাহাবীদের যুগ থেকেই হারিয়েছে। হুযাইফা (রাঃ) বলেন, "আমার আশংকা হচ্ছে- অচিরেই তুমি জামে মসজিদে প্রবেশ করবে, কিন্তু নামাজীদের মধ্যে একাগ্রচিত্তের কোন নামাজী পাবে না।" অতএব জানা গেল ইসলামী জ্ঞান অর্জনের মূল উদ্দেশ্য হলো- আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহ্র জ্ঞানের বাস্তব প্রতিফলন ঘটানো, শুধু অর্জন নয়।

নিছক ছাত্রত্ব ও আমলের উদ্দেশ্যে ইলম অর্জনের মাঝে পার্থক্য:
এ কারণে আল্লাহ্ভীরু আলেমরা আমলবিহীন ইলম অর্জনের আগ্রহ বেড়ে যাওয়াকে চরম ভয় করতেন। কুরআনে কারীমে যে আধিক্যলিপ্সার তিরস্কার করা হয়েছে- এটাও সে শ্রেণীর। সুফিয়ান সওরী - যাকে হাদীস শাস্ত্রে মুমিন উম্মতের ইমাম বলা হয়- (মৃ ১৬১হিঃ) বলেন, হাদীসের জ্ঞান অর্জন তো মৃত্যুর প্রস্তুতিমূলক নয়, বরং তা হলো এমন এক ব্যধি যা নিয়ে সুপুরুষরাই ব্যতিব্যস্ত হয়।" ইমাম যাহাবী (রাঃ) উক্ত বাণীটি উদ্ধৃত করার পর বলেন, "আল্লাহ্র শপথ! তিনি সত্য বলেছেন। নিশ্চয় হাদীসের জ্ঞানার্জন এক জিনিস, আর হাদীস এক জিনিস।" আরেকটু সামনে এগিয়ে যাহাবী বলেন, "যদি হাদীস শাস্ত্রের মধ্যেও ভেজাল ঢুকতে পারে তাহলে যুক্তিবিদ্যা, তর্কশাস্ত্র ও প্রাচীন দর্শনশাস্ত্র, যেগুলো ঈমান ছিনিয়ে নেয়, সন্দেহ ও অস্থিরতা সৃষ্টি করে সেগুলোর অবস্থা কি হতে পারে?
আল্লাহ্র শপথ এ শাস্ত্রগুলোর অস্তিত্ব সাহাবীদের ইলমও নয়, তাবেয়ীদের ইলমও নয়।"[তাযকিরাতুল হুফ্ফাজ, ১ম খণ্ড, পৃঃ ২০৫]
সুফয়ান সওরী বলেন, "এই জ্ঞান অর্জন করতে হবে, এর মাধ্যমে আল্লাহ্কে ভয় করার জন্য। আর এ দিক থেকেইতো এ জ্ঞানের মর্যাদা বেশী। তা না হলে এ জ্ঞানও অন্যান্য জ্ঞানের ন্যায় বিবেচিত হতো।" এসব সত্ত্বেও সবচেয়ে উত্তম জ্ঞান হলো- কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান। সুফিয়ান সওরী আরো বলেন, "নিয়ত যদি খাঁটি হয় তাহলে হাদীসের জ্ঞানার্জনের চেয়ে উত্তম কোন আমল নেই।" অর্থ্যাৎ যদি এ জ্ঞান অর্জন করা হয় একনিষ্ঠভাবে আমল করার জন্য, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়।
সমাপ্ত
আব্দুস সামাদ শারাফুদ্দিন ভারতের এই মহান আলেমে দ্বীন জীবনভর স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করেন। ৫০ এর দশকে আনুমানিক ৫০ বছরে তিনি পবিত্র হজ্বব্রত আদায় করার উদ্দেশ্যে মক্কায় আগমন করেন। এখানে এসে তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়। তিনি আর দেশে না ফিরে মক্কার দারুল হাদীস মাক্কীয়া ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন। আরবী ভাষা আত্মস্থ করেন এবং হাদীস শাস্ত্রে বুৎপত্তি অর্জন করেন। ইবনে হাজার আসকালানী প্রণীত ছয়টি হাদীস গ্রন্থের ইনডেক্স গ্রন্থ “তুহফাতুল আশরাফ” নামক গ্রন্থের পাঠোদ্ধার ও সম্পাদনার মহান কাজটি আঞ্জাম দিয়ে খ্যাতি লাভ করেন। উক্ত গ্রন্থের ভূমিকাতে তিনি যে প্রবন্ধটি লিপিবদ্ধ করেছেন সেটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে সামহ্যোয়ারের পাঠকদের জন্য অনুবাদ করা হল।

অনুবাদ: মুহাম্মদ নূরুল্লাহ্‌ তারীফ
বিঃদ্রঃ শিরোনামটি অনুবাদকের সংযোজিত।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৩/-৬

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: উদাহরণত যদি কোন ছাত্র গণিত, কৃষিশিক্ষা ও রসায়ন অধ্যয়নে এক ঘন্টা সময় ব্যয় করে তাহলে কুরআন, হাদীস ও ফিকাহ অধ্যয়নে তার ন্যূনতম দুই ঘন্টা সময় ব্যয় করা উচিত। এর বিপরীতটা করা সমীচীন হবে না।

মাইনাচুল্লাহু খায়রান।

২| ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩৯

আরিফুল হোসেন তুহিন বলেছেন: ঠীক বলেচেন;) মাইনাস

৩| ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৮:০৮

সত্যান্বেষী বলেছেন: আরেকটা মাইনাস গ্রহণ করুন। :(

৪| ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৮:৪৬

ডিজিটালভূত বলেছেন: শিরোনামের সাথে লেখার মিল নেই। শিরোনাম হওয়া উচিত ছিল হাদীস শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা। তবে বেশী মাইনাস দেখে আমি প্লাস দিলাম।

৫| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৩:০৪

শাহাদাৎ তৈয়ব বলেছেন:

এখন থেকে আপনার দরবারে হাজিরা দেবার চেষ্টা করবো।
আপনি সামুতে লেখেন জানতাম না। লিস্টে আপনার নাম দেখে আপনার ব্লগে ঢুকলাম।

ভালো থাকুন।
শুকরিয়া।

৬| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৩:০৪

শাহাদাৎ তৈয়ব বলেছেন:

এখন থেকে আপনার দরবারে হাজিরা দেবার চেষ্টা করবো।
আপনি সামুতে লেখেন জানতাম না। লিস্টে আপনার নাম দেখে আপনার ব্লগে ঢুকলাম।

ভালো থাকুন।
শুকরিয়া।

৭| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৩:০৮

শাহাদাৎ তৈয়ব বলেছেন:

এখন থেকে আপনার দরবারে হাজিরা দেবার চেষ্টা করবো।
আপনি সামুতে লেখেন জানতাম না। লিস্টে আপনার নাম দেখে আপনার ব্লগে ঢুকলাম।

ভালো থাকুন।
শুকরিয়া।

৮| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৩:০৮

শাহাদাৎ তৈয়ব বলেছেন:

এখন থেকে আপনার দরবারে হাজিরা দেবার চেষ্টা করবো।
আপনি সামুতে লেখেন জানতাম না। লিস্টে আপনার নাম দেখে আপনার ব্লগে ঢুকলাম।

ভালো থাকুন।
শুকরিয়া।

৯| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৩:০৮

শাহাদাৎ তৈয়ব বলেছেন:

এখন থেকে আপনার দরবারে হাজিরা দেবার চেষ্টা করবো।
আপনি সামুতে লেখেন জানতাম না। লিস্টে আপনার নাম দেখে আপনার ব্লগে ঢুকলাম।

ভালো থাকুন।
শুকরিয়া।

১০| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৩:০৮

শাহাদাৎ তৈয়ব বলেছেন:

এখন থেকে আপনার দরবারে হাজিরা দেবার চেষ্টা করবো।
আপনি সামুতে লেখেন জানতাম না। লিস্টে আপনার নাম দেখে আপনার ব্লগে ঢুকলাম।

ভালো থাকুন।
শুকরিয়া।

১১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৩:০৯

শাহাদাৎ তৈয়ব বলেছেন:

এখন থেকে আপনার দরবারে হাজিরা দেবার চেষ্টা করবো।
আপনি সামুতে লেখেন জানতাম না। লিস্টে আপনার নাম দেখে আপনার ব্লগে ঢুকলাম।

ভালো থাকুন।
শুকরিয়া।

১২| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৩:০৯

শাহাদাৎ তৈয়ব বলেছেন:

এখন থেকে আপনার দরবারে হাজিরা দেবার চেষ্টা করবো।
আপনি সামুতে লেখেন জানতাম না। লিস্টে আপনার নাম দেখে আপনার ব্লগে ঢুকলাম।

ভালো থাকুন।
শুকরিয়া।

১৩| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৩:০৯

শাহাদাৎ তৈয়ব বলেছেন:

এখন থেকে আপনার দরবারে হাজিরা দেবার চেষ্টা করবো।
আপনি সামুতে লেখেন জানতাম না। লিস্টে আপনার নাম দেখে আপনার ব্লগে ঢুকলাম।

ভালো থাকুন।
শুকরিয়া।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.