![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ষড়ঋতুর মাঝে দুটা ঋতু আমার খুব প্রিয়৷ একটা হল বসন্ত আরেকটা বর্ষা৷ বসন্তে প্রকৃতি নতুন রং রূপে সেজে ওঠে একবার আর বর্ষায় বৃষ্টির জলে ধুয়ে প্রকৃতি আরো একবার স্বরূপে স্ববর্নে সেজে ওঠে৷ আর বাংলার প্রকৃতির এই সাজসজ্জাই খুব প্রিয় আমার৷
গত সোমবার গেলাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়,গাজীপুরে একাডেমির গ্রাজুয়েশনের মার্কশিট উঠাতে৷ সকালে যখন গেলাম বললো লাঞ্চের পরে দিবে৷ কি আর করা এতক্ষন সময়, কি করবো,চলে গেলাম ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান বা ন্যাশনাল পার্ক গাজীপুর৷ শহরের কোলাহল থেকে খানিক দূরে সবুজ শালবনে যেনো শহুরেদের একটু গভীর দীর্ঘনিশ্বাসের স্থান৷ সাথে বন্ধু তানভিরকে নিয়ে হাটতে লাগলাম শালবনের মাঝে সরু পথ দিয়ে৷ বনের মাঝে লেকটা এখানে সৌন্দর্য্যটা যেনো আরো বাড়িয়ে দিয়েছে৷ আগের দিন বৃষ্টি হওয়াতে মাটির সোঁদা একটা গন্ধ পাচ্ছিলাম৷ মাঝে মাঝে কোকিল আর বউ কথা কও ডেকে যাচ্ছে ৷ সবকিছু মিলে দারুন একটি বন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ বিরাজময় চারিদিক৷ প্রকৃতির এই নির্জনতা হাটতে হাটতে বেশ উপভোগ করছিলাম ৷ অদ্ভুত নাম না জানা একটা নীল রঙের পাখি উড়ে যেতে দেখলাম বনশ্রী কটেজের কাছে ৷ কি নাম ওটার ? নীল কাঠঠোকরা নাকি ! বিশাল এই উদ্যানে পুরোটা ঘুরে দেখার সময় না থাকায় ইউটার্ন করে ফিরতি পথ ধরলাম৷ ছবি তোলার জন্য পথ ছেড়ে একটু পাশে জংগলের মাঝে মাঠের মত এলাকায় গেলাম আমরা৷ কিছু ছবি তুললাম শাল বনের নির্জনতার৷ ফিরে আবার যখন পথ ধরবো একজন লোক ডাক দিলো খানিক দূর দিয়ে৷ চিৎকার করে কি যেনো দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলো মনে হয়৷ আমি ভাবলাম পথ ছেড়ে জংগলে যাওয়া নিষেধ নাকি আবার!যাহ বাবা!এখানেও এত নিষেধাজ্ঞা!!! পরে আরো কয়েকবার চিৎকার করে বলার পর তানভির বুঝলো কি বলছে লোকটা কি বলছে তা ওর কাছে দিয়ে শুনেতো আমি পুরো মাননীয় স্পিকার হয়ে গেলাম!! উনি নাকি চিৎকার করে বলতেছে, "মাইয়া লাগলে ওই দিকে চার নম্বর টাওয়ারের কাছে যান,ভাল ভাল মাল আছে!!!!" প্রকৃতির এই পবিত্রতার মাঝে এ কেমন আদিম অপ্রাকৃতিক নাকি প্রাকৃতিক কুপ্রস্তাব শুনিলাম, বড়ই অশ্লীল !!! যাক, চার নম্বর টাওয়ারের দিকে না গিয়ে উল্টো পথ ধরলাম৷ লেকের ধার দিয়ে হাটতে লাগলাম৷ কিছু লোককে দেখলাম এত কম পানিতেও মৎস্য শিকারে ব্যস্ত ৷ লাল পদ্ম ফুটে আছে লেকের এ পাশটায় যা লেকের সৌন্দর্য্যকে আরো অনেকগুনে বাড়িয়েছে৷ এবং তা আমাদের সত্যিই মুগ্ধ করলো৷ হাটতে হাটতে এবার চলে আসলাম একটা বাংলোবাড়ির কাছে ৷ বাংলোবাড়িটাকে চেনা চেনা লাগলো আমার কাছে৷ নিশ্চই কোন নাটকে দেখেছি মনে হয়৷ আরো এগোতেই মনে পড়লো৷ হ্যা,শেষের কবিতায়, নোবেল-মিমের শেষের কবিতা নাটকে এই বাংলোবাড়িটা দেখেছিলাম৷ তানভিরকে বলতে ও একমত হল আমার সাথে৷ বাড়ির গেটের সামনে কয়েকজন লোক দেখলাম৷ একজন মহিলা ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা ও আশেপাশে একদম পরিষ্কার করে ফেলছে৷ বাড়ির ভেতর থেকে একজন লোক বেড়িয়ে আসছে দেখতেই এগিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ভেতরে ঢোকা যাবে কিনা৷ বললো ,না,অনুমতি নাই৷ জিজ্ঞেস করলাম অনুমতি কোথা দিয়ে আনতে হয়? বললো তারাই অনুমতি দেয় আর প্রতিদিন খরচ আট হাজার টাকা মাত্র! মেয়ে নিয়েও থাকা যাবে নিশ্চিন্তে! তবে রাতে থাকা যাবে না৷ রাতে থাকার কোন অনুমতি নাই৷ আমি পুরো হতশ হয়ে বললাম, তাহলে থেকে আর কি লাভ! এই বনে থাকার আসল উপভোগের সময় রাত আর রাতেই নাকি থাকা যাবে না৷ এটা কোন কথা হল! বাংলোর আশেপাশে ঘুরে দেখলাম খানিকক্ষন৷ কারন বেকার মানুষ ভিতরে যাবার সামর্থ নাই আপাতত৷ বাইরে থেকে দেখেই ঘোলের স্বাদ দুধে থুড়ি দুধের সাধ ঘোলে মেটাই! সেই লোকটা এবার কাছে এগিয়ে এসে বললো ভাই মেয়ে লাগলে দেয়া যাবে, খরচ কমই পড়বে!! হায় হায়, একি ব্যাপার ! আবারো সেই আদিম কুপ্রস্তাব!!! লোকটাকে কোন মতে বুঝিয়ে শুনিয়ে বললাম যে ভাই আমরা এ কাজে আসিনি এখানে৷এমনি ঘুরে ফিরে দেখছি৷ পরে যদি এ কাজে আসি আপনার সাথেই যোগাযোগ করবোনে!!! এরপর সোজা বেড়িয়ে যাবার জন্য ফিরতি পথ ধরলাম ৷ আর শালবনে থাকা যাবেনা৷ হনহন করে হেটে ফেরার সময় তানভিরের একটা কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো ভাবছিলাম৷ ও বলছিলো, কি রে ভাই আমাগো চেহারা দেখে কি এগুলা মানে **খোর মনে হয় নাকিরে!! নাহলে সবাই এত আদিম কুপ্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছে কেনো এ শালবনে!!!!!!!!!
বি:দ্র: শালবনে ঘুরতে যাবার আগে অশ্লিল কুপ্রস্তাব থেকে দূরে থাকবেন যদি ভাল থাকতে চান!!!
©somewhere in net ltd.