![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ষড়ঋতুর মাঝে দুটা ঋতু আমার খুব প্রিয়৷ একটা হল বসন্ত আরেকটা বর্ষা৷ বসন্তে প্রকৃতি নতুন রং রূপে সেজে ওঠে একবার আর বর্ষায় বৃষ্টির জলে ধুয়ে প্রকৃতি আরো একবার স্বরূপে স্ববর্নে সেজে ওঠে৷ আর বাংলার প্রকৃতির এই সাজসজ্জাই খুব প্রিয় আমার৷
টিএসসি জনতা ব্যাংকের
সামনে৷আবিরের জন্য একঘন্টা হল
ঠায়
দাড়িয়ে সিথি ৷মনে মনে দুনিয়ার
সব
গালি দিচ্ছে বান্দরটাকে৷ আবির
আসছে এখানে এমবিএ এডমিশনের ফরম
জমা দিতে ৷ওকে বললো পনেরো মিনিটেই
ফিরতেছে৷কিন্তু এতক্ষনেও
না ফেরায়
এত গালি খাচ্ছে বেচারা আবির
৷যদিও
হন্তদন্ত হয়ে এখন আসার
পথে ও৷না শুনলেও
বুঝতে পারছে যে ওর
চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার
করছে দাড়িয়ে দাড়িয়ে সিথি৷
আবির
আর সিথি সেই স্কুলের বন্ধু৷অনেক
ভাল
বন্ধু দুজন৷আবির গ্রাজুয়েশন শেষ
করে এমবিএ করার জন্য
চেষ্টা করছে আর
এজন্যই টিএসসিতে আসছে আর
সিথি আবিরকে এ ব্যাপারে হেল্প
করার জন্য আসছিল এখানে৷কিন্তু
ওকে কষ্ট না দেয়ার জন্য আবির
একাই
সব করে ফিরছে এখন তবে ও
বুঝতে পারেনি কারো জন্য
অপেক্ষা করাও বিশাল কষ্টের
ব্যাপার৷
ঢাবিতেপড়ায় হল
থেকে সোজা চলে আসছিলো সিথি৷আবিরের
সাথে আরেকটা বিষয় শেয়ার করার
ছিল ওর৷
দৌড়াতে দৌড়াত্
অবশেষে ফিরলো আবির৷
-এতক্ষনে তোর আসার সময় হল বান্দর?
-সরি সরি, কি করবো বল,ওএমআর ফরম
ফিলাপ করতে করতেই আমি শেষ,তাও
আবার তিনজনের ৷
-ও
তুমি এখানে বন্ধুসেবা করছিলা আমাকে দাড়া করাই
রেখে,গালটা সামনে আনতো সোনা,
একটু লাল করে দেই
পাজিটা ,মেজাজ
তিরিক্ষি রেখেই বললো সিথি৷
-এই নে কর,তাও যদি তোর লাল
মেজাজের তিরিক্ষি ভাবটা কমে৷
-যা,আজ থাক ,আমার
ক্যাম্পাসে আসছিস,মানুষজন
কি বলবে!,চল
ক্যাফেটেরিয়ায়,কথা আছে অনেক
-হুম চল,ওহ আজ তোকে তো সেই
লাগছে রে!
-এখন কিন্ত সত্যিই মাইর
খাবি হারামি
- আচ্ছা বাপু, আর কমু না,
অক্কে চল৷
ক্যাফেটেরিয়ায় এসে এক
কোনে বসলো দুজন৷ কিন্তু এক
কোনে বসলে কি হবে! দুজনের
খুনসুটি লেগেই রইলো৷
কথায় কথায় আবির জিজ্ঞেস করলো,
তারপর বল তোর নতুন প্রেমের খবর
কি?
শিথি প্রেমের প্রসংগ উঠতেই
পুরা লাল হয়ে গেলো৷"থাক থাক আর
লাল হতে হবে না, জল কতদূর
গড়াইছে সেটা বল"
-ও দেখা করবে বলছে
-কসকি! কবে? কখন? কোথায়?
আমারে কিন্তু নিবি লগে!
-শুক্রবার,পরশু
এহহ,ওনারে নিবে লগে,করমু
ডেটিং ,তোরে নিমু কা?
-আচ্ছা ঠিক আছে,
নিতে হবে না,তোদের
প্রাইভেসিতে আমি হাত দিমু না৷
শিথি ভাবছিলো আবির জোর
করে বলবে হয়তো যে ও আসবেই
কিন্তু
ওর এমন রিপ্লাই আশা করেনি৷তবে এ
বিষয়ে আর কিছু বললো না দুজন৷
একটা ছেলে মেয়ের ক্লোজ
বন্ধুত্বে তৃতীয় পক্ষ আসায় যা হয়,
তাই
হচ্ছে ওদের কিছুদিন
ধরে৷আগে অনেক
চ্যাট হত
ফেবুতে দুজনার৷তবে কমা শুরু
করলো যেদিন থেকে শিথির
সাথে রিফাতের কথা শুরু
হয়েছে ৷রিফাতের সাথে সিথির
ফোনে পরিচয়৷কোন এক বড় ভাইর
কাছে দিয়ে নাকি রিফাত নম্বর
পেয়েছে৷ কোন বড় ভাই দিছে এ
ব্যাপারে শিথি কয়েকদিন
জোরাজুরি করলেও রিফাত
ঘুরিয়ে নিত
বলে পরে আর
শিথি জানতে চায়নি ৷কারন ও শুধু
অবাক হত যে রিফাত ওর সম্পর্কে এত
কিছু জানে কেমনে!
মাঝেমাঝে মনে হয় ও নিজেও
নিজেরে জানে না যতটা রিফাত
জানে৷এগিয়ে চলে ওদের
বন্ধুত্ব৷কথার
ফুলঝুড়ি মেলে বসতো সারারাত৷
এর
মাঝে কখন যে ওদের বন্ধুত্বের
গাঢ়তা কোনদিকে চলে গেছে তা ওরা নিজেরাই
জানতো না৷মাঝে মাঝে এ
ব্যাপারে আবিরের
সাথে কথা হত,আবির ওকে উৎসাহ দিত
বেশ ৷আবিরের
সাথে মোবাইলে কথা হত না,
যা কথা সব ফেসবুকে হত ৷
পরদিন শুক্রবার৷দেখা হবে প্রথম
শিথি আর রিফাতের ৷শিথি ঠিক
করে রেখেছে ওই দিনই ওর মনের
কথা বলে ওদের ভালবাসার
সূচনা করবে৷সারারাত ঘুম হল
না সিথির৷রাতে চ্যাটে বললো আবিরকে রিফাতের
সাথে প্রথম দেখা হবার কথা৷বললো ও
আশা করছে রিফাতও
মনে মনে হয়তো ওর মতই মনের
কথা বলার জন্য এ
দিনটি বেছে নিবে ৷ইস ও
যদি সাদা গোলাপ নিয়ে আসতো !
মনের গোপন
কথাটা আবিরকে বলে দিল৷৷আবির
বললো যে,দেখ আসবে হয়তো,এত যখন
মনের টান,টেলিপেথি না হয়ে যায়ই
না৷"ধ্যাৎ ! বললেও
মনে মনে খুশি হয়ে গেলো সিথি৷
ভদ্রতা করে আবিরকে একবার
আসতেও
বললো সকালে৷আবির
জানালো সকালে এমবিএ এডমিশন
টেস্ট আছে৷
যদিও সিথি বললো যে ওদের
দেখা হবার সময়
বিকেলে ,বিকেলে আয় না হলে,তবু
এড়িয়ে গেলো আবির৷
পরদিন বিকেল তিনটা৷
কলা ভবনের সামনে বটতলা৷
আধাঘন্টা আগেই
এসে বসে আছে সিথি৷শুক্রবার
দুপুরবেলা,আশেপাশে তরুন
তরুনী তেমন
নেই৷অপেক্ষা প্রহর
যেনো কাটছে না৷
হঠাৎ পিঠে টোকা পড়তেই
চমকে ফিরে তাকালো সিথি৷যতটা আশা নিয়ে তাকালো ততটাই
নিরাশ হল সিথি৷ সেই বান্দরটা৷
আবির৷
-কিরে তুই ?আসবি না বললি?
-না ভাবলাম কোন গুন্ডাপান্ডার
খপ্পরে পড়িস একটা দায়িত্ব
আছে না!
বন্ধুই তো বন্ধুরে দেখবে, না?
-হৈছে আর দেখন লাগবো না,তুই
একটু
দূরেযা না, প্লিজ৷তোর
সাথে দেখলে তো আমার
ভালবাসা তীরে এসে তরী ডুববার
মত
অবস্থা হবেরে!
সিথির
কাঁদো কাঁদো অবস্থা দেখে আবির
বললো
-ঠিক আছে ঠিক আছে,আমি দূরেই
যাচ্ছি,একদম দৃষ্টিসীমার বাইরে৷
-থ্যাংকু দোস্ত৷
আবির চলে গেলো ৷ রিফাতের আসার
সময় পনেরো মিনিট
পেড়িয়ে গেলো৷ফোন
দিবে কিনা ভাবতেছে৷
আরো পনেরো মিনিট পর
দিবে ভাবলো৷কিছুক্ষন পর
ফোনটা হাতে নিয়ে রিফাতের
নম্বরে ডায়াল করলো৷
রিং বাজছে৷সিথির মনে হল কাছেই
কোথাও কল
বাজতেছে,পিছনে ফিরে তাকাতেই
শুনলো কবিতার সেই
লাইনগুলো যা মাঝে মাঝে রিফাত
বলতো
"হবে কি আমার তুমি ?
নিবে কি হাতদুটি আমার?
পারবে কি সইতে ঝড় কালবৈশাখী
যা প্রেমের পথে আসে বারবার
হবে কি তুমি আমার ?
ভালবাসি বড় ভালবাসি
তবে বলবে কি এবার"?
কবিতা শেষ হলেও
সামনে দেখলো আবার সেই আবির
বান্দরটা৷ সিথির মুখ
ফসকে বেড়ুলো,তুই
আবার আইছস বান্দর? তুই তো আমার
তরী… ……বলতে বলতে সিথির
মনে পড়লো এইমাত্র আবিরের
আওড়ানো কবিতা খানা আর যখন
দেখলো আবিরের
হাতে কতগুলো সাদাগোলাপ৷
বিস্ময়ে হা হয়ে গেলো ৷
কি বলবে বুঝতে পারছে না সিথি!
তাই
আবির আবার বললো, "কি ভালবাসিস
কিনা বলবি না?
"সিথি বিষ্ময়ে তবু
কিছু বললো না৷ এবার আবির বিরক্ত
ভাবে বললো কিছু তো বল,রিফুজ
না হলে একসেপ্ট!! এভাবে কতক্ষন
দাড়াই থাকুম৷
এবার সিথি মুখ
খুললো,বললো দাড়া বলমুনে ভালবাসি কিনা তার
আগে তোর কান
দুইটারে ভালবাসা শিখাই নেই! !!!!
এভাবেই কানের মত আচানক
ভালবাসা হয়ে গেলো লাল!!
©somewhere in net ltd.