নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিতুর কাছে আসলেই প্রয়াশের আঙুলগুলো ব্যাস্ত হয়ে যায়। এই এখন যেমন এখানে চিমটি কাটা, চূলে হাত দেয়া কিংবা পিঠে সুড়সুড়ি দিতে দিতে হঠাত করে…..। তখনি নিতু বলে উঠল আচ্ছা তোমার কি লজ্জা করে না! নিতুর কাছ থেকে প্রয়াশ এইকথা মিনিমাম একশবার শুনেছে। আগের মত এবারও একটা দেঁতো হাসি দিয়ে প্রয়াশ বলল
জানই তো তোমার কাছে আসলে লজ্জা শরম সব ভুলে যাই।
তাই বলে এমন। এই আলোর মধ্যে যে এমন করছ মানুষে দেখলে কি ভাববে বল। তোমার তো লজ্জা নাই কিন্তু আমার টা তো অন্তত রাখতে দাও। আর এখন আমরা বড় হয়েছি না।
প্রয়াশ বুঝল না এর সাথে বড় হওয়ার কি সম্পর্ক। বড় হলে বুঝি মানুষ এমন করে না। এই নিতুটা না বড্ড সেকেলে। কি আর এমন করেছে। আঙুল দিয়ে না হয় ঠোঁট টা ছুঁয়ে দিয়েছে। তাতে কি এমন লজ্জার কাজ হল। প্রয়াশ এসব কথা মনে মনে ভাবলেও মুখে বলে সাহস পায় না। মনে হচ্ছে নিতুর মেজাজ বিগড়ে আছে। আর মেজাজ খারাপ অবস্থায় নিতু ওরে বাবা প্রয়াশ বাঘের মত ভয় পায়। প্রয়াশ শুধু মুখ কাচুমাচু করে বলল
আমাদের ওইদিকে একটা কথা আছে শরম করলে গরম ভাত পাওয়া যায় না।
তা এখন কি ধরনের গরম ভাত চাচ্ছ শুনি। নিতু একপ্রকার খেঁকিয়ে উঠল। আর আমাকে গরম ভাত মনে হচ্ছে না। দূরে সরে বস। খবরদার গা ঘেসে বসবা না। গরম লাগতেছে।
প্রয়াশ বুঝল আজকের বিকেলের ঘোরাঘুরিটা খুব বেশি সুবিধার হবে না। কোন একটা অজানা কারনে প্রথম থেকেই নিতুকে খুব গম্ভীর দেখাচ্ছিল। প্রয়াশ ভেবেছিল বিকেলে নিতু ঘুমায়। ঘুম থেকে উঠে এসেছে তাই অমন দেখাচ্ছে। কিন্তু এখন বুঝল কেসটা অন্য। যতটা সহজ ব্যাপার ভেবেছিল ততটা সহজ তো নয়ই বরং বেশ জটিল বলেই মনে হচ্ছে। অথচ প্রয়াশ কতকিছুই ভেবে রেখেছিল। আজকে সকাল থেকেই প্রয়াশের ভিতর একটা চুমু খাই চুমু খাই ভাব কাজ করছিল। মাঝে মঝে নিতু একটু আধটু চুমু যে খেতে দেয় না তা নয়। তবে পরিমাণটা খুবই অল্প। প্রয়াশ অবশ্য ওতেই সন্তুষ্ট থাকে। আর না থেকেও তো উপায় নেই। ওর অবস্থা হল ভাত নেই তো তাকে না খেয়ে থাকা না বলে উপস বলা টাইপের বৈরাগীর মত। প্রয়াশ ভেবেছিল আজকে নিতু চুমু খেতে দিলেও দিতে পারে। কিন্তু কথাই বলছে রাগ করে, আবার চুমু। এখন অবস্থা ভিক্ষা চাই না কুত্তা সামলাও।
প্রয়াশ এটা ওটা বলে দেখল লাভ হল না। একটু ভাল করে কথা বললেই তো হয়। কি আর এমন করেছে না হয় একটু।
প্রয়াশেরও রাগ হতে থাকে। কিসের জন্য রাগ বুঝতে পার না। নিজের উপর খানিকটা বিরক্তও হয় ও। নিতুর মনমেজাজ না বুঝে কেন ও এরকম করতে গেল। প্রয়াশ আর কিছু বলে না। গম্ভীর হয়ে যায়। নিতু বিষয়টা লক্ষ্য করে বলল
তুমি আবার গাল ফুলালে কেন!
এমনি।
এমনি না সেটা তো বুঝতেই পারছি। গা ঘেসাঘেসি না করলেই রাগ হয়ে যায় না। আমারও তো ভাল লাগা খারাপ লাগা আছে, সেটা তুমি বুঝবা না?
আমি তোমার ভাল লাগা খারাপ লাগা বুঝি না! আর কি জন্য খারাপ লাগছে সেটা কি বলছ। আসার পর থেকেই তো আমার উপরে রাগ দেখাচ্ছ। ভাল্লাগা খারাপ লাগা বুঝব কি।
এইত খুব বুঝলা। খালি ছোঁকছোঁক স্বভাব। সব ছেলেরাই না এক। প্রেম করে একটাই ধান্দা। শরীর ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না।
প্রয়াশ আশ্চর্য হয়ে গেল। নিতু হঠাত করে কেন এরকম আক্রমণ করে কথা বলছে বুঝতে পারল না। সকাল থেকে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। এরকম তো মনে হয় নি। বেশ হাসিখুশিই মনে হয়েছিল। দুপুরের পর থেকে একটু গম্ভীর মনে হলেও কেস টা যে এতদূর গড়িয়েছে প্রয়াশ তা বুঝতে পারেনি। প্রয়াশের রাগটা এবার বেশ ফুলে ফেঁপে উঠল। ঝাঁজাল গলায় বলল
আচ্ছা, বুঝলাম না হঠাত এরকম করে কথা বলছ কেন। আমি কি করেছি বল। আর যদি কিছু ভুল করি সেটা বলে দিলেই তো হয়। আর শরীরের কথা যে বললা কি শরীর টা নিয়েছি তোমার কাছ থেকে। দু একটা চুমু ছাড়া আমাদের মধ্যে কিছু হয়েছে বলে তো আমার মনে পড়ে না।
আরও কিছু চাও?
হ্যাঁ চাই। দিতে পারবা?
নিতু এই কথার কোন উত্তর দিতে পারে না। শুধু রাগে ফুঁসতে থাকে। প্রয়াশেরও একি অবস্থা। রাগের সাথে সাথে প্রয়াশ আশ্চর্য হতে থাকে। কি হল মেয়েটার কোন সমস্যা। সমস্যা হলে বলুক। না আর ভাবতে পারছে না ও। খুব অসহ্য লাগে। সারাদিনের মধ্যে প্রয়াশ এই বিকেলটার জন্যই অপেক্ষা করে। প্রয়াশের কত চাপ। অভাবী পরিবারের ছেলে সে। স্কুল শিক্ষক বাবা যা আয় করে তা দিয়ে কোনমতে সংসার চললেও এখন আর চলতে চাচ্ছে না। বোনটা এবার কলেজে ভর্তি হয়েছে। ওর পড়ার খরচই চলে না। বোনের টা চলবে কিভাবে। নিতুর পক্ষ থেকেও চাপ টা কম নয়। নিতু মোটামুটি সুন্দর। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। সুতরাং বিয়ের বাজারে বেশ কদর ওর। মাঝে মাঝেই বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রস্তাব আসে বিয়ের জন্য। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার রীতিমত প্রতিষ্ঠিত ছেলে। আর ওর বাড়ির পছন্দ ডাক্তার। আর এই ডাক্তার গুলোও যা হয়েছে না। আর কোন মেয়ে পেল না। প্রতিবার নিতু কোন উপলক্ষে বাড়িতে গেলে টেনশন শুরু হয়ে যায় প্রয়াশের। বিশেষ করে একেকটা ঈদ প্রয়াশের জন্য একেকটা দুঃসময়। কারন প্রায় প্রতি ঈদেই নিতুর বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। সুতরাং অনেক ধরনের চাপের মধ্যে থাকতে হয় প্রয়াশকে। এতকিছুর পরেও নিতুর কাছে আসলে ও সবকিছু ভুলে যায়। মনে হয় জীবনটা প্রাচুর্যে ভরা। এই বিকেলটার জন্যই প্রয়াশ সবকিছুকে অগ্রাহ্য করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ নিতু এরকম করছে।
প্রকাশ একসময় রাজনীতি করত। সপ্ন দেখত মানুষের জীবনকে পাল্টে দেবে। কিন্তু বাস্তবতা অন্য। সেসব স্বপ্ন কবেই উড়ে গেছে। তার বদলে অন্য একটা স্বপ্ন ভর করেছে। সে স্বপ্নের নাম নিতু। কিন্তু নিতু এরকম করছে কেন!
প্রয়াশ নীরবে বিভিন্ন কথা ভাবছিল। ও লক্ষ করল নিতুও কিছু বলছে না। অনেক্ষন ধরে চুপচাপ দুজন। নাহ নীরবতাটা আর ভাল লাগছে না। একদম অসহ্য লাগছে। প্রয়াশ বলল
আচ্ছা নিতু একটা কিছু তো বল। এভাবে কথা না বলে বসে থাকা যায়। কি হয়েছে সেটা না বললে তোমার সমস্যা টা বুঝব কেমনে। কি জন্য মন খারাপ বলছ না। আর আমি যদি কিছু ভুল করে থাকি সেটা বল।
নিতু প্রয়াশের দিকে তাকাল। ম্লান কণ্ঠে বলল, ভুলটা তোমার নয়। ভুলটা আমার মেয়ে জন্মের। মেয়ে হয়ে জন্মেছি বলে আমার মতামতের কোন মুল্য নেই। আমার চাওয়া পাওয়া থাকতে নেই। যে যা বলবে সেটাই মেনে নিতে হবে।
প্রয়াশ লক্ষ করল নিতুর দৃষ্টিতে রাগের বদলে অসহায়ত্ব এসে ভর করেছে। খুব ম্রিয়মান দেখাচ্ছে মেয়েটাকে। বুঝল কিছু একটা গড়বর হয়েছে।
প্রয়াশ নিতুর হাতটা হাতের মধ্যে নিল। খুব মমতা নিয়ে বলল
বলনা নিতু কি হয়েছে। আমাকে বল প্লিজ।
আমাকে ভুলে যাও প্রয়াশ।
ঠিক আছে তুমি যা চাইবে তাই হবে। ভুলে যেতে বললে ভুলে যাব। কিন্তু কি জন্য ভুলে যেতে বলছ সেকথা তো বলবে।
বাবা দুপুরে ফোন দিয়েছিল। বাড়ি যেতে বলছে।
সেইজন্য মন খারাপ!
হ্যাঁ। আমার আরেকটা বিয়ের প্রস্তাব এসছে। ছোট খালার মাধ্যমে নাকি প্রস্তাবটা এসেছে।
ছেলে সম্বন্ধে কিছু জানো।
এটুকু জানি, ছেলে ডাক্তার।
ঠিক আছে দেখতে আসছে তো কি হইছে। এরকম তো আগেও বেশ কয়েকবার হয়েছে। দেখতে আসলেই তো আর বিয়ে হল না।
নিতু কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকে। তারপর আস্তে আস্তে বলে
বাবা আমাকে বলল আমাদের বাড়ি থেকে ছেলেকে দেখতে গিয়েছিল। ছেলে পছন্দ। ছেলের ফ্যামিলিও নাকি ভাল। এবার ছেলে পক্ষ থেকে আমাকে দেখতে আসবে। পছন্দ হলে ওইদিনই আংটি পরাবে।
তুমি কিছু বলনি নিতু।
প্রশ্নটা করেই বুঝতে পারে প্রশ্নটা নিতুকে করার কোন দরকার ছিল না। কারন উত্তরটা ওর নিজের কাছেই আছে।
প্রয়াশ আর কোন সান্ত্বনা দিতে পারে না। ওর অঙ্ক গুলিয়ে গেছে। প্রয়াশের কাছে দুইটা সমাধান ছিল। প্রথমত, নিতুকে বলা যে, ও যেন বাড়িতে বলে ওর রিলেশন আছে। কিন্তু এ সমাধান খাটবে না। কারন নিতুর বাড়ি থেকে আগেই জানে যে নিতুর একটা সম্পর্ক আছে এবং এ সম্পর্ক বাড়ির পক্ষে মানা সম্ভব না।
দ্বিতীয় সমাধান এই মুহূর্তে বাড়িতে না জানিয়ে বিয়ে করা। কিন্তু নিতু তা পারবে না। ওর পক্ষে পালিয়ে বিয়ে করা সম্ভব না। নিতুকে হয়ত রাজি করানো যেত। কিন্তু কিসের সাহস দিবে ওকে। নিজেরই তো পায়ের তলায় মাটি নেই।
নিতু কাঁদছিল। প্রয়াশ লক্ষ করল নিতুর চোখ দিয়ে অঝর ধরায় জল পরছে। ঠিক শ্রাবণ মাসের বৃষ্টির মত। এই মুহূর্তে ওকে বৃষ্টি বলে ডাকলে মানাত। কিংবা মেঘ। যে মেঘ এক মুহূর্ত পর আপন থাকবে কি না তা সে জানে না। প্রয়াশ বুঝতে পারছে না তার কান্না পাচ্ছে কি না। আর কান্না পেলে কি সে কাঁদবে। তবে তার প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। বুকের ভেতরকার একটা প্রচণ্ড গুমোট বাতাস মাঝে মাঝে কণ্ঠনালীর কাছে এসে ধাক্কা দিচ্ছে। ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে।
প্রয়াশ ঘড়ি দেখল। আটটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি। খুব ধিরে আচ্ছন্নের মত বলল
চল উঠি। আটটা বাজে। দেরি হয়ে গেলে গেটে ঝামেলা করবে।
নিতু অদ্ভুত চোখে প্রয়াশের দিকে তাকাল। ম্লান হেসে বলল
এখনও আমার ভাল মন্দ নিয়ে ভাবছ।
প্রয়াশ মুখে কিছু বলল না। মনে মনে বলল, তুমি হয়ত আমার হবে না। কিন্তু তোমার জন্য আমার খুব ভাবনা হবে খুব।
ওরা যখন ফিরছিল তখন রাস্তা প্রায় ফাকা হয়ে গেছে। নীরবে হাঁটছিল দুজন। ওরা জানে না এটাই দুজনার একসাথে শেষ বিকেল কি না।
হঠাত নিতু প্রয়াশের হাত ধরল। প্রয়াশের আঙুলগুলো নেড়ে দিয়ে বলল
আচ্ছা প্রয়াশ বলত যে হাত দিয়ে তোমার হাত ধরেছি সেই হাত দিয়ে অন্য কারও হাত কিভাবে ধরব। যে ঠোঁট দিয়ে তোমাকে চুমু খেয়েছি সেখানে অন্য কারও স্পর্শ আমি কিভাবে মেনে নিব!
এইবার প্রয়াশের খুব কান্না পেল। প্রচণ্ড কান্নায় গলা টা বুজে আসছিল প্রয়াশের। কিন্তু প্রয়াশ জানে নিতুর সামনে কাঁদা যাবে না। কিছুতেই না।
প্রয়াশ ফিরছিল। ভীষণ একটা ঘোরের মধ্য দিয়ে হাঁটছিল সে। খুব আচ্ছন্ন হয়ে হাঁটছিল। প্রয়াশ লক্ষই করে নি, তার ব্যাস্ত আঙুলগুলি তার মতই আচ্ছন্ন, শান্ত হয়ে গেছে।
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৩০
তরুন ইউসুফ বলেছেন: োটামুটি লাগার জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকুন ভাল লিখুন।
২| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:৪৩
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: খুব সুন্দর গল্প। চমৎকার। আপনার গল্প লেখার হাত অসাধারণ। বেস্ট অফ লাক
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:০৭
তরুন ইউসুফ বলেছেন: ধন্যবাদ । মন্তব্যে উৎসাহ পেলাম
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২৪
শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: মোটামুটি লাগলো।ধন্যবাদ