নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্থানঃ কোন এক বাড়ির টিভি রুম
সময়ঃ বিকেল ৩.৩০, শুক্রবার
দৃশ্যঃ টিভিতে ঘোষণা করা হল “ এখন দেখবেন বাংলা ছায়াছবি ...”।
ছিনেমা শুরু হল। সিনেমার এক পর্যায়ের দৃশ্যঃ নায়কের বাড়িতে আক্রমণ করেছে ভিলেন। নায়কের বাড়ির সবাইকে মেরে ফেলল। তার ছোট বোন ধর্ষিত হল। নায়ক ছোট বোনের দিকে এগিয়ে যেতেই সে চিৎকার করে উঠল না আমাকে ছুঁয়ো না, আমি নষ্ট হয়ে গেছি। একটু পর দেখা গেল নায়কের সেই বোন আত্মহত্যা করছে।
এই ছিনেমা ছোট একটি মেয়ে দেখছিল। ছিনেমার এই পর্যায়ে এসে সে কাঁদতে শুরু করল এই ভেবে যে সেও যদি এভাবে নষ্ট হয়ে যায় তবে তাকেও তো মরে যেতে হবে।
বাংলা ছিনেমার এই দৃশ্য কম বেশি আমাদের সবারই জানা। মেয়েটির কান্না আমার কল্পনা। এ বিষয়ে পরে আসছি এবার চলুন আসল ঘটনায়।
বেশ কয়েকদিন ধরে পত্রিকার পাতা, ফেসবুক, ব্লগসহ সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য মিডিয়ায় একটি ঘটনা নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। আপন জুয়েলারস এর মালিকের ছেলে এবং তার বন্ধু কতৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ। ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মাঝে সস্তিদায়ক বিষয় হল আমাদের পুলিশ বাহিনী বিষয়টি আমলে নিয়ে অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করেছেন। পুলিশ যেমনই হোক যেতে হয় পুলিশের কাছেই। তাই এর খানিকটা কৃতিত্ব পুলিশকে দিতেই হয়। তবে সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব মিডিয়া এবং সচেতন মানুষের।
এবার আসি পিঙ্ক প্রসঙ্গে। মাস খানিক আগে আমার বউ একপ্রকার জোর করেই অমিতাভ বচ্চন এবং তাপসী পান্নু অভিনীত পিঙ্ক ছিনেমাটি দেখিয়েছিল। তখনও ভাবিনি কিছুদিন পরেই কোন একটা ঘটনার প্রেক্ষিতে ছিনেমাটি এতটা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে। মেকিং, অভিনয় কিংবা অন্যান্য জিনিস বাদ দিয়ে যদি শুধু মেসেজটার কথা বলি তবে বললতেই হয় তা অসাধারণ এক সত্যের মুখোমুখি আমাদেরকে দাঁর করিয়ে দেয়। আমাদের আলোচিত ধর্ষণের ঘটনাটি পিঙ্ক ছিনেমার সাথে অদ্ভুত ভাবে মিলে যায়। পার্থক্য শুধু মুভিতে মেয়েগুলি অত্যাচারিত হয়নি যেভাবেই হোক সম্ভ্রম রক্ষা করতে পেরেছিল। কিন্তু আমাদের এই ঘটনায় মেয়ে দুটি সম্ভ্রম রক্ষা করতে পারেনি। মুভিটির সাথে আরেকটি গড়মিল রয়েছে সেটা বিচারিক ফলাফল। পিঙ্কে মেয়েগুলি সুবিচার পেয়েছিল, কিন্তু এই ঘটনার বিচারিক ফলাফল আমরা এখনও জানি না। আমরা সুবিচার পাব সেটাই আশা করি।
প্রশ্ন হল মেয়ে দুজন অত্যাচারিত হওয়ার পরপরই কেন আইনের আশ্রয় নিল না? এত দেরি করল কেন? পত্রিকা এবং মিডিয়ার ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় লজ্জায় এবং সামাজিক ভাবে নিজেদের এবং পরিবারের সম্মানহানি হবে সেই ভয়ে তারা প্রথমে আইনের আশ্রয় নেয় নি। আরেকটি কারণ ছিল। ধর্ষণের ধারণকৃত ভিডিও প্রকাশের হুমকি। অর্থাৎ এখানেও ওই ভয়। ন্যায়বিচার প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে এই যে লজ্জা এবং ভয় এর বড় কারণ আমদের সামাজিক অবস্থান এবং সাংস্কৃতিক চর্চার অভাব কিংবা ভুল সাংস্কৃতিক বার্তা। আমাদের বর্তমান সামাজিক অবস্থা কিছুটা পরিবর্তিত হলেও এখনও আমরা পারিবারিকভাবে মেয়েদেরকে শরীর কেন্দ্রিক সতীত্বের ধারণা দিয়ে বড় করে তুলি। যেখানে ছোটবেলা থেকেই আমদের মেয়েরা ধারণা পায় তাদের শরীরের বিশেষ কিছু অঙ্গ সতীত্ব নামক সাপের মনির মত মনি ধারন করে। কোন পুরুষের সাথে দৈহিক সংসর্গে সেই মণির স্থলন ঘটে।এমনকি সেটা যদি জোর করেও ঘটে তবে সেই সতীত্ব নামক মনির স্থলন ঘটে। সে নষ্ট হয়ে যায়।
প্রথমে বর্ণনাকৃত সিনেমার দৃশ্যে নায়কের বোন অত্যাচারিত হওয়ার পর বলছে আমাকে ছুঁয়ো না আমি নষ্ট হয়ে গেছি। কিংবা আমাদের অন্যতম সেরা অভিনেতা শাকিব খানের কোন একটা মুভিতে দেখেছিলাম অত্যাচারিত হওয়া বোনকে হত্যা করার পর বিচারকের সামনে বলছে বোনকে লজ্জার হাত থেকে রক্ষার জন্য সে তাকে খুন করে। এই দুইটি দৃশ্য ধর্ষিত নারীদের বিষয়ে আমাদের সামাজিক অবস্থান এবং চিন্তার স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ। শিল্পের অনেক মাধ্যম আছে যার অন্যতম একটি মাধ্যম চলচিত্র। সবাই বই পরে না, চিত্রকর্ম বোঝে না কিন্তু সিনেমা দেখে। অর্থাৎ এটি একটি শক্তিশালী মাধ্যম। সেই চলচিত্রের মাধম্যে যা দেখানো হয় তা সহজেই মানুষকে একটি চিন্তার অবস্থানে নিয়ে যাবে। আমার কল্পিত সেই ছোট মেয়েটি যে কিনা সিনেমায় ধর্ষিত মেয়ের মুখে শুনছে আমি নষ্ট হয়ে গেছি এবং সে প্রেক্ষিতে তাকে আত্মহনন করতে দেখে কাঁদছে এই ভেবে যে আমি নষ্ট হয়ে গেলে আমাকেও এভাবে মরে যেতে হবে তখন সেই কল্পিত মেয়েটি কিন্তু আর কল্পনায় থাকে না বাস্তব হয়ে আমাদের সামনে ধরা দেয়। অথচ উন্নত দেশগুলতে ধর্ষণকে শুধুমাত্র শারীরিক অত্যাচার হিসেবেই দেখা হয়। এবং কেউ এ ধরনের অত্যাচারের শিকার হলে আইনি সহায়তার পাশাপাশি সামাজিকভাবেও এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে সহায়তা পায়। ইদানিং আমাদের চলচিত্রে কাহিনিগত কিছু পরিবর্তন এসেছে বটে কিন্তু অত্যাচারিত মেয়েদের বিষয়ে আমাদের মনোগত কোন পরিবর্তন এসেছে কি না তা বিবেচনার বিষয়। ধর্ষণের শিকার কোন মেয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প নিয়ে কোন ছিনেমাও হয়েছে কি না আমার জানা নেই।
অত্যাচারের ধারণকৃত ভিডিও প্রকাশের হুমকিতে মেয়েদুটি বেশি ভয় পেয়েছিল। অথচ ভয় পাওয়ার কথা ছিল ধর্ষকের কারণ ভিডিও প্রকাশ পেলে নিশ্চয়ই কোন না কোন ভাবে তাদেরকে শনাক্ত করা যেত। অথচ তারা ভয় পায়নি। উল্টো ভয় দেখিয়েছে। কারণ তারা জানে এই ভিডিও প্রকাশ পেলে সামাজিক ভাবে ভিক্টিম এবং তার পরিবার হেয় প্রতিপন্ন হবে। শুধু তাই নয় পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত আমদের কাছে তা হয়ে উঠবে নতুন সংযোজন। তারপর এটা কোন অভিনয় নয় একদম বাস্তব। যাকে বলে হোমমেড। অনেকটা দেশি মাছের স্বাদই আলাদার মত। মেয়েদুটি তখন ভিক্টিম এর বদলে আমাদের কাছে কামনার বস্তুতে পরিনত হবে। এর কারণ আমাদের বিকৃত যৌনাকাঙ্ক্ষা যা সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক চর্চার অভাবের ফল। সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক চর্চা মানুষের পশুত্বকে ছেঁটে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায়। কিন্তু সে অবস্থান থেকে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি।মজার ব্যাপার হল আমাদের দেশে বর্তমানে রুচিসম্পন্ন ভাস্কর্য অপসারণের দাবি নিয়ে আন্দোলন হলেও পর্ণগ্রাফি ঠেকানো নিয়ে কেউ কথা বলে না।
এরপরও সবচেয়ে আশার বিষয় হল সমস্ত ভয়, লজ্জা দ্বিধা কাটিয়ে অত্যাচারিত মেয়েদুটি আইনের আশ্রয় নিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমরা আশা করব পিঙ্ক ছিনেমার মত মেয়েরা ন্যায় বিচার পাবে যা ছিনেমা নয় বাস্তব হয়ে আমদের সমাজে উদাহরণ সৃষ্টি করবে। তারা ন্যায় বিচার পেলে আমরাও তার ভাগীদার হব এবং যেকোনো অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস পাব।
১৩ ই মে, ২০১৭ রাত ১১:৩০
তরুন ইউসুফ বলেছেন: পিঙ্ক দেখার চেয়ে আদর্শিক দিকে সচেতন হওয়া জরুরি
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই মে, ২০১৭ রাত ১০:০৩
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আমাদের বিচারপতিদের এখন জরুরী ভিত্তিতে 'পিংক' ছবিটা দেখা উচিত। উনাদের কাজে লাগবে...