নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এখানে থাকা মানে... সবখানে থাকা

বাঁচি বলেই আছি। নাচি বলেই বাঁচি। আছি বলেই যাচি। যাচি বলেই মাছি।-মানুষের দশ দশা কখনো হাতি কখনো মশা।

স্মার্ত স্বাতী

স্মার্ত স্বাতী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : হৃদমহব্বত

২৬ শে মে, ২০১৫ রাত ১০:১০

পৌর আলোতে হিসেব পাকাপোক্ত হয় মহব্বত মিয়ার। লোকচক্ষে ভিক্ষুক কাম দরবেশি ফকির। আপাত লম্বা। বয়সের ভারে কিছুটা কুঁজো। চাপ দাড়িওয়ালা। গাত্র তার ইস্ট দেয়া নানের মতো। দাঁতের উপরের পাটি সুঁচালো অনেকটা ড্রাকুলা শ্রেণিয়। প্রমিত দাঁতের ছিঁটেফোটাও তাতে নেই। সোডিয়াম আলোতে মহব্বতকে
ভিনগ্রহি এলিয়নের মতো মনে হয়। তার ওপর মদ্যপি গলায়
রৈ রৈ স্বরে ফকিরি মুর্শিদি মরমি ধাঁচের গান ধরে।
-রসিকজনায় ধরে পড়ি/এঁটে বান্ধে বৈঠার দড়ি/শ্রীগুরুর কইরে কাণ্ডারি/সদানন্দে যায় ও-পার।
লোকজন সাধ্য মতো যা খুশি দেয়। অর্থকড়িতে নির্লোভী সে। তার আনমনা আত্মভোলার সুযোগ নেয় অন্যান্য স্বগোত্রীরা। মাঝে মাঝে হুংকার ছাড়ে বাঘ যেমন তার শিকারের ওপর। আবার গুলি খেয়ে আচমকা গেয়ে ওঠে-
-আলেফৈচান কয় যাইতে পারে/গুরুর কৃপা হইলে পারে/সমূলে হবি সংসার।
হাত-পা ছুঁড়াছুঁড়ি করে তাল তুলে। সিমেন্টের দেয়ালে মাথা ভাঙতে চায়। আন ভিক্ষুকরা কুণ্ডলি পাকিয়ে জড়ো হয়। পথচারীরা মুঠোফোনে মহব্বত মিয়ার আত্মধ্বংসী ছবি তোলে। কেউ আবার সেলফি। কেউ কাছে আসলে ফনা তোলা সাপের মতো ফোঁসফোঁস করে। কখনো হিংস্র বাঘের মতো থাবা মারে। একবার ছবি তুলতে গিয়ে ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার রমজিদের মুখের বিশ্রি তিলটি সাবাড় করে। অবশ্য রমজিদের এতে শাপেবর হয়েছে। দ্রুত মহব্বত মিয়ার মহাব্বতি খুদরতি ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্রই। লোকসমাগম দিন-দিনান্তে বাড়তে থাকে। আসতে থাকে হরেক রকমের তরতাজা ফরমালিনমুক্ত সুপারস্টোরজাত খাবার। তবে কখনো কারো কোনো কিছু খেয়েছে বলে কেউ দাবি তুলতে পারবে না। কেউ অবশ্য তুলেও নি। সদ্যভক্ত হওয়া একজন বললো, তাকে তিনি মাংসপিণ্ডসদৃশ কি যেনো খেতে দেখেছেন। এতে মহব্বত মিয়ার অনুসারি ভক্তরা চটে ওঠে। আর ওই ব্যক্তির মুখে পাথর কামড় পড়ার অবস্থা। তবে ভক্তরা কথাটা একেবারে ওড়িয়ে দেয় না। কাস্টম অফিসার রাব্বানি সাহেবের বুক থেকে সেদিন যে টিউমার তোলা হলো সেটির সন্ধান করতে লাগলো তারা। কোথাও কোনো চিহ্নটুকুও পেলো না।
-তবে কি....না, না এ হতে পারে না। কখনো না।
মহব্বত মিয়া আবার স্বীয় ডঙে আসন পাতে। ভক্ত নির্ভক্ত কৌতূহলি সবাই আসে। মহব্বত তর্জনি তুলে। ভক্ত ভাবসাধকরা লুটিয়ে পড়ে। যদি কখনো কারো মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় আর অমনি ধন্যি ধন্যি রব ওঠে। মহব্বত হিস ফিস করে কি যেনো বলে আর ভক্তরা দু-হাত উঁচু করে তার জবাব দেয়। মহব্বত হাই তোলে। ভক্তরা নিজ মুখে হাত দেয়। মহব্বত অদ্ভুত গন্ধের মলত্যাগ করে ভক্তরা তা নিয়ে কি যেনো করে।
মহব্বত মেডিকেলের লাশঘর, মঠের শব স্নান ঘরে উদভ্রান্তের মতো বসে থাকে। কখনো মসজিদের বারান্দায় রাখা খাটিয়াতে হেলান দিয়ে বসে থাকে। খাটিয়া ধরে কান্নাকাটি করে আবার কখনো হাসে। মুসল্লিরা জড়ো হয়। মৃত ব্যক্তির স্বজনদের মহব্বতের কান্নায় মন্দীভূত শোক আবার উচলে ওঠে। মহব্বত মসজিদের মেঝেতে রাত্রিযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। মহল্লায় হৈ হৈ সাড়া পড়ে। আবালবৃদ্ধবণিতারা সদলবলে কেরামতি চিকিৎসা নিতে মহব্বতের শরণাপন্ন হয়। সাথে হরেক রকমের খাবার। তাদের অভাব অভিযোগ খোলাশা করে মহব্বতকে শোনায়। মহব্বত কামড়ে কারো সুঁচালো নাকের আধেকটা তুলে নিয়ে সমতা করে। হস্তিকর্ণি নারীদের সমাজ প্রমিতকানে ফিরিয়ে দেয়। কূলবধূদের অনুযোগে অর্ধাঙ্গের যন্ত্রণাকাতর মাংসের উচ্চিষ্টাংশ ছিঁদ হয়। শুধু স্বামী সংস্পর্শে অতৃপ্ত অর্ধাঙ্গীরা গুমড়ো মুখে ফিরে যায়। কবরস্থানের মৃত সমাজকে স্তম্ভিত করে স্বীয় কর্ম সম্পাদন করত মহব্বত স্থান ত্যাগ করে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মে, ২০১৫ দুপুর ২:১৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: দারুণ!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.