![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জুতা। সভ্যতার এক অনন্য সৃষ্টি। ব্যক্তিকে সমুজ্জ্বল করে জাতিকে সভ্য করার পশ্চাতে জুতার অবদান অসীম। তাইতো জুতা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে সুদৃশ্য আসনে আশ্রয় পেয়েছে। কেউ কেউ জুতাকে অমূল্য সম্পদ বলতেও দ্বিধা করেনি। এমনও জুতা আছে- যা একটি বেওয়ারিশ মৃত মানুষের কঙ্কালের চেয়েও বেশি দামি। জনৈক কবি জুতা সম্পর্কে লিখেছেন-
‘একদা ছিল না জুতা চরণ-যুগলে
দহিল হৃদয়-বন সেই ক্ষোভানলে।’
জুতাকে আমরা যতো অকিঞ্চিতকর মনে করি না কেন, প্রকৃতপক্ষে জুতা নিতান্ত সামান্য জিনিস নয়। এই জুতার উৎপত্তি কোত্থেকে তার ইতিহাস এখনো পর্যন্ত অজ্ঞাত। তবে হিন্দু মাইথোলজি মতে, জমদগ্নি মুনি তাঁর প্রিয়তমা পত্নী রেণুকাকে রৌদ্র তাপ হতে পা রক্ষার্থে যা দিয়েছিলেন তা-ই জুতা বলে অনুমান করা হয়।
কবিগুরুর মতে, কোনো রাজা ধুলা হতে পা মুক্ত রাখার জন্য নানারূপ কৌশল অবলম্বন করেন-অবশেষে বিরক্ত হয়ে তাঁকে যে বস্তুটির শরণাপন্ন হতে হয় তা-ই পরে জুতা নামে বিখ্যাত হয়ে উঠে।
কোনো কোনো বিবর্তনবাদী জুতা-উৎপত্তির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার দিতে চেষ্টা করেছেন। তাদের মতে, জুতা গরু ও ঘোড়া প্রভৃতি জন্তুর পায়ের একটি অক্ষম মানবীয় অনুকরণ ব্যতীত অন্য কিছু নয়। জন্তুর খুরের মতো অধিকাংশ জুতার রঙ কালো এবং জুতা ও খুর উভয়ই চলবার সময়ে খট্ খট্ শব্দ করে। মেম সাহেবদের উচু খুরওয়ালা জুতা এটির অন্যতম দৃষ্টান্ত।
জুতার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস কম না। প্রাচীন মিশরের একটি গল্পে জানতে পাই,
মিশরের কানো রাজা নদীতে একজোড়া জুতা ভাসতে দেখে সেই জুতার অধিকারি/অধিকারিণীকে ভালোবেসে ফেলেন।
রামায়ণে দেখতে পাই, শ্রীরামচন্দ্রের অবর্তমানে তাঁর পাদুকা সিংহাসনে বসিয়ে শ্রীমান ভরত জ্যেষ্ঠের নামেই রাজত্ব চালাচ্ছেন।
রাজ্ঞী এলিজাবেথের সময়ে জুতাকে সোনালি ও রূপালি জরিতে মুড়িয়ে দেয়া হতো।
প্রাচীন রোমে পাদুকার রঙ দেখে সমাজে পাদুকাধারীর পদ নির্দিষ্ট হতো।
কথিত আছে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পিট একবার কোনো সুন্দরীর জুতা খুলে নিয়ে তাতে মদ ঢেলে পান করেছিলেন।
রাজ-রাজড়াদের ইতিহাসে দেখা যায়, জুতা একটি বিশেষ আসন দখল করে আছে। এবং তাদের জীবনের সাথে জুতা অবিচ্ছেদ্য। আমরা মোগল শাসকদেরও দেখি জুতার প্রতি কদর জানাতে। এতদসত্বেও সাহিত্যে জুতার অমর্যদা দেখে আহত হই। সাহিত্যে গুটি কয়েক লেখক জুতা নিয়ে কথা বলেছেন।
প্রাচীন লেখকদের মধ্যে এক বিষ্ণুশর্মাই জুতাকে অনাবশ্যকভাবে লাঞ্চিত করেছেন। তিনি লিখেছেন, কুকুরের স্বভাবই না-কি এই, রাজতক্তে বসালেও সে জুতা চাটবেই।
বঙ্কিমবাবু লাঠির স্তবগান করেছেন কিন্তু জুতা নিয়ে তিনি তেমন কিছু বলেননি। অথচ তাঁর পদবী চট্টোপাধ্যায়। আমরা জানি, ‘চট্টোপাধ্যায়’ শব্দের উৎপত্তিতে ‘চটি’ শব্দটির অবদানের কথা।
কামসূত্রের রচয়িতা ঋষি বাৎসায়নের মার্জিত রুচি ও রসজ্ঞান সম্পর্কে অনেক শুনেছি-কিন্তু তিনিও তাঁর প্রসাধনদ্রব্যের তালিকা থেকে জুতাকে বাদ দিয়েছেন।
আইরিশ লেখক সুইফট তুচ্ছ টাবের কাহিনি লিখেছেন কিন্তু জুতা সম্পর্কে কিছুই বলেননি।
রূপকথা লেখক Hans Andersen এর জগৎজোড়া দরদের তুলনাই হয় না-তাঁর কাব্যে টিনের পুতুল, বুরুজ, দোয়াত-কলম স্থান পেয়েছে কিন্তু জুতা সেই হরিজনের মতো অবজ্ঞাত, অবহেলিত থেকে গেছে।
জুতা মানুষের ভৌগোলিক জ্ঞান বাড়াতে সাহায্য করেছে এই খবর বোধহয় অনেকেই রাখেন না। তালতলার খ্যাতি যে চটির জন্য, পাবলিক লাইব্রেরির জন্য নয়, বিদ্যাসাগরের জীবনী পাঠক সকলেই একথা জানেন। ‘বাটা’ জুতা না থাকলে চেকোশ্লোভোকিয়ার নাম ক’জন বাঙালির কানে পৌঁছাতো? এবং বুটের সাথে সাদৃশ্য না থাকলে ইটালির মানচিত্র অঙ্কন বাঙালির পক্ষে সম্ভব হতো না।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৫৪
হাসান মাহবুব বলেছেন: চমৎকার এবং সরস রচনা।