নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এখানে থাকা মানে... সবখানে থাকা

বাঁচি বলেই আছি। নাচি বলেই বাঁচি। আছি বলেই যাচি। যাচি বলেই মাছি।-মানুষের দশ দশা কখনো হাতি কখনো মশা।

স্মার্ত স্বাতী

স্মার্ত স্বাতী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেঘনাদোদ্ধার ইতিকাব্য

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৫৯

বুকটা ধড়পড় করছে। জিবের পানি শুকিয়ে গেছে। গাড়িটাও কেমন জানি আস্তে চলছে। আসন আছে বটে তবে খালি নেই। রড ধরে বাদুর ঝুলতে কারইবা ভালো লাগে। সাথে থাকা থলেটা আয়েশে দাঁড়ানোতে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। মহিলারা চালকের পাশে বসে খোশ-গপ্পে মেতে ওঠেছে। চালকও তেরসা দৃষ্টিতে রক্তচক্ষে বারংবার তাকিয়ে একটা ফুটো আবিষ্কার করেছে।

নীলপাড়ের শাড়ি ঠিকরে এটিকে অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে। মহিলার উল্টো দিকে গাড়ির পেট বালিশে বসা মধ্যবয়সি লোকটা ফুটো পানে চেয়ে স্নান করছে আবার স্নান করছে। দাঁড়ানো লোকটা মধ্যবয়সী লোকটার এহেন দশা দেখে আসল আলামত শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। চালক গাড়ি আস্তে চালাচ্ছে বলে তাকে শাসাতে গিয়ে দেখে-তারও দৃষ্টিপান ওই এক জায়গায়। মহিলা হাত পা ছেড়ে দিয়ে আপন ভুবনের কথায় ব্যতিব্যস্ত। চালক ও মধ্যবয়সী লোকটা ব্যস্ত মহিলাতে। দাঁড়ানো লোকটা ব্যস্ত ওই তিনে। মহিলা নড়ে বসলেও বদলায় না ব্যক্তিদ্বয়ের ক্ষরণ হওয়া ফিনফিন বাদল।

রাতে বৃষ্টি হওয়া জল অভিমান করে রাস্তার মধ্যিখানে বসে আছে। কোথাও যায় না। যান স্পর্শে ঘোলা হয় জল এবং আরো গাঢ় ঘোলা হয়। গোস্বা বেশিক্ষণ রাখলে জলের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা। তাই জলেরা ছিটকে পড়তে চায়। পড়বে কীভাবে। জলকূপের গভীরতা যে ঢের বেশি। চালক গাড়ির গতি বাড়ালো। বোধহয় এতক্ষণে ছারপোকা তার মাথা ছুঁয়েছে। এবার পাগলাঘণ্টা বাজিয়ে দেহ দুলিয়ে বিদ্যুৎবেগে সম্মুখে অগ্রসর হচ্ছে গাড়ি। অভিমানি পানিরাও দিব্যি বসে আছে। আমন্ত্রণ জানায়। অতিথি কেবল চুম্বনেই কান্ত। বারংবার চুম্বনে তাদের কায়া হয়ে ওঠেছে উতলা। চুম্বনে গায়ের ছারপোকারা ইকুলিবিকুলি করে।

মধ্যবয়সী লোকটার গন্তব্য শেষ হওয়ার আগেই শেষ হয়। গাড়ি থেকে অবতরণ করত অভিমানি পানির গর্তে অবগাহন করে পরিশুদ্ধ হয়। আর সিক্ত শরীরে কম্পনরত অবস্থায় আপনালয়ে গিয়ে গিন্নি উষ্ণতায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পায়। থলে নিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা খালিপড়া আসন গ্রহণ করে। লোকটার আধো আধো ঘুমের ভাব। গাড়িটা যেনো পায়ের চেয়ে বড়ো নুপুর পড়েছে। চালককে যেনো কোনো বাগান মালিক কাজ দিয়েছে-রাস্তার দু পাশে বৃক্ষগুলোর সঠিক সংখ্যা গণনের। তার ঘন ঘন জলপান করার দিকে তাকালে মনেহয় গণনায় সে ভুল করেছে। আবার পেছন থেকে গিয়ে গুনলে বোধহয় সে বাঁচে। তার এহেন অবস্থার কারণ নির্ণয় সম্ভব হলো-মহিলার ফুটোতে মিউনিসিপ্যালটির লোক ছাঁদ করে দিয়েছে। বাজেটটা মহিলাই পেয়েছে। তাই ঢালায় কাজে কোনো বিলম্ব হলো না। জনগণের দাবিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় সাদরে গ্রহণ করেছে বলেই হয়তো সত্বর বিহিতের ব্যবস্থা হয়েছে।

গাড়ির একেবারে পেছন হতে ক্ষীণকায় একটা লোক এসে মহিলার খালিপড়া আসনে বসলো। লোকটাকে দেখে দাঁড়ানো এবং পরে আসন পাওয়া লোকটা হতচকিত হয়ে স্নান করতে থাকে। তবে হাঁ বহির্স্নান। গোঁফওয়ালা সুঠাম পাহলোয়ান লোকটা তার শ্বেত শ্মশ্রুতে বারবার হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। আবার আন দিকে তাকিয়ে কাচুলিমাচুলি করছে। গন্তব্যদেবীর কাছে হয়তো গন্তব্য শেষ করার প্রার্থনা করছে মনে মনে। আবার কখনো পাখি অথবা পোকা হতে মন চাচ্ছে তার।

হঠাৎ গাড়ি গর্তে পড়ে থেমে গেলো। অভিমানি পানিরা ছিটকে পড়লো অনেক দূরে। যেনো সৃষ্টি সুখের উল্লাস উদযাপন করলো পিচ্ছিল পানিরা। দূরে একটা বিষাক্ত সাপকে পিটিয়ে মারছে কয়েকজন যুবক। চালকের দেহের ছারপোকারা আস্তে আস্তে নামতে শুরু করলো। গোঁফওয়ালা লোকটা ইত্যবসরে পালানোর অনেক চেষ্টা করলো। অ্যাসিসটেন্ট গাড়ির দরজায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে ছিল বলে ব্যর্থ হলো। লোকটা হতবিহ্বল বিমূঢ় হয়ে উঠলো। গতির উদ্যমতায় হাত থেকে থলে গেলো খসে। আর মাইকেলের মেঘনাদ বীরদর্পে অট্টহাসি দিয়ে বেরিয়ে আসলো। লক্ষ্মণ অর্থাৎ ক্ষীণকায় লোকটা পেছন হতে ঝাপটে ধরলো। গোঁফি লোকটা হুঙ্কার ছাড়লো। গাড়ির যাত্রিসকল অবহিত হলো লোকটার ব্যাপারে। ক্ষীণকায় লোকটা নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারের অপেক্ষায় ছিল এদ্দিন।

এবার গোঁফওয়ালা মেঘনাদকে মুমূর্ষু করে চুরি যাওয়া ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ কে উদ্ধার করা গেলো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.