নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বলার মত কিছুই নাই

মুহাম্মাদ তাওহীদ উল ইসলাম

মুসাফির

মুহাম্মাদ তাওহীদ উল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোর মিছিলে মুখরিত এক জীবনের প্রত্যাশায়.........

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১২

আল্লাহর নামে শুরু করছি যিনি পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু।

অনেক বছর আগে আরব অঞ্চলের এক মহিলা ছিলেন। তিনি প্রত্যহ তার পরিবারের সদস্যদের জন্য সকালে রুটি বানাতেন আর প্রতিদিনই তিনি একটি করে রুটি বেশি বানাতেন। সেই রুটি তিনি তার বাড়ির জানালার নিচে রেখে দিতেন যাতে করে কোন ক্ষুধার্ত পথচারী তা খেতে পারে, আর প্রতিদিনই এক কুঁজো লোক সেই মহিলার রাখা রুটি নিয়ে যেত। যাবার সময় সে ওই মহিলার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করেই চলে যেত আর যাবার আগে বলতঃ “তোমার খারাপ কাজের ফল তোমার কাছেই থাকে আর ভালো কাজের ফল তোমার কাছে ফিরে আসে” এভাবে দিনের পর দিন চলতে থাকে। প্রতিদিনই সেই কুঁজো লোকটি এসে রুটি নিয়ে যেত আর একই কথা প্রতিনিয়ত বলতঃ “তোমার খারাপ কাজের ফল তোমার কাছেই থাকে আর ভালো কাজের ফল তোমার কাছে ফিরে আসে” মহিলা খুব বিরক্ত হতেন। তিনি ভাবতেন, “লোকটা প্রতিদিন এসে রুটি নিয়ে যায়, কিন্তু একটি বারের জন্যও আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, লোকটা খুব অকৃতজ্ঞ” তিনি আরও চিন্তা করলেন যে প্রতিদিনই সেই কুঁজো লোক কেন একই বিরক্তিকর কবিতা বারবার বলে? এর মানেটা কি? একদিন খুব মরিয়া হয়ে ওই মহিলা সিদ্ধান্ত নিলেন বিরক্তিকর অকৃতজ্ঞ কুঁজো লোকের হাত থেকে তার নিষ্কৃতি পেতে হবে। তিনি ওই কুঁজো লোকের জন্য বানানো রুটির সাথে বিষ মেশানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। যেই কথা সেই কাজ। রুটি বানিয়ে তাতে বিষ মেশানোর পর যখন তিনি সেটা জানালার নিচে রাখতে যাচ্ছিলেন তখন তিনি ভাবলেন,“এটা আমি কি করছি? এটাতো অন্যায়” তৎক্ষণাৎ তিনি রুটিটি আগুনে ছুঁড়ে ফেললেন আর ওই কুঁজো লোকের জন্য নতুন আরেকটি রুটি বানিয়ে প্রতিদিনের মত জানালার নিচে রেখে দিলেন। ঠিক একইভাবে প্রতিদিনের মত সে কুঁজো লোকটি এসে রুটি নিয়ে যায় আর সেই একই কবিতা শুনিয়ে চলে যায়ঃ “তোমার খারাপ কাজের ফল তোমার কাছেই থাকে আর ভালো কাজের ফল তোমার কাছে ফিরে আসে” প্রতিদিনই সেই মহিলা রুটিটি জানালার নিচে রাখার পর তার একমাত্র ছেলের জন্য আল্লাহর কাছে বিশেষ প্রার্থনা করতেন যেই ছেলে তার নিজ শহর হতে দূরে ভাগ্যান্বেষণে বেরিয়েছিল। বিগত কয়েকমাস যাবত মহিলা তার ছেলের কোন খোঁজ পাচ্ছিলেন না। তাই তিনি তার ছেলের সুস্থভাবে নিজগৃহে প্রত্যাবর্তনের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন। যেদিন ওই কুঁজো লোকটিকে মহিলা বিষ মাখানো রুটির বদলে ভালো রুটি দিয়েছিলেন ঠিক সেই দিন সন্ধ্যায় মহিলার ঘরের দরজায় কেউ কড়া নাড়ল। মহিলা দরজা খুলে অবাক হলেন,দরজায় আর কেও নয়, তার ছেলে দাঁড়িয়ে। তার ছেলে শুকিয়ে গিয়েছিল, সে ছিল খুবই রুগ্ন ও দুর্বল ; তার জামা কাপড় ছিল ছিন্ন-ভিন্ন, দেহ ছিল ক্ষতঃবিক্ষত। সে তার মাকে দেখে বলল, “এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য যে আমি তোমার কাছে ফিরে আসতে পেরেছি। আমি ভাগ্যান্বেষণে বেরিয়ে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছি। বাড়ি ফিরে আসার পথে আমি যখন এখান থেকে কয়েক মাইল দূরে ছিলাম তখন ক্ষুধা আর তৃষ্ণায় আমি এতটাই কাতর ছিলাম যে আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। আমি সেখানে মারাও যেতে পারতাম। তখন এক কুঁজো লোক পাশ দিয়ে একটা রুটি নিয়ে যাচ্ছিল। আমি তার কাছে একটা রুটির টুকরা ভিক্ষা চাইলাম। তখন সে আমাকে পুরো রুটিটাই দিয়ে দিল আর বলল, ‘আমি এরকম রুটি প্রতিদিনই খাই কিন্তু আজ আমি এটা তোমাকে দেবো কারণ এটার প্রয়োজন আমার চেয়ে তোমার অনেক বেশি’ ছেলেটির মা সেই মহিলা তার ছেলের কথা শুনে নিজেকে সামলাতে পারলেন না। তিনি মেঝেতে পরে গেলেন, তার বুঝতে বাকি রইল না, এই কুঁজো লোকটি সে যে তার বানানো রুটি জানালা থেকে নিয়ে যেত। তিনি ভেবে আতংকিত হলেন যে যদি তিনি বিষ মাখানো রুটি পুড়িয়ে না ফেলতেন তাহলে হয়ত তার ছেলেই সেই রুটি খেয়ে মারা যেত। তখন তিনি বুঝতে পারলেন ওই কুঁজো লোকটির কবিতার অর্থঃ “তোমার খারাপ কাজের ফল তোমার কাছেই থাকে আর ভালো কাজের ফল তোমার কাছে ফিরে আসে” এভাবেই আমাদের ভালো কাজের সুফল দুনিয়াতেই আমাদের লাভবান করে। এভাবেই আমাদের ভালো কাজগুলো যখন মন্দ কাজগুলোকে পরাজিত করে তখন তা আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। আর আখিরাতে তা নিঃসন্দেহে মুমিনের জন্য হবে জান্নাত লাভের পাথেয়।। এ ব্যাপারে আল্লাহপাক পবিত্র কুর’আনে ইরশাদ করেছেন, “যে সৎকর্ম সম্পাদন করবে পুরুষ কিংবা নারী, এমতাবস্থায় যে সে হবে যথার্থ মুমিন, তাহলে অবশ্যই আমি তাকে দুনিয়ার বুকে পবিত্র জীবন দান করাবো এবং আখিরাতের জীবনে তাদের দুনিয়ার জীবনের কার্যক্রমের উত্তম বিনিময় দান করবো” সুরা নাহল ৯৭। এখন প্রশ্ন হল কোন ভালো কাজ আমাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনে সুফল বয়ে আনতে পারে? কুর’আন ও হাদিসে এই ব্যাপারে কি নির্দেশনা রয়েছে? সংক্ষেপে তা নিচে আলোচিত হল- ১/ আল্লাহর নির্দেশিত পথে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ব্যয় করাঃ আল্লাহপাক কুর’আনে ইরশাদ করেছেন, “তোমরা যা কিছু আল্লাহর পথে খরচ করবে তিনি তোমাদের অবশ্যই তার প্রতিদান দিবেন, কেননা তিনিই হচ্ছেন সর্বোত্তম রিযিকদাতা” সুরা সাবা ৩৯ আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যাক্তি তার বৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ থেকে একটি খেজুর পরিমাণও দান করে – আল্লাহপাক তো বৈধ অর্থ ছাড়া কিছু গ্রহন করেন না – সেই ব্যাক্তির দানকে আল্লাহপাক ডান হাতে গ্রহন করেন। অতঃপর তা ওই ব্যাক্তির জন্য লালন পালন করেন, যেমন তোমাদের কেউ অশ্ব শাবককে লালন পালন করে থাকে। পরিশেষে তা পাহাড়ের মত (বড়) হয়ে যায়” বুখারি হাদিস নং ১৪১০ মুসলিম হাদিস নং ১০১৪ ২/ অভাবী ঋণগ্রস্ত ব্যাক্তির প্রতি সদয় হওয়া, মুসলিম ভাইয়ের দোষ ত্রুটি গোপন রাখা তাদের সাহায্য করাঃ আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যাক্তি অপর কোন মুসলিম ব্যাক্তিকে তার দুর্দশা হতে মুক্তিদানে সাহায্য করবে, আল্লাহপাক হাশরের ময়দানে সেই ব্যাক্তিকে তার দুর্দশা হতে মুক্তি দেবেন; যে ব্যাক্তি ঋণগ্রস্ত অভাবীর সাথে সদয় আচরন করে, আল্লাহপাক তার জন্য এই দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনকে সহজ করবেন; যে ব্যাক্তি অপর মুসলিম ভাইয়ের দোষ ত্রুটি গোপন রাখে, আল্লাহপাক দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ ত্রুটি গোপন রাখবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহপাক তার বান্দাকে সাহায্য করতে থাকবেন যতক্ষণ বান্দা তার মুসলিম ভাইদের সাহায্য করবে” মুসলিম হতে বর্ণিত হাদিস নং ২৬৯৯ ৩/ আল্লাহপাককে ভয় করে সংযত আচরণ করাঃ আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “দানশীলতা(সাদকা) কখনো সম্পদকে সংকুচিত করে না। যে ব্যাক্তি (আল্লাহর কারনে) কাউকে ক্ষমা করেন তাকে আল্লাহপাক সম্মানিত করবেন; যে ব্যাক্তি (আল্লাহর ভয়ে) বিনয়ী আচরণ করেন আল্লাহ তাকে (দুনিয়া ও আখিরাতে) উচ্চ মর্যাদা দান করবেন” মুসলিম হতে বর্ণিত হাদিস নং ২৫৮৮ ৪/ আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট ও দৃঢ় রাখাঃ আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যাক্তি চায় তার রুযী ও জীবিকা প্রশস্ত হোক এবং আয়ু বৃদ্ধি পাক, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখে” বুখারি হাদিস নং ২০৬৭, ৫৯৮৬; মুসলিম হাদিস নং ২৫৫৭ হতে বর্ণিত। আল্লাহপাক আমাদের সকলকে ভালো কাজের মাহাত্ম্য উপলব্ধি করার ও সেই অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দিন, আমরা যাতে আমাদের খারাপ কাজগুলোকে ভালো কাজের মাধ্যমে পরাজিত করতে পারি সেটাই হোক আমাদের লক্ষ্য। আমাদের সৎকর্মগুলো পৃথিবীকে ভরিয়ে তুলুক,ভালোর মিছিলে মুখরিত হোক আমাদের জীবন।গল্পটি ইন্টারনেট হতে সংগৃহীত ও অনুবাদকৃত, সহায়ক বইঃ আল কুর’আন, সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, রিয়াদুস সালেহিন, ইন্টারনেট সোর্সঃ islamqa.info।

June 11, 2013 at 1:30am

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.