![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
[ক] লেখার শুরুটা করবো সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। মধ্যপ্রাচ্যের যেকোন দেশের নাম নিলে অনেকের চোখেই যে কমন চিত্রগুলো ভেসে উঠবে তার মধ্যে মরুভূমি, ঊট এগুলো বোধহয় এগিয়েই থাকবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে যারা পর্যটক হিসেবে বেড়াতে যান তাদের অধিকাংশই মরুভূমিতে ক্যাম্পিং করেন, দেখতে চান মরুভূমিতে চড়ে বেড়ানো ঊট। কিন্তু ক্যাম্পিং করতে গিয়ে তারা যত্রতত্র প্লাস্টিকও ফেলে আসেন। মরুভূমির বালিয়াড়ি, ছোট্ট পুকুর বা গাছের ঝোঁপে লেগে থাকা প্লাস্টিক ব্যাগগুলো কোনভাবে পৌঁছে যাচ্ছে ঊটের পেটে। আর এর ফলে ঊট মারাও যাচ্ছে। দুবাইয়ের সেন্ট্রাল ভেটেরনারি রিসার্চ ল্যাবের প্রধান ডঃ ওয়ের্নারি এবং তার টিম ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আমিরাতের ৩০০০ মৃত ঊটের পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। এই ৩০০০ ঊটের ১ শতাংশ, মানে ৩০০টি মৃত ঊটের পাকস্থলীতে বা খাদ্যনালীতে জমাটবদ্ধ প্লাস্টিক পাওয়া গেছে, যেটা এদের মারা যাবার প্রধান কারণ। এমনকি একটি ঊটের পাকস্থলীতে ২০০টি পর্যন্ত প্লাস্টিক ব্যাগ জড়ানো অবস্থায় পাওয়া গেছে [১]। কয়েক বছরে ৩০০টি ঊটের মৃত্যু সংখ্যায় নিতান্ত কম বলে হয়তো সেখানকার কর্তৃপক্ষ সহসাই প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার বন্ধ করবে না, কিন্তু সংখ্যাটা যদি বাড়তে থাকে, মরভূমিতে ঊটের দেখা না পেয়ে পর্যটকরা যদি ক্যাম্পিং করাই বাদ দেয়, তখন হয়তো কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসবে। কারণ এর সাথে আর্থিক বিষয় জড়িত। প্রকৃতি পরিবেশের ভারসাম্যের চেয়ে আর্থিক প্রবৃদ্ধি সবযুগেই মানুষের কাছে এভাবেই প্রাধান্য পেয়েছে।
[খ] এবার ফিরে আসি স্বদেশে। ছোটবেলায় বাজার থেকে তেল আনার জন্য আমরা বাসা থেকে বোতল নিয়ে দোকানে যেতাম। এখন প্লাস্টিকের বোতলের আর প্যাকেটজাত তেলের ব্যবহার এতোটাই বেড়েছে যে এযুগের ছেলেপেলেদের আমাদের মতো অতো কষ্ট করে বোতল জোগাড় করে তেল আনতে যেতে হয়না। তবে আমরা দোকান থেকে শুধু তেলটাই কিনে আনতাম, ওরা তেলের সাথে একটা বোতলও নিয়ে আসছে। এর সাথে নিজের ঘাড়ে নিয়ে নিচ্ছে একটা খরচের বোঝা। আমাদের দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কাজ করে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলো। আমরা সিটি কর্পোরেশনকে কর দিচ্ছি, সেই করের একটা বিরাট অংশ খরচ হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়, যেখানে প্লাস্টিক বর্জ্যও অন্তর্ভুক্ত। তাই তেলের বোতল বিক্রি করে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তার লাভ ঠিকই উঠিয়ে নিচ্ছে, আর ভোক্তাকে না চেয়েও এই প্লাস্টিকের বোতলের ব্যবস্থাপনায় পরোক্ষভাবে বাড়তি একটা খরচ করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে উৎপাদক ভোক্তার জন্য এরচেয়ে উত্তম কোন বিকল্প ব্যবস্থার সুযোগ না রাখায় ভোক্তা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে উৎপাদক এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোন দায় নিচ্ছে না। আরও দুঃখের বিষয় হল ভোক্তা এই বাড়তি খরচের বোঝা নিয়ে উপকৃতও হতে পারছে না। কারণ তেল ব্যবহারের পর যে প্লাস্টিকের বোতল রয়ে যাচ্ছে সেটা হয়তো কিছুদিন ব্যবহার হচ্ছে। নতুন আরেকটা বোতল আসলে সেটা চলে যাচ্ছে বাতিলের খাতায়, ফেলে দেয়া হচ্ছে যত্রতত্র। আমাদের এই ফেলে দেয়া প্লাস্টিকগুলোর কিছু হয়তো টোকাই ছেলেপেলে কুঁড়িয়ে নিচ্ছে, আর বেশিরভাগ থেকে পড়ে থাকছে রাস্তাঘাটে যার সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে পারছে না দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো। ২০২০ সালের সায়েন্স এডভান্সেস জার্নালের একটি গবেষনায় উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের বৃহত্তর উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ যে পরিমাণ কঠিন বর্জ্য তৈরি করে তার প্রায় ৪.৭ শতাংশ হল প্লাস্টিক। এই প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রায় সিংহভাগ (৯৭%) যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনা করা হয়না [২]।
[গ] উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ভোক্তার জন্য যথাযথ বিকল্পের সংস্থান না করে প্লাস্টিক দূষণ সমস্যায় উৎপাদক তার দায় এড়াতে পারে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভোক্তার চাহিদানুযায়ী পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি উৎপাদককে বাড়তি দায়িত্ব দেয়া হয় যাতে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় ভোক্তার জীবন ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়, যা Extended Producer Responsibility নামে স্বীকৃত। এক্ষেত্রে উৎপাদক প্রতিষ্ঠান বারবার নতুন প্লাস্টিক বোতল তৈরির জন্য কাঁচামাল আমদানী না করে গ্রাহক থেকে সরাসরি পূর্ব ব্যবহৃত বোতল সংগ্রহ করতে পারে, গ্রাহককে এ কাজে আকৃষ্ট করার জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক বোতল সংগ্রহ ও জমাদানে উৎপাদক প্রতিষ্ঠান বিশেষ ছাড় বা আর্থিক প্রণোদনা দিতে পারে। যার ফলে প্লাস্টিকের যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার ঘটনা কমে যাবে এবং উৎপাদকের কাঁচামাল আমদানি খরচও বহুলাংশে কমে যাবে। যারা ভ্রাম্যমানভাবে (টোকাই) প্লাস্টিক দ্রব্য সংগ্রহ করছে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও কাঠামো তৈরি করে দিয়েও উৎপাদক প্রতিষ্ঠান তার ভূমিকা রাখতে পারে, এসব কিছুকে তাদের কর্পোরেট সোশ্যাল রেস্পন্সিবিলিটির (CSR) আওতায় এনে প্লাস্টিক দূষণ সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি তারা দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির সামাজিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে পারে।
[ঘ] কেনো প্লাস্টিক নিয়ে এতো কথা বলা তার কারণ হল, সম্প্রতি এরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির একটি গবেষনায় মানুষের ফুসফুস, যকৃত, কিডনি, প্লীহা প্রভৃতি অঙ্গের টিস্যুতে অতি ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কনিকা (মাইক্রোপ্লাস্টিক) সনাক্ত হয়েছে। গবেষকদের মতে সূক্ষ্ম প্লাস্টিকে থাকা রাসায়নিক পদার্থগুলো ডায়বেটিস, স্থুলতা, বন্ধ্যত্ব এর পাশাপাশি মানুষের দেহে ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ হতে পারে [৩]। তাই শেষমেশ যদি আমাদের অবস্থা শুরুর ওই ৩০০ দুর্ভাগা ঊটের মতো হয় তাহলে কিন্তু বেশ বিপদই আসন্ন।
তথ্যসূত্রঃ
[১] Click This Link
[২] Click This Link
[৩] Click This Link
ছবিঃ ranakmartin.files.wordpress.com/2015/02/047.jpg
২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৭:৩৩
নূর আলম হিরণ বলেছেন: মানুষের যা সরাসরি ক্ষতি করে সেগুলো নিয়ে মানুষ বেশি ভাবে যা পরোক্ষ ভাবে বা অজান্তে ক্ষতি করে সেগুলো নিয়ে ভাবে বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশে ক্যাপিটেলিজমের কারনে সরকার এসব শুনতে পারেনা।
৩| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ১২:৪৮
রাজীব নুর বলেছেন: পুরান ঢাকায় প্লাস্টীকের কারখানার অভাব নাই।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৫:০৭
কামাল১৮ বলেছেন: দায় সরকারের অব্যবস্থাপনার।