নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দাঁড়ান, ভেবে দেখি ....

জাগরী

আর্থ-সামাজিক বাস্তবতাকে অস্বীকার করা মানুষ। ফ্যান্টাসি বড় পাশবিক। আমলা, হ্যামেলিনের বাঁশিওয়ালার পিছনের ইঁদুর ভালো লাগে না।

জাগরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রণয়ের বিত্তি-বেসাত এবং বেকার অভিলাষ

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:১৯

নীরবতার সরব বেদনায় কাঁদছে সে। বছর কয়েক আগের ক্ষত, ক্ষতের ক্ষরন শুধু আজকের। অন্ধকার রুমটায় প্রায় সেরে ওঠা পুরনো বেদনার ক্ষতটিকে আবারো বিক্ষত করার কাজে খুব ব্যস্ত ছিল সে। তাই খেয়াল হয়নি কখন যেন চাঁদ সুন্দরের ভারে, আলোয় ভর করে তার গাল বেয়ে নেমে যাওয়া অশ্রু ধারায় মিশেছে। ভালবাসার বেকার অভিলাষের নিরাকার অনুভূতিকে সাকার অশ্রু-ফোঁটায় দেখিয়ে দিল চাঁদ। এই বায়বীয় আবেগের মোহে মোহিত হওয়ায় তার আনন্দ। ওহ! ক্ষতটি তো নেই। আমি কালো আঁচল সরিয়ে বললাম, “আমার সাদা বর্ণের উপর কালো ক্ষতকে আরো গভীর করবে?” ও চমকে উঠল। ভারী, ঘন শব্দে বলল, “না, তুমি সুন্দর, চির পবিত্র।”

বাঈজীর নৃত্যে কোমল কোমর দুলে ঊঠা আর কামনার দৃষ্টি ইশারায় অবচেতনে সাড়া দেওয়া, ছান্দসিক সুখ লাগা অনুভূতি। এই ছন্দ নিষিদ্ধ, নিষিদ্ধ এই ছন্দের অনুভব করা পাপ। বাঈজীরও এই শিল্প পাপ মনে হয়। বোধ হয় পাপের অনুতাপে তার ঠোঁটের উপরে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম। রাতের চাঁদ তার শরীর স্নান করে অব্যক্ত সুন্দরের সংজ্ঞা দিয়েছে। আজ চাঁদ শুভ্রতায়, জাফরানের সুবাসে সকল সৌন্দর্য নিয়ে তার ফোঁটা ফোঁটা ঘামের উপর মিশেছে। দূর্বা ঘাসের সবুজ আর গোধুলির লালিমা তার শাড়িতে, শরীর তার জাফরানের স্নিগ্ধ সুবাসে সুবাসিত। তার সৌন্দর্যে সুন্দর আজ মহা দুর্ভিক্ষে।

প্রথম কথাগুলো গ্রীষ্মের, দ্বিতীয় কথা গুলো বসন্তের। নামগুলো বাংলা ঋতুর নয়। কিন্তু দুই সত্ত্বার মধ্যে দূরত্ব বাংলা গ্রীষ্ম আর বসন্তের ঋতুচক্রের মতই। তবে চাঁদ একই সময়ে দূরত্বটি কমিয়ে তাদের একসাথে করে নেয়। যাই হোক এখন সকাল, সাথে নরম মিষ্টি রোদ। নিশ্চয় চাঁদ অনাকাঙ্খিতভাবে সূর্যের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করবে না। আর সাথে চাঁদের সেই দু’জন প্রণয় কাঙ্গালও বসে থাকবে না। তারা এখন কাজের তালে ঘাম ঝরাচ্ছে। তাদের ব্যাপারে এত বাক্‌-বাকুম করার পর এখন আমার জন্য কিছু বলার নৈতিক অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। সভ্যতার পর সভ্যতা আমি ধ্রুব সৌন্দর্যের উপমা হয়েছি। আমার বাসা মহাশূন্যে আর আমিই চাঁদ। কিন্তু সকাল হলে আমি স্বপ্ন দেখি মেঘের নরম শীতলতার মাঝে আমার চেয়েও বিশাল গোল প্রাসাদের, স্বেচ্ছাচারী রঙ, নকশা বদলানো পাখির, উল্টো-ঝুলো ঝাঁকড়া গাছের যার কোন শিকড় নেই।

সূর্যই হয়তো বা আকাশে ওঠার লিফট-টা লাগিয়ে দিয়েছে। আমি লিফট ব্যবহার করি আমার সৃষ্টির শুরু থেকেই। সূর্য যখন পশ্চিমে হেলে পড়ে সব আলো আমাকে ঢেলে দেয় তখনই লিফট-টা কাজ করে। সূর্য সবসময়ই হেলে পড়তে অনেক সময় নেয়। মাঝেমধ্যে আমি সন্দিহান হয়ে পড়ি সূর্য ডুবছে তো? সমুদ্রে ডুবছে নাকি দিগন্তে? সন্দেহ-সংশয়ের এই পর্ব সেরে শেষে এখন রাত। ঠাণ্ডা, চুপচাপ আর প্রচণ্ড কালো। তারপরও ওরা সারাদিনের বিষন্নতা, ক্লান্তি নিয়ে আমাকে দেখছে। তাদের এমন মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকা আমার কাছে হাস্যকর, অযৌক্তিক মনে হয়। তারপরও তাদের সৌন্দর্য-বিলাসে সুন্দর সৃষ্টির প্রয়োজন আমি অনুভব করি। তাই মেঘ দিয়ে আমার কালো গর্তগুলো আড়াল করে দেই। আজ আকাশে অনেক কালো মেঘ ভাসছে। কেন যেন ইচ্ছে হল কালো মেঘে কিছুক্ষণ লুকিয়ে থাকি। তাই হুট করে লুকিয়ে গেলাম মেঘের ভিতর। লুকিয়ে থেকে মাঝে-মধ্যে মেঘের ফাঁকে ওদের দেখছি। ওরা আমাকে আর দেখছে না। এটাই চেয়েছি এত ক্ষণ। হয়তো আমার অভাবে তারা সৌন্দর্যকে তাদের মাঝে খুঁজে পাবে। মানুষ বুঝে না তারা কত সত্য, সুন্দর। কিন্তু এই সুন্দর, সত্যের বোধ তাদের মাঝে সৃষ্টি হল না। তারা কেউ কাউকে না দেখে চলে গেল। আমি বাতাসের গ্রামোফোনে গান বাজালাম, “আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে, দেখতে আমি পাইনি তোমায় দেখতে আমি পাইনি”

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.