নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জননী ও জন্মভূমি আমার অহংকার

তিথীডোর

Busy working mother with two child, work as an Architect. Love reading, painting, involved in designing interior, gardening and most of all, love to having quality time with family. Have strong connection with desh and family in back home..beleive in future bangladesh with beautiful infrastucture, low cost housing for street people and lot more improvements..I have a dream on this that Me and my kids will be part of that improvement!

তিথীডোর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৃন্ময়ীর কথা- ৩য় পর্ব

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৩০

পরের বছর হেমন্তের এক বিষন্ন বিকেলে মৃন্ময়ীদের দক্ষিন ভিটের কোণে ছোট্ট মাটির একচালা ঘরে, খড় বিচুলির মেঝেতে হাসু একটি ছেলে সন্তান ভূমিস্ঠ করল। পটলু খুশিতে বড়বাজারের সাহা মিস্টান্ন ভান্ডার থেকে এক হাড়ি গরম রসগোল্লা কিনে আনল আর সেই রসগোল্লা খেতে খেতে মৃন্ময়ী কতকিছু ভাবছিলো ওদের বাংলা ঘরের দাওয়ায় বসে! সেইদিনের আমবাগানের ঘটনার পরে কি ভয়াবহ রেগেছিলো মা! ভাবতে এখনও গা হীম হয়ে আসে---হাসুর শরীরে মাতৃত্বের চিহ্ন আসার সাথে সাথে মা বাবা অসহায় হয়ে পড়লেন, কাকাদের সহোযোগিতায় হাসু আর পটলুর তড়িঘড়ি বিয়ে দিয়ে, দক্ষিন ভিটের এক কোণে মাটির একচালা বানিয়ে দেয়া হলো। তখনকার মানুষজনের মনে বোধহয় দয়ামায়া বেশী ছিল, কেউ তেমন মাথা ঘামালো না। শুধু এক পড়শী দাদী যে কিনা মা কে একটু অপছন্দ করত, সেই দাদী এসে দু চার কথা শুনিয়ে যেত--"ও মলি (বড়পা)র মা, ঘরের মইধ্যে এসব ছেনালীপানা হইল আর তুমি টেরই পাইল্যানা, এডা কেমন কথা? ছিঃ ছিঃ এ্যহন এই নিজের চাইর মেয়া গুলা মানুষ কইরব্যা কেমন কইরা?" মা শুধু চোখের জল মুছত আর আমি বুড়ীকে মনেমনে শ্বাপশ্বাপান্ত করতাম!

হাসুদের ছোট্ট ছেলেটি খুব স্বাস্থ্যবান, শান্ত আর আবলুস কাঠের মত গায়ের রং।মা আশ্চর্যজনক ভাবে শিশুটিকে খুব আদর করতেন আর পটলু কৃতগ্গতায় গলে পড়ে মায়ের রান্নাঘরের দাওয়ায় বসে মায়ের জন্য নাড়কেল চেঁচে দিতো। সবকিছু বেশ সহজ হয়ে আসছিলো, শুধু মেজোআপা আরোও কঠোর হয়ে উঠল আমার প্রতি।একটু উপন্যাস পড়লেই দৌড়ে এসে ছোঁ মেরে বই কেড়ে চেঁচিয়ে মাকে বলত--"আম্মা দেখেন, মৃন্ময়ী পড়াশুনা বাদ দিয়ে বাজে গল্পের বই পড়ছে!--" না না অশান্তিতে জর্জরিত মা এসে আমাকে দুটা কিল মেড়ে, পড়ার বই দিয়ে বসিয়ে দিতো। সামনে মেট্রিক পরীক্ষা, অথচ একটুও পড়তে ইচ্ছে করতনা! জগতের রহস্য নিয়ে ভাবতাম, মাঝেমাঝে হাসুকেও হিংসে হত, ঐ ঘোর কালো মেয়েটিরও এক প্রেমিক আছে, যে কিনা এখন তার স্বামী!

হাসু-পটলুদের নিঁখূত মায়াময় এক সংসার--- ছোট্ট মাটির নিকানো দাওয়া, এককোণে শীম আর লাউ গাছ ওদের ছোট্ট কূটিরের খড়ের চালায় ডালপালা ছড়িয়ে দিযেছে, সব্জীগাছ গুলোর পাশে দুটো মাটির চুলা, তার একটিতে ভাত ফুটছে টগবগ করে আর অন্যটিতে কড়াইতে ছ্যাতছোঁত শব্দে হেলেন্চা শাক রসুনে বাগার দিচ্ছে হাসু! ইস্‌ এ্যতো মায়া, এ্যতো সুখ আমার চেয়ে একটু বড় মেয়েটির কপালে? এই ভয়াবহ অবৈধ প্রেম করেও কেমন পার পেয়ে গেলো হাসু! এখন মনের সুখে ছেলেকে কোলে বসিয়ে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে শাক-ভাত রান্না করছে হাবাগোবা প্রেমিক স্বামীটির জন্য, আর আমি মুখের সামনে ফিজিক্সের কঠিন সূত্র ধরে মুখস্ত করছি! অথচ একটু বিনোদনের জন্য "বিবর" উপন্যাস পড়লেও দোষ---মনে মনে খুব হাসু হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে!

মেট্রিক পরীক্ষা শেষ করলাম কোনমতে, বাড়ীতে খুশীর আমেজে আর পড়া হয়? বড়পা'র বিয়ে র কথা পাকা হয়েছে, ছেলে ওর মতোই ডাক্তার! বড়পা এখন ফোর্থ ইয়ারে মেডিকেলে, মেজোআপা ইন্টার পাশ করে মনোবিদ্যায় চান্স পেয়েছে উত্তরবঙ্গের এক ভালো কলেজে। খুব আনন্দের সাথেই বড়পা'র বিয়ে হয়ে গেলো, খুব কেঁদেছিলাম চার বোন! পুরান ঢাকায় দাদার বাড়ীতে বিয়ের অনস্ঠান হলো, দু একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ভালোভাবেই সব হলো, তবুও সেই ঘটনা গুলোই মায়ের বুকে শেলের মতো বাধল। ঘটনার মূলটা আমাকে নিয়েই! দাদার বাড়ীতে জয়েন্ট ফ্যামিলী, বাবা ছারা ওনার বাকি সব ভাইরাই ঐ দোতলা বাসায় থাকে। বড়পা,র বিয়ে উপলক্ষে গ্রামের বাড়ি থেকে আমরা সবাই, বাবার কাকাতো ভাইরা, এমনকি হাসু-পটলুরাও আমাদের সাথে গিয়েছিলো ঢাকায়। বড়কাকার অনেকগুলো ছেলে, সেজো কাকার ছেলে মিলে বাসায় ছেলেভর্তি !ষোড়সী বয়সের আমাকে মা আর মেজোপা চোখেচোখে রাখতো সবসময়, ওর মধ্যৈই সবার চোখে ধূলো দিয়ে বড়কাকার চতুর্থ ছেলে আমারই সমবয়সী অয়ন আমাকে খুব জ্বালাতো--কখনো গাল টিপত, কখনো ইচ্ছে করে গা ঘেষে দাড়িয়ে চুলে মুখ ডোবাতো, ভয় পেলেও অজানা আনন্দে বেশী বাধা দেইনি! বিয়ের দিনে লাল স্যাটিন কামিজে অয়ন আমাকে দেখে পাগল হয়ে গেলো, চিলেকোঠায় নিয়ে জোর করে আমার গালে চুমু, হতবিহবল আমি ওপাশে তাকাতেই বড়কাকী কে দেখলাম রাগে ফুঁসছেন! বিশ্রী একটা ব্যাপার হয়ে গেলো--আপা বরসহ বিদায় হবার পরে রাতে কাকী চিল্লামিল্লি শুরু করলেন, সদ্য বিয়ে দেয়া মাবাবার মনের অবস্থা কেমন থাকে? মা কেঁদে চললেন অবিরত, বাবার মাথা নিচু, আর চোরের মতো লাল স্যাটিনের কামিজে লজ্জা, অপমানে জড়সর; এমনকি আমার দারোগাসম মেজোআপাও আমাকে আকড়ে ধরে আছেন! বড়কাকী বলেই চলছেন--"এটা ষড়যন্ত্র, তোমরা মৃন্ময়ীকে আমার রাজপুত্রের মতো (অয়ন খুব ফর্সা, আমার বিপরীত!) ছেলের সাথে গছিয়ে দিতে চাও না?"

সেজকাকা সেদিন না এগিয়ে আসলে কি যে হত! মনে মনে প্রতিগ্গা করলাম অনেক বড় হব, মায়ের অসহায় কান্না মুছে দেব!

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:২৮

তাশমিন নূর বলেছেন: খুব সুন্দর হচ্ছে। উপন্যাস বানাবেন কি?

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫৪

তিথীডোর বলেছেন: ধন্যবাদ তাশমিন!..উপন্যাস লেখার মতো এত কোয়ালিটি এখনও আমার হয়নি :!> ডায়েরী বলতে পারো এটা...

২| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:৪৩

খেলাঘর বলেছেন:

"ইস্‌ এ্যতো মায়া, এ্যতো সুখ আমার চেয়ে একটু বড় মেয়েটির কপালে? এই ভয়াবহ অবৈধ প্রেম করেও কেমন পার পেয়ে গেলো হাসু! এখন মনের সুখে ছেলেকে কোলে বসিয়ে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে শাক-ভাত রান্না করছে হাবাগোবা প্রেমিক স্বামীটির জন্য, "

-প্রেম কি করে অবৈধ হয়?

৩| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:২২

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: খুবই সুন্দর ও গতিময় বর্ণনা । ২য় ভালোলাগা +

অনেক শুভকামনা রইল। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।।

৪| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:২৩

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: তবে একটা অনুরোধ, পর পর কন্টিউনিউ করলে ভালো হবে। মাঝে অন্য পোস্ট দিলে একটু খাপছাড়া হয়ে যাবে মনে করি।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৪৯

তিথীডোর বলেছেন: ধন্যবাদ অপূর্ণ! কন্টিউনিউ করতে পারলে ভাল হতো অবশ্যই, কিন্তু মৃন্ময়ীর কথা লিখতে গেলে নিজের প্রস্তুতি বড় একটা ফ্যাক্টর---যেখানে মুড একটা বাধা হয়ে দাড়ায়!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.