নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দ্য েস্লভ

দ্য েস্লভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মধ্যযুগে বাগদাদ..পর্ব৬

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০১



গণিতে বাগদাদ ঃ



মুসলমানেরা শুধু জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনুশীলন ও উন্নতি সাধন করেননি। উচ্চতর গণিতের প্রত্যেক শাখায় তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর বহন করত। মুসলিমরা বীজগণিতের উদ্ভাবক, কিন্ত অন্যরা এটা নিয়েও বুঝতোনা যে,কি করতে হবে যেমন, গ্রীকদের ব্যাপারে ওলস্নার যথার্থই মন্তব্য করেছেন যে, তাদের মধ্যে “গবলেট খেলায়” অনন্দদানের কাজে বীজগণিত সীমিত ছিল। মুসলমানেরা একে উচ্চতর লক্ষ্যে নিয়োজিত করেছিলেন এবং এ পর্যন্ত এর যে মূল্য অজ্ঞাত ছিল তা প্রদান করেছিলেন। খলিফা মামুনের নেতৃত্বে¡ দ্বিতীয় ডিগ্রীর সমীকরণ তারা আবিস্কার করেছিলেন এবং এরপর পরই তারা দ্বিঘাত সমীকরণ ও দ্বিপদ উপপাদ্যের বিকাশ সাধন করেছিলেন।



শুধু বীজগণিত, জ্যামিতি ও গণিত নয় ,আলোকবিদ্যা মেকানিক্সও মুসলমাদের হাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছিল, তারা খ-গোলীয় ত্রিকোণমিতির উদ্ভাবন করেছিলেন, তারই সর্বপ্রথম বীজগণিত জ্যামিতির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছিলেন, আর ত্রিকোণমিতি গণনার ক্ষেত্রে বৃত্তচাপের জায়গায় সাইনে পরিবর্তন করেছিলেন। গাণিতিক ভুগোলের ক্ষেত্রে তাদের অগ্রগতি কম উল্লেখযোগ্য ছিল না, বিজ্ঞান বিভাগে আরবজাতি যাকে রমজুল আরজ নামে অভিহিত করেছে। ইবনে হওকাল, মাকরিজী, আলইশতাখরী, মাসুদী, আলবেরুনী, আরকুমী ও আল ইদারিসি, কাজওয়াইনি, ইবনুল ওয়াবদী ও আবুল ফেদার গ্রন্থসমূহ নির্দেশ করে তারা কি অর্জন করেছিলেন। যখন ইউরোপ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করত, পৃথিবী সমতল,এটি কখনই গোল হতে পারে না এবং যে নির্বোধ(!) এর বিপরীত চিন্তা করতো তাকে পুড়িয়ে ফেলত, তখন মুসলিমরা গ্লোবের সাহায্যে ভূগোল শিক্ষা দিতেন ইউনিভার্সিটি অব বাগদাদ,আলেকজান্দ্রিয়া,কুফা,গ্রনাডা,টলেডো,আল আজহার সহ বিভিন্ন কলেজ ও স্কুলে।



যখন ইউরোপের লোক স্কুল চিনতো না বা পড়ার সুযোগ পেতনা ,তখন স্পেনের প্রতিটি গ্রামেই স্কুল ছিল-(ইবনে বতুতা)। আব্বাসীয় খলীফা আবু জাফর আল্ মনসুরের ( ৭৫৪-৭৭৫ খ্রি.) শাসনকাল ছিল মুসলিম জাহানের জন্য বিশষত: বিজ্ঞান চর্চার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে অনেক বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ তার রাজসভা অলংকৃত করেছিলেন। এদের একজন ছিলেন আবু ইসহাক আল ফাজারী। ভারতের জ্ঞান বিজ্ঞান সম্পর্কে তিনিই প্রথম মুসলিম বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ফলিত জ্যোতিশাস্ত্রে তার চিন্তাধারা ছিলো খুব উচ্চাঙ্গের। জানা যায় তিনিই সর্বপ্রথম মসলমানদের মধ্যে সমুদ্রের গভীরতা, সুর্য ও নক্ষত্র সমূহের উচ্চতা নির্ণায়ক ষন্ত্র এস্ট্রোল্যাব (ধংঃৎড়ষধন) নির্মাণ করেন এবং অংক শাস্ত্রের অন্যান্য যন্ত্রপাতি সম্বন্ধে পুস্তক প্রণয়ন করেন। গণিত বিষয়ে (অৎসরষষবৎু ংঢ়যবৎু) তার প্রনীত গ্রন্থ এখনও অনেক বিষয়ে প্রমাণ্য হিসাবে গৃহীত হয়ে থাকে। আল ফাজারী প্রথম আরব গণনা পদ্ধতি সুনিয়ন্ত্রিত করে আরব বর্ষগণনা ও দিনপঞ্জী প্রণয়ন করেন। ফাজারী ৭৭৭ খ্রিঃ মৃত্যু বরণ করেন।



অবিস্মরণীয় গণিত-প্রতিভা ঃ



আল-মামুনের শাসনামলের বাগদাদের আরেক অমর খাওয়ারিজমি। পুরো নাম আবু জাফর মোহাম্মদ ইবনে মুসা খাওয়ারিজমি। বিশ্ববিশ্র“ত গণিতবিদ ও দার্শনিক। তিনি আবিস্কার করেন বীজগণিতের সমীকরণ। শূণ্য (জিরো) সংখ্যার উদ্ভাবক হিসেবে তাকে মেনে নিয়েছে পরবর্তীকালের পৃথিবী। মুসলিমরা পৃথিবীকে প্রথম উপহার দিয়েছে গণিতশাস্ত্রে (০)। ১ থেকে ৯ এবং শূণ্য সংখ্যা অ্যারাবিক নাম্বার হিসাবে পরিচিত(ইংরেজী ১-৯ পর্যন্ত নাম্বার আরব মুসলিম গণিতবিদদের উদ্ভাবন)। ঐতিহাসিক পি কে হিট্টি তাঁর আরবজাতির ইতিহাসে জানিয়েছেন, ষোল শতক পর্যন্ত ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান টেক্সট হিসাবে পড়ানো হতো খাওয়ারিজমির গণিত ও বীজগণিত শাস্ত্র। খাওয়ারিজমির গণিতশাস্ত্রের ওপর রচনা করে গেছেন দশটি বীজগণিত শাস্ত্র। এক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কিতাব হিসাব আল আদাত আল হিন্দি। কিন্তু ইউরোপীয়রা এই যুগান্তকরী উদ্ভাবনকে অভিহিত করেছিল শয়তানের কাজ(?) বলে।



পৃথিবীর মাপজোক ঃ



৮৮০ খ্রিষ্টাব্দে খাওয়ারিজমি খলিফা আল-মামুনের নির্দেশে সিরিয়ার পলেমিরা প্রান্তরে এবং জ্যোতির্বিদ মুসা ইবনে শাকের মসুলের সঞ্জরের মাঠকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর পরিধি ও দ্রাঘিমার দূরত্ব নির্ধারণ করেন। তাদের গণনা মতে, পৃথিবীর পরিধি ২০,০০০ মাইল, ব্যাস ৬৫০০ মাইল। বর্তমান হিসাবও এর কাছাকাছি।



এ্যালজেব্রার উদ্ভাবক ঃ



আল খাওয়ারিজমী বীজগণীতের উদ্ভাবক।‘আল জাবীরা ওয়া মুকাবিলা ’নামক গ্রন্থ তিনি রচনা করেন,এটি ইংরেজীতে অনুবাদ হয় এ্যালজেব্রা হিসেবে। পরে ইউরোপীয়রা এক্ষেত্রে তাকেই অনুসরণ করেছে, এখনও করছে।



ভূ-বিদ্যায় বাগদাদ ঃ



আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠা ও বাগদাদ মুসলিম জাহানের রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর পরই মুসলমানরা শত শত বর্গ মাইলের দেশসমূহের অজানা অচেনা পথ ধরে চলতে গিয়ে এবং ইসলামের আদর্শ প্রচারের জন্য বহু দেশে তাদের ভূ-বিদ্যা বিষয়ে ব্যপক গবেষণা চালাতে হয়। মুসলিমদের উদ্দেশ্য ছিল ইসলামকে পৃথিবীর মানুষের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেওয়া তাই তারা মানুষের কাছে ইসলাম পৌঁছানের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে ব্যপক গবেষণা করে এবং অভাবনীয় সফলতা অর্জন করে। ফলে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, স্পেনের, বিজিত অঞ্চলসমূহে মুসলমানরা বহু নতুন ভৌগলিক তথ্য আবিষ্কারে সক্ষম হয়েছেন। খলীফাদের পৃষ্ঠপোষকতা তাদের সাফল্যের পেছনে বিরাট অবদান রাখে।



আরবীয় যুগে প্রাচীন বহু অমূল্য দু®প্রাপ্য গ্রন্থ এবং গ্রীকদের বহু ভূগোল গ্রন্থ মুসলিম বিজ্ঞানীরা আরবীতে অনুবাদ করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন মুহাম্মদ বিন মূসা খারিজমী (মৃ. ৮৪৭ খ্রি,) আল কিন্দি (মৃত্যু ৮৭৪ খ্রি.) সাবিত বিন কুররা (মৃ. ৯০১ খ্রি.)। আল খারিজমী (মৃ. ৮৪৭ খ্রি.) বিখ্যাত ভুগোলবিদ ছিলেন এবং তার রচনায় আরবীতে ভূ-বিজ্ঞানের বুনিয়াদ স্থাপন করেন। সূরাতূল আরদ নবম শতকের প্রথমার্ধে রচিত তার অন্যন্য কীর্তি । খলীফা আল মামুনের আমলে (৮১৩-৮৩৩ খ্রি.) যে সকল মনীষী পৃথিবীর প্রথম মানচিত্র অংকন করেন তাদের মধ্যে খারিজমী অন্যতম(এখনকার মানচিত্রের সাথে হুবহু মিল)।



খলীফার উৎসাহে তিনি পৃথিবীর একটি পরিমাপও তৈরী করেছিলেন। তার গ্রন্থ সম্পর্কে অধ্যাপক মিনবক্সি বলেন ইউরোপীয়রা তাদের বিজ্ঞান চর্চার প্রথম দিকে এর সমতুল্য গ্রন্থ রচনা করতে পারেনি। তার পরে আল ফাগানী (মৃ. ৮৬০ খ্রি.) আল বাত্তানী (মৃ. ৯২৯ খ্রি.) ইবনে ইউনুছ (মৃ. ১০০০ খ্রি.) অক্ষরেখা ,দ্রাঘিমা ও ভূমন্ডল বিষয়ে গবেষণা চালিয়েছে। খারিজমীর নেতৃত্বে বিজ্ঞানীদের একটি দল ফোরাত নদীর উপরে পামির মালভূমীর নিকটবর্তী সিনজিরার প্রান্তরে পরিমাপ কার্য চালান। তার হিসাব মতে পৃথিবীর পরিধি ২০ হাজার ৪০০ মাইল এবং ব্যাস ৬৫০০ মাইল। এই পরিমাপ কাজে খারিজমীর নিজস্ব উদ্ভাবিত জীজ ব্যবহৃত হয়।



শিক্ষা ক্ষেত্রে বাগদাদ ঃ



খোলাফায়ে রাশেদার আমলে শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থা ছিলো প্রাতিষ্ঠানিক কিন্তু জাকজমকবিহীন। তৎপরবর্তী উমাইয়া যুগে পাঠ্যক্রম, পাঠ্যসূচী এবং শিক্ষাদান বিষয়ে নতুন সূচনা লাভ করে। পৃথক স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। মসজিদের সাথেই এসব স্কুল সংযুক্ত ছিল। উমাইয়া যুগে শিক্ষার বিষয়ব¯ু— ছিল পূর্বোক্ত বিষয়াবলী হতে আরো বি¯তৃত। হালাল, হারামের বিষয়াদী, আরবী ব্যকরণ,বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, ইসলামের বিজয় ইতিহাস নতুন আঙ্গিকে পড়ানো হয়। এছাড়া যোগ্য নেতৃত্ব, সামরিক উৎসাহ মূলক বতৃতা, তীর নিক্ষেপ, ঘোড়দৌড়, শিক্ষা সফর, সাতাঁর ইত্যাদি শিক্ষা দেয়া হতো। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ফিলিপ কে. হিট্টি উমাইয়া যুগের মূল শিক্ষার লক্ষ্য এভাবে তুলে ধরেন, “The ethical ideals of education were saber jeor (obligation to the neighbours) murnah manliness generasity, regard for women and up keeping of promises"



আব্বাসীয় আমলঃ



আব্বাসীয় খলীফাগণ জ্ঞান শিক্ষা বিস্তারে বেশী মনোযোগ দেন। ফলে শিক্ষা ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক বৈল্পবিক অধ্যায় সূচিত হয়। আব্বাসীয় যুগকে তাই ইসলামের ইতিহাসের “স্বর্ণযুগ” বলা হয়। বহুসংখ্যক নতুন বিদ্যায়তন স্থাপিত হয়। আব্বাসীয় আমলে দুই ধরনের প্রতিষ্ঠিান ছিলো। প্রাথমিক ও উচ্চ পর্যায়ের।



প্রাথমিক শিক্ষা



ইমাম গাজ্জালীর মতে, ছয় বছর হতে শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা আরম্ভ হত এবং তারা আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলে ভর্তি হত। মসজিদ, ব্যক্তিগত গৃহ এবং মক্তবগুলোতে ছিলো তাদের পড়ার স্থান। হিট্টি বলেন, এ স্তরের শিক্ষার্থীদের মুখস্থ শক্তির উপর বিশেষ জোর দেয়া হত। কুরআন পাঠ এবং ভাবমূলক কবিতাই ছিলো তাদের শিক্ষার পাঠক্রম।



উচ্চশিক্ষা



উচ্চ শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত ছিলো গবেষণামূলক আলোচনা, হাদীসের বিজ্ঞান ভিত্তিক আলোচনা,আইনশাস্ত্র, ধর্মতত্ত্ব, ছন্দ, সাহিত্য। এছাড়া গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, বৃত্ত সম্পর্কীয় জ্যামিতি, দর্শন, চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত ছিলো। আব্বাসীয় আমলে নারীদের অ-সাধারণ শিক্ষার অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়। উচ্চ শিক্ষার জন্য খলীফা মামুন ৮৩০ সালে ‘বায়তুল হিকমা’ প্রতিষ্ঠা করেন। ইসলামের ইতিহাসে প্রকৃত অর্থে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে ১০৬৫-৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘নিজামিয়া বিশ্ব বিদ্যালয়’(এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয় ছিল তবে এটির মত ব্যপক নয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে,পূর্নাঙ্গ গঠনরীতি অনুযায়ী তৈরী হয়নি)।



সেলজুক আমলে পার্সী মন্ত্রী নিজামুল মূলক এটি প্রতিষ্ঠা করেন। আবাসিক ও বৃত্তি নিয়ে লেখাপড়ার সুযোগ এখানে ছিলো। প্রখ্যাত দার্শনিক ইমাম গাজ্জালী চার বছর (১০৯১-৯৫) এ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ছিলেন। আব্বাসীয় আমলে শিক্ষার্থীদের বিষয় নির্বাচনে স্বাধীনতা ছিলো। শিক্ষা ছিল অবৈতনিক। তবে বিত্তশালীরা এ ক্ষেত্রে প্রচুর অর্থ খরচ করত যদিও তার বাধ্যবাধকতা ছিলনা। শিক্ষক ছাত্র মধুর সম্পর্ক ছিলো।



ঐতিহাসিক খোদা বক্স লিখেছেন, “অনেক শিক্ষকই কোন বিষয়ের উপর আলোচনা কালে নিজ আসন ছেড়ে ছাত্রদের সাথে মিশে বসতেন।” শিক্ষকদের প্রতিও ছিলো শিক্ষার্থীদের অপরিসীম শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। তাদের শিক্ষার উৎকর্ষে মুগ্ধ হয়ে ইউরোপের দূর দূরান্ত হতে ছাত্ররা ছুটে আসতো।



শাহজাদাদের এসমস্ত স্থানে পড়া শুনার সুযোগ দেওয়ার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের রাজা বাদশারা খলিফার কাছে সবিনয়ে চিঠি লিখে সুযোগ প্রার্থনা করতেন। অমুসলিম রাজা বাদশাদের সন্তানরা স্বপ্ন দেখতো বিখ্যাত এসব ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শুনা করার। বিখ্যাত মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে শাহ্জাদারা অধ্যায়ন করতে পারলে নিজেদেরকে ধন্য মনে করত। এ বিষয়টি তাদের আভিজাত্য বহুগুন বাড়িয়ে দিত। তাই তাদের শাসক পিতারা খলিফার প্রতি অনুগত,বিগলিত হয়ে লিখিত পত্রের নীচে-“আপনার অনুগত দাস্” শব্দটি উল্লেখ করত।



এ আমলে মুসলমানরা গ্রীক, সংস্কৃত, পারসী, সিরীয় ভাষা হতে অসংখ্য মূল্যবান গ্রন্থ অনুবাদ করেন। খলীফা মনসুর এবং তার পরে আধুনিক শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটে। ফলে বিপুল পরিমাণ মুসলিম পন্ডিত, মনীষী, বিজ্ঞানীদের ছোঁয়ায় মুসলিম দুনিয়া ভরে উঠে।



নারী শিক্ষা ঃ



শিক্ষার চর্চা শুধু পুরুষদেরই মধ্যেই সীমিত ছিল না। নারী জাতির কৃষ্টি ও শিক্ষার চর্চা সমান্তরালভাবে পুরুষজাতির মতোই অনুসৃত হত; নারীরা পুরুষের মতোই সাহিত্য ও বিজ্ঞানের চর্চায় অনুরাগী ছিলেন। তাদের নিজস্ব কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ছিল(যার অনেকগুলিই তারা নিজেরা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এবং পরিচালনা করতেন, যেমন মামলুক শাসনামলে মহিলারা ১১টি বিশ্ব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ও পরিচালনা করতেন);



নারীরা চিকিৎসাবিদ্যা ,গণীত বিদ্যা ও আইনবিজ্ঞান অধ্যায়ন করতেন, অলঙ্কারশাস্ত্র, নীতিশাস্ত্র ও সুকুমার সাহিত্যের উপর বক্তৃতা করতেন এবং একটি মহান সভ্যতার গৌরব বর্ধণে পুরুষের সঙ্গে অংশগ্রহণ করতেন। জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের দাপট ছিল চোঁখে পড়ার মত। উচ্চপদস্থ কর্মচারী ও নৃপতিদের স্ত্রী ও কন্যারা কলেজ প্রতিষ্ঠায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুদান প্রদানে, পীড়িতদের জন্য হাসপাতাল স্থাপনে এবং গৃহহীন এতিম ও বিধবাদের জন্য আশ্রয় তৈরীতে ব্যপক অর্থ ব্যয় করতেন।



আবর গোত্রসমূহের বিভাগ ও ঈর্ষা তাদের মধ্যকার বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার একাত্মকরণ ও সংমিশ্রণ ঘটেনি, তবে তার ফল এই দাঁড়িয়েছিল যে, হিজাজে কথিত জাতীয় ভাষা ঐশ্বর্ষশালী হয়েছে, ওকাজের বাৎসরিক মেলায় জনগণের সম্মেলনে কবিদের সাময়িক প্রতিযোগিতা নিয়মতান্ত্রিকতা ও পেলবতা দান করেছে। তবে “কুরআনই একখানি গ্রন্থ যার সাহায্যে আরবগণ মহান আলেকজান্ডারের চেয়ে বিশালতর, রোমের চেয়ে ব্যাপকতার রাজ্য অধিকারভুক্ত করেছিল, যা তারা দশ বছরে সম্পাদন করেছিল, রোমের তা করতে একশ বছর লেগেছিল(তবে মুসলিমদের উদ্দেশ্য দেশ জয় ছিলনা বরং ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠাই ছিল মুখ্য); কেবল এই গ্রন্থের সাহায্যেই সেমিটিক জাতির মধ্যে তারাই নৃপতি হিসেবে ইউরোপে এসেছিল; তারা ইউরোপে এসেছিল এসব উদ্বা¯ু—দের সাথে মানবজাতির নিকট আলোকবর্তিকা তুলে ধরতে, যখন দশদিক অন্ধকারে আচ্ছন্ন ছিল তখন মুসলিমরাই হেলেনীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানকে মৃত অবস্থা থেকে পুনরুজ্জীবিত করেছিল প্রাচ্যের মতো প্রতীচ্যকেও দর্শন, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও সোনালী শিল্পকলা শিক্ষা দিয়েছিল এবং আধুনিক বিজ্ঞানের ধাত্রীপনা করেছিল, আর গ্রানাডার পতনকালে সেই উজ্বল দিনগুলোর জন্য চিরকাল কাঁদতে আমাদেরকে বিলম্বিত উত্তরসূরী বানিয়ে গিয়েছিল। এই গ্রন্থই আরবী ভাষাকে বিশুদ্ধ আকারে নির্ধারিত ও সংরক্ষিত করেছিল। এর ভাষার সরল সমুন্নতি স্টাইলে নির্ভেজাল সৌন্দর্য, উপমার বৈচিত্র্য সৌদামিনীর চমকের মতো দ্রুত রুপান্তর নীতিবিদকে শেখায়, দার্শনিককে চিন্তায় নিমগ্ন করে, আহত দেশ প্রেমিককে তার জাতির নীতিভ্রষ্টতা ও অধঃপতন থেকে শিক্ষা নিতে সাহায্য করে এবং তাকে দায়ীত্ব সচেতন করে এবং আল্লাহ তার মনোনীত বান্দার মাধ্যমে তার পথভ্রষ্ট বান্দাদেরকে ফিরে আসতে আহবান জানান ,সমুদয় ধর্মগ্রন্থের মধ্যে এটি অনন্য চরিত্রের নির্দেশ করে। বিস্ময় ও বিমুগ্ধ চিত্তে সে যুগের শ্রেষ্ট কবিগণ কুরআনের শিক্ষাকে শ্রবণ করেছেন এ থেকেই বুঝা যায় কোরআন কত গভীরভাবে জনগণকে অনুপ্রাণিত করেছিল। বিভিন্ন সময়ে অবতারিত নির্যাতন ও মানসিক যাতনার মুহুর্তে, অথবা শক্ত কাজের সময় অথবা বাস্তব নির্দেশনার জন্য বিঘোষিত তথাপি এর প্রতিটি শব্দে একটা প্রাণবন্ততা, একাগ্রতা ও শক্তি রয়েছে এসব গুণ একে অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ থেকে পৃথক করে। একজন বিখ্যাত লেখক কোরআন সম্পর্কে নিম্মোক্ত কথা বলেছেন ঃ “যদি কোরআন কবিতা না হয় এটা বলা কঠিন যে এ কবিতা পদবাচ্য হবে কিংবা কবিতা পদবাচ্য হবে না তবে এ কবিতার চেয়েও অধিক। এ ইতিহাস নয়, জীবনীও নয়। এ পর্বতের উপর বিঘোষিত সার্মনের মতো সংকলন নয়, কিংবা বৌদ্ধ সূত্রসমূহের মতো পরাবিদ্যামূলক দ্বান্দ্বিক দর্শন নয় অথবা প্লেটোর জ্ঞানী ও আহম্মকদের সম্মেলনের ন্যায় মহিমাব্যঞ্জক প্রচারবিদ্যাও নয়। এ হল একজন প্রেরিত পুরুষের আহবান; এমনি সার্বজনীন ও সময়োপযোগী যে, যুগের সকল কন্ঠস্বর তা ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক গ্রহণ করেছে এবং তা প্রাসাদে ও মরুভুমিতে নগরে ও সাম্রাজ্যে প্রতিধ্বনিত হয়েছে, প্রথমে তা তার মনোনীত হৃদয়সমূহকে উদ্ভাসিত করেছে, পরে তা একটি পুনর্গঠনমূলক শক্তিতে রুপান্তরিত হয়েছে যার ফলে গ্রীস ও এশিয়ার সৃষ্টিধর্মী আলোকরশ্মি খ্রিষ্টান ইউরোপের জমাট অন্ধকার বিদীর্ণ করতে পারে, যখন খ্রিষ্টধর্ম কেবল অন্ধকারের সাম্রাজ্ঞী ছিল।



আগামী পর্বে সমাপ্ত...

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২১

অন্য কথা বলেছেন: আবারো নতুন করে পড়লাম প্রতিটি পর্ব। জানলাম অনেক কিছু। আল্লাহ্‌তায়ালা আরো লেখার তৌফিক দিন আপনাকে। আমিন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.