নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মূলতঃ আল্লাহর আদেশের বিপরীতমুখী কাজ করার মধ্যে যথেষ্ট মজা,উত্তেজনা নিহিত রয়েছে। এ মজা আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন,মানুষকে পরিক্ষা করার জন্য। যদি তাঁর বিরুদ্ধ কাজে সব সময় সবার খারাপই লাগতো তাহলে সবাই তাঁর রাস্তায় থাকতো। সে কারনে পরিক্ষার ব্যাপারটি অবান্তর ছিল। আবার তিঁনি তাঁর অনুগত বান্দাদের জন্য শারিরীক,মানুষিক তৃপ্তীর ব্যবস্থা রেখেছেন। তবে সেখানে আল্লাহ নির্ধারিত সীমা রয়েছে,যার কারনে সেটি অবাধ নয়,বরং নিয়ন্ত্রণপূর্ণ। কখনও কখনও আমরা এমন সব বিষয়কে ভাল মনে করি যা প্রকারান্তরে খারাপ হতে পারে, এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, “তোমরা যা অপছন্দ কর সম্ভবত তা তোমাদের জন্য কল্যানকর এবং যা তোমরা পছন্দ কর সম্ভবত তা তোমাদের জন্য অকল্যানকর, আল্লাহ জানেন আর তোমরা জান না।”(আল-কুরআন,২ঃ২১৬)
একমাত্র ঈমানদার ব্যক্তিরাই অনুভব করতে পারেন আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ করার পর,আল্লাহকে অবিভাবকত্ব অর্পন করার পর, সকল কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করলে কতটুকু মানুষিক শান্তি বিরাজ করে। আল্লাহর ওয়াদা হলো এদেরকে তিঁনি দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় স্থানেই শান্তি ও সফলতা দান করবেন। তাই ঈমানদারদের পিছুটান থাকেনা,দুঃখ-কষ্টের সংজ্ঞা তাদের কাছে ভিন্ন । তাদের কোন হতাশা থাকে না,ভয় থাকে না,আর এটাই সফলতার সোপান। কারণ আল্লাহর রহমত স্বরুপ যখন ঈমানদারেরা এই বৈশিষ্ট্য অর্জন করে তখন এরা পৃথিবীতে মহা সফল হয়। আর তাদের শ্রেষ্ঠ পাওনা তো আখিরাতের অনন্ত কালের শান্তির জন্য- আল্লাহ জমা রেখেছেনই। একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে তারা তা প্রাপ্ত হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “যারা আমাকে বিশ্বাস করে না,তাদের জন্য আমি শয়তানকে অবিভাবক বানিয়ে রেখেছি।”(আল-কুরআন,৭ঃ২৭) আর যে লোক আল্লাহকে বিশ্বাস করে কিন্তু কাজ করে আল্লাহর আদেশের বিপরীত,সে লোক সত্যিই আল্লাহকে বিশ্বাস করেনি। শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্র“(এ ব্যাপারে মুসলিম,ইহুদী,খ্রিষ্টানরা এক মত)। শয়তান আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েছে মানুষকে বিপথে নেওয়ার ব্যাপারে। সে খারাপকে ভাল আর ভালোকে খারাপ হিসেবে উপস্থাপন করে। সে মানুষকে তার কামনা বাসনার দাস বানিয়ে দেয় এবং সিমাহীন ফুর্তির দিকে ধাবিত করে। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “তুমি কি দেখনি সেই লোকটিকে,যে তার কামনা বাসনাকে ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে ?”(আল-কুরআন,২৫ঃ৪৩) শয়তান আসলে নিজের ইচ্ছাকে যে কোনভাবে পূর্ণ করার মদদ দিয়ে মানুষকে সীমাহীন হতাশার দিকে ধাবিত করে এবং ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত করে। এটাই তার ওয়াদা। রসূল(সাঃ) বলেন ,শয়তান মানুষকে দুইবার ধোকা দিবে। (১) পৃথিবীতে সে মানুষকে আল্লাহর বিরুদ্ধে নিয়ে যাবে বা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। (২) আখিরাতে যখন সে শাস্তি মাথা পেতে নেওয়ার জন্য গমন করবে তখন তার অনুসরনকারীরা বলবে -এই’ই তো আমাদেরকে আল্লাহ বিরুদ্ধ পথে পরিচালিত করেছিল। এসময় শয়তান পুরোপুরি ব্যাপারটা অস্বীকার করে বলবে- আমি কি তোমাদেরকে বলেছিলাম যে ,আমাকে অনুসরণ কর ? সে তখন তার অনুসারীদের পরিত্যাগ করে বলবে, এদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই এবং আমি সত্যিই আল্লাহকে ভয় করি, নবীরা সত্যই বলেছিলেন। অনুসারীদের জাহান্নাম ছাড়া কিছুই জুটবে না, সে এক ভয়ঙ্কর শাস্তির স্থান। তখন সবাই বুঝে যাবে কে সফল আর কে বিফল ।
মূলতঃ আল্লাহ যে আদেশ করেছেন তা মেনে নেওয়ার মধ্যেই সফলতা নিহিত। তিঁনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাই মানুষের প্রতি তাঁর ভালবাসাটাই আসল। তিঁনি চান মানুষ সফল
হোক। তিঁনি সত্য এবং মিথ্যা দুটি রাস্তা তৈরী করলেও মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সত্যের অনুকূল করে এবং সত্যের স্বপক্ষে থাকা মানুষদেরকে তিঁনি সাহায্য করেন,পছন্দ করেন। তিঁনি মানুষের মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করেছেন যাতে মানুষ তার স্রষ্টাকে খুঁজে পাবার ব্যাপারে আগ্রহী হয়। তার মধ্যে এমন এক ধরনের অপূর্ণনা সৃষ্টি করেছেন যার কারনে সে নিজেকে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী কারো কাছে সমর্পন করে তৃপ্ত হয়। যখন মানুষ প্রচন্ড রকমের বিপদে পড়ে দিশা হারা হয়ে পড়ে তখন তিঁনিই তার মধ্যে সর্বশক্তিমানের প্রতি আত্মসমর্পনের পরিবেশ সৃষ্টি করেন। তিনিই মানুষের অসহায়ত্বের সহায় হবার জন্য মনের মধ্যে অসীম পরাক্রমশালী সত্ত্বার উপর নির্ভরশীল হবার অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করেন। মানুষকে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে যে,সে চেষ্টা করলেই তার স্রষ্টাকে খুঁজে পেতে পারে। সত্যের সন্ধানে চলা মানুষকে তিঁনি সাহায্য করেন। তিঁনি মহান,অতি দয়ালু তাই সৎ কাজের পুরষ্কার সবসময়ই বহুগুণ বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ বলেন ঃ “কেউ কোন সৎ কাজ করলে,সে তার দশগুন প্রতিদান পাবে আর কেউ অসৎ কাজ করলে তাকে শুধু তার প্রতিফলই দেওয়া হবে (আল-কুরআন,৭ঃ১৬০) হাদিসে কুদ্সীতে আল্লাহ বলেন ঃ বান্দা যখন কোন পাপের সংকল্প করে তখন আল্লাহ তার পাপ লেখেন না,যদি সে উক্ত পাপ করে তবে আল্লাহ পাপটি লেখেন অথবা তাকে ক্ষমা করে দেন। আর বান্দা যখন কোন সৎ কাজের সংকল্প করে তখনই তার উক্ত সৎ কাজের বিনিময় হিসেবে সওয়াব লেখা হয়। যদি সে উক্ত সৎ কাজ নাও করে তবুও তার সওয়াব বহাল থাকে। আর সে যদি উক্ত সৎ কাজ করে তাহলে অল্লাহ তার একটি সৎ কাজের বদলে কমপক্ষে দশটি সৎ কাজের সওয়াব লেখেন এবং তার পাপ মাফ করেন। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে মানুষের একটি সৎ কাজের বিনিময়ে সত্তুর গুণ হতে সাতশত গুণ সওয়াব লেখা হয়।
(সওয়াব হলো আখিরাতের কারেন্সী। আখিরাতে যার যত বেশী পরিমান নেকী বা সওয়াব থাকবে সে তত বেশী উপকরণ বা সুবিধা বা নিয়ামত আল্লাহর কাছ থেকে ক্রয় করতে পারবে।)
আল্লাহ পরিক্ষা করে নিতে চান,কে তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর ইবাদত করে,পাপ ও পূণ্যের পথের মধ্যে কোনটি গ্রহন করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-“ “তোমরা কি ভেবেছ-‘ঈমান এনেছি’একথা বললেই আমি ছেড়ে দেব ? তোমাদেরকে পূর্নাঙ্গ পরীক্ষা না করেই আমি অব্যাহতি দেব ? অথচ আমি তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকেও ছেড়ে দেইনি।...আল্লাহর নির্ধারিত কাল আসবেই...” (আল-কুরআন,২৯ঃ২-৫)
মানুষকে পরিক্ষার উদ্দেশ্যে তিঁনি জাহান্নামকে সাজিয়েছেন মনোমুগ্ধকর জিনিস দিয়ে আর জান্নাতকে সাজিয়েছেন কষ্টকর জিনিস দিয়ে। একইসাথে তিঁনি বলেদিয়েছেন বা সতর্ক করেছেন যে,কোন পথ গ্রহন করলে পরিনতি কি হবে। হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ তায়ালা বলেন ঃ “আল্লাহ জান্নাতকে তৈরী করলেন অত্যন্ত সুন্দর ও আকর্ষনীয় করে,শান্তির সমস্ত উপকরণ দিয়ে ,এরপর তিঁনি ফেরেশতা জিবরাঈলকে বললেন,দেখে এসা- আমি কেমন জান্নাত তৈরী করেছি। জিবরাঈল দেখে এসে মন্তব্য করলেন ,এ তো কল্পনারও উর্ধ্বে ! ইয়া আল্লাহ ! আমার বিশ্বাস আপনার প্রত্যেকটি বান্দাই এর মধ্যে ঢোকার জন্যে প্রতিযোগীতায়
লিপ্ত হবে। এরপর আল্লাহ জান্নাতকে বিভিন্ন কষ্টকর জিনিস দিয়ে মুড়ে দিলেন এবং জিবরাঈলকে
তা আবার দেখতে বললেন। জিবরাঈল এবার জান্নাত দেখে এসে বললেন,ইয়া আল্লাহ ! আমার মনে হচ্ছে আপনার কোন বান্দাই জান্নাতে যেতে চাইবে না।
আল্লাহ জাহান্নাম তৈরী করলেন অত্যন্ত কষ্টকর,কঠিন শাস্তির উপকরণ দ্বারা এবং তিঁনি ফেরেশতা জিবরাঈলকে বললেন,দেখে এসো- আমি জাহান্নাম কেমন তৈরী করেছি। জিবরাঈল দেখে এসে বললেন,ইয়া আল্লাহ ! কষ্টের উপকরণ দেখে আমার মনে হচ্ছে আপনার কোন বান্দাই এর ভেতর ঢুকতে চাইবে না। আল্লাহ এবার জাহান্নামকে বিভিন্ন মনোমুগ্ধকর বিষয়,বস্তু দ্বারা ঢেকে দিলেন এবং জিবরাঈলকে আবার দেখতে বললেন। জিবরাঈল দেখার পর বললেন ইয়া আল্লাহ ! আপনার সত্ত্বার কসম ! আমার মনে হচ্ছে,আপনার এমন কোন বান্দা নেই, যে এখানে ঢুকতে চাইবে না।
“রসূল (সাঃ)বলেন, জাহান্নামকে মুড়ে রাখা হয়েছে চিত্তাকর্ষক কার্যাবলীর দ্বারা এবং জান্নাতকে মুড়ে রাখা হয়েছে কষ্টকর বিষয়াবলী দ্বারা।” (সহীহ্ বুখারী)
কোনটা মানুষের অধিকার আর কোনটা তার অধিকার নয়, এটা স্রষ্টা ছাড়া আর কারো বোঝার কথা নয়। কারণ ব্যাপারটা স্রষ্টা ও সৃষ্টি সংক্রান্ত। সৃষ্ট জীব হিসেবে মানুষ কখনই তার স্রষ্টার মনের কথা জানতে পারে না,যদি সে স্বেচ্ছায় না জানায়। এক্ষেত্রে স্রষ্টাকেই নিজে থেকে জানাতে হবে। আর স্রষ্টা আল্লাহ আমাদেরকে তা জানিয়েছেন,আল কুরআনের মাধ্যমে । তাই এই আল কুরআনকে মেনে নেওয়ার মধ্যেই সফলতা। আল্লাহ মানুষকে তার অধিকারের যে সীমারেখা দিয়েছেন,সেটা মেনে চললেই প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে,সমৃদ্ধি আসবে। পাশ্চাত্যের কুফর জীনাদর্শ, চাকচিক্য যেন আমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “জনপদসমূহে যারা আল্লাহকে দম্ভ করে অস্বীকার করেছে,তারা যেন কোনভাবেই তোমাকে বিভ্রান্ত করতে না পারে।”(আল-কুরআন,৩ঃ১৯৬) নারীদের অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে পাশ্চাত্য যত কিছুই বলুকনা কেন নারীদেরকে তাদের অধীকার,কর্তব্যের ব্যাপারে তাদের স্রষ্টার উপর নির্ভরশীল হতে হবে। পুরুষ নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য নারীকে অধিকার সচেতন করতে চাইছে কি না, তা বোঝা সম্বব নয়, কারণ সে তার স্বার্থ দ্বারা তাড়িত হয়। এজন্য নারী তার অধীকার,কর্তব্যের ব্যাপারে নিশ্চিন্তে নির্ভর করবে আল্লাহর উপর। স্রষ্টা আল্লাহর নির্ধারিত সীমা মেনে চলার সাথেই প্রকৃত সফলতা জড়িত তাই নারী ও পুরুষ আল্লাহর বেঁধে দেওয়া সীমা অনুসরণ করবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন ঃ
আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও আত্মসমর্পণকারী নারী,মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী,অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী,সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী,ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী,বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী,দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী,সাওম(রোজা)পালনকারী পুরুষ ও সাওম পালনকারী নারী,যৌন অঙ্গ হেফাজতকারী পুরুষ ও যৌন অঙ্গ হেফাজতকারী নারী,আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী, অবশ্যই এদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা প্রতিদান।”(আল-কুরআন, ৩৩ঃ৩৫)
চলবে.....
©somewhere in net ltd.