নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“ জয়, তুমি নামাজের ব্যাপারে বেশ উদাসীন। একজন মুসলিমকে এটা অবশ্যই আদায় করতে হয়। মুমিন এবং কাফিরের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত। এটা কখনও মিস করবে না। এমনকি নামাজের ওয়াক্তের সময় যদি লিফটে দায়িত্ব পালনরত থাক এবং যদি সেখান থেকে বের হওয়া সম্ভব না হয়,তাহলে ওই অবস্থাতেই বসে বসে ইশারায় নামাজ আদায় করবে। তুমি প্যান্ট অপরিষ্কার এটা বলেছ, যদি নামাজের ওয়াক্ত হয় এবং পরিষ্কার কাপড় পড়া সম্ভব না হয় ,তাহলে ওই কাপড়েই নামাজ আদায় করবে। আমরা যে কোনো সময় মৃত্যুর কবলে পড়তে পারি। এমনকি একটু পরেই আমরা মারা যেতে পারি। আমাদের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। তোমার বয়স কম কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, তুমি দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবে বরং তুমিও খানিক পর মারা যেতে পার এবং আমরা প্রতিনিয়ত এটা আমাদের চারিপাশে ঘটতে দেখছি। আমরা পৃথিবীতে আল্লাহর ইবাদতের জন্যে এসেছি এবং ইবাদতের জন্যেই আমরা বেঁচে থাকি,এটা সবসময় মাথায় রাখবে। সবকিছুর ওপর আল্লাহর ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিবে।”
এগুলো ছিল জয়ের সাথে বলা আমার সর্বশেষ কথা। আমরা সালাহউদ্দীন ভায়ের বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় পাশাপাশি হাটছিলাম। সে আমাকে মর্যাদা দিতে গিয়ে চলার সময় দূরত্ব রেখে হাটছে দেখে আমি তার ঘনিষ্ঠ হয়ে এসব বলতে বলতে অগ্রসর হচ্ছিলাম। সে সকল কথায় হ্যাঁ বোধক সায় দিয়ে যাচ্ছিল এবং মাঝে মাঝে প্রশ্নও করছিল।
জয় জানত না কে তার পিতা-মাতা। কিন্তু সে মনে করতে পারত ,সে একটি হিন্দু পরিবারেই ছিল এবং সে একজন হিন্দু। তাকে অনাথ অবস্থায় মামুন ভাই প্রাপ্ত হয় এবং লালন-পালন করে। যখন সে কিশোর হল তখন তার দোকানের কিছু কাজে নিয়োগ করে। নিজ পুত্রের মত স্নেহ করত তাকে। সালাহউদ্দীন ভায়ের সাথে মামুন ভায়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের সুবাদে জয়ের সাথে জানা শোনা। জয় হিন্দু হিসেবেই বেড়ে উঠেছিল,যদিও তাদের রীতি নীতির সাথে তার তেমন জানাশোনা ছিলনা। কিন্তু তাদের উৎসবে সে যোগ দিয়েছে পূর্বে।
সালাহউদ্দীন ভাই ইসলাম নিয়ে বেশ পড়াশুনা করার কারনে এ সম্পর্কে বেশ জ্ঞান অর্জন করেছে। সময় সুযোগ হলেই জয়ের সাথে সে গল্প করত এবং বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলত। দীর্ঘদিন জীবনাদর্শ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনার পর জয় একসময় ইসলামের প্রতি অনুরক্ত হয় এবং ইসলাম গ্রহণ করে। সালাহউদ্দীন ভাই ওকে ইসলামী আক্কিদা শিখিয়েছে।
জয় ছিল একটি আদর্শ ছেলে। সে ছিল অতি মাত্রায় সৎ এবং আদর্শবান। সে ছিল খুবই অনুগত এবং মার্জিত চরিত্রের অধিকারী। সালাহউদ্দীন ভাই তাকে আপন ছোটভাই মনে করত এবং প্রচন্ড ভালবাসায় তাকে আগলে রেখেছে। তার বাড়ি থেকে আম,মাছ ইত্যাদী আসলে সে জয়কে ডেকে আনত। জয়ও তার কষ্টে জমানো টাকা থেকে সালাহউদ্দীন ভায়ের জন্যে কিছু খাদ্যদ্রব্য,উপহার সামগ্রী কিনে আনত,প্রতিনিয়ত জয় সালাহউদ্দীন ভায়ের বাসায় যাতায়াত করত। গত পরশু রাতে সালাহউদ্দীন ভায়ের বাসায় যখন বড় বড় পার্সা মাছ খাচ্ছিলাম,তখন সে বলল-এগুলো জয়ের জন্যে রেখেছিলাম কিন্তু ও আসতে পারবে না তাই আপনি খেতে পারছেন। বললাম, রিজিকের ব্যাপারে আমরা কেউ’ই পূর্বে অবহিত নই।
সালাহউদ্দীন ভায়ের বাসার জামাতে আমি ইমামতি করি। জয় থাকলে আমরা মোট তিনজন। জয়কে শিখিয়ে দিতাম শুদ্ধ নামাজ কিভাবে আদায় করতে হয়। আমরা দুজন ওকে ইসলাম বুঝাতাম। আমি জয়কে খুব বেশী সময় পাইনি কিন্তু আমি তাকে প্রথম দর্শনেই পছন্দ করেছি এবং সেও। যখন কথা বলতাম তখন সে খুবই মনোযোগের সাথে জড়সড় হয়ে শুনত। আমি তার থেকে যে কোনোভাবেই আলাদা মর্যাদার কেউ নই ,সেটাও বুঝাতাম। আমাদের সকলের মর্যাদা নির্ণিত হয় তাক্ওয়ার ভিত্তিতে এবং আল্লাহই আমাদের মর্যাদা দান করেন,এটা তাকে বুঝাতাম।
সালাহউদ্দীন ভায়ের সাথে গল্প করতে গেলে কোনো না কোনোভাবে জয়ের প্রসঙ্গ চলে আসত এবং আমরা তার প্রশংসা করতাম। মাঝে মাঝে সে ছোলাবুট,আলুচপ,বেগুনী,পিয়াজু ইত্যাদী কিনে হাজির হত,কারণ সে জানত আমরা এসব খুব মজা করে খাই। খুব ছোটবেলা থেকে পিতা-মাতাহীন হওয়ার কারনে পিতা-মাতার স্নেহ ভালবাসার ব্যাপারটি তার মধ্যে অনুপস্থিত ছিল অথবা সে এই ব্যাপারটি জানতই না। কিন্তু তার সেই শূণ্যস্থানটি পূরণ করেছে মামুন ভাই এবং সালাহউদ্দীন ভাই। আমি তাকে চিনেছি অনেক পরে কিন্তু তাকে ভালবেসেছি অন্তর থেকে। আমি যখনই তার সাথে কথা বলেছি,তখনই বিভিন্ন কথা বলার ফাকে ফাকে ইসলামের পুরো কনসেপ্ট দেওয়ার চেষ্টা করতাম। আমার কেন জানি মনে হত, যদি এর সাথে অনেক দেরীতে দেখা হয় আর আমি যদি মারা যাই তাহলে তাকে তথ্য না জানানোর কারনে আমি আল্লাহর কাছে অপরাধী হতে পারি। এজন্যে তার কাছাকাছি আসলেই আমার ইসলামিক দায়িত্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠত। আর সে ছিল অনুগত শ্রোতা এবং যতটুকু সম্ভব সে পালন করত। সে ছিল সত্যবাদী,ওয়াদা পালনকারী। আমি তাকে কখনও গীবত করতে দেখিনি।
পড়াশুনা খুব একটা করা হয়নি তার। এ ব্যাপারে ওর আগ্রহ আছে বলেও মনে হয়নি। মীরপুরে একটি গার্মেন্টসে সে লিফ্টম্যানের চাকুরী নিয়েছিল। এই চাকুরীতে গার্মেন্টসের মেয়েদের সাথে বেশী বেশী দেখা হয়,এটা ছিল তার কাছে আপত্তিকর কিন্তু কিছু করার ছিলনা। সে দৃষ্টিশক্তির হেফাজত করত। সম্ভবত ওর বয়স ২০ বছর হবে।
আজ(১৬ই জুন,২০১৩) যখন নেটে বসেছিলাম,তখন হঠাৎ সালাহউদ্দীন ভাই ফোন করে বলল-জয় মারা গেছে। প্রথম ধাক্কায় মাথার মধ্যে আসল সজিব ওয়াজেদ জয়। তারপর জিজ্ঞেস করলাম কোন জয় ? সে ক্ষেপে উঠল এবং বলল-আমাদের জয়। লিফটের দড়ি ছিড়ে লিফটির পতন হয়। আহ ! সে তো গত রাতেও সালাহউদ্দীন ভায়ের সাথে ছিল ! এসময় জয়ের জন্যে আমার দু:খবোধ প্রবল হল বটে কিন্তু আমি শিউরে উঠলাম আরেকটি কারনে, আর তা হল-মৃত্যু !!! এটি হল চরম সত্য এবং সমাজ কর্তৃক চরমভাবে উপেক্ষিত। আমার মাথায় সর্বপ্রথম যে বিষয়টি আসল তা হল, হায় আল্লাহ ! আমরা তাহলে কিসের ওপর স্বপ্ন দেখী !!! মানে আমরা নিজেদের জীবন সম্পর্কে যা কিছু ভাবি,সেখানে কি মৃত্যুর উপস্থিতি রয়েছে ?? অবশ্যই নয়। চলমান জীবন থেমে যাবে , এটা কি আমাদের হিসেবের ভেতরের কিছু ?? অবশ্যই নয়।
আমাদের জীবন এবং স্বপ্নের সবটাই রঙিন এবং সেখানে অবাঞ্চিত বিভিষিকা মৃত্যুর কোনো অস্তিত্ব নেই কিন্তু তাকেই চরম নির্মমতায় বরণ করে নিতে হয়। কিন্তু না আমরা এটা বুঝব না,জানব না এবং আমাদের আচরণ দ্বারা তা বিশ্বাসযোগ্যও হবে না। কারণ আমরা অ-নিশ্চয়তাকেই বেশী বিশ্বাস করে থাকি আর তার ওপরই আমাদের স্বপ্নসৌধ নির্মিত হয়। আর তারপর একদিন যখন সে স্বপ্নসৌধকে ভেঙ্গে চুরমার করে মৃত্যু আমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়,তখন আমরা বিশ্ময়ে হতবাক হয়ে যায়,আমাদের মনে পড়ে যায়- হ্যা, এটাই সত্য, কিন্তু কিসে আমাকে সত্য বিস্মৃত করল !! কারণ উদঘাটনের সময়ও তখন শেষ হয়েছে।
“প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে”-(আল-কুরআন,২১:৩৫)
“তোমরা যেখানেই থাক না কেন,মৃত্যু তোমাদের গ্রাস করবেই”-(আল-কুরআন,৪:৭৮)
“তোমরা নি:সঙ্গ অবস্থায় এলে ,যেমনভাবে তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম।”-(আল-কুরআন,৬:৯৪)
ইয়া আল্লাহ ! জয়কে তুমি ক্ষমা কর ! তাকে জান্নাত-উল ফিরদাউস দান কর ! আমাদেরকে তুমি ক্ষমা কর ! পৃথিবী এবং আখিরাত উভয় স্থানে আমাদেরকে কল্যাণ দান কর ! তাদের পথে পরিচালিত কর, যাদেরকে তুমি সফল করেছ !
২| ১৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:০৯
দ্য েস্লভ বলেছেন: জয়ের জন্যে দোয়া করার অনুরোধ জানাচ্ছি !
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:০১
মদন বলেছেন: আমীন