নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দ্য েস্লভ

দ্য েস্লভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাশর,আয়াত ১৮-২১

০৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ২:০২





হে মুমিনগণ আল্লাহকে ভয় কর ! প্রত্যেকে ভেবে দেখুক সে আগামী কালের জন্যে কি পাঠিয়েছে। আর আল্লাহকে ভয় কর, তোমরা যা কর,সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্পুর্ন অবহিত। আর তাদের মত হয়োনা, যারা আল্লাহ বিস্মৃত হয়েছে। ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করেছেন, তারাই তো পাপাচারী। জান্নাতের অধিবাসী এবং জাহান্নামের অধিবাসীগণ কখনই সমান নয়। জান্নাতবাসীরাই সফলকাম। -(আল-কুরআন,সূরা হাশর: ১৮-২০)



এই আয়াতগুলোতে পৃথিবীর জীবনে আখিরাতের জন্যে পাথেয় সংগ্রহের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। জীবন দ্রুত ধাবমান একটি সময়। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত একটি আমানত ও নিয়ামত। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে আল্লাহ নির্দেশিত পথে থেকে যারা সৎ কর্মসমূহ সম্পাদন করবে,তারাই সফলকাম। তারাই জান্নাতের উত্তরাধিকারী হবে। আয়াতগুলোতে আল্লাহকে ভয় করতে বলা হয়েছে। যেসকল আয়াতে আল্লাহর মহা পরাক্রমশালীতার কথা রয়েছে,তাকে ভয় করতে বলার কথা রয়েছে এবং জাহান্নামের ইঙ্গিত রয়েছে,সেসকল আয়াত তিলাওয়াতের সময় সাহাবায়েকেরামগণ এটার মূল মর্মার্থ বুঝতেন,আর সে কারনে তারা আয়াতের উক্ত স্থান সমূহে তিলাওয়াতের সময় ভয়ে কাঁপতেন এবং কখনও উচ্চস্বরেও ক্রন্দন করতেন।



আমাদের কাছে আল্লাহর আয়াত অধিকাংশ সময়েই বিশেষ গুরুত্ব বহন করেনা। এটি একটি সাধারণ তথ্য বলে মনে হওয়ার কারনে এর গুরুত্ব উপলব্ধী করে আচরণ করতে পারিনা। যদি আমরা চিন্তা করি গোটা মহাবিশ্ব এবং এর বাইরের সকল বিষয়ের একক ¯্রষ্টা,মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ অত্যন্ত দয়া করে আমাদেরকে বিধান প্রদান করেছেন এবং কাফিরের গৃহে জন্ম দান না করে মুসলিমের গৃহে পাঠিয়েছেন,ফলে আমরা জন্মগতভাবেই এই বিশাল গুরুত্বপূর্ণ বিধানের আওতায় এসে অত্যন্ত ভাগ্যবান,তাহলে এই চিন্তা আমাদেরকে কিছুটা হলেও আল-কুরআনের মর্ম অনুধাবনে সহায়তা করবে। সাহাবায়ে কেরামগণ প্রত্যেকটি আয়াত লাইভ দেখতেন এবং তার তাৎপর্য,আদেশসমূহ,আবেদন অনুধাবন করতেন। ফলে প্রত্যেক আয়াতেরই বাস্তব রূপ তাদের আচরনে প্রকাশিত হত। পরবর্তীদের জন্যেও আল কুরআন এমন আবেদন রাখে এবং আল্লাহ আমাদেরকে সেভাবেই দেখতে চান। আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা দু:সংবাদ এবং সুসংবাদ একইসাথে জানিয়েছেন। একারনে একজন মুমিন নিরাশা-আশা,জাহান্নাম এবং জান্নাতের মাঝে অবস্থান করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। সে জাহান্নামের ব্যাপারে নি:সন্দেহ হয়ে পড়বে না,আবার জান্নাতের ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে পারবে না। এ দু বিষয়ের সিদ্ধান্তের ক্ষমতা একান্তভাবেই আল্লাহর। তবে আল্লাহকে প্রচন্ড আশা নিয়ে শ্মরণ করতে হবে। একইসাথে আল্লাহর ভয় কাজ করবে। এটিই মুমিনের লক্ষন। আর এটাই আমরা সাহাবাদের জীবনে দেখী। ফলে এই আয়াতগুলি আমাদেরকে বিশেষ ভাবনার খোরাক যোগায়।



যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, বা ভুলে থাকতে চায়,তাদের ব্যাপারে হুশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে। আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশিত কাজসমূহ পালন না করা। কেউ আল্লাহর বিষয়টি মনে রাখার পর তার আচরনে পরিবর্তন না আসাটা,এটা প্রমান করেনা যে-সে আল্লাহকে শ্মরণ রেখেছে। আল্লাহর আদেশসমূহ কারো কাছে পৌছানোর পর তার উদাসীনতার অর্থ হল- হয় সে আল্লাহর ক্ষমতাসমূহকে পরোয়া করেনা, নয়ত সে এসব বিশ্বাস করেনা। আর এদেরকে হুশিয়ার হতে বলা হয়েছে। উদাসীনতার আরও একটি কারন থাকতে পারে তা হল-শর্তহীনভাবে আল্লাহর ক্ষমা প্রত্যাশা করা,এমনকি আল্লাহ বিরুদ্ধ কাজে লিপ্ত হয়েও। এদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আল্লাহর,কিন্তু একজন মুমিন এভাবে ভাবতে শেখে না। সে ভয় এবং আশা নিয়ে আল্লাহর পথে চলতে থাকে এবং তার দৃষ্টিতে ভুল ঘটুক আর না ঘটুক সে সব সময় নিজের ভুল-ত্রটির জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। নিজের ভুলটিই আল্লাহর সামনে প্রকাশ করে নতজানু অবস্থায় ক্ষমা প্রার্থনা করে। এটিই আমাদের শিক্ষা। আল্লাহ তায়ালা বলেন:-



“হে মুমিনগণ ! তোমাদের ঐর্শয্য ও সন্তান-সন্তুতি তোমাদেরকে আল্লাহর শ্মরনে যেন উদাসীন না করে। যারা উদাসীন হবে,তারাই তো ক্ষতিগ্রস্থ।”-(আল-কুরআন, ৬৩:৯)



আল্লাহ তায়ালা হযরত যাকারিয়া(আঃ) এবং তাঁর পরিবারবর্গের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন-“নিশ্চয়ই তারা সৎকাজে অগ্রগামী ছিল এবং তারা আশা ও ভয়ের মাধ্যমে আমার কাছে প্রার্থনা করত এবং আমার সামনে ঝুঁকে পড়ত।”-(আল-কুরআন,২১:৯০)



পাপী এবং সৎকর্মশীল লোকেরা আল্লাহর কাছে কখনই সমান নয়। আমরা কখনও কখনও পাপী ও লানতপ্রাপ্তদের বাহ্যিক আচরণ দেখে ধোকাগ্রস্ত হই এবং আল্লাহর বদলে তাদের প্রতিই কোনোভাবে ঝুকে পড়ি। আল্লাহ আল্ কুরআনের একটি আয়াতে তাদের ব্যাপারে বলেছেন-তারা যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে। অথচ আমরা আল্লাহর উপর অবিচল না থেকে কখনও কখনও টলে যাই। আল্লাহ আমাদেরকে দেখছেন এবং প্রতিদান প্রদানে তিনিই একমাত্র ¯্রষ্টা। যারা তার পথে রয়েছে এবং যারা নেই তারা কখনই সমান নয়। আল-কুরআনের বিভিন্ন স্থানে তিনি তা আমাদেরকে জানিয়েছেন।-



যারা পাপ কাজে লিপ্ত রয়েছে,তারা কি ধারনা করেছে যে-আমি তাদের সাথে ঈমান আনয়নকারী ও সৎকর্মশীলদের মত আচরণ করব ? তাদের জিবীত ও মৃত ব্যক্তি কি সমান ? তারা যা ফয়সালা করেছে,তা কতই না নিকৃষ্ট ! ”(আল-কুরআন,৪৫:২১)



“অন্ধ ও চক্ষুষ্মান সমান নয় এবং মুমিন,সৎ আমলকারী ও দুষ্কর্মকারী সমান নয়। তোমরা অল্পই উপদেশ গ্রহন করে থাক।”-(আল-কুরআন,৪০:৫৮)



নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সৎকর্মশীলদেরকে অতি উত্তম প্রতিদান প্রদান করবেন। তাদের কোনো ভয় নেই। তারা আল্লাহর পথে রয়েছে। তাদের জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট এবং আল্লাহই তাদের অতি উত্তম অভিভাবক। আর যারা অল্লাহ বিরুদ্ধ কাজে লিপ্ত রয়েছে,তাদের কোনো অভিভাবক নেই এবং শয়তানও তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে। এরাই অত্যন্ত নিকৃষ্ট পরিনতি পছন্দ করেছে আর তারা তাদের করুন পরিনতি ভোগ করবে। কাফির মুশরিকদের চাকচিক্য,দম্ভ,প্রভাব,প্রতিপত্তি,ক্ষমতা,শক্তি কোনোটাই যেন মুমিনদের প্ররোচিত না করে। মুমনিদের জন্যে আল্লাহই উত্তম এবং কতই না উত্তম ও সুমহান আমাদের প্রতিপালক !



সূরা হাশরের এই আয়াতগুলি সকল সৎ কাজের প্রতি ইঙ্গিত করলেও এবং উপরোক্ত বিষয়সমূহ প্রকাশ করলেও রসূল(সাHappyএটিকে একটি বিশেষ উদ্দেশ্যেও তিলাওয়াত করেছিলেন। হযরত জারীর(রাঃ) বলেন-“একদা সূর্য কিছু উপরে ওঠার পর নগ্ন দেহ,পদ বিশিষ্ট কিছু লোক সেখানে আগমন করে। তারা ইবা নামক এক ধরনের আরব দেশীয় পোষাক দ্বারা দেহ আবৃত করেছিল(তাদের পোষাক এতটাই মলিন এবং ছেড়া ছিল যে মনে হচ্ছিল তারা যেন প্রায় নগ্ন)। তাদের কাধে তলোয়ার ঝুলানো ছিল এবং তাদের প্রায় সকলেই ছিল মূযার গোত্রের লোক। তাদের দারিদ্র ও দুরাবস্তা থেকে রসূলের(সাঃ)চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি(অস্থিরভাবে) বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলেন এবং আবারও বেরিয়ে আসলেন। অত:পর তিনি বিলালকে আযান দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। ইকামাত হল, রসূল(সাHappy নামাজে ইমামতি করলেন,তারপর সকলকে উদ্দেশ্য করে খুৎবা দিলেন- হে মানবমন্ডলী তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর,যিনি তোমাদেরকে এক আদম থেকে সৃষ্টি করেছেন..... এরপর তিনি সূরা হাশরের উক্ত আয়াতগুলি তিলাওয়াত করলেন এবং মানুষদেরকে দান সদকার প্রতি উৎসাহিত করলেন। তখন মানুষ দান খয়রাত করতে শুরু করে। বহু দিনার,দিরহাম,গম,খেজুর,পোষাকাদী আসতে থাকে। রসূল(সাঃ) খুৎবা দিতেই থাকেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত বলেন- তোমরা অর্ধেক খেজুর হলেও নিয়ে এসো। একজন আনসারী ভারী একটি অর্থের থলে কষ্ট করে বহন করে নিয়ে আসলেন। লোকদের দান আসতেই থাকে এবং একেক রকমের দানে একেকটি স্তুপে পরিনত হয়। এসব দেখে রসূলের(সাঃ) বিবর্ণ চেহারা স্বর্ণের মত ঝলমলে হয়ে ওঠে। তিনি বলতে থাকেন-যে কেউ ইসলামের জন্যে কোনো ভাল কাজ শুরু করবে,তাকে উক্ত কাজের প্রতিদান তো দেওয়া হবেই,বরং তার পর যারা এ কাজটি করবে তাদের প্রত্যেকের সমপরিমান প্রতিদান সে পাবে,অথচ কারো প্রতিদান কম করা হবেনা। পক্ষান্তরে যে কেউ ইসলাম বিরোধী কোনো কাজ চালু করবে,তাকে সেই খারাপ কাজের প্রতিদান তো প্রদান করা হবেই,পরবর্তীতে যারা সে খারাপ কাজটি অনুসরণ করবে তাদের সমপরিমান প্রতিদান সে ভোগ করবে কিন্তু কারো প্রতিদান কম করা হবেনা-(মুসনাদে আহমদ)



রমজানের এই ক্ষনে আমরা যেন উপরোক্ত বিষয়ের আলোকে চিন্তা করতে শিখি এবং সে অনুযায়ী নিজেদের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহন করি। মহান আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং পৃথিবী ও আখিরাতে মহা কল্যান দান করুন !

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.