নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দ্য েস্লভ

দ্য েস্লভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি টোকাই

১৩ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৫৬




আমি কবে ঢাকায় আসি মনে নেই,তবে ঘটনাটা মনে আছে ভাল।আমার মা মারা যাবার পর আব্বা যাকে বিয়ে করল,তাকে মা ডাকলাম্ । কিন্তু সেই মহিলাই আমাকে ভাত খেতে দিতনা,খালি মারত। আবার কাছে বিচার দিলে আব্বাও উল্টা পেটাতো। তাই একদিন বাড়ি থেকে বের হলাম। আমার বয়স মাত্র ৭/৮ বছর। বাজারের রাস্তাটা কোনো মতে চিনতাম,কারন আব্বার সাথে কয়েকবার গিয়েছি বাজারে। ওদিক ধরেই আগালাম। কিন্তু বাজারের রাস্তায় কিছুদূর চলে এক নতুন রাস্তায় চলে আসলাম। বুঝতে পারছিলাম রাস্তা ভুল করেছি কিন্তু চলতেই থাকলাম।

একসময় ট্রেন স্টেশনে চলে আসলাম। এক বাদাম বিক্রেতার পেছন পেছন চলতে লাগলাম্ । তার সাথে আমিও সাহস করে ট্রেনে উঠে পড়লাম। ট্রেন চলতেই থাকল। আমার কোনো তাড়া ছিলনা,শুধু পেটে সাংঘাতিক ক্ষুধা ছিল। টয়লেটের পাশে দাড়িয়ে থাকা কালে একজনকে দুপুরে খাবার খেতে দেখে অপলক তাকিয়ে ছিলাম্ । যেভাবে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম,তাতে আশা করছিলাম আমাকে কিছুটা অন্তত দিবে,কিন্তু লোকটা পুরোটাই শেষ করে ফেলল,আমার দিকে দ্বিতীয়বার তাকালো না যদি খাবার দিয়ে দেওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় !

টয়লেটের ভেতর গিয়ে ময়লা পানি খেয়ে নিলাম কিন্তু ক্ষুধা কমল না। ক্ষুধা লাগলে কিছুই ভাল লাগেনা। আমারও অসহ্য লাগল। আমি কারো কাছে কিছু চাইতে লজ্জা পেতাম। হঠাৎ দেখলাম এক সিটে বসা একটা বাচ্চা এক টুকরো রুটি অসাবধানে ফেলে দিয়েছে। আমি তাকিয়ে থাকলাম,সে তুলে নেয় কিনা। কিছুক্ষন পরও যখন সে তা তুলে নিল না,তখন আমি ধীর পায়ে সেদিকে এগিয়ে গেলাম। নীচ থেকে পাউরুটিটি তুলে বাচ্চাটাকে চরম অনিচ্ছায়ও ফিরিয়ে দিতে গেলাম,কিন্তু বাচ্চার মা বলল-দেওয়া দরকার নেই,তুই খা। ওটাই আমার জীবনের প্রথম টোকানো,এরপর থেকে আমি টোকাই।

কমলাপুর রেল স্টেশনে কত রাত কত দিন চলে গেছে তার হিসেব নেই। কখনই পেট ভরে খেতে পারিনি। কখনও ডাস্টবিনে মানুষের আধা খাওয়া খাবার পাওয়া যেত। একবার একটা ভাল বার্গার পেয়ে কি যে খুশী লেগেছিল ! আমি এখন অনেক খাবারের নাম জানি যেটা অনেকে জানেনা। আমি ধনীদেরকে ভালবাসি,কারন ওরাই তো দামী খাবারগুলো ডাস্টবিনে ফেলে রেখে যায়।

প্রথম দিনের ঘটনা আমার ভালভাবে মনে আছে। যখন একটা বেঞ্চে শুয়ে ছিলাম,তখন আমার থেকে একটু বড় ছেলে আমার পায়ে একটা লাথি মেরে বলল-ওঠ ! এইডা আমার জাগা। আমি চোখ মুছতে মুছতে উঠে আরেক দিকে গিয়ে শুলাম। পরদিন রাতে আবারও সেই ছেলেটা এসে লাথি মারল। মজার ব্যাপার হল এবার তার হাতে ছিল রুটি আর কলা। আমার কি যে ভাল লেগেছিল ! আমি খাবার পেয়ে লাথির কথা ভুলে গেলাম্ । ওর নাম মখলেস। কথায় কথায় চড় থাপ্পড় মারে কিন্তু মনে দয়া আছে। বয়সে আমার থেকে বেশী বড় না কিন্তু খুব চালু। আরও ছোটবেলা থেকে ও ঢাকায় আছে। ওর ঘটনা আমার থেকেও করুন। মখলেস জানেনা ওর বাবা মা কারা। ও রাস্তায় বড় হয়েছে। রাস্তাই ওর বাপ মা।

যখন আমার প্রচন্ড ক্ষুধা লাগত,আমি খাওয়ারত বিভিন্ন মানুষের আশপাশে ঘোরাঘুরি করতাম।খখনও কখনও তারা কিছুটা দিত। অনেকে গালি দিয়ে তাড়িয়ে দিত। নিজেকে খুব ছোট আর তুচ্ছ মনে হত। একদিন মখলেস বলল-এই তুই ভিক্ষা করতে পারবি ? আমি বললাম,এই কাজ পারব না,আমার লজ্জা করে। মখলেস বলল-তুই খাবার সময় মানুষের আশপাশে ঘুরঘুর করিস,তারা দিলে নিস, এইটাও তো ভিক্ষা করা। মখলেস এইটা দেখে ফেলেছে ভেবে খুব লজ্জা পেলাম্ । চুপসে গেলাম। মখলেসই বলল-তোকে দিয়ে এইটা হবেনা। আমি তোকে পরিক্ষা করলাম,ভিক্ষা করবি না কখনও। কাল সকালে আমার সাথে যাবি তোকে শেখাবো কিভাবে বাচতে হয়।

সকালে আমরা যাত্রাবাড়ি গেলাম হেটে। সেখানে এক বড় ময়লার স্তুপের ভেতর থেকে প্লাস্টিক খুজে বের করতে থাকলাম এবং লোহালক্কড়ও। লোহার দাম ২৫টাকা কেজী প্লাস্টিকের দাম অনেক কম। লোহা খুব একটা পাওয়া যেত না্ । আমরা দুপুর পর্যন্ত এসব খুজে কয়েকটা বস্তায় রাখতাম। তারপর মকবুল চাচার দোকানে নিয়ে গেলে উনি ওজন করে আমাদের পয়সা দিতেন। আমার ভাল লাগে,আমি মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা করিনা। নিজে ইনকাম করি। আমি যা পাই তাতে আমার রুটি,কলা,বিস্কুট হয় কিন্তু ভাতের টাকা সবদিন যোগাড় করতে পারিনা। যেদিন অনেকগুলো প্লাস্টিকের বোতল পাই সেদিন রাস্তার পাশের ভাত,তরকারী বিক্রেতার থেকে ভাত আর বুটের ডাইল কিনে খাই। ভাত খেতেই আমার ভাল লাগে। রুটি খেলে পেট ভরেনা। আমি আমার পকেটে টাকা জমাই। অনেকগুলো ভাংতি নোট হলে একটা বড় নোট করে তা পকেটে রেখে দেই। সর্বদা নজর থাকে,যাতে তা না হারায়। আমি স্বপ্ন দেখী একদিন আমি রাস্তার পাশের চাচার মত ভাতের হোটেল বানাবো। সকালে সিঙ্গাড়া,দুপুরে ভাত,তরকারী আর বিকেলে পুর,আলুচপ,ছোলা। এগুলো আমার খেতে খুব ভাল লাগে্ । মখলেস আশপাশে না থাকলে আমি এসব দোকানের আশপাশে দাড়াই। অনেক কাস্টমার অর্ধেক খেয়ে রেখে দেয়,আমি সেটা ছো মেরে নিয়ে যাই। দূরে গিয়ে খাই। দোকানের পাশে খেলে দোকানদার রাগ করে। মখলেস খুব শক্ত মেরুদন্ডের ছেলে। ওকে আমার ভয় ভয় করে আর ভালও লাগে্ ।

একদিন ও আমাকে বলল চল-আজ তোকে ভাল কিছু খাওয়াব। আমি ভাবলাম,আমি যা করি ,সেও তো তাই করে,তাহলে ভাল কিছু কিভাবে খাওয়াবে ? কিন্তু পরে বুঝলাম-এক ধনী লোক তার মা মারা যাওয়া উপলক্ষ্যে গরিবদেরকে খাওয়াচ্ছিল। আর মখলেস সেটার খবর নিয়ে এসেছিল। সেই লোকের নিকট আত্মীয় মখলেসকে বলেছে তোর আশপাশে যারা আছে তাদের নিয়ে আসবি। সেদিনই আমি ঝবিনে প্রথমবারের মত খিচুড়ী আর গরুর গোস্ত খেয়েছি। উহ, সেটা ভোলা যাবে না।

সেদিন একটা মজার ঘটনা ঘটেছে। আমরা যখন ময়লার স্তুপে ঘাটাঘাটি করছি,তখন হঠাৎ একটা ভাঙ্গা টেলিভিশনের ফ্রেম পেলাম। এটা আমার দরকার ছিলনা,তাই ফেলে রাখলাম। খানিক পর মখলেস বলল-এই এদিকে আয় মজা করি। এই ফ্রেমের বরাবর মাথা রাখ,হেহেহেহে দ্যাখ আমরা এখন টিভির মানুষ। এক সাংবাদিক ভাই ছবি তুলে নিল। বললাম-ছবিটা আমাদেরও এক কপি দিয়েন। সাংবাদিক ভাই বলল-ছবি দিয়ে কি করবি ? আমি হেসে বললাম, পকেটে নিয়ে ঘুরব। উনি বললেন-হেহেহে তোর পকেট তো ছেড়া, রাখবি কই ??

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:১০

মুঘল সম্রাট বলেছেন: বাস্তবতা!

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩২

দ্য েস্লভ বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

২| ১৩ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৪৩

শামছুর রহমান বলেছেন: ছবিটি অনেক সুন্দর আর গল্পটিও হৃদয় ছোঁয়া !

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩২

দ্য েস্লভ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ জনাব

৩| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৩৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ভাল লাগল গল্প

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৫৫

দ্য েস্লভ বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.