![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জন্মের সময় আমি খুব কেঁদেছিলাম কিন্তু এখন আমার সব কিছুতেই হাসি পায়। আমি জন্মের প্রয়োজনে ছোট হয়েছিলাম এখন মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি। - নির্মলেন্দু গুন
সেদিন ছিলো শীতকালের এক বিকেল। দিন ছোট হয়ে যাচ্ছিলো এবং রাত বড়। সে সময়ে আমার বাস টি এক মফস্বল শহরের বাসস্ট্যান্ডে এসে থামলো। নেমে সারতে না সারতেই সাই করে এক রাশ ধুলো উড়িয়ে বাস হাওয়া। আমাকে ভাসিয়ে দিলো ধুলোর সাগরে। শার্ট থেকে ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে আমি রাস্তা থেকে নেমে এসে দাঁড়ালাম। চশমা মুছতে মুছতে চারপাশে তাঁকিয়ে দেখি খুব একটা মানুষ নেই। কাজের খাতিরে যে কত জায়গায় যেতে হয়েছে ইয়ত্তা নেই। অভ্যাস হয়ে যাওয়াতে খুব একটা ভয় আমার করে না। নিত্য নতুন জায়গা দেখতেও অবশ্য আনন্দ। পরিবার বলতেও তেমন কেউ নেই। পিছুটান নেই তাই।
যা হোক, হাতের ব্যাগ টা নিয়ে আমি একটা চা দোকানের দিকে এগোতে লাগলাম। ব্যাগ বলতেও তেমন কিছু নেই সেখানে। একটা তোয়ালে আরেক সেট শার্ট প্যান্ট, পানির বোতল, এই সব হাবিজাবি। আমি যে কোম্পানীতে কাজ করি তারা প্রায়ই তাদের বিভিন্ন শাখাতে আমাকে পাঠায় তাদের কাজে। সেই হিসেবে এই মফস্বলে এসেছি। তবে ওদের অফিস টা কোথায় তাও ঠিক জানি না। চা দোকানের ২-৩ জন মানুষ বসে ছিলো তারা জানালো এখনো বেশ দূরে। কিছু দূর যাওয়ার পর টেম্পু পাওয়া যায়। ৭ টাকায় তারা পৌছে দেয়। ভাবলাম এই ভালো, মালপত্র ও তেমন নেই। রিকশা-সি এন জি শুধু শুধু নিয়ে টাকার গচ্চা। তার চেয়ে কতদূর হেঁটেই তো টেম্পু পাবো।
এ সব ভাবতে ভাবতে নির্দেশিত পথে এগোতে লাগলাম। আস্তে আস্তে সন্ধ্যা নেমে আসলো। ঝি ঝি পোকার ডাক আশে পাশে। মাঝে মাঝে কিছু দোকান থেকে হালকা আলো দেখা যাচ্ছে। মানুষজনের হালকা শব্দ ও ভেসে আসছে। তবে মানুষ এখানে কম কেনো জানি। আস্তে আস্তে আকাশে তারা উঠতে লাগলো একটা - দুটো। তাও কোনো টেম্পুর দেখা পেলাম না। আমাকে তো বলেছিলো একটু হাঁটলেই পাবো। রাগে গজ গজ করে এগোতে লাগলাম। ভাবছিলাম খাওয়ার কিছু নিয়ে আসা উচিত ছিলো। ভুল হয়ে গেছে। এই সব ছাই পাশ ভাবতে ভাবতে দেখলাম এক পাশে একটা টেম্পু দাঁড়িয়ে আছে। বেশ অন্ধকার। হঠাত করে দেখাই যায় না। আমি এগিয়ে গিয়ে দেখি দুজন লোক টেম্পুর পাশে রাস্তার ধারে বসে আছে। একজন সিগারেট ফুঁকছে আরেকজন চুপচাপ বসে আছে। আমি জিজ্ঞেস করাতেই বললো যে যাবে, আমি যাতে উঠে বসি। কিন্তু কেউ নেই দেখে একটু উশখুশ করছিলাম। তা বুঝে ফেলাতেই হয়তো তারা বললো যে উঠে বসেন। চিন্তা নেই। মানুষ আসবে।
আমি উঠে বসতে না বসতেই হঠাত কোথা থেকে হই হই করে কিছু মানুষ টেম্পুতে উঠে পড়লো। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। যাক, গাড়ি তাহলে যাবে।
গাড়ি এগোতে লাগলো ধীরে ধীরে। আমি চুপ করে বাইরে তাঁকিয়ে আছি। একটু পর পর রাস্তার বাতির আলোতে টেম্পুর ভেতর মানুষগুলোকে দেখা যাচ্ছে। তারা দেখলাম একে অপরের বেশ পরিচিত। আলাপ করছে, খবর নিচ্ছে একে অপরের। আমাকে হয়তো দেখছেই না। আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করলো না। আমিও ভীষন ক্লান্ত। আমিও তাই আগ বাড়িয়ে কিছু বললাম না। এভাবে ভাঙ্গা চোড়া রাস্তায় একে বেঁকে টেম্পু চলতেই থাকলো। ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছিলো। কিন্তু টেম্পুর জায়গায় পৌছানোর জো নেই। কখন পৌছাবে কে জানে। হেলপার ছেলেটাকে বললাম সে হু হু করে মাথা নাড়ালো।
এভাবে করতে করতে হঠাত যেনো ঝুপ করে অন্ধকার পড়ে গেলো। সন্ধ্যা থেকে আস্তে আস্তে রাত না হয়ে যেনো একবারে রাত হয়ে গেলো। সাথে সাথে খেয়াল করলাম রাস্তার বাতিগুলো ও আর নেই। অন্ধকারের মাঝ দিয়ে টেম্পু কিভাবে চলছে বোঝা মুশকিল। হেডলাইট ও অনেক ক্ষন পর পর জ্বালাচ্ছে। তাও কিছুক্ষনের জন্যই। এতক্ষন রাস্তার আশে পাশে জোনাক পোকা ছিলো এখন তাও নেই। আমি অন্ধকার ভয় পাই না। রাতের বেলায় আমি ঘর অন্ধকার না করে ঘুমোতেই পারি না। কিন্তু এই অন্ধকার টা একটু অস্বাভাবিক রকমের। আমার একটু অস্থির লাগতে লাগলো। আমি বলে উঠলাম, ভাই আর কতদূর। হেলপার আবার হু হু করে জবাব দিয়ে ভিতরে ঢুকে আমাদের সাথে বসলো।
টের পেলাম মানুষ গুলো ও কখন জানি কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু টেম্পুর শব্দ ছাড়া আসলে আর কোনো শব্দ নেই আশে পাশে। এখন হেডলাইট টাও জ্বালাচ্ছে না। আমি আবার বলে উঠলাম, " কি ভাই, বাত্তি কই আপনের?" কোনো জবাব পেলাম না। আশে পাশের মানুষ গুলোর কি কোনো চিন্তা নেই। আমি চারপাশে তাঁকিয়ে দেখি ভেতরে এতো অন্ধকার যে কাওকে বোঝাও যাচ্ছে না। হেলপার টার ও শব্দ নেই এখন আর। আমি হাত বাড়িয়ে কাউকে ধরার চেষ্টা করলাম। খুব অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, আশ্চর্য্য কেউ নেই নাকি। কাওকেই তো ধরে পাচ্ছি না। আমি আস্তে আস্তে এগোতে এগোতে দেখলাম আসলেই ভেতরে কেউ নেই। ভো ভো হাওয়া। হেলপার টাও।
এবার একটু ভয় লাগতে শুরু করলো। আমি ঢোঁক গিলে নিজেকে বুঝ দিলাম নিশ্চয়ই কোথাও কোনো গন্ডগোল আছে। হঠাত মনে পড়লো ব্যাগের টর্চ লাইটের কথা। গাধা নাকি আমি। কি করে ভুললাম। তাড়াতাড়ি টর্চ লাইট টা হাতে নিয়ে জ্বালাতে গিয়ে দেখি জ্বলছে না। কি আজব। হয়তো চার্জ দিয়ে আনি নি। অদ্ভুত। তাড়াতাড়ি মোবাইল টার টর্চ জ্বালানোর চেষ্টা করলাম। তাও জ্বলছে না। আমি ধারনা করলাম আমি স্বপ্ন দেখছি। নইলে এতো অবাস্তব জিনিস ঘটবে কেনো। আমি তাই চেষ্টা করতে লাগলাম যাতে আমার ঘুমটা ভেঙ্গে যায়। কিন্তু কিভাবে কি করবো বুঝতে পারলাম না। ভাবতে লাগলাম, হয়তো বাসের ঘুমটা এখনো ভাংগে নি। স্বপ্নই দেখছি। উফ ...
এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাত একটা আওয়াজ শুনলাম। খুব জোরে একটা বাচ্চা যেনো টেম্পুর পেছনে ছুটতে ছুটতে বলছে, "ঈষাদ ঈষাদ ...."
ঈষাদ কে আমি জানি না। কিন্তু বাচ্চাটা চিতকার করে ছুটেই চলছে। আশ্চর্য্যের ব্যাপার বাচ্চাটা ক্লান্ত ও হচ্ছে না। চিতকার করেই যাচ্ছে। আমি আবার জোরে বলে উঠলাম ড্রাইভার কে, "ভাই থামান থামান। দেখেন না বাচ্চাটা কেমন করছে"
বলে নিজেই হাসলাম। স্বপ্ন দেখছি আবার এতো চিন্তা কিসের। এবার আমি নিশ্চিত আমি স্বপ্নই দেখছি। কিন্তু চিৎকার চিৎকার করতে করতে সেটা সাই করে যেনো আমার টেম্পুতে উঠে পড়লো। আমি টের পাচ্ছি একটা কিছু আমার আশে পাশে আছে। আমি আবার বুঝ দিতে লাগলাম, "আরে বোকা স্বপ্ন..." তাও ভয় তো এতো কিছু বুঝতে চায় না।
একটা বিশ্রী গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। আমি ভাবতে লাগলাম, স্বপ্নে কি গন্ধ পাওয়া যায় নাকি? কে জানে।
জিনিস টা আস্তে আস্তে আমার আরো কাছে আসছে। আমার একদম ভালো লাগছে না।একদম না। এখন জিনিসটাকে আর কোনো শিশু মনে হচ্ছে না। অদ্ভুত ভয়ংকর কিছু একটা। জিনিসটা আস্তে আস্তে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়লো। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। তাও আমি নিজেকে শেষ বোঝাতে লাগলাম। এখনি ঘুম ভেঙ্গে যাবে,এখনি। এরকম শক পেলে ঘুম ভেঙ্গে যায় আপনা আপনি। তাও কিছু হলো না। তীব্র ব্যাথায় আমি নেতিয়ে পড়লাম ধীরে ধীরে। আমি জানি না স্বপ্নে কি ব্যাথাও পাওয়া সম্ভব। আমার চিন্তা ভাবনা একটু ক্ষনের মাঝেই থেমে গেলো।
টেম্পুটি এখনো চলছে। ভেতর থেকে একটা কচ কচ শব্দ ভেসে আসছে।
.
.
.
.
মাস তিনেক পর,
আমি আছি ভালোই এখনো। তবে এটা আসলে স্বপ্ন নাকি আমি জানি না। কারণ এখনো আমার ঘুম ভাঙ্গে নি। যদি স্বপ্নই হয় তাহলে বলতে হবে খুব ই দীর্ঘ স্বপ্ন দেখছি আমি। আমার সময় খারাপ কাটে না। বাচ্চাটা ঈষাদ ঈষাদ করে এখনো ডাকে। আমি অবশ্য কারণ জানি না। বাচ্চাটিকে ভালোই লাগে। আমি তাকে বেশ স্নেহ করি।
আমিও তার সাথে প্রায়ই অন্ধকারে টেম্পুর পেছনে ছুটোছুটি করি। ভাগ্যিস অন্ধকার থাকে, নাহলে সেরাতের পর থেকে আমার চেহাড়া আলোয় দেখা খুব একটা সুখদায়ক হবে না, তা আমি নিশ্চিত ভাবেই বলতে পারি।
০৬ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৫:০০
তেরো বলেছেন:
২| ০৫ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:২৪
আকিব আরিয়ান বলেছেন: আগেই পড়ে ফেলেছি ফেবুতে
০৬ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৫:০০
তেরো বলেছেন: আচ্ছা ঠিক আছে।
৩| ০৬ ই মে, ২০১৪ সকাল ৮:৫৭
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
দারুণ লিখেছেন +++
০৬ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৫:০১
তেরো বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
৪| ০৬ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৫২
হাসান মাহবুব বলেছেন: ++
০৬ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৫:০১
তেরো বলেছেন:
৫| ০৬ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৪:২০
সমুদ্র কন্যা বলেছেন: রাইতে পড়সিলাম। ডরাইসি
০৬ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৫:০২
তেরো বলেছেন: হেহে...শুনে আমিতো খুশী।
৬| ০৮ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১২
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ধুলো উড়িয়ে বাস হাওয়া। আমাকে ভাসিয়ে দিয়ে
গল্পে সূক্ষ্মভাবে প্রবেশ করানো হয়েছে ভয়ের এলিমেন্ট। খুব ভাল লাগল।
০৮ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:৫৩
তেরো বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
৭| ২৩ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:০৮
মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: দারুণ লেখা। পাঠককে একটা ভয়ের আবহে আচ্ছন্ন করে ফেলে।
ভালো থাকুন। শুভেচ্ছা রইল
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই মে, ২০১৪ রাত ৯:৫২
কথক পলাশ বলেছেন: