![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জন্মের সময় আমি খুব কেঁদেছিলাম কিন্তু এখন আমার সব কিছুতেই হাসি পায়। আমি জন্মের প্রয়োজনে ছোট হয়েছিলাম এখন মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি। - নির্মলেন্দু গুন
ভূতনাথ সাহেবের মন খারাপ। মিসেস ভূতনাথ প্রথম প্রথম স্বান্তনা দেয়ার চেষ্টা করলেও এখন হাল ছেড়ে দিয়ে পান চিবুচ্ছে। ভূতনাথ সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলেই যাচ্ছেন তো যাচ্ছেন। তার ফোস ফোস দীর্ঘশ্বাসে সামনে ছোটখাটো একটা ধুলি ঝড় হচ্ছে। অবশেষে মিসেস ভূতনাথ খেপে গেলেন, "ঘটনা কি বলো তো। বলি একটু আগে যে মেজবউ ঘরটা পরিষ্কার করে গেলো, তুমি এসব কি করছো বলো তো! মরার পর ও শান্তি টান্তি দিবে না কাউকে দেখি!"
ভূতনাথ সাহেব আরো মন খারাপ করলেন। মরার পর নিজের বৌ ই যদি খোঁটা দেয় তাহলে আর কি ই বা করার আছে। চোখ ফেটে জল আসে তখন। চোখ বুজে তিনি স্মৃতিচারণ করতে থাকেন। আহা কি এক সোনালী জীবন ছিলো তার। ঘর ভর্তি মানুষ হই হই রই রই করতো। উনি বেশ আমোদেই ছিলেন। সোনার টুকরা ছেলে তার তিনখানা। কি আদরই যে উনি তাদের করতেন। বেশি ভালোবাসতেন ছোট ছেলেটাকে। ছেলেটাও বাবা বলতে অজ্ঞান। টুক টূক করে হাঁটতো আর বাবা বাবা বলে ডাকতো। ভূতনাথ সাহেব ভাবতেন তিন ছেলেকে তিনি নিজ হাতে বিয়ে দেবেন, নাতি নাতনী নিয়ে বুড়োবয়সে রোদ পোহাবেন। কিন্তু এত সুখ আর তার সইলো না। দুম করে মরে গেলেন নিতান্তই এক ঠান্ডা জ্বরে। ছোটটা সবে তখন স্কুল পাশ দিলো। মারা যাবার পর উনি আশ্রয় নিলেন বাড়ির পাশের বিশাল গাছটাতে। ছেলেদের রেখে তিনি কোথায় যাবেন। গাছের ডালেই ঝুলে ঝুলে কত বছর পার করে দিলেন।
অবশেষে বহু বছর পর মিসেস ভূতনাথ ও চোখ বুজলেন। ভূতনাথ সাহেব ভাবলেন যাক এখন তো কথা বলার একজন মানুষ পেলাম। এতকাল পাশের বাসার বূড়োটার সাথে কথা বলতে বলতে উনি বেশ বিরক্ত ছিলেন। কিন্তু ভাবলেন কি আর হলো কি?! মিসেস ভূতনাথ তো গাছের ডালে তাকে ঝুলতে দেখে রেগে অস্থির। পই পই করে বলতে লাগলেন, "আমি কিন্তু সন্দেহ করেছিলাম এমন কিছু, আমি জানতাম তুমি এটাই করবে। আঠার মত পড়ে থাকবে এখানে। এই গাছটাকে নিয়ে আমার একটা সন্দেহ ছিলো। আজ দেখলাম সবই ঠিক। ছি ছি ছি ... তোমাকে নিয়ে আর পারি না!” ভূতনাথ সাহেব না শোনার ভান করে অন্যদিকে তাঁকিয়ে রইলেন। খুব একটা ভুল তো বলেনি, তার সব মৃত আত্মিয়-স্বজন পৃথিবী ভ্রমন করে বেড়াচ্ছে আর তিনি কিনা বুড়ো আম গাছে ঝুলে থেকে বছরের পর বছর পার করে দিলেন। এরপর তারা বুড়ো বুড়ি এই গাছেই বসবাস করে যাচ্ছেন। মিসেস ভূতনাথ মুখে মুখে যাই বলুক না কেনো, উনাকে ছেড়ে তিনি যাবেন না।
তবে আজকের দীর্ঘশ্বাসের কারণটা ভিন্ন। নিজ চোখে বড় দুই ছেলের বিয়ে দেখলেন। ছোটটাও বড় হলো, বাবা বলে যে প্রশংসা করছে তা না, দেখতে একদম রাজপুত্তুর হয়েছে। চাকরী বাকরী করে বেড়াচ্ছে কিন্তু এই ছেলে যদি এসে বলে সে জীবনে বিয়ে থা করবে না তখন বাবার মনে কেমন লাগে। আজ সকালে ছোট ছেলে এসে ঘোষনা দিয়ে গেলো সে এসব সংসারী কাজে নেই। সে দুনিয়া ঘুরে বেড়াবে। এসব বিয়ে করে ঝক্কি ঝামেলা নিতে পারবে না। এসব শুনে ভূতনাথ সাহেবের মাথায় হাত। কি বলে এই ছেলে, এ ছেলে কেনো সন্ন্যাস নিবে। কি পাপ করেছিলেন তিনি জীবনে যে মৃত্যুর পর ও এই দিন ও তার দেখা লাগছে। দূঃখে বলতেও পারছেন না যে মরে যাই। আগেই তো মরে বসে আছেন। ফোস ফোস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাই ভাবছিলেন কি ভুল করেছিলাম জীবনে। কেনো এমন হলো। মিসেস ভূতনাথকে লুকিয়ে চোখ মুছলেন দুবার।
মিসেস ভূতনাথ এবার নরম গলায় বললেন, “তুমি কি ছোটখোকার জন্য কান্নাকাটি করছো? থামো এবার।সময় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে!” ভূতনাথ সাহেব বুঝলেন না সময় আর রইলোটা কোথায়! কবেই বা ঠিক হবে। মনের দূঃখেই গাছের ডালে দোল খেতে লাগলেন।
এর মাঝে দীর্ঘদিন খালি থাকা পাশের বাড়িতে মাল পত্র নিয়ে মানুষ উঠলো। ভদ্রলোক ভূতনাথ সাহেবেরই ছেলেবেলার বন্ধু। অবশ্য বন্ধু না বলে তাকে শত্রু বলাই ভালো কারণ তার সাথে আবার ভূতনাথ সাহেবের কিছু তিক্ত স্মৃতি রয়েছে। সেই ছোটবেলা মার্বেল খেলায় দুই নাম্বারি করার পর থেকে তারা ছিলেন একে অপরের শত্রু। তাছাড়া ভূতনাথের বাবার চোখে তার শত্রুই ছিলো কিনা আদর্শ ছেলের উদাহারণ। তাই ছোটবেলাতে ভূতনাথকে নানান কটু কথা শুনতে হতো। যাহোক, সে অনেক পুরনো কথা। এখন তিনি মরে ভূত। আর অপরজন কিনা আরামে আমোদে দুনিয়াতে হেসে খেলে বেড়াচ্ছে। সবই কপাল। এর ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই ঘটে গেলো আরেক ঘটনা। তার ছোটছেলে যে কিনা বিয়ে করবে না বলে পণ নিয়েছিলো সে কিনা তার শত্রুর মেয়ের প্রেমে পড়লো। ভূতনাথ সাহেব আর কত সহ্য করবেন। তার মনমরা ভাব দেখে মিসেস ভূতনাথ গেলেন খেপে। “আরে তোমাকে নিয়ে তো অনেক যন্ত্রনা। ছেলে বিয়ে না করলেও দোষ, করলেও দেখি দোষ!” ভূতনাথ সাহেব পুরো ফুঁটো বেলুনের মতো চুপসে গেলেন। মনমরা ভাবে ছেলের বিয়ের প্রস্তুতি দেখতে লাগলেন। মৃত মানুষের ইচ্ছা অনিচ্ছার তো কোনো দাম তো আর নেই।
এভাবে সময় কেটে গেলো। বিয়ের আর মাত্র দুই দিন বাকী। সেদিন ভোরবেলা তিনি দেখলেন গাছের নীচে তার শত্রু দাঁড়িয়ে। ভালো করে খেয়াল করে দেখলেন পাশে তার মেয়েও আছে। সেই ভদ্রলোক বলে চলেছেন, “বুঝলে মা, আমি বড় খুশী তোর এখানে বিয়ে হচ্ছে। ভূতনাথ আমার বড় কাছের বন্ধু ছিলো। মার্বেল খেলা থেকে শুরু করে কত কি নিয়েই না ঝগড়া করলাম আমরা। এই যে আম গাছ তলায় স্কুল শেষে কত খেলাই না খেলতাম। এরপর হুট করে একদিন চলে গেলাম দেশের বাইরে পড়ার জন্য। আর ফেরা হলো না। যোগাযোগ ও হলো না। ফিরতে ফিরতে আমাদের ভূতনাথ দুনিয়া ছাড়লো।“
অভিমানী ভূতনাথের মনে হলো ছুটে গিয়ে বন্ধুর গলা জড়িয়ে ধরে কিন্তু তা তো আর সম্ভব না। এসব শত্রুতা না ছাই। এতদিনের রাগ এখন গলে পানি হয়ে ভূতনাথের চোখ নাক দিয়ে বইতে শুরু করলো। নাক মুছতে মুছতে স্ত্রীকে বললেন, “যা হয় ভালোর জন্যই হয়। আমাদের ছেলের পছন্দ আছে কি বলো? আহা কি ভালো মেয়েটা দেখেছো”।“যত্তসব” বলে মিসেস ভূতনাথ গজগজ করতে থাকলেন। এতে অবশ্য ভূতনাথ সাহেবের কিছুই মনে হলো না।উনার এখন মন ভর্তি আনন্দ।
যথাসময়ে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হলো। বাদ্য বাজনা বাজলো, অতিথিতে এই বাড়ি আবার সেই পুরনো দিনের মতো গম গম করে উঠলো। ভূতনাথ সাহেব যেনো পুরনোদিনে ফিরে গেলেন। ছোটছেলের মাথায় হাত ও বুলিয়ে দিলেন বহুবার। বিয়ের রাতে যখন আতশাবাজী ফুটতে লাগলো, ভূতনাথ সাহেব স্ত্রীকে বললেন, “বহুদিন ই তো রইলাম। চলো এবার স্বর্গের পথে হাঁটা দেই কি বলো?”
১২ ই জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫২
তেরো বলেছেন: ধন্যবাদ!
২| ১১ ই জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫
প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ
১২ ই জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫২
তেরো বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও!
৩| ১৪ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৫৯
হাসান মাহবুব বলেছেন: পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের মত বলার ধরণটা। এতদিন পর কী মনে করে ফিরলেন? ফিরলেন যখন, নিয়মিত লেখা দিতে থাকুন।
১৫ ই জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৫
তেরো বলেছেন: আসলে অনেকদিন ধরে কিছু লেখা হয় নি তাই ফেরাও হয়নি। নতুন লেখা হলে অবশ্যই দিয়ে যাবো আবার!
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
৪| ১৭ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ২:১৮
সাদরিল বলেছেন: গল্পের প্লট খুবই ভিন্ন। মরার পরে মেরিড লাইফ!! যদিও লোকে বলে বিয়ের পরেই নাকি মানুষের টেকনিকাল মৃত্যু ঘটে। অনেকদিন পর আপনার লেখা দেখলাম। আগে নিয়মিত ফেসবুকেও আপনাকে দেখতাম। ভাবছি এই পোস্টটি আবার আপনার ভূত দিলো না তো!!!
১৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ৮:১২
তেরো বলেছেন: গল্পটা বলতে গেলে একটু মজা করেই লেখা হঠাত। যেহেতু অনেকদিন পর কিছু লেখলাম তাই ব্লগে রেখে দিলাম। যাক, ফেবু থেকে কিছু অবসর নিয়েছি, ভাবলাম সবাই ভুলে টুলে গেছে। মনে রেখেছেন দেখে মজাই পেলাম।
ভালো থাকবেন।
৫| ২২ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:০৮
মিনাক্ষী বলেছেন: মেলাদিন পরে!! ভালোই তো!! এখন তো শুধুই অবসর, বেশি বেশি লিখ
২৩ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৫৭
তেরো বলেছেন: হেহে... শুধু আলসেমী লাগে।
৬| ২৫ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৪৮
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ভিন্নধর্মী গল্পে ভালোলাগা রইল +++
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৬
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভালোই