![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এদেশটাকে বড্ড ভালবাসি....... বেশি ভালবাসি এদেশের মেহনতী খেটে খাওয়া মানুষকে....
শহরের ধনী মানুষেরা এখন ‘পান্তা-ইলিশ’ দিয়ে নববর্ষ উদযাপন করে, যার থালার রেট হাজার টাকা। অথচ প্রকৃতপক্ষে এর মাধ্যমে বাংলার সংস্কৃতি চর্চা নয়, সাধারন গরীব মানুষদের উপহাস করা হচ্ছে! “পান্তাভাত” গরীব মানুষের দৈনন্দিন খাবার। সাধারনত রাতে খাওয়ার পর অবশিষ্ট ভাত ভালো রাখার কোনো উপায় ছিল না; তা পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হতো। সকালে উঠে ঐ পান্তা ভাত আলুভর্তা, পোড়া শুকনো মরিচ ইত্যাদি দিয়ে খেয়ে মানুষ কাজে ছুটে।
অথচ ঢাকা শহরে পয়লা বৈশাখে হাজার টাকা খরচ করে “পান্তা-ইলিশ” খাওয়া ধনী মানুষদের একধরনের বিলাসিতা। এ নিয়ে ব্যবসা ফাঁদা হচ্ছে, উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে “পান্তা- ইলিশ।”
আর এর সাথে আমাদের প্রিয় ইলিশের হালি ১৬ হাজার টাকায় যা সাধারণ মানুষের কল্পনার বাইরে। শহুরে “পান্তা-ইলিশের” মাধ্যমে বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে সম্মান দেখানোর পরিবর্তে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে। যদি কেউ চান, একদিন নয়, পান্তাভাত সারা বছরই খেতে পারেন। কিন্তু নববর্ষ পালনের নামে গরীব মানুষদের উপহাস করার অধিকার কারো নেই।
৪০/৫০ বছরের পুরোনো বাঙলা সনের উৎসব নিয়ে কিছু কথা বলতেই হয়। চিরায়ত বাংলায় নববর্ষের মূল উৎসব ছিল “হালখাতা” । নগরায়নের আগ্রাসনে আজ প্রায় তা অবলুপ্ত হতে চলেছে। তবে গ্রাম বাংলায় এটা এখনও টিকে আছে। পুরান ঢাকা আর ব্যবসায়িক লোকের কাছে এর সমাদর রয়েছে। বিশেষ করে আড়ৎদারদের কাছে এখনও হালখাতা গুরুত্ব বহন করে নানা কারণে। পুরোনো বছরের দেনাপাওনা মিটিয়ে নতুন বছরের হিসাব শুরুর দিন এটা। হাট-বাজারে দোকানে দোকানে নতুন বছরের “হাল খাতা” খোলা হয়। রঙ্গিন কাগজ ও সুগন্ধি দিয়ে দোকান-পাটগুলো সাজানো হয়। খরিদ্দারদের কাছে সারা বছরের বকেয়া টাকা তোলা হয় আবার নতুন বছরের জন্য হিসাব খলা হয়। আগত খরিদ্দার ও আমন্ত্রিত অতিথিদের মিষ্টিমুখ করায় ব্যবসায়ীরা। হাটে বা মাঠে বৈশাখি মেলা বসে।
(ছবি)
বাংলাভাষী হিন্দুদের জন্য বৈশাখের প্রথম দিনটি একটি মৌলিক ধর্মীয় উৎসবের দিন। বাংলা অফিসিয়াল ক্যালেন্ডারের সাথে পঞ্চিকার হিসাব-কিতাবের গন্ডগোলে বাংলাদেশে এটা এখন চলে গেছে ২ বৈশাখে। পুরোনো ঢাকায় ও পশ্চিম বাংলায় পঞ্চিকা দেখে এভাবেই পালন করা হয়। এর আগের দিন তারা পালন করে চৈত্র সংক্রান্তি। “পহেলা বৈশাখ” হলো ঘট পূজার দিন। হিন্দুরা চৈত্র সংক্রান্তিতে সারা রাত্রি পাড়ায় পাড়ায় কীর্তন করতো। নগর কীর্তন, হিন্দুদের নানা দেবতা, অনার্য দেবতা শিব-পার্বতীরও কীর্তন হতো। ঘরদোর লেপা পোছা হতো, এমনকি গোয়ালঘর, উঠোন গোবর দিয়ে লেপা হতো। সকালে গোয়াল থেকে গরু ছাগল বের করে গোসল করানো হতো। দুপুরে রান্নাবান্না হতো, তাতে আমিষ ছিলো নিষিদ্ধ। অবশ্য কেউ কেউ শুধু জিয়ল মাছ যেমন কই-শিং-মাগুরের ঝোল করতো। নিরামিষ শাক সবজি’র সাথে সাততিতে রান্না করতো। সবচেয়ে অনিবার্য হইলো ব্রত পালন। সারা চৈত্র মাস জুড়ে হিন্দু নারীরা ব্রত পালন করতো ।
এখন ঢাকার চারুকলায় যে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়, এটার বয়েস মাত্র ২৪ বছর। এর শুরু ১৯৮৯ সাল থেকে। এর আগে এরকম কিছু হতো না। এরশাদের জমানায় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সুতিকাগার ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সামরিক সরকার শিল্প-সংস্কৃতির অঙ্গনকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছিল। তখন "আনন্দ শোভাযাত্রা" নামে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান চালু করে চারুকলার কিছু ছাত্ররা। এর অন্যতম সংগঠক ছিলো শিল্পী তরুণ ঘোষ। পশ্চিম বাংলার বরোদায় আর্ট ইনিষ্টিটিউটের ছাত্র ছিল সে। বরোদায় যেভাবে নতুন বছরকে বরণ করার জন্য নানা ফোক মোটিফ , মুখোশ ও খেলনার আয়োজন করে, সেই কনসেপ্ট আদমানী করে তরুন ঘোষ এটাকে সাজায়। প্রথমে এর নাম ছিল 'আনন্দ শোভাযাত্রা'। সেবার কিছু মুখোশ আর জীবজন্তুর প্রতীক ছিলো। পরে এটাকে আরো হিন্দুয়ানী করে নাম হলো ”মঙ্গল শোভাযাত্রা।” এখন সেখানে প্রায় দেবদেবী, গনেশের বিভিন্ন প্রতিমা, রাক্ষস-খোক্কস,অসুর, আবার রাজাকার প্রতিকৃতি/মুখোশ বহন করা হয়। এই যদি হয় মঙ্গল শোভা যাত্রা, আর এসবকে বলা হচ্ছে বাঙ্গালী সংস্কৃতি!! তাহলে বাঙ্গালী মানেই কি হিন্দুয়ানি কালচার?
সেই কবে ইংরেজী ১৫৫৬ সালে মোগল সম্রাট আকবরের সিংহাসনে আরোহনের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে তার রাজস্ব কর্মকর্তা আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজী প্রথম বাঙলা সন চালু করেন। ১৬০৮ সালে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের নির্দেশে সুবেদার ইসলাম খান চিশতি ঢাকাকে যখন রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলেন, তখন থেকেই রাজস্ব আদায় ও ব্যবসা বাণিজ্যের হিসাব-নিকাশ শুরু করার জন্য বাংলা সনের পহেলা বৈশাখকে উৎসবের দিন হিসেবে পালন শুরু করেন। সম্রাট আকবরের অনুকরণে সুবেদার ইসলাম খান চিশতি তাঁর বাসভবনের সামনে সব প্রজার শুভ কামনা করে মিষ্টি বিতরণ এবং বৈশাখ উৎসব পালন করতেন। সেখানে সরকারি সুবেদার হতে শুরু করে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত থাকত। কিন্তু আজ যে সব আচারকে চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি হিসাবে প্রচার করা হচ্ছে, তার ইতিহাস মাত্র ২২ বছরের। ১৯৮৯ সালের পূর্বে বাংলাদেশে কখনোই এভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রা করে “পহেলা বৈশাখ” পালন করা হয়নি।
সকাল হলেই পয়লা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে হাজার হাজার নারী-পুরুষ-কন্যা-মাতারা সকাল থেকে ঘরের বাইরে এসে রাস্তায় নামবে। মুসলমান মেয়েরা মাথায় তিলক,সিঁদুর পড়ে ঘুরবে। ছেলেরা মেয়েদের গালে কপালে রঙের ছবি আঁকবে। প্রকাশ্যে নারী-পুরুষে চুমু খাবে। উৎসবে আসা বাচ্চারা কি দেখেছে আর কি শিখছে, বলুন তো। এটা তো ইয়োরোপ-আমেরিকা নয়। উৎসবের নামে যা হচ্ছে, এটা কি নোংরামি, ভন্ডামি, অপব্যয় আর অপসংস্কৃতির চর্চা নয়? এভাবেই আমাদের জাত-কুল, সংস্কৃতি ও ধর্ম ধ্বংস করছে ভারতীয় (পশ্চিম বাংলা) ও এদেশীয় মূক্তচিন্তার নামে কিছু ইবলিশ।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে “মঙ্গল প্রদীপ” চালু হয় শেখ হাসিনার হাত দিয়ে ১৯৯৩ সালে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা “১৪০০ সন উদযাপন পরিষদ” আয়োজিত নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠান কর্মসূচিতে সেদিন শুক্রবার ধানমন্ডি লেকে “মঙ্গলপ্রদীপ” ভাসিয়ে দেন। এরপরে বাংলা একাডেমিতে তিনি বাজিয়েছিলেন “মঙ্গল ঘন্টা।” ১৯৯৬ সালে ঘাদানিক নেত্রী সুলতানা কামাল “মঙ্গলপ্রদীপ” জ্বালিয়েছিলেন শিল্পকলা একাডেমিতে। সেই যে মঙ্গলপ্রদীপ চালু হলো এখন অধিকাংশ রাষ্ট্রীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রতিবেশী দেশকে খুশী করার জন্য হরহামেশা “মঙ্গল প্রদীপ” জ্বালানো হচ্ছে।
সেক্যুলার বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ও ‘বাম’ ঘরানার কিছু বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতিসেবীরা পয়লা বৈশাখের ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’র নাম পরিবর্তন করেন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’য়। এতে লক্ষ্মীপেঁচা, বাদুর, বাঘ, বানর, হনুমান ও রাক্ষস-খোক্ষসসহ বিচিত্র সব জন্তুজানোয়ারের মুখোশ পরে মিছিল করে এরা। মূলত: হিন্দুরা গনেশ পুজার সময় “মঙ্গল শোভাযাত্রা”র আয়োজন করে। আবার বড় কোনো কাজ যেমন মন্দির নির্মান বা বিগ্রহ স্থাপনের সময় দেবতার অনুগ্রহ লাভের আশায় মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে থাকে। নববর্ষ পালনের নামে “মঙ্গল শোভাযাত্রা”য় যেভাবে বিভিন্ন জান্তবের মুখোশ পরে আনন্দ উৎসব ও লাফালাফি করা হয়, এটা বাংলার সংস্কৃতি নয়। বাংলার সমতলের সাধারন মানুষ কখনই এমনটা করেনি। তবে ইতিহাস ঘেটে যা পাওয়া যায় তা হলো, নিম্ন শ্রেণীর হিন্দুদের গাজনের এবং হরি উৎসবের সময় এরকম কিছু আচার পালন করে থাকত। গাজনের মেলায় ডোম, মেথর ও চণ্ডাল শ্রেণীর হিন্দু লোকেরা নানাবিধ বহুরূপী সঙ সেজে তাদের উৎসব করত। এখন এসব কাজকে যদি কেউ বাংলার হাজার বছরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের চর্চা হিসাবে চালাতে চান, তাহলে অবশ্যই আমাদের আপত্তি থাকবে।
বাংলাদেশের জনগন মূলত দু’টি বড় ধর্মের (মুসলমান ও হিন্দু) অনুসারী। শান্তিপূর্নভাবে যার যার ধর্মচর্চা এ দেশের ঐতিহ্যের অংশ। কিন্তু বর্তমান সরকার হিন্দু ধর্মের কিছু পার্বনকে “সার্বজনীন উৎসব” হিসাবে প্রচার করতে শুরু করেছে উদ্দেশ্য মূলকভাবে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পরে সেক্যুলারিজম ফুটাতে গিয়ে হিন্দুয়ানী কালচারকে উৎসাহিত করা হয়- “মঙ্গলপ্রদীপ” জ্বালিয়ে অনুষ্ঠান চর্চা করা হয় এবং পয়লা বৈশাখে “মঙ্গল শোভাযাত্রা”র বাড়াবাড়ি লক্ষনীয়। গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ঘোষণা করেন, “দুর্গাপুজা নাকি সার্বজনীণ উৎসব”--মানে সব ধর্মের অনুষ্ঠান!! এদের কেউ কেউ আবার আগ বাড়িয়ে বলা শুরু করেছেন, এগুলি নাকি আমাদের আবহমান বাংলার সংস্কৃতি। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, এসব করতে গিয়ে এদেশের স্তাবকরা কোনো কেনো ক্ষেত্রে পশ্চিম বাংলাকেও ছাড়িয়ে গেছে। পশ্চিম বাংলায় এভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রা করে নববর্ষ পালন করা হয় না। বাংলাদেশের ১৫ কোটি বাঙ্গালী মুসলমান দুর্গাপুজা বা গণেশপুজার উৎসবকে বাঙ্গালী সংস্কৃতি মনে করে না, এটাই সত্য। তবে যেভাবে গণেশপুজার উৎসবকে ”মঙ্গল শোভযাত্রাকে” রাষ্ট্রীয়ভাবে বাঙ্গালী সংস্কৃতি হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে, বাংলাদেশের সাধারন মুসলমানরা সঙ্কিত!!!
মুষ্টিমেয় কিছু নাস্তিক, বামপন্থী, ধর্মনিরপেক্ষবাদী, বস্তুবাদী শ্রেনীর কিছু লোকের আবিস্কার “মঙ্গল শোভাযাত্রা” কে বলা হচ্ছে হাজার বছরের সংস্কৃতি। চারুকলায় নববর্ষ পালনের নামে রাস্তাঘাটে নারী পুরুষের নর্তন-কুর্দন আর চুমাচুমিকে বলা হচ্ছে আমাদের কালচার!
হিন্দুরা তাদের সংস্কৃতি পালন করুক, খ্রিষ্টানরা তাদেরটা, বৌদ্ধরা তাদেরটা, উপজাতিরা ও আদিবাসীরা নিজস্ব সংস্কৃতি পালন করুক এসব নিয়ে কারো কোন কথা নেই।
কিন্তু এসব মিথ্যার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ করতেই হবে।
সূত্র: উইকিপিডিয়ায় বৈশাখ
সংগ্রহ: নতুনের আগমন
১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৩৮
বাংলার ঈগল বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
২| ৩১ শে মে, ২০১৪ রাত ২:৩০
পংবাড়ী বলেছেন: ব্যবসা
৩১ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:২৭
বাংলার ঈগল বলেছেন: ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু তিলকে তাল আর হাতিকে পিপড়া বানানোর দরকার কি!
৩| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৩৫
যুবায়ের খান বলেছেন: সহমত
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫৩
বাংলার ঈগল বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৪১
নেবুলাস বলেছেন: আমি আমার পোস্টে View this link যা বলতে চেয়েছি তা আপনি সুন্দরভাবে তুলে ধরলেন। ধন্যবাদ।