![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গুলশান আইভি কনকর্ড টাওয়ারের পঞ্চম তলা। পূর্ব উত্তর কোণের রুমে শোকে মুহ্যমান জিল্লুর রহমান বিছানায় শোয়া। স্ত্রী বেগম আইভি রহমানের লাশের অপেক্ষায় তিনি। ছেলে পাপন আর ২ কন্যা তানিয়া ও ময়নার গগনবিদারী আহাজারি। এ বাড়ি ঘিরে শোকার্ত মানুষের ঢল। সবার চোখে পানি। কাঁদছে গোটা দেশ। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকে লাশ আসবে। দিনটি ছিল ২০০৪ সালের ২৫শে আগস্ট। মিডিয়া কর্মীদের ভিড়। এ সময়ে জিল্লুর রহমান কি বলবেন? সাংবাদিকরা তার মুখ থেকে কিছু শুনতে চাইছেন। লাশ তখনও আসেনি। সুযোগ হলো জিল্লুর রহমানের সামনে যাওয়ার। রুমে প্রবেশ করেই দেখতে পেলাম অঝোরে কাঁদছেন তিনি। দীর্ঘ দিনের জীবনসঙ্গীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ। আনমনা হয়ে বিড়বিড় করছেন। কখনও চিৎকার করে কেঁদে উঠছেন। কিছুই বলতে পারছিলাম না। আমার চোখেও পানি। প্রাজ্ঞ, অভিজ্ঞ এই রাজনীতিবিদ বুঝতে পারছিলেন তার জীবনসঙ্গী সম্পর্কে কিছু জানতে চাই। তাই নিজ থেকেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। বললেন, ৪৬ বছরের সাংসারিক জীবনে আমাদের মাঝে কখনও ভুল বুঝাবুঝি হয়নি। এ সময়ে কখনও একজন আরেকজন থেকে দূরে থাকিনি। ক্লাস নাইনে থাকতেই বিয়ে হয়। বিয়ের আগেই আইভিকে চিনতাম, তবে প্রেম ছিল না। সুদর্শনা আইভির সংগীত ও নৃত্যে মুগ্ধ হয়েই আকৃষ্ট হয়েছিলাম। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার বলতে থাকেন, যে বিশ্বাস নিয়ে আইভিকে ঘরে এনেছিলাম সে বিশ্বাস দীর্ঘ ৪৬ বছরে একবারের জন্যও নষ্ট হতে দেয়নি। বরং তার অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতার জন্যই এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। বৃদ্ধ বয়সে এসেও রাজনীতি করতে পারছি। মাত্র তিন দিন আগে ২১শে আগস্ট আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের জনসভায় একসঙ্গে গিয়েছিলেন জিল্লুর রহমান ও আইভি রহমান। কে জানতো এ যাওয়াই তাদের শেষ যাওয়া। ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমান মারাত্মক আহত হন। তার দু’টি পা-ই কেটে ফেলতে হয়। ভর্তি করা হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। ২৪শে আগস্ট রাত ৩টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আইভি রহমান। শোকাহত গোটা দেশ। গুলশান আইভি কনকর্ড টাওয়ারে শোকাহত মানুষের ভিড়। দীর্ঘ ৮ বছর নিঃসঙ্গ জীবন কাটিয়ে জিল্লুর রহমানও চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মহামান্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার লাশ নেয়া হয় বঙ্গভবনে। যেখানে তিনি জীবনের শেষ সময় কাটিয়েছেন। গতকালও মরহুম প্রেসিডেন্টের পুত্র এমপি পাপন, কন্যা তানিয়া ও ময়না অঝোর ধারায় কাঁদছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর তাদের পিতা সান্ত্বনা দিয়েছেন। এখন তিনিও চলে গেলেন। এতিম তারা। প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে আজ গোটা জাতি এক কাতারে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী থেকে শুরু করে সকল রাজনৈতিক দলের নেতারা ছুটে গেছেন বঙ্গভবনে। শেষ বারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে। সাধারণ মানুষের ঢল সেখানে। আসলে জিল্লুর রহমান তার দীর্ঘ জীবনে দেশের মানুষের হৃদয় জয় করে গেছেন। সততা, নিষ্ঠা আর দেশপ্রেমের উজ্জ্বল উদাহরণ তিনি। টিভিতে দু’বোনকে জড়িয়ে পাপনের কান্না দেখে মনে করিয়ে দিয়েছে ৮ বছর আগের সেই দৃশ্য। চোখে ভেসে উঠেছে, জিল্লুর রহমানের কথাÑ ২১শে আগস্ট জনসভায় যাওয়ার সময় আইভি নিজ হাতে পায়জামা-পাঞ্জাবি বের করে দেয়। পাঞ্জাবি পরার পর বলে, এটি খুলে ফেলো। লালচে লাগছে। ভাল সাদা পাঞ্জাবি পরে যাও। নিজ হাতেই অন্য একটি পাঞ্জাবি বের করে দেয়। এটি পরার পর বলে, দেখ কত সুন্দর লাগছে। কেঁদে ফেলেন জিল্লুর রহমান। একটু পর আবার বলতে থাকেন, ও ছিল সুন্দরের পূজারী। সুন্দরকে মনে প্রাণে ভালবাসতো।
১৯৫৮ সালের ২৭শে জুন জেবুন নাহার আইভির বিয়ে হয় জিল্লুর রহমানের সঙ্গে। তাদের এ বিয়ের এক নম্বর সাক্ষী ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দ্বিতীয় সাক্ষী ছিলেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খান। বিয়ের উকিল ছিলেন ক্যাপ্টেন মনসুর আলী। বঙ্গবন্ধুর ছোট্ট গাড়িতে বসেই বর সেজে যান জিল্লুর রহমান। আইভির মৃত্যুর খবর শুনে বলেছিলেন, একা হয়ে গেলাম। বড় একা। যতদিন বেঁচে থাকবো আইভির স্মৃতি আমাকে তাড়া করে ফিরবে। দীর্ঘ ৮ বছর তাকে তাড়া করে ফিরেছে আইভির অনুপস্থিতি। আজ প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে দেশ যেন একা হয়ে পড়লো। বড় একা। নির্ভর করা যায় এমন রাজনীতিক আর ক’জন আছেন দেশে? তিনি ছিলেন, নির্ভরতার প্রতীক। যার কোন শত্রু ছিল না। যাকে শ্রদ্ধা জানাতেন দলমত নির্বিশেষে সবাই। যিনি কথা বলতেন হিসাব করে। যিনি বিরোধী মতকে শ্রদ্ধা জানাতেন বিনয়ের সঙ্গে। দেশে এমন মানুষের আরও বহুদিন বেঁচে থাকার দরকার ছিল। ইন্টারমিডিয়েটে পড়াকালে জিল্লুর রহমানের পরিচয় হয় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফজলুল হক হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভিপি নির্বাচিত হন। তৎকালীন পাকিস্তানবিরোধী রাজনীতির জন্য তার এম এ ডিগ্রি কেড়ে নেয়া হয়। করা হয় বহিষ্কার। ১৯৬২ সালে ছাত্র আন্দোলনের মুখে সরকার আবার ডিগ্রি ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়। দীর্ঘ জীবনে তিনি কোন অন্যায় করেননি। স্বাধীন দেশে অনেকেই মন্ত্রিত্ব, লাইসেন্স, পারমিট ইত্যাদির লোভে দলবদল করেছেন। কিন্তু জিল্লুর রহমান ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অটল। শেষ দিন পর্যন্ত এ আদর্শকে লালন করে গেছেন । তিনি এক ইতিহাস। এমন মহান লোক মরতে পারেন না। তিনি বেঁচে থাকবেন বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে।
২| ২২ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:২০
তিতাসপুত্র বলেছেন: একমত।
৩| ২২ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৪
কামরুল ইসলাম (সুমন) বলেছেন: লেখাটা পড়ে চোখে পানি এসে গেল
৪| ২২ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৫
তিতাসপুত্র বলেছেন: ধন্যবাদ।
৫| ২২ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৭
নিয়ামুল ইসলাম বলেছেন:
৬| ২২ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৬
তিতাসপুত্র বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:১২
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: তিনি এক ইতিহাস। এমন মহান লোক মরতে পারেন না। তিনি বেঁচে থাকবেন বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে।
শ্রদ্ধায় , মানুষের ভালবাসায়
এ মহান নেতা
মরেও অমর
মাটির বিছানায় নিল ঠাই
দিয়ে গেল বাঙ্গালির অজেয় এক স্বাধীনতা ।