নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

য পলায়তি স জীবতি......

আজ আমি, অর্ফিয়ুস, ছিন্ন দেহ, জলে ভাসি একা...

আবীর একা

ঈশ্বর সরে দাঁড়াও। উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা আজ শুকনো নীল.....

আবীর একা › বিস্তারিত পোস্টঃ

লালন সাঁই থেকে লালন শাহ : জাতহীনরে জাতে তোলা

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১২:১৪

লালন সাঁই ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক সাধকদের মধ্যে অন্যতম। তিনি একাধারে বাউল সাধক, বাউল গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক। তাঁকে ‘বাউল সম্রাট’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়। গান্ধীরও ২৫ বছর আগে, ভারত উপমহাদেশে সর্বপ্রথম তাঁকেই ‘মহাত্মা’ উপাধি দেয়া হয়েছিল (তাঁর মৃত্যুর ১২ দিন পর তৎকালীন পাক্ষিক পত্রিকা মীর মশাররফ হোসেন সম্পাদিত 'হিতকরীতে' প্রকাশিত একটি রচনায় সর্বপ্রথম তাঁকে "মহাত্মা" হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়)।



লালনের বেশ কিছু রচনাবলী থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে তিনি ধর্ম-গোত্র-বর্ণ-সম্প্রদায় সম্পর্কে আদৌ শ্রদ্ধাশীল ছিলেন না। ব্রিটিশ আমলে যখন হিন্দু ও মুসলিম মধ্যে জাতিগত বিভেধ-সংঘাত বাড়ছিল তখন লালন ছিলেন এর বিরূদ্ধে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর। তিনি মানুষে-মানুষে কোনো ভেদাভেদে বিশ্বাস করতেন না। তাঁর কাছে জাতি, ধর্ম, বর্ণ এসবের কোনো মূল্যও ছিল না। তিনি ছিলেন মানবতাবাদী। “” একটি গানে তিনি বলেছেনঃ



'' সব লোকে কয়

লালন কি জাত সংসারে।

লালন বলে জাতের কি রূপ

দেখলাম না তা-নজরে।। ''





আবার আরেকটি গানে লালন বলেছেনঃ



'' সব লোকে কয়, লালন ফকির হিন্দু কি যবন

লালন বলে, আমার আমি না জানি সন্ধান। ''



কিন্তু মানবতাবাদী লালনকেও ধর্মের লেবাস পরানো থেকে রেহাই দেয়া হয়নি। এর সূত্রপাত ঘটান লালন গবেষকবৃন্দ। লালন হিন্দু না মুসলমান এ নিয়ে রয়েছে বিস্তর মতভেদ। একদল বলেন তিনি হিন্দু কায়স্থ পরিবারের সন্তান। আবার আরেকদল মনে করেন তিনি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। মূলত নানাভাবে ব্যাখ্যা করে গবেষকরা নানান সময়ে লালনকে হিন্দু বা মুসলমান বানানোর চেষ্টা করেছেন। তবে মোক্ষম পেরেকটি ঠুকে দেয়া হয় পাকিস্তান আমলে। আইউব খানের আমলে বাঙালি সংস্কৃতির পাকিস্তানিকরণ বা সোজা কথায় ইসলামিকরণের যে প্রয়াস নেয়া হয়েছিল তা থেকে রেহাই পাননি লালনও। আইউবের পা চাটা অর্ধশিক্ষিত মোনেম খানের বদৌলতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ইত-সিমেন্টের কাঠামো গড়ে উঠে লালনের সমাধির উপর। শুধু তাই নয়, সকল ইসলামি স্থাপত্যের সুকৃতিকে ব্যঙ্গ করে সমাধির উপর লিকলিকে এক গম্বুজ মাথা উঁচিয়ে দাঁড়ায়। ফলে 'লালনের আখড়া' হয়ে যায় 'লালন শাহের মাজার' আর লালন সাঁই' হয়ে যান লালন শাহ! তাতে লালনের অঙ্গে কিছুটা শাহী আভিজাত্য আনা গেল আর সাথে জাত-পাত নিয়ে সকল সন্দেহের অবসান ঘটিয়ে লালনকে খাঁটি মুসলমানও বানানো গেল!



কিন্তু এতো অল্পতেই রেহাই দেয়া হলো না লালনকে। ১৯৬৩ সালে ঔসব কাজ সম্পন্ন করার পাশাপাশি মোনেম খান আরেকখান কাজ করে গেলেন। লালন সমাধি-প্রাঙ্গণে একটি একতলা দালান নির্মাণ করে সেটাকে লালন লোকসাহিত্য কেন্দ্র বলে ঘোষণা দিলেন। কেন্দ্রের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ছিলেন জেলা প্রশাসক আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হতেন স্থানীয় জননেতার থেকে একজন। অর্থাৎ বাউলদের দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হলো অবাউলদের। যতদূর জানি এ অবস্থার কোনো হেরফের হয়নি। তারপর শুরু হলো লালন-বাণিজ্য। দোল পূর্ণিমার উৎসবে আখড়ায় (নাকি মাজারে!) বসা মেলা স্পন্সর করে নামজাদা এক টেলিযোগাযোগ কোম্পানি। মেলাকে আকর্ষণীয় করতে তারা সেখানে র‍্যাফল ড্র'রও আয়োজন করে! শুধু তাই নয়, লালনের জীবনদর্শনের প্রতিচ্ছবি নির্মাণের নামে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র (নাকি ছলচ্চিত্র!) বানিয়ে লালনকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করা হয়।



লালনকে নিয়ে এরকম হীন প্রচারণার মানে কি আমার জানা নেই। শুধু এটুকুই চাইবো, মাজারের সংস্কার থেকে বেড়িয়ে আবার 'লালনের আখড়া' নামে পরিচিতি পাক ছেউরিয়া আর ফকির লালন সাঁইয়ের শরীর থেকে খুলে ফেলা হোক ধর্মের সকল লেবাস।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৩১

মাজহার অপু বলেছেন: সাঁইয়ের শরীর থেকে খুলে ফেলা হোক ধর্মের সকল লেবাস।

এবং আমাদের-ও শরীর থেকে খুলে ফেলা হোক ধর্মের সকল লেবাস।

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১:২১

আবীর একা বলেছেন: তাহলে দারুন হতো!!! :) :)

২| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৩৬

স্বল্পজ্ঞানী বলেছেন: লালনকে নিয়ে তানভির মোকাম্মেলের সিনেমা (সম্ভবত লালন ফকির) এবং মনের মানুষ দেখে মনে হয়েছে যে, লালন জন্মগতভাবে হিন্দু ছিলেন। আর মুসলমানের সেবায় অসুখ থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। তাই তার মধ্যে হিন্দু-মুসলিম দুই সত্বা-ই কাজ করেছে। তবে তিনি পার্টিকুলারলি হিন্দু বা মুসলিম ছিলেন না, সব মিলে কনফিউজড ছিলেন। ইসলাম ধর্মকেও গুলিয়ে ফেলেছেন, আর হিন্দুধর্মকে কি করেছেন জানি না।

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১:২৪

আবীর একা বলেছেন: লালন গবেষকদের মতে লালন কায়স্ত পরিবারের সন্তান যার পিতা মাধব এবং মাতা পদ্মাবতী। পরে লালন ধর্ম পরিবর্তন করেন। আবার গবেষকদের একাংশ মনে করেন লালন মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। পিতা দরিবুল্লাহ দেওয়ান, মাতার নাম আমিনা খাতুন।

৩| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১:০৫

কবীর হুমায়ূন বলেছেন:
অন্তরে যার লালন দর্শন সাধারন ধর্ম তার কাছে গৌণ। লালন একটি প্রতিষ্ঠান এবং নূতন ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা। বাউল দর্শন আত্মাকে করে পরিচ্ছন্ন। আত্মকে চেনার পথ দেখায়। ফকিরি কিন্তু ফিকিরি নয়।

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১:২৩

আবীর একা বলেছেন: সহমত। সাথে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

৪| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ ভোর ৫:২২

স্বাধীকার বলেছেন:
আপনার অভিযোগটি শতভাগ সত্য। লালনের কোনো জাত থাকতে পারেনা, কোনো ধর্ম থাকতে পারেনা।
যিনি নিজের জাতের পরিচয় দিতে চাননি, তাহলে এখন যারা তাকে জাত হিসাবে উপস্থাপন করেন, তারা মূলত কোনো মতলব থেকেই করেন।

এটা ঠিক যে, লালনের গায়ে পাঞ্জাবী বা ধুতি পড়ালেও তাতে লালনের তাতে কিছু যায় আসেনা। লালন এসব পরিচয়ের অনেক্ উর্ধেব।

জাত ছাড়াই লালন বেঁচে থাকবেন আজীবন মানুষের হৃদয়ে, কোনো হিন্দু বা মুসলমানের হৃদয়ে নয়।

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ সকাল ১০:৪২

আবীর একা বলেছেন: জাত ছাড়াই লালন বেঁচে থাকবেন আজীবন মানুষের হৃদয়ে, কোনো হিন্দু বা মুসলমানের হৃদয়ে নয়।[/si

দারুন বলেছেন!!

৫| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:২০

আসিফ রুমি বলেছেন: লালন একজন মানবতাবাদী ছিলেন । তিনি হিন্দু ও নন মুসলমান ও নন । মুসলমান বা হিন্দু ঘরে তার জন্ম হতে পারে ।কিন্তু ব্যাপারটা নিছক গৌণ ।লালন ছিলেন বাংলার প্রথম সার্থক মানবতাবাদী ।আর তৎকালীন বিসসের অন্যতম সার্থক মানবতাবাদী ।লালন কে ধর্মীয় লেবাস পড়ানোর এই অপচেষ্টা রুখে দাড়াতে হবে । তবে মজার ব্যাপার হল এই বকধার্মিক মুসলমানরাই কিছু দিন আগে লালনের ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ধর্মের অজুহাতে । X(

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:৩৯

আবীর একা বলেছেন: যাক আপনেরে সামুতেও পাইলাম =p~ =p~ =p~

৬| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:৩২

মামুণ বলেছেন: লালন ইজ লালন । তাকে জাত পাতে বেধে রাখা যাবেনা। লালন একজন মহান মানুষ যিনি এ সকলের উর্ধ্ব।

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:৪১

আবীর একা বলেছেন: একদম সত্যি কথা বলেছেনরে ভাই!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.