![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আচ্ছা, আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় কবি/সাহিত্যিক/ লেখকেরা কেমন হয়?
আপনি হয়তো ক্ষাণিক ভেবেই বলে বসবেন, “কবিরা সাধারণত ভবঘুরে হয়”
কেনো আমরা বলি এমনটা? বলার পেছনে নিশ্চয় শক্ত যুক্তি আছে। আমাদের বাংলা সাহিত্যের অনেক কবি/সাহিত্যিককেই আমরা দেখতে পাই ভবঘুরে টাইপ। বাংলা সাহিত্যের গুরু বলতে আমরা যাকে চিনি, সেই শরৎচন্দ্রের জীবনে আমরা ভবঘুরে ছাপ পাই। আমাদের জাতীয় কবি, কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ইতিহাস সম্পূর্ণই ভবঘুরে।
একজন কবি ভবঘুরে হতেই পারেন। অথবা একজন ভবঘুরে হতে পারেন কবি। ব্যাপারটা কাকতালীয় বলে মানা যায়। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে আমাদের কবিরা নিজেকে ভবঘুরে অথবা উদাস বলে পরিচয় দিতে মজা পান। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ একটা লিখায় লিখেছেন “হিমু কখনো বড়সড় বিপদে পড়ে না, সব সময় ছোটখাটো বিপদে পড়ে। আমিও দেখতে চাই বড়সড় বিপদে পড়লে হিমু কি করে”
লেখায় স্পষ্ট ঈঙ্গিত যে লেখক যা লিখেন চরিত্র তাই করে না বরং চরিত্র যাই করে, লেখক তাই লেখে যান।
ভতবে সব লেখক যে তার লেখার হাতে বন্দী তা কিন্তু নয়। তাদের হাতের লিখা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছে লেখকের হুকুম। ইতিহাসে এমন কিছু সাহিত্য রয়েছে যা দেখতে আপনি চমকে উঠবেন,যদি আপনি গণিতের ছাত্র হয়ে থাকেন,তবুও।
*প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক Constrained Writing কি?
Constrained Writing হচ্ছে লিখার সেই বিশেষ কৌশল যেখানে আপনাকে কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে এবং আপনার লিখাটা নির্দিষ্ট একটা প্যার্টানে লিখতে হবে। যেমন ধরা যাক আপনাকে এমন একটা লাইন লিখতে হবে যার প্রত্যেকটা শব্দে “চ” থাকতে হবে। আমরা লিখতে পারি “ চাচা চেঁচায়, চাচী চুলায়, চাচায় চেঁচায় চাচীর চচ্চড়ি চুলায়”
Constrained Writing এর অনেকগুলো প্যার্টান আছে। যেমন এমন হতে পারে যে আপনার লেখার প্রতিটি শব্দে একটা নির্দিষ্ট অক্ষর থাকতে হবে। অথবা হতে পারে লিখার প্রতিটি অক্ষর একটি নির্দিষ্ট অক্ষর দিয়ে শুরু হতে হবে। অথবা শর্তটা এমনও হয় যে আপনি আপনার লিখায় কোনো VOWL ব্যাবহার করতে পারবেন না। মোট কথা মন মতো নয় বরং আপনাকে কলম চালাতে হবে শর্তমতো।
আশা করি বুঝা গেলো ব্যাপারটা। এখন চলুন দেখে আসি সাহিত্যে কিছু চোখ ধাঁধানো Constrained Writing।
আমাদের সকলের পরিচিত Constrained Writing ফরম্যাটটার নামই হচ্ছে সনেট। সনেটের বাধ্য বাধকতা হচ্ছে আপনি একটা সনেটে ঠিক দৌদ্দটা লাইনই লিখতে পারবেন। সেই দৌদ্দটা লাইনাবার দুইটি (৮+৬) অংশে বিভক্ত থাকবে। এখানেই শেষ নয়; প্রথম আট লাইনে আপনি শুধু ভাব সম্প্রসারণ করতে পারবেন, সেই ভাবকে আবার গুছিয়ে পরিণতির পথে আনার জন্য পাবেন মাত্র ছয়টি লাইন।
সনেটের আদিভূমি ইতালি। ইতালির কবি পেত্রার্ক হচ্ছেন সনেটের জনক জনক। ইংরেজী ভাষায় প্রথম সনেটটির জন্ম হয় Sir Thomas Wyatt এর কলম থেকে। বিশ্ব নন্দিত নাট্যকার শেক্সপীয়র সনেট লিখেছিলেন ১৫৪ টি। আর বাংলা ভাষায় প্রথ সনেট কে লিখেছিলেন? বলার অপেক্ষাই রাখেনা, আমরা সকলেই জানি আমাদের অসাধারণ এক সম্পদ মাইকেল মধুসূধন দত্ত।
• Gadsby একটা ইংরেজী উপন্যাস, যাতে প্রায় পঞ্চাশ হাজার শব্দ আছে। মজার ব্যাপার কি জানেন? এই উপন্যাসের কোথায় আপনি “E” অক্ষরটা খুজে পাবেন না। এর মানে কি দাঁড়ায় বুঝতে পারছে? He/She/see/eat এর মতো কমন ওয়ার্ড গুলো লেখার সুযোগও লেখক পায় নি!
• ১৯৬৯ সালে ফরাসি লেখক জর্জ প্যারেজ একটা উপন্যাস লেখেন যার নাম LA Disparition. মজার ব্যাপার হলো তিনি এখানে “e” ছাড়া কোনো VOWL ই ব্যাবহার করেন নি! কি ভাবছেন? সব বাদ দিতে পারলি ব্যাটা তুই “E” বাদ দিতে পারলি না?
এই দুঃখে তিনি ১৯৭২ সালে তিনি আরেকটা উপন্যাস লিখেন Les Revevenentes নামে, যেখানে তিনি “E” অক্ষরটা ব্যাবহার করেন নি। কি, এবার খুশি তো?
• আরেক ক্ষ্যাপাবাবার কান্ড দেখুন। তার নাম মাইকেল থ্যালের। তিনিও ছিলেন ফরাসী লেখক। ২০০৪ সালে তিনি একটা উপন্যাস লিখেন। তা আর এমন কি? এমন ব্যাপারটা হচ্ছে এই উপন্যাসের কোথাও আপনি একটা VERB খুঁজে পাবেন না!
• আচ্ছা শেক্সপীয়রকে কেমন লাগে? ভালোবাসেন? তাকে ক্ষ্যাপা ভালোবাসার স্বাক্ষর রেখে গেছেন ওয়েলসের লেখক পাউল গ্রিফিলস।তিনি ২০০৮ সালে প্রকাশিত Let me tell you গ্রন্থে শুধুমাত্র ঐ শব্দগুলোই ব্যাবহার করেছিলেন যেগুলো যেগুলো শেক্সপীয়র হেমলেটে ওফেলিয়ার মুখ দিয়ে বলিয়েছিলেন। (কি প্রেম!)
• Doug Nefer রচিত উপন্যাসটার নাম ছিলো “Never Again”. নামের স্বার্থকতা তিনি কিভাবে রেখেছেন জানেন? একটা শব্দ এক বারের বেশি ইউজ-ই করেন নি। (আল্লাহ ই জানে তার কয়টা গার্লফ্রেন্ড ছিলো। এ ক্ষ্যাপা তো দেখা যায় ওয়ান টাইম নীতিতে বিশ্বাসী)
• ইংরেজী পড়তে ভয় পাচ্ছেন? শব্দের উচ্চারণে অক্ষমতা? তাহলে আজই কিনুন, ম্যারী গডুফিল রচিত বিখ্যাত উপন্যাস “দ্যা রবিনসন ক্রুশো” এই উপন্যাসে লেখক শুধুমাত্র এমন সব ওয়ার্ডই ইউজ যেগুলো একবারমাত্র সিলেবল করেই পড়া যায়।
• “দ্যা গেটস অফ প্যারাডাস” নামটা পরিচিত লাগছে নিশ্চয়? এই সমগ্র বইটা কয়টা বাক্যের হতে পারে বলুন তো?
ভাবছেন কয়েকশ হবে? মোটেও না। এটি কেবল মাত্র দুইটি বাক্যে লিখা একটা বই। এক মধ্যে একটা বাক্য ইয়া বিশাল (লেখকের মনে হয় ফুলস্টপ দিতে আনইজি লাগতো, কি বলেন?)
আর এসব বাদ দিলেও অবাক বিস্ময়ের আধার হচ্ছে আল-কুরআন। এখানে নারী পুরুষ, শব্দ দুইটি এসেছে ২৩ বার করে। আজ আপনি জানেন আমাদের দেহে ক্রোমোসোম আছে ২৩ জোড়া। পৃথিবীর কেন্দ্রে থাকা লোহার প্রতিনিধিত্ব করছে কুরআনের কেন্দীয় সূরাটি। এটুকু বলে শেষ হবে না। কুরআনিক বিস্ময় নিয়ে আবার লিখার ইচ্ছা রইলো।
লিখাটা কেমন লাগলো জানাবেন
ব্লগঃএকুশ
লেখকঃতুষার
©somewhere in net ltd.