নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তোফায়েল অাহমেদ

তোফায়েল অাহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

থ্রিলার

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩২

ধারাবাহিক থ্রিলার
অন্য জগত
লেখকঃতোফায়েল আহমেদ
চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। নিজের শরীরটা পর্যন্তভালভাবে দেখা যায় না। কোন মানুষতো দূরের কথা পশু পাখিরও সাড়া শব্দ নেই আশেপাশে। আড়চোখে একবার ঘড়ির দিকে তাকাল শরীফ। ঘুটঘুটে অন্ধকারে কিছুই দেখা গেল না। ঘড়ির লাইট জ্বালিয়ে সময় দেখার কোন প্রয়োজন মনে করল না সে। মনে মনে অনুমান করে নিল বারোটার মত বাজে। শহরের মানুষের জন্য বারোটা কোন রাতইনা। কিন্তু গ্রামে ব্যাপারটা ভিন্ন। রাত আটটা নয়টায়ই সবাই ঘুমিয়ে যায়। তার উপর শীতের রাত হলেতো কথাই নেই। তাই শরীফ এই জায়গাটিকেই তার কাজের জন্য বেছে নিয়েছে। শহরে হলে নানা সমস্যা পোহাতে হত। কিন্তু এখানে কোন সমস্যা নেই। শুধু একটা নদীর দরকার ছিল। তাও খুব সহজেই পাওয়া গেল। গ্রামের একেবারে দক্ষিন দিকে। এদিকটাতে ঘন জঙ্গল থাকায় দিনের বেলায়ও তেমন কেউ আসে না। কাজ সারার জন্য একেবারে আদর্শ জায়গা।
আজ মনে হচ্ছে ভাগ্যটা খুব ভাল। সহজেই শিকারকে পাওয়া গেল। তার উপর ঘুটঘুটে অন্ধকার। কোন ঝামেলা না হলে ১৫-২০ মিনিটেই কাজ শেষ হয়ে যাবার কথা। তারপর খেয়েদেয়ে লম্বা ঘুম। কাল সারাদিন কোথাও যেতে হবে না। কাল সারাদিনও ঘুমানো যাবে।
শরীফের সামনে যে ছোটখাট গড়নের লোকটা হেটে যাচ্ছে তাকে বেশি সুবিধার মনে হচ্ছে না। যদিও এখনও পর্যন্ত উল্টাপাল্টা কিছুই করে নি। তার নির্দেশ মতই চলছে। একটা কথাও বলেনি। কিন্তু শরিফের মনে কেমন যেন খচখচ করছে। অন্ধকারে লোকটার চেহারা দেখা যাচ্ছে না। শরিফ তার পাজরে একটা এমজি 42 ধরে রেখেছে। হালকা কিন্তু অসম্ভব শক্তিশালী একটা অস্ত্র। তার নিত্যদিনের সঙ্গী। বলা যায় বিপদের প্রকৃত বন্ধু। গত দুইবছর ধরে এটা সবসময় তার সাথে থাকে। এই লাইনের হাতে গোনা কয়েকজনের কাছেই এরকম অস্ত্র আছে যার মধ্য শরীফ একজন। অন্যরা যেখানে ১৫ বছর কাজ করেও পাত্তা পায়না শরীফ সেখানে মাত্র দুইবছর কাজ করেই অসাধ্য সাধন করে দিয়েছে। দেশের কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের মধ্য উপরের সারিতে তার অবস্থান। পত্র-পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলগুলোতে তাকে নিয়ে অনেক কথা হয়। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল তাকে কেউই চিনে না। অথচ সে স্বাভাবিকভাবেই সমাজের সবার সাথে চলাফেরা করে। গত দুইবছরে অন্তত দশবার শরীফের গ্রেফতারের খবর বেরিয়েছে। কিন্তু সবগুলোই ভূয়া বলে প্রমানিত হয়েছে। পুলিশরা তাকে চিনবে দূরের কথা মাঝে মাঝে তার সাথের লোকজনই তাকে চিনতে ভূল করে ফেলে।
লোকটা কিছু করছে না দেখে শরীফের মনে একটু খটকা লাগল। কিছু করার মত অবস্থায়ও নেই সে। মুখে একটা ডাক্ট টেপ লাগানো আর হাত দুটো পেছনে শক্ত করে বাধা। যদিও শরীফ জানে লোকটা তার কিছুই করতে পারবে না তবুও সে কোন ঝুকি নেয় নি। সে জানে এই জগতে একটু অন্যমনষ্ক হলেই শেষ। সে সুযোগ শরীফ কাউকেই দেয় নি। এই কারনেই সে আজ সবার শীর্ষে যাকে বলে টপ। মন্ত্রী থেকে শুরু করে সাধারন মানুষ সবার সাথেই তার চলাচল। কিন্তু কেউ ঘুনাক্ষরেও তাকে সন্দেহ করে নি কোনদিন।
ভাবতে ভাবতে কখন যে তারা নদীটার কাছাকাছি চলে আসল তা শরীফ বুঝতেই পারেনি। এমন অন্যমনষ্ক সে কখনোই হয় নি। আজ কেন এমন হল বুঝতে পারছে না সে। মন থেকে সবকিছু ঝড়ে ফেলে প্রথমে সেই বলে উঠলঃ
'আর একটু সামনে গিয়ে নদীর ধারে দাড়ান।'
লোকটি কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু মুখে টেপ লাগানোয় বলতে পারছে না। শরীফ একটু সামনে সরে গিয়ে লোকটার মুখের টেপটা খুলে দিল। ভেবেছিল একটা তীব্র চীৎকার দিয়ে উঠবে সে। কিন্তু কিছুই করল না।
কিছুক্ষন পর শান্ত কিন্তু অশরিরী কন্ঠে লোকটি জিজ্ঞাসা করলঃ
'আমাকে কেন মেরে ফেলবে তুমি।'
তার কন্ঠের মধ্যে এমন একটা কিছু ছিল যার কারনে শরীফ কিছু বলতে পারল না সহসা। একটু চুপ থাকার পর সে বললঃ
'আপনাকে যা বলেছি তা করেন। নাড়াচাড়া করার চেষ্টা করলে কাজটা আপনার জন্যও কঠিন হবে আমার জন্যও কঠিন হবে।'
'কিন্তু তার আগে আমি জানতে চাই কেন আমাকে মেরে ফেলা হচ্ছে।'
শরীফ মনে মনে খুব বিরক্ত হচ্ছে। টেপটা খুলে দেওয়াই ভূল হয়েছে। আর দেরি করা ঠিক হবে না। আস্তে আস্তে পকেটে হাত ঢুকাল সে। সেখানে একটা কেভি 39 পড়ে আছে। খুব প্রয়োজন না হলে সে এটা ব্যাবহার করে না। কিন্তু তার খুব পছন্দের। এটাই আজ সে ব্যবহার করবে। ট্রিগারে হাত দেওয়ার সাথে সাথেই একটা হালকা বেগুনি রঙ্গের আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। এই আলোতে প্রথম সে লোকটার চেহারাটা দেখল। হালকা পাতলা গড়নের চল্লিশ পয়তাল্লিশ বছরের একজন লোক। স্পষ্ট না দেখা গেলেও মুখে একটা ভয়ের ছাপ। তা প্রানপনে ঢেকে রাখার চেষ্টা করছে লোকটি। শিকারীর মত তীক্ষ্মচোখে তাকিঢে আছে আলোর উৎসটার দিকে। জীবনে অনেক মানুষ মেরেছে সে কিন্তু এমন শক্ত মনের মানুষ খুব কমই দেখেছে। সবাই অস্ত্র দেখলেই হাউমাউ শুরু করে দেয়। কিন্তু সে এসব পাত্তা দেয়না। তাদের মৃত্যুটা হয় বেশি যন্ত্রনাদায়ক। এই লোকটাকে এত যন্ত্রনা দিতে ইচ্ছে করছেনা। কেমন যেন মায়া লাগছে। মায়া! হঠাৎ শরীফের চোখটা ধ্বক করে উঠল। এই জগতে মায়া বলে কোন শব্দ নেই। তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোকটাই তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল একদিন। বিশাল ফাদটা শরীফ তার সুক্ষ্ম বুদ্ধি দিয়ে কেটে এসেছিল। শরীফ তাকে মেরে ফেলেনি। অর্ধ্বমৃত অবস্থায় রেখে দিয়েছে মৃত্যুর যন্ত্রনা দিয়ে। দেখে যাক সে তার মত লোককে মেরে ফেলার চেষ্টা করা কতটুকু ভয়ঙ্কর কাজ।
কিন্তু এসব কি ভাবছে সে। ট্রিগারে হাত রেখে কতক্ষন দাড়িয়ে আছে খেয়াল নেই। হাত থেকে আবার কেভি 39 টা পকেটে রেখে এমজি 42 টা হাতে তুলে নিল। আশে পাশে কেউ নেই জেনেও পকেট থেকে সাইলেন্সারটা কের করে মাথায় লাগিয়ে নিল। কিন্তু এর মধ্যেই সে জীবনের বড় একটা ভূল করে ফেলল।
(চলবে)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪২

ডাঃ মারজান বলেছেন: থ্রিলার। ভালো লাগছে। টান টান উত্তেজনা। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। অনেক শুভেচ্ছা।

২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৫

তোফায়েল অাহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ আশা করি শীঘ্রই পোষ্ট করতে পারব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.