![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দাহ না কবর, লাশ নিয়ে ‘লড়াই’
প্রকাশ বিশ্বাস, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 2014-07-04 11:32:22.0 BdST Updated: 2014-07-04 11:46:22.0 BdST
বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে পড়ে আছে এক ব্যক্তির লাশ, যাকে হিন্দু নাকি মুসলিম ধর্মমতে সমাহিত করা হবে তা নিয়ে রীতিমতো ‘লড়াইয়ে’ নেমেছেন কথিত দুই স্ত্রী।
কোনো স্ত্রীই নয়, চন্দনের লাশ পেলো ঢামেক
একজন বলছেন, নিহত ব্যক্তি ‘খোকন নন্দী’। তার সঙ্গে ৫২ বছরের সংসার তার। আর অপরজন বলছেন, ৩০ বছর আগে হিন্দু ধর্মত্যাগ করে ইসলাম ধর্মমতে বিয়ে করেছেন তারা। নাম ‘রাজীব চৌধুরী’।
শেষ পর্যন্ত লাশের মালিকানার বিষয়টি গড়িয়েছে আদালতে। ১০ জুলাই বিষয়টির সুরাহায় দিন রেখেছেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম নূরু মিয়া ।
গত ২৬ জুন মৃত্যুর পর থেকেই ‘খোকন নন্দী’ বা ‘রাজীব চৌধুী’ লাশ পড়ে আছে এই হিমঘরে।
মারা যাওয়ার পর পরই মৃত ব্যক্তিকে নিজের স্বামী দাবি করেন ঢাকার একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক হাবিবা আক্তার খানম বাবলি। অবশ্য মৃত ব্যক্তির চিকিৎসা সংক্রান্ত সব ব্যয় বহন করেছেন মীরা নন্দী নামে অপর এক নারী, যিনিও লাশের দাবিদার।
এ নিয়ে হাসপাতালে মীরা নন্দী ও বাবলির মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।
কথিত দুই স্ত্রীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বারডেম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিরুপায় হয়ে থানার শরণাপণ্ন হয়েছেন, করেছেন জিডি। আর বিষয়টি তদন্তের জন্য বুধবার আদালতে অনুমতি চেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ।
গত বছরের জুলাই মাসেও প্রায় একই রকম একটি ঘটনায় আদালত এক কলেজ শিক্ষকের লাশ লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষর্থীদের কাজে ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিল।
কথিত মুসলিম স্ত্রী হাবিবা আক্তার খানম বাবলি আদালতে বলেন, “খোকন নন্দী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সমাজে রাজীব চৌধুরী নামে পরিচিত হন। উনি আমার স্বামী। উনি হিন্দু না, মুসলমান।”
আদালতকে তিনি জানান, মৃত ব্যক্তির পুরো নাম খোকা চৌধুরী ওরফে রাজীব চৌধুরী। ১৯৮০ সালের ২ এপ্রিল ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হলফনামার মাধ্যমে তার পূর্ব হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইসলাম ধর্মের যাবতীয় নিয়ম-কানুন পালন করে গেছেন।
“১৯৮৪ সালের ১৫ জুলাই আমাকে বিবাহ করেন। মুসলিম স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মৃত্যুর আগে প্রায় ১৮ বছর রাজধানীর ৩৩১ উত্তর শাহজাহানপুরের বাসায় দাম্পত্য জীবন কাটিয়েছি।”
“আমার জীবন যতক্ষণ আছে আমি তার লাশ পোড়াতে দেব না।”
তার আইনজীবী আবু বকর সিদ্দিক আদালতকে বলেন, “সে হিসাবে উনার লাশ বাবলিই পাবেন। বাবলি তাকে কবর দেবেন। ত্রিশ বছর আগে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেই ইসলাম ধর্মমতে বাবলিকে বিয়ে করেন রাজীব চৌধুরী।”
অপরদিকে মীরা নন্দীও কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, “উনি রাজীব চৌধুরী না। খোকন নন্দি। আমার স্বামী। উনি হিন্দু। মুসলমান না। বায়ান্ন বছর তার সঙ্গে সংসার করেছি। সনাতন হিন্দু মতে জীবনযাপন করতেন তিনি। হিন্দু মতে আমি তাকে সমাহিত করব।”
এদিকে আদালতের কাছে জমা দেয়া নথিপত্র পর্যালোচনা করে জানা গেছে, ১৫ জুন ‘খোকন’ কিংবা ‘রাজীব’ অুসস্থ হয়ে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন। ১১ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৬ জুন সকালে মারা যান তিনি।
তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে বলেন, মৃত ব্যক্তি একজন মুসলমান। তারা শাহজাহানপুরে বসবাস করত। বাবলি আদালতে রাজীব চৌধুরী মুসলিম ধর্মগ্রহণ ও বিয়ের সব কাগজপত্র আদালতের কাছে জমা দিয়েছেন।
বাবলির কাগজপত্রে দেখা গেছে, গত বছরের ২৩ অক্টোবর স্বামী-স্ত্রী হিসেবেই তারা ভারত ভ্রমণ করেছেন। সেখানে বাবলির স্বামীর নাম হিসাবে খোকন উল্লেখ করা হয়েছে।
অপরদিকে মীরা নন্দী আদালতে বলেন, “আমার স্বামীর পুরো নাম রণজিৎ নন্দি ওরফে খোকন নন্দী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমরা একসঙ্গে মোহাম্মদপুরের ১৫ নম্বর রায়ের বাজার এলাকায় বসবাস করতাম। ১৫ জুন অসুস্থ হলে তাকে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করি।”
মীরা নন্দীর জমা দেয়া কাজগপত্র পরীক্ষা করে দেখা গেছে, মৃত ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজেকে ‘খোকন নন্দি’ হিসাবে নাম অন্তর্ভুক্ত করিয়েছেন। ২০১২ সালের ৬ অগাস্ট একটি বায়না দলিলেও নিজেকে রণজিৎ নন্দি ওরফে খোকন নন্দি হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন।
বারডেম হাসপাতালেও তার নাম খোকন নন্দী হিসেবেই লেখা হয়েছে।
©somewhere in net ltd.