![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
'রাজপুত্তুর'-ছবির সর্বশেষ নিউজ
অামাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে
....
ছবি তো শেষ। গতসপ্তাহেই 'রাজপুত্তুর' সরকারের প্রিভিউ কমিটির গোচরীভূত। তবু একটু-অাধটু কারেকশন যেন শেষ হয় না! তো ভাস্বর দা'র ডাবিং কিছু বাকি ছিল, সেটা অাজ ১৬ মার্চ বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত করেছি সজীবের দরবারে। তানভীর অালম সজীব 'রাজপুত্তুর; এর সঙ্গীত ও শব্দ করছেন। পুনরায় বিকাল ৫টা থেকে ডাবিং শুরু। অমলের চরিত্রে ইলি, 'রাজপুত্তুর' মুগ্ধ', পুপেদি তাপসী, 'বীরপুরুষ'এর মা মানহা, অকালে জ্বরে মরে যাওয়া বালক ধীরুরুপী পার্থিব,বড় সুকুমার বা বালক 'রাজপুত্তুর' চরিত্রের জয়তু, 'রাজপুত্তুর'এর ইন্ট্রো অংশের ডিরেক্টরচরিত্রে বর্ষা এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর চরিত্রে শরৎ এবং দইওয়ালা চরিত্রের অসীম গোসাই--এদের ডাবিংয়ের সংশোধন-গ্রহণ চলল সজীবের স্টুডিওতে। রাত ১০টা বেজে গেল। অসীম গোসাই (ঝিনেদার মানুষ) অাজও সাভার থেকে দেরি করে অাসায় অামি খুব রাগ করেছি, এটা তখন, নিশ্চয়ই একটা কাজের নেশায়। অাসলে এটাই হয়তো ট্রু, সুস্থ্য মানুষ সিনেমা বানাতে পারে না কিম্বা সুস্থ্য মানুষ সিনেমা বানাতে বসলে সে অসুস্থ্য হয়ে যায়, যাবে। অসীম, তোমার কাছে ভাই প্রিমিয়ার শো'এর দিন মাফ চেয়ে নেব। মাফ চাইতে হবে অারো কতজনের কাছে, যারা অামার অত্যাচার, কাজের মধ্যে ডুবুরি অবস্থায় রেগে গিয়ে বলা কটুকথা সহ্য করে নিচ্ছেন। অামার ভাগ্নি বর্ষা থেকে শুরু করে অামি কার সঙ্গেই না খারাপ ব্যবহার করেছি! হয়তো এ ক্রিয়েশনের এক মর্মর যাতনা। হয়তো মাতৃত্বকালে মা'এর ভেতরেও ঢুকে পড়ে একধরনের অাপাত রুক্ষতা, তবে তা যে বড় সাময়িক। সৃজন চিন্তা প্রণীত হয়ে নেমে গেলে হয়তো সেই রুক্ষতার অবসান থাকতে পারে। যাই হোক, 'রাজপুত্তুর' ছবির ছোটছোট ছেলেমেয়েদের অভিভাবকদের প্রতি অামার কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই। ছবিটার নির্মাতা হিসেবে অামার নামেই ভালোমন্দের দায়ভার নিয়ে প্রদর্শিত হবে বটে, কিন্তু অামি জানি, মুগ্ধ'র বাবা-মা, তাপসীর বাবা-মা কী সাপোর্ট দিয়ে অাসছেন অামাকে। অাজও এলেন তারা। এলেন পার্থিবের বাবা, মানহার মা, ইলির মা-বাবা, এসেছেন ঋভু রোদ্দুরের বাবা-মা, জয়েৎ কল্যাণের মা ও নানী, প্রপার বাবা-মা, স্বপ্নীলের মা, মেধার মা, রাইনার মা-বাবা, অানন্দিতার মা-বাবা, জয়তুর মা-বাবা, পুষ্প'র মা-বাবা--ছবিটা সৃষ্ট হতে তাদের অবদানই বেশি, কেননা, তারা অামার প্রতি তাদের যে সহযোগিতা, দায়িত্ব দেখিয়ে চলেছেন, সেই ঋণ শোধ করতে পারব না কোনোদিন, অামি জানি। তাদের প্রিয় সন্তানটিই তো দিনের পর দিন ছবিটার জন্যে কত কষ্ট করে যাচ্ছে অামার সঙ্গে।
তো অাজ অার কী করলাম? ভাবলাম, 'রাজপুত্তুর' এন্ড টাইটেলে যাচ্ছে মানসীর কণ্ঠে 'কান পেতে রই'। সে না হয় শোনা যাবে, দেখাও যাবে, কিন্তু ফার্স্ট টাইটেলে কী দেওয়া যায়, ব্যাকগ্রাউন্ডে? রবীন্দ্রনাথের খুব চেনা একটা কবিতাকে অামাদের লোকাল ফর্মেটে এক্কেবারে বঙ্গের হাটুরে সুরে ফেলে দেখলে কেমন হয়? কয়েকবার মনে মনে ভেজে দেখলাম, করাই যায়। সজীব গেল পার্থে, ফিরল সপ্তাহখানেক পর। অাজ 'রাজপুত্তুর' ডাবিং টিমের লিটলদের সঙ্গে সজীবের ভোকালে 'অামাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে' রেকর্ড হয়ে গেল। রেকর্ডের সময় সজীবের সে কী উত্তেজনা। ওই যে, সেই ক্রিয়েশনের নিমগ্নতা, যা প্রকাশ্যত 'সৃষ্টিশীল ক্রুরতা'ও বটে। কিন্তু তারপর, একটা সময় গিয়ে মনে হয়, এতটা অাত্মনিয়ন্ত্রণ না হারিয়েও সৃষ্টি সম্ভব, কাউকে অাঘাত না করেও তো ফুল ফোটে। অামরা তা পারি না। কেন পারি না?
এই নিয়ে চলে দ্বন্দ্ব, অাবার দ্বন্দ্বেই সৃষ্টির নেশা। কে অস্বীকার করতে পারে দ্বন্দ্ববিহীন সৃষ্টির অভিঘাত? সিনেমার যা কিছু, কিছুই তৈরি থাকে না, সবই তৈরি করে নিতে হয়। এই তৈরিতে নির্মাতার পারা-না-পারা বিবেচিত হবে, নিষ্ঠুরভাবেই। জানি। জানি বলেই, নির্মাতাকে হয়তো নির্মাণকালীন সময়ে অটোমেটিক কঠোরতার মধ্যে চলে যেতেই হয়। একটা হাসি উদ্রেককারী দৃশ্য বানাতেও নির্মাতাকে হতে হয় কঠোর-কঠিন, গম্ভীর, ক্রুদ্ধও কখনো কখনো। মাধ্যমটাই এমন। একশোজন লোককে একটা চিন্তার লাইনঅাপে ফেলে কঠোর পরিশ্রমের সঙ্গে কাজ নামানোই সিনেমা বানানো। অার কবিতা, সে বড় একলা অামার। ঘরে খিল দিয়ে লিখে গেছি। সেখানে মানুষ থাকলেই সমস্যা ছিল। কিন্তু সিনেমা? মানুষ ছাড়া এ হবেই না। মানুষ বলতে, একদল মানুষ, যারা অাসে বিভিন্ন সংসার থেকে, এসে, একটা নতুন ও সাময়িক সংসারে মনোযোগ দেওয়া অার কি। এই নতুন সংসারটাই সিনেমা।
রেজা ঘটক, হোসেইন অাতাহার, বর্ষা, হিমিকা'কে অাজকের সেশনে সংশ্লিষ্ঠ থাকবার জন্যে কৃতজ্ঞতা। কিন্তু হয়েছে কী! ভাস্বর দা'র ২টা সংলাপ কিন্তু অাজও বাদ পড়ে গেছে। দুপুরে ভাস্বর দা' কাজ শেষে বেশ কিছুক্ষণ অামার অার সজীবের সঙ্গে অাড্ডাও দিলেন, তারপর যেই চলে গেলেন, অামি সজীবকে পরে বললাম, ও সজীব, ওই টা তো ডাবিং (রেকর্ডই) হয়নি, তবে রেকর্ডের অাগে অামরা অালাপ করেছিলাম। কী দশা!!
এই লেখা ভাস্বর দা যদি পড়েন, তাইলে তো ভালোই হয়।
না পড়লে তো ফোন করাই লাগবে। উপায় তো নেই। একটা ঝোড়ো বাস্তবতার কারণে অারও বাদ পড়েছে মানহার একটা সংলাপ। মানহা হচ্ছে বীরপুরুষের মা। যদিও মানহার বয়সও অাট বছরের বেশি হবে না। ওকেও ফোন করে বলতে হবে, মানহা, তোমাকে অাবার অাধাঘণ্টার জন্যে হলেও স্টুডিওতে অাসতে হবে যে মা। কী করব?
©somewhere in net ltd.