নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি তমাল। তমাল মানে তমাল বৃক্ষ! আমি বৃক্ষের মতোই সরল, সহজ এবং মোহনিয়। পেশায় একজন পুরঃ কৌশল প্রকৌশলী। কাজ করেছি দেশের স্বনামধন্য কোন এক দপ্তরে। বর্তমানে উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানীতে অবস্থান করছি। আমি ভালবাসি মানুষ,দেশ এবং পরিবেশ। ধন্যবাদ।

মুহাম্মদ তমাল

একুশ শতকের অদৃষ্ট,সুপথের সন্ধানী তবু পথভ্রষ্ট,পূর্নতায় হৃদয় সিক্ত,রজক জয়ন্তী পূর্ন বন্দি অবশেষে মুক্ত।

মুহাম্মদ তমাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রবাস ডাইরিঃ ১ম পর্ব

০৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:০১


২১ শে নভেম্বর ২০২১
আজ জার্মানীতে আসার ২ মাস পূর্ন্য হলো।
মনে আছে সেদিনের কথা,
ভিসা পেলাম, অনেক আনন্দ হচ্ছিলো, দীর্ঘ অপেক্ষার পরে কিছু প্রাপ্তির আনন্দ, তিক্ততার পরে মুখে কিছু মিষ্টতার আনন্দ,
অনেক ত্যাগের পরে কিছু অর্জনের আনন্দ।
ভিসা প্রাপ্তির সাথে সাথে শুরু হলো কাউন্টডাউন।
ঘড়ির কাটা যেন একটু বেশী দ্রুতই ঘুরতে আরম্ভ করলো।
অনেক দ্রুত। সময় খুবই কম।
আমার ভিসা প্রাপ্তিতে সবাই ই অনেক বেশী খুশি ছিলো। পরিবার,
বন্ধুবান্ধব, আত্নীয় স্বজন সবার অজস্র শুভ কামনা আসতে থাকলো।

সবকিছুর পরে এক শূন্যতায় গ্রাস করতে থাকলো আমাকে। যে শূন্যতা, অসীম, অনন্ত, অজস্র। প্রিয় মানুষকে ছেড়ে দুরে যাবার শূন্যতা। আমার জীবনের অংশিদার, পথের সারথিকে রেখে অনেকটা দিন দুরে থাকার শূন্যতা। একটা গাল চাওড়া হাসির সাথে লম্বা এক দীর্ঘশ্বাস। তারপর নিজে নিজেকে স্বান্তনা দেই, কিছু করার নেই তমাল, এটাই হবার ছিলো।
সামনে এগিয়ে যেতে হবে, চলতে হবে,
পুরো পৃথিবীটাকে বলতে হবে।

বাংলাদেশে কাটানো শেষদিন গুলো কিভাবে চলে গেলো বুঝতেই পারিনি। এটা সেটা কেনা, সবকিছু গোছগাছ করা, চাকরি থেকে ইস্তফা দেয়া, বাসার মালামালের একটা ব্যবস্থা করা, আত্নীয় স্বজন সবার সাথে দেখা করা, এই রকতে করতে সময় চলে গেছে।
অনেককিছুই করার ছিলো, বলার ছিলো, দেখার ছিলো, কিছুই হয়নি। অনেককিছু খেতে মন চাইলেও গলা দিয়ে খাবার নামতো না, ওর পাশাপাশি থাকতে চাইতাম,
বুঝতে পারছিলাম সময়গুলো কতটা দামী।
বাড়ি থেকে চলে এলাম, শেষবারের মতো মা'র কবর জিয়ারত করে। মা'কে বললাম মা আমি আসি। আপনার ছেলেকে দোয়া করে দেন। খুব দ্রুতই ফিরে আসবো মা।
আব্বাকে বললাম, আপনার ছেলে আপনার মুখ উজ্বল করতে যাচ্ছে, নিজের যত্ন নিয়েন আব্বা.......

২০শে সেপ্টেম্বর,২০২১
৩২৬, শেওড়াপাড়া, আমাদের ঠিকানার শেষদিন।
গুড়িগুড়ি বৃষ্টি ছিলো সেদিন। প্যাচপেচে কাঁদা রাস্তায়।
ঐদিনও আমার ব্যস্ততা কমে না।সবকিছু গোছানো, এতদিনের সবকিছুর ইতিটা বড়ই কঠিন কাজ। থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর স্লিপার পরে কাঁদার সাথে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিলাম। কাঁদা মাড়াচ্ছিলাম আর বলছিলাম,
প্রিয় শেওড়াপড়া,
আমি তোমাকে মিস করবো।
শেষদিনের ব্যস্ততা।
অনেককিছু প্রিন্ট দেয়া, আমাদের নতুন সংসারের একটু একটু করে অনেক কষ্ট করে বানানো মালামাল নামমাত্র মূল্যে মানুষকে দিয়ে দিলাম। আমাদের ফার্নিচার গুলো মানুষ নিয়ে যাচ্ছিলো আর আমার স্ত্রীর চোখ ছ্বলছ্বল করছিলো। আমি ওকে স্বান্তনা দিচ্ছিলাম, ইনশাল্লাহ আমাদের নতুন ঠিকানা ফ্রাঙ্কফুর্ট, তোমার জন্য আমি আবার সবকিছু বানিয়ে রাখবো। চলে এসো।

বাসা থেকে এয়ারপোর্ট যেতে ১ ঘন্টা লেগেছিলো, ওর হাতটা এক মূহূর্তের জন্য ছাড়িনি, মনেহচ্ছিলো সেদিন কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পৌছে গেলাম এয়ারপোর্টে। আমি ওর চোখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। এত ভয়ংকর রকমের খারাপ অনুভূতি আমার কখনোই হয়নি। মনেহচ্ছিলো আমার কলিজাটা কেটে রেখে দেয়া হচ্ছিলো। আমার স্ত্রী, ভাই, শাড়ুড়ি আম্মা কাঁন্নাকাটি করছিলো এয়ারপোর্টের গেটে, কে কাকে স্বান্তনা দিবে। আমিই দিলাম সবাইকে। আমি বললাম, ইনশাল্লাহ দ্রুতই ফিরে আসবো।
তারপর চলে আসার সেই করুন মূহূর্ত।

আমার নববিবাহিতা প্রিয়তমা স্ত্রীকে ছেড়ে TK723 বিমানে করে শঙ্কা, আশঙ্কা, একরাশ হতাশা, দুঃখ বুকে চেপে উড়াল দিলাম গন্তব্য স্বপ্নের রাজ্য। কি অদ্ভুত অনুভূতি। আমার স্বপ্ন গুলো উড়ছে, উড়ে চলেছি আমার এতগুলো বছর ধরে লালিত স্বপ্নের খোজে।

২১ সেপ্টেম্বর ২০২১,
ফ্রাঙ্কফুর্ট এয়ারপোর্টে নামলাম, ২ নম্বর গেট দিয়ে বের হয়ে মনেহচ্ছিলো সিনেমার পর্দার মাঝে ঢুকে গেছি।
সবকিছু চকচকে ঝকঝকে, রঙিন।
শেওড়াপাড়ার কাঁদা তখনও আমার জুতায় লেগে আছে।
তারপর থেকে এইতো চলছে জীবনে।
এই কয়দিন জীবনের বহু দামী দামী অভিজ্ঞতা হয়েছে।
একটা শিশু যেভাবে শেখে, প্রতিদিনই শিখছি, সবকিছুই নতুন।
পা ফেলতে গেলে সেটাও বুঝেশুঝে পা ফেলতে হয়।
জার্মানীতে এসে প্রথমদিন গুলোর অভিজ্ঞতা অন্য কোন একদিন লিখবো।

সবমিলিয়ে ভাল আছি। মানুষ তার স্বপ্নের চেয়েও বড়।
জীবনে কে, কখন, কোথায় যাবে, কেউ জানেনা,
জীবনে এত ভালকিছু পাবো কখনই ভাবিনি। আলহামদুলিল্লাহ।
অসম্ভব বলে কোন শব্দ নেই, সব সম্ভব। নিশ্চিয়ই আল্লাহ সুবহানাতায়ালা উত্তম পরিকল্পনাকারি।

বেঁচে আছি ভালবাসায়,
পূর্নতায়, শূর্ন্যতায়, আট হাজার কিলোমিটার পথের যাত্রায়।
আমার জন্য দোয়া করবেন।
ইনশাল্লাহ খুব দ্রুতই দেখা হবে।

---মোহাম্মাদ তমাল,
২১.১১.২০২১, ফ্রাঙ্কফুর্ট, জার্মানী

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৫০

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: যাত্রা শুভ হোক।

০৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:২৮

মুহাম্মদ তমাল বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

২| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:১১

খায়রুল আহসান বলেছেন: লেখাটা খুবই হৃদয়স্পর্শী হয়েছে। খুব ভালো লেগেছে। + +
আ্মাদেরই একজন সহব্লগার, রিম সাবরিনা জাহান সরকার, উচ্চতর শিক্ষা সমাপনান্তে এখন জার্মানীতে সপরিবারে অবস্থান করছেন। সামুতে তার অনেক পোস্ট রয়েছে, কয়েকটা পড়ে দেখতে পারেন। কোন কাজে লাগলেও লাগতে পারে। এ ছাড়া ওনার সাথে যোগাযোগ করে কানেক্টেড থাকতে পারেন। বিদেশ বিভূঁই এ কে কখন কার কাজে আসবে, কেউ জানে না। একটা পরিচিতির বলয়ে থাকা ভালো।

০৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:২৯

মুহাম্মদ তমাল বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয়মুখ, গুরুজন। জ্বি, আপনি ঠিকই বলছেন। আমি চেষ্টা করবো ওনার সাথে যুক্ত হতে।

৩| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ২:১৪

নেওয়াজ আলি বলেছেন: শুভ কামনা রইল নিরন্তর ।

০৯ ই জানুয়ারি, ২০২২ ভোর ৪:৫২

মুহাম্মদ তমাল বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন সবসময়।

৪| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ২:১৮

সোবুজ বলেছেন: সবকিছু হয়েছে আপনার যোগ্যতা ও পরিশ্রমে।পড়াশুনা না চাকরি।ভাষা কেমন লাগছে।

০৯ ই জানুয়ারি, ২০২২ ভোর ৪:৫৩

মুহাম্মদ তমাল বলেছেন: পড়াশোনা করতে এসেছি। ভাষা চলতে ফিরতে যতটুকু দরকার, সেটা জানি। ধন্যবাদ।

৫| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৩:৪২

চাঙ্কু বলেছেন: ব্লগের শুরুর দিকে বেশ কয়েকজন নামকরা ব্লগার জার্মানীতে থাকতেন। আপনার লেখা পড়ে তাদের কথা মনে পড়ে গেল। শুভকামনা রইল!

০৯ ই জানুয়ারি, ২০২২ ভোর ৪:৫৪

মুহাম্মদ তমাল বলেছেন: ধন্যবাদ।

৬| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:২৩

জগতারন বলেছেন:
প্রিয় ব্লগার মুহাম্মদ তমাল আজকে আপনার লিখাএই ব্লগটি খুবই হৃদয় স্পর্সী।
আপনার এই লিখাটি পড়ে স্পষ্টই বুঝা যায় আপনি একজন হৃয়বান, আবেগী, স্ত্রী'র প্রতি গভীর
ভালময় একটি মান আপনার অন্তরে বাস করে। আপনার লিখাটি পড়ে আমার খুব ভাল লাগলো।
আমিও আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে বিদেশে এসেছিলাম পড়তে, মনে হলো সেই সময়ে
এ যেন আমারই মনের কথা কিন্তু আমি আপনার মতো এমন চিন্তাশিল মন নিয়ে এমন করে
লিখে কাঊকে জানাতে পারি নি।

আপনি খুবই সুন্দর একটি দেশে গিয়েছেন পড়াশুনা করতে। ঐ দেশে পড়াশুনা প্রায় ফ্রি।
শুধু লাগে ছাত্র স্টাতাসটি বজায় রাখা। বিশ্বাস রাখি তা আপনি পারবেন।
আপনার প্রতি আমার প্রান ঢালা সুভেচ্ছা রহিল। আপনার লক্ষ বাস্তবায়ন হকো প্রার্থনা করি।
সম্ভব হলে যথাসম্ভম তারাতার স্ত্রী'কে কাছে নিয়ে যাবেন। স্ত্রী'র মতো এমন আপন জন একালে আর কেহ নেই।
সে আপনার কাছে থাকলে সকল উদ্দোগে প্রচুর উৎসাহ ও প্রেরনা পাবেন।

০৯ ই জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৪৬

মুহাম্মদ তমাল বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় গুরুজন। সবসময়ই অনেক ভাল থাকুন।

৭| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:১৩

জুল ভার্ন বলেছেন: খুব সুন্দর আর টাচি লেখা!

জার্মানি আমার স্বপ্নের দেশ।২০০৬, ২০০৮ পর ২০০৯ সনে শেষ বার জার্মানি গিয়েছি। যা নিয়ে এই ব্লগে লিখেছিলাম.....

আপনার জন্য শুভ কামনা।

লেখায় প্লাস।

১০ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৩:৫৮

মুহাম্মদ তমাল বলেছেন: ধন্যবাদ। জেনে ভাল লাগলো। ভাল থাকুন। শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.