নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একুশ শতকের অদৃষ্ট,সুপথের সন্ধানী তবু পথভ্রষ্ট,পূর্নতায় হৃদয় সিক্ত,রজক জয়ন্তী পূর্ন বন্দি অবশেষে মুক্ত।
বিষাদের রং ছুঁয়েছে আসমান জমিন, উত্তর দক্ষিণ, সবখানে।
মাইন নদীর স্বচ্ছ পানিতে যে দ্রোহ আছে, সেই ঢেউ পৌঁছে যাক আমার কুমার নদের তীরে গিয়ে। অনুভূতিগুলোর কোনো ভিসা, কাগজ, আফেনতাল, ফিকশন কিংবা ডুলডুং লাগে না। অনুভূতিগুলো পৌঁছে যাক, ব্রুনেকার স্ট্রাসে থেকে ইকবাল রোড, ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে টেংরাখোলা গ্রামে।
কনস্টান্সের স্বচ্ছ লেকের পানিতে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে মনে পড়েছে, আমি তো আটাডাঙার বাওড়ের পাড়ের মানুষ, রাইন নদীর তীরে অসংখ্য ক্যাসেল আমাকে মনে করায় মহারাজপুরের সিঁধলেবটা জমিদার বাড়িগুলোর কথা।
প্রতিনিয়ত অস্তিত্বের সাথে লড়াই করি, চাইলেই নিজের ডিএনএ, রক্তকণা, পরিচয় মুছে ফেলা সম্ভব না, শিরায় শিরায় প্রবাহ সেই অনুভূতির গল্প, স্মৃতি, দৃশ্যপট। কতগুলো দেশ ঘুরেছি, কত জায়গা, কারুকার্য, স্থাপনা, কত মানুষ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছি,
তবে সুখ, শান্তি শুধু ঐ টেংরাখোলা গ্রামেই।
সেই খাল বিল, পানি, নদীর বাতাস, নৌকা, মাছ, চেনা সব মুখ, প্রিয় সব জায়গার মুখের মাঝখানে এক বিরাট জায়গা দখল করে আছে, সেখানে চাইলেই আর কিছু ঠাঁই দিতে পারি না।
জিওসাইন্সের কঠিন সব থিওরি, থার্মোডায়নামিক্স, আর জিও কেমিস্ট্রির যে সব ফ্লোচার্ট, সব মুখস্থ করেছি, পরীক্ষার হলে গিয়ে হুবহু উগরে তৃপ্তি পেয়েছি, ভালো সিজিপিএ নিয়ে পরিতৃপ্তির ঢেকুর তুলে নিজেরে প্রশ্ন করছি, আসলেই এগুলো আমার জন্য? আমি তো চাইছিলাম কবি হতে, ঝাকড়া চুল, ঢোলা টিশার্ট, মোটা চশমা, ক্ষুধার্ত পেট—সেসবই আমাকে বেশি মজা দিতো।
সেইসব দিনগুলো আমাকে ডাকে, যখন টাকা পয়সা ছিল না, থিওরি অব স্ট্রাকচার, প্রিস্ট্রেসড কনক্রিট, জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে যখন মাথা হ্যাং হয়ে থাকতো, তখন কবিতা পড়তাম, নষ্ট কবি মারজুকের কবিতা, লতিফুল শিবলি, হেলাল হাফিজ, জাহিদ জগতের কবিতা। রবীন্দ্র সরোবরের পঁচা পানির ভেতরেও সাহিত্যের ঘ্রাণ পেতাম। ঘুমাতাম সাহিত্যের বই নিয়ে, পরীক্ষার আগের দিন রাতেও। অদ্ভুত সেই জীবন।
কেমন করে কেমন করে কবি থেকে এক রোবট হয়ে গেলাম। যে রোবটের কবির জন্য মায়া লাগে—মায়া শেওড়াপাড়ার কাদামাটি, রিকশার ক্রিংক্রিং, নাজিমউদ্দীন রোডের মামুনের বিরিয়ানির জন্য।
কেমন করে সময় বদলে যায়, খুব বেশি দিন আগের কথা না, কদিনের মাঝখানে নিজেরে নিজের কাছেই হারিয়ে ফেলেছি।
রাতে যখন ঘুমাই, বিদ্যুতের চমকের মতো পুরোনো সব কথা মনে পড়ে। মনে হয়, পিঁপড়ার ঝাঁকের মতো স্মৃতিগুলো সারিবদ্ধভাবে ছুটে চলে, ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে টেংরাখোলা গ্রামের দিকে।
বিশ্বাস করেন, বুকে হাত দিয়ে বলছি,
কোথাও সুখ নেই, কোথাও।
সুখ শুধুই টেংরাখোলা গ্রামে।
--মুহাম্মদ তমাল
১৫ই জানুয়ারি, ফ্রাঙ্কফুর্ট।
২| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৫:৪৫
জনারণ্যে একজন বলেছেন: বড্ড ভালো লিখেছেন, তমাল।
বিষাদের রং আমার আকাশও ছুঁয়ে থাকে। একটু ভালথাকার সুখ খুঁজতে যেয়ে যা হারিয়েছি, আমৃত্যু তা আর পূরণ হওয়ার নয়। এখানে আসার আগে আকুলক্রন্দনরতা মা কে কথা দিয়েছিলাম - পড়াশুনা শেষ করেই ফিরবো। হলো না। এখন আর কোনো বন্ধন নেই, ফিরবো না আর কখনোই।
মস্তিষ্কে সযত্নে রেখে দেয়া স্মৃতি থেকে দেশের সেই ধুলো-বালি-গাছ-পালা-ধোয়াঁ'র গন্ধ খুঁজি এখানে প্রতিনিয়ত , পাই না। ছোট্ট ছোট্ট সব স্মৃতি - আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে যাচ্ছে তাও। একদিন পুরোপুরি মুছে যাবে, সেদিনই হয়তো একটু ভালো থাকতে পারবো।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৫:০৪
ফিনিক্স! বলেছেন: সেই মেঠোপথ, বৃষ্টির সোঁদা মাটির গন্ধও, পাখির কলরব। প্রতিনিয়ত ছুটে চলে যাওয়ার আকুতি আমাকেও ভর করে।