নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুরে খোদা টরিক

মঞ্জুরে খোদা টরিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্বি-দলীয় ধারার বাইরে কেন তৃতীয় বিকল্পের তিন ধারা

১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২৯

ড. মঞ্জুরে খোদা টরিক
বাংলাদেশে দ্বি-দলীয় রাজনৈতিক ধারার বাইরে একটি তৃতীয় বা বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা দীর্ঘদিনের এবং এই আকাঙ্খা ও বাস্তবতা দিন দিন অধিক অনিবার্য হচ্ছে। কিন্তু সেই অনিবার্যতা বাংলাদেশের নানা রাজনৈতিক কারণ ও বাস্তবতায় জায়গা করতে পারেনি বা ব্যর্থ হয়েছে। যার সীমাহীন মূল্য এখন জাতিকে সবদিক থেকে দিতে হচ্ছে। সামরিক বাহিনীর রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল ও রক্ষার খেলায় রাজনৈতিক দলের ভাঙ্গন, নেতৃত্বের বেঈমানী ও দল বদল রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির আকাঙ্খাকে মানুষ তাদের আস্থায় নিতে পারেনি বা নিতে পারছে না। অপরাজনীতির এই দীর্ঘ ধারা এতটাই অসুস্থ ও কন্টকিত করা হয়েছে যে এই ধরণের উদ্যোগ অগ্রসর করা কোন ভাবেই সহজ ছিলনা, এখনও নেই। কিন্তু বর্তমান নীতিহীন, পরিবার ও ক্ষমতাকেন্দ্রীক রাজনীতির দ্বি-দলীয় ধারাই কি বাংলাদেশের রাজনীতির শেষ কথা? এখনই সময় এই প্রশ্নের আত্মঅনুসন্ধান করা।

এই দুঃসময়ে, নৈরাজ্যেও এই আকাঙ্খা পুরণের তাগিদ ও দায় থেকে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বাম, মধ্যবাম ও ডানপন্থী রাজনৈতিক দল ও কিছু মানুষ ইতিহাস অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে নীতিনিষ্ঠ অবস্থা থেকে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। কিন্তু এই দলগুলো আবার ৩ টি ধারায় বিভক্ত এবং এদের সবারই প্রধান বক্তব্য প্রচলিত দ্বি-দলীয় ধারার বাইরে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ বা তৃতীয় বিকল্প গড়ে তোলা। আর এ ক্ষেত্রে ৩ টি আলাদা আলাদা ছোট জোট ১. সিপিবি-বাসদ, ২. গণফোরাম-বিকল্প ধারা-জনতা লীগ-জাসদ-নাগরিক ঐক্য এবং ৩. গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার নেতৃত্বে ক্রীয়াশীল। অরাজনৈতিক প্রক্রিয়ায়ও এই তৃতীয় শক্তির চেষ্টা কম হয়নি সামরিক ও বেসামরিক লেবাসে তা করার তৎপরতা দেখা গেছে, অনেক দূর এগিয়ে তা আর সফল হতে পারেনি, বিধায় বলা যায় এই উদ্দেশ্য অর্জনের কোন সহজ ও সটকাট পথ নেই। এটি এক দীর্ঘ ও বহুমাত্রিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিকাশ ও অগ্রসর হতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সুযোগ ও সম্ভবনা কে অগ্রসর করতে হবে এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য্‌।

গত ২৪ অক্টোবর এক সংবাদ সন্মেলনে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ১২ দফা সম্বলিত একটি বক্তব্য তুলে ধরেন তার ৪ নাম্বার পয়েন্টে উল্লেখ আছে দেশ আজ নানা দিক থেকে গভীর সঙ্কটে। এই সঙ্কটের গোড়ার উৎস হলো দেশের জাতীয় স্বার্থবিরোধী ও গণবিরোধী প্রচলিত অর্থনৈতিক-সামাজিক ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে দেশকে জাতীয় চার নীতির ভিত্তিতে ও মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনতে না পারলে, দেশ ঘুরে ফিরে সঙ্কটের আবর্তেই পড়ে থাকবে। নতুন নতুন চেহারা নিয়ে দেশে সঙ্কটের আবির্ভাব ঘটবে। তাই দেশকে সঙ্কটমুক্ত করার জন্য বিকল্প পথে দেশের নীতি-ব্যবস্থা পরিচালনা করা অপরিহার্য। আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপি বলয়ের রাজনৈতিক শক্তি একাজ করতে অপারগ। তাদের হাতে ক্ষমতা থাকলে, জাতীয় স্বার্থে ও জনস্বার্থে দেশ পরিচালনা সম্ভব নয়। প্রয়োজন ‘বিকল্প নীতি-ব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারাবদ্ধ ‘বিকল্প শক্তি’। সেই ‘বিকল্প শক্তি’ গড়ে তোলার কাজটিকে আমরা সিপিবি ও বাসদ দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করছি। মহাজোটের বাইরে সব বামপন্থী, প্রগতিশীল, উদার গণতন্ত্রী, দেশপ্রেমিক, সৎ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তিসম্পন্ন দল ও শক্তি-ব্যক্তিকে নিয়ে আমরা সেই বিকল্প বলয় গড়ে তুলতে চাই। এ ধরনের সব দল ও শক্তিকে আমরা সেজন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

এই লক্ষ্যকে অগ্রসর করতে কিছু আশু কর্মসূচীও ঘোষণা করা হয়। ১) আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেন্দ্রিক দ্বি-দলীয় বৃত্ত ভাঙ্গো, বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প রাজনৈতিক বলয় গড়ে তোল ২) সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন কর। টাকার খেলা, পেশিশক্তি, প্রশাসনিক কারসাজি, সাম্প্রদায়িক প্রচারণামূলক এবং দল-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহনে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা কর ৩) সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপাল বিদ্যুা কেন্দ্র নির্মানের চক্রান্ত বন্ধ কর। নবায়ন যোগ্য বিদ্যু উপাদনের ব্যবস্থা কর ৪) দূর্ণীতি, দুঃশাসন, লুটপাট, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোল। ৫) দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রন কর, গ্রাম শহরে শ্রমজীবী মানুষের জন্য রেশনিং ব্যবস্থ চালু কর। ৬) জাতীয় নূন্যতম মজুরী ৮০০০ টাকা ঘোষণা কর। গণতাণন্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন কর, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত কর। ৭) সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার দ্রুত সম্পন্ন কর। বিচারের রায় অবিলম্বে কার্যকর কর।

প্রশ্ন হচ্ছে এই মূহুর্তের রাজনীতির জরুরী করণীয় বা প্রধান এজেন্ডা কি এই বিষয় গুলোর বাইরে কোন কিছু? তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, ধর্মান্ধ-জঙ্গীবাদ-সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সরকার ও বিরোধী দলের ব্যর্থতা ও দূঃশাসন, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকট, জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা ইত্যাদি। প্রধান এই বিষয়গুলোতে এই জোটগুলোর মধ্যে কোন বড় ধরনের বিরোধ যদি না থাকে তাহলে সবাইকে নিয়ে বৃহত্তর জোট করতে বাধা কোথায়? সেখানে একটি বিষয় বেশ গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিতে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি সম্পন্ন দল ও ব্যক্তির বিষয়টি যা এই বৃহত্তর ঐক্যের গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি প্রধান মানদন্ড হতে পারে। দেশ ও জাতীর স্বার্থে আশু করণীয় নির্ধারণ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগনকে এই মত ও জোটের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করা যেতে পারে। নির্বাচন হচ্ছে চলমান সংগ্রাম ও আন্দোলনকে অগ্রসর করার একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং দ্রুত অধিক মানুষের কাছে নিজেদের বক্তব্য নিয়ে যাবার উপযুক্ত সময় ও মাধ্যম। এই সব বিবেচনা থেকে মনে করি জাতির এই দুঃসময়ে কৌশল, পদ্ধতি, বাস্তবতা ও সুযোগ যা আছে তার সবটুকু কাজে লাগাতে হবে। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে আশু ও জরুরী কর্মসূচীর ভিত্তিতে, অভিন্ন কৌশল নির্ধারণ করে, লক্ষ্যে অবিচল থেকে, ঐক্য ও সংগ্রামের নীতিতে অগ্রসর হওয়া।

গত মাসে নারায়নগঞ্জে গণফোরাম-বিকল্প ধারা-জনতা লীগ-জাসদ-নাগরিক ঐক্যের সমাবেশ হলো যেখানে নেতৃবৃন্দ যে বক্তব্য দিয়েছেন তা এই কথার বাইরে কোন কিছু বলেন নি। অন্যদিকে বিভিন্ন সময় গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার দেয়া কর্মসূচী ও বক্তব্য সিপিবি-বাসদের দেয়া বক্তব্যের প্রায় কাছাকাছি বা ভিন্ন কিছু মনে হয়নি। জোট ও দলগুলোর সবাই জনগনের কাছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র ব্যর্থতা তুলে ধরে তাদের বর্জন করে স্ব-স্ব জোটের পক্ষ্যে অবস্থান নেয়ার কথা বলছে, যদিও জোট ভুক্ত প্রত্যেকটি দলের নিজস্ব কর্মসূচী ও নীতিমালা আছে। ইতিমধ্যে সংবাদ মাধ্যমে দেখলাম সিপিবি-বাসদের সাথে বামমোর্চা, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, ন্যাপের বৈঠক যেটি এই উদ্দেশ্য ও আকাঙ্খাকে আরও জোরদার ও উৎসাহিত করবে।

যে দেশে মানুষ এখনও মার্কা দেখে ভোট দেয় এবং দল ও মার্কার প্রশ্নে তারা অনেকটা অন্ধ, এমনকি নির্বাচনে প্রার্থীর বিবেচনাটা গৌন হয়ে পরে ভোটারদের কাছে। এই যদি হয় জনগণ ও ভোটারদের আপাত চেতনার মান তাহলে সহজেই বোধগোম্য এই কাজটা কতটা কঠিন ও জটিল। এই ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম ও নির্বাচনের জন্য একটি অভিন্ন কৌশল নির্ধারণ করা জরুরী। বড় দল ও জোটের সুবিধা হলো তারা সাধারণত একটি মার্কা নিয়ে নির্বাচন করে এবং তৃণমূল পর্যায়ে তাদের সংগঠন আছে। আর এই ছোট জোট ও দলগুলোর সমস্যা হলো অনেকগুলো মার্কা.. এবং কারোরই তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন নেই। তৃতীয় বিকল্পের কথা বলে যার যার মার্কা নিয়ে নির্বাচন করলে বিভিন্ন আসনে ‘তৃতীয় বিকল্পের’ একাধিক মার্কা দেখে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হবে। যেহেতু এই দল ও জোটগুলোর বক্তব্যের প্রধান লক্ষ্যবস্তু প্রধান দুটি দল, সঙ্গতই সংগঠনের নীচ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আন্দোলন-সংগ্রামেও একই ধরনের বিড়ম্বনায় পরটা অস্বাভাবিক কোন কিছু না। একই আসনে যদি অন্যান্য দল ও জোটের প্রার্থীর পাশাপাশি ‘তৃতীয় বিকল্পের’ তিন জোটের তিনজন করে প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহন করে তাহলে বড় জোট গুলোর মধ্যে যেমন কাঁদা ছোড়ছুড়ি হয়, তেমনি ছোট জোট গুলোর মধ্যেও একই ধরণের পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এক্ষেত্রে তৃতীয় বিকল্প গড়ে তোলার কাজটাকে সহজ করবেনা, যা এই মুহুত্ত্বের জরুরী কর্তব্য।

কাঙ্খিত পরিবর্তনের পক্ষে নাগরিকদের ভূমিকা কম নয়। বাংলাদেশের শিক্ষিত সমাজের একটি উল্লেখ যোগ্য অংশ আছে যারা কোন দলীয় রাজনীতির সাথে যুক্ত নয় কিন্তু তাদের আকাঙ্খা একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। বর্তমান দ্বি-দলীয় ধারার বাইরে তারা একটি দৃশ্যমান ও আস্থাশীল শক্তির বিকাশ ও ক্ষমতায়ন প্রত্যাশা করছে। কিন্তু বিষয়টি কি কেবল চাওয়া-পাওয়ার উপর নির্ভর করছে? প্রয়োজন সেই চিন্তা ও আকাঙ্খার কার্যকর রূপায়ন। তার জন্য দরকার যে কোন ধরণের দোদুল্যমানতা পরিহার করে হাত লাগানো। মন্দের ভাল নীতি অথবা কোন একটি স্পর্শকাতর আবেগ বা চাওয়াকে না বলতে যেয়ে দুঃশাসন, লুটপাট ও পরিবার তন্ত্রকে হাঁ বলা, কোন ভাবেই আর সঠিক কাজ হবে না। সমাজ ও রাষ্ট্রের কাঙ্খিত প্রয়োজন ও বাস্তবতার ভাল-মন্দ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ কম হয়নি ও হচ্ছেনা, আসলে যা করতে হবে তাও সবার জানা। কিন্তু হচ্ছেনা কি সেই রাজার দীঘিতে দুধ আর জলের গল্পের কারণে..! নির্বাচনে এই চিত্র আরও প্রকট বোঝা যায়। বিলম্ব হলেও যার যতটুকু শক্তি ও সামর্থ আছে এই সুযোগ ও সম্ভবনার শক্তি ও অবস্থাকে কাজে লাগতে হবে সম্ভবের প্রান্তে নিয়ে যেতে।

লেখকঃ গবেষক, সাবেক ছাত্রনেতা।


মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:০৭

সেজুতি_শিপু বলেছেন:
.............................. প্রয়োজন সেই চিন্তা ও আকাঙ্খার কার্যকর রূপায়ন। তার জন্য দরকার যে কোন ধরণের দোদুল্যমানতা পরিহার করে হাত লাগানো।....

ভাল লিখেছেন , টরিক ভাই ।
কিন্তু-
কবে হবে এই আকাঙ্খার কার্যকর রূপায়ন ? ক্রমশ দেরী হয়ে যাচ্ছে । যত দেরী হবে -ততই তো কঠিন হয়ে উঠবে ।

২| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৪

মঞ্জুরে খোদা টরিক বলেছেন: ধন্যবাদ সেজুতি শিপু, আপনি ঠিকই বলেছেন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের আকাঙ্খা ও প্রয়োজনই তাদের সামর্থ সৃষ্টি করবে। তবে সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একে ব্যবহার জন্য করার উপযুক্ত কর্মী, দল ও নেতৃত্ব জরুরী। জনগণ প্রস্তত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.