![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অভিলাষী মন চন্দ্রে না হোক জ্যোৎস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই
ড. মঞ্জুরে খোদা টরিক
ভালবাসা মিলনে মলিন হয় বিরহে উজ্জল
মানুষের কাছে তার মূল্যই সর্বাধিক যা মানুষ কখনো আর ফিরে পায় না। ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু যা প্রত্যেক মানুষের অস্তি¡ত্বের অনিবার্য অংশ। আজ থেকে প্রায় ৩ দশক আগের একটি সময় কেবল কল্পনাতেই ফিরে যাওয়া সম্ভব- বাস্তবে নয় কখনো, যেমন সম্ভব নয় আকাশ ও সমুদ্রের, দিগন্ত এবং স্বপ্নের। তবু মানুষ কল্পনাবিলাসী, স্বপ্নবিলাসী।
সময়ের সাথে সাথে পাল্টে যায় জীবনের সমীকরণ, পাল্টে যায় পরিবেশ, পরিস্থিতি ও বাস্তবতা। বোধে ও জীবনে আসে সময় নির্ধারিত গুনগত পরিবর্তণ। পাল্টে যায় সময়, বাস্তবতা, পরিবেশ ও সম্পর্কের মানচিত্র। পার্থিব জীবনের নানা হিসেব-নিকেষ, গতানুগতিকতা ও বৈচিত্রহীনতার মাঝে একটু ছেঁদ চাই। চাই একটু ভিন্নতা। চাই একটু ভিন্ন জীবন ও প্রাণ। তাই মুখ ফিরাতে চাই সেই সোনালী অতীতে। আহ্ কি আনন্দ, কি ভাল লাগা..।
সেই সময়ের সহপাঠিদের সাথে আবার একসাথে হেঁসে ওঠা, আড্ডায় মেতে ওঠা কম আনন্দের নয়। কিন্তু যে গল্প প্রথমেই বলছিলাম জীবনের অনিবার্য বাস্তবতা যা আমাকে তোমাদের থেকে ভাবে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। কিন্তু তোমরা যদি আমাকে কর তোমাদের গল্পের ও স্মৃতির অংশ তাহলে হয়তো আমিও থাকব তোমাদের পাশে। বঞ্চিত আনন্দের সুখে, দুঃখ বিলাসী আমি’ অভিমানে বলি- ভালবাসা মিলনে মলিন হয় বিরহে উজ্জল।
মুছে যাওয়া দিনগুলি আমায় যে পিছু ডাকে
সেই সময় আর এই সময়ের ব্যবধান অনেক। সেই সময়টা ছিল অস্থিরতা ও বেদনার। সমাজ ও অর্থনীতির একটি বৃত্ত ভেজ্ঞে আরেকটি বৃৃত্ত গড়ার প্রতিযোগিতা। তা আমাদের জীবনের বৈষয়িক, সাংস্কৃতিক ও কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটিয়েছে। কিন্তু স্মৃতি ও আবেগের সবকিছু কি বাস্তবতার ডাস্টার মুছে দিতে পেরেছে? তাই সবটুকু আবেগ ও দারুণ ভালবাসায় ফিরে চাই সেই পুরানো দিনের দিকে। স্কুলের সেই করিডোর, ক্লাসরুম, সবুজ ও ধূলামাখা ক্যাম্পাস, শহীদ মিনার, কৃষ্ণচূড়া, রেলের চক্কর, নাকচেপে টয়লেটে যাওয়া, পড়া করা বা না হবার লজ্জা ও ভয়, শিক্ষকদের দাঁত খিঁচুনি ও রক্ত চক্ষু, একুশ, বনভোজন, স্কাউটিং সহ অন্যান্য আয়োজনে নেতাগিরি করা, কোন দিবস বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোন কোন শিক্ষকের প্ররোচনায় স্কুল ছুটির ফন্দি খোঁজা ইত্যাদি। মনে পরে আবুল মামার চানাচুর, উঠতি বয়সের রোমিও রোমিও ভাব, নানা ছুঁতোয় বান্ধবীদের সংস্পর্শে আসা, অনেক ক্ষেত্রে স্বতপ্রনোদিত হয়ে স্কুলের ভাল-মন্দ দেখার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়া। দল বেধে শহর প্রদক্ষিন করা, বন্ধুদের বাসায় যাওয়া, বড়পুলের উপর বসে আড্ডা দেয়া, যমুনার ধারে বেরানো, ভাগ করে বাদাম, চানাচুর, পুরি, পিয়াজু, সিঙ্গারা, মিষ্টিসহ মুখরোচক আরও কতকি সবটুকু তৃপ্তি নিয়ে ভাগ করে খাওয়া। বন্ধু-বান্ধবদের সাথে রাজনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম, সাহিত্য, প্রেম ইত্যাদি বিষয়ে নিয়ে তুমুল আড্ডা দেয়া ও আতলামি করা ইত্যাদি।
সেই অপরিণত বয়সের অনেক পরিবর্তন ঘটলেও সময়ের জীবনের সহজাত প্রবণতা তা পিছনে ফিরে তাকাতে চায়। তাকায় দারুন আনন্দে ও উৎসাহে। সোনালী অতীতের শিহরিত পরশ চোখ মুখের অপার উজ্জলতা দেয় খানিক ছেঁদ। রাষ্ট, সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও পরিবেশের অনেক বিকার মুখ ফেরায় জীবন থেকে। অনেক অর্জনের, অনেক সুখের আনন্দও আমরা ভোগ করার সামর্থ্য হারিয়েছি। তথাকথিত ভোগবাদী সমাজ নীতিহীন প্রতিযোগীতার কাছে চলছে আত্বসমর্পনের মহা উৎসব। আর তা পাল্টে দিচ্ছে আমাদের প্রচলিত সুখের সংজ্ঞা। শিক্ষা চেতনা আনে আর চেতনা দেয় মুক্তি। আমরা কতটা মুক্ত। যেন এই সভ্য সমাজের সময় ও বাস্তবতার দাস আমরা। নির্বোধেরা বরাবরই সুখী। কিন্তু আমাদের চেতনা দেয় আমাদের মধুর যন্ত্রনা। আমাদের যে দিন গেছে সে দিন কি একে বারেই গেছে। সেকড়ের সন্ধানে কেবলি মনে হয় গভীর বেদনায়- মুছে যাওয়া দিনগুলি আমায় যে পিছু ডাকে..।
প্রিয়, বিদায় হবেই। তা নিয়তি নির্ধারিত। কিছু বিষয় না মেনে নেয়া যায় না প্রতিবাদ করা যায়! ইতিমধ্যে আমাদের মাঝ থেকে অকালে চির বিদায় নিয়েছে আমাদের সহপাঠী নবীনেওয়াজ, রেজওয়ান ও জয়নাল..। অনেক শিক্ষকও আজ আর আমাদের মাঝে নেই। অনেকে বয়সের ভারে নূব্জ। সবকিছুই আজ আমাদের স্মৃতির অংশ। যে স্মৃতি কেবল বেদনা জাগায়, নীরবে কাঁদায়।
পাল্টে দেবার ইচ্ছে আমার এখনও গেলনা
রাজনীতি করাকে অনেকে বলতো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই ‘নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’। আমি বলতাম মোষ তাড়ানো সহজ নয় মোষের সিং/ঙএ মৃত্যু বাঁধা। ঢেঁকির স্বর্গ সফর ও বারা বানার গল্প সবারই জানা। সেই রোগের সংক্রমন আজও ছাড়েনি। তাই কেবল সোজ পথ থুয়ে বাঁকা পথে যাওয়া। আমরা একসাথে হবো, হাসবো, নাচবো, আড্ডা দিব তাও আবার সেই তিন যুগ পর! এর মধ্যে আবার এত আঁতলামো কিসের। বলি স্বভাব, যা এখনো গেলনা।
আর সেই বিবেচনা থেকেই উস্কে দিতে চাই এমন কোন ভাবনার খোরাক যা আমাদের নিত্য মানসিক মিলনের কারণ ঘটবে এবং আমাদের ভাবনা ও উদ্যোগকে স্বতন্ত্র করে রাখবে। হতে পারে তা খুবই ক্ষুদ্র কিন্তু সেই সিন্ধুতে একফোঁটা বিন্দু আমরা দিতে পারি কি? আমি পরিমান বা ব্যাপকতা নিয়ে বিচলিত নই বরং উদ্যোগের মহত্ব আমাদের আনন্দ ও প্রবোধ দেবে। আমরা যদি আমাদের নীতির জায়গা ঠিক করতে পারি, তারপর আমরা কথা বলতে পারি বিষয়, কৌশল, উদ্যোগ, বাস্তবায়ন ও ধারাবাহিকতা নিয়ে। যে চিন্তার প্রয়োগ অন্যরা মনে করবে যুগ যুগ ধরে। বিশাল মরুভূমির ‘একটি ছোট পাথরের মত’ আমাদের আলাদা করে রাখবে। একই সাথে তা হবে অন্যদের জন্য অনুকরণীয় ও উৎসাহের কারণ। যুক্ত করতে পারে ভিন্নমাত্রার এক সামাজিক আন্দোলন। এই বৈরী বন্ধা সময়ে চাই- একটি স্বপ্ন দেখার স্পর্দ্ধা।
অনেক বড় চোখ ধাঁধানো আয়োজন ও উদ্যোগ আমাদের আত্বতৃপ্তির কারণ হতে পারে। কিন্তু সেই প্রশান্তির মধ্যে যেন থাকে এক অঙ্গীকারের ইংগিত। না আমি ‘নয় মন ঘি ও রাঁধার নাচের’ কথা বলছি না। আমি সবার আবেগ ও আকাঙ্খাকে সম্মান করি। কিন্তু অনেকের জীবন ও সময়ের অনিবার্য বাস্তবতাকেও বিবেচনায় রাখতে বলি। বড় বড় পরিকল্পনা বা রাতারাতি কোন কিছু করে ফেলার স্বপ্ন আমাদের থাকতে পারে কিন্তু আমি যেটি জোর দিয়ে বলতে চাই- ছোট কোন কিছু, নতুন কোন কিছু, ধারাবাহিক বা স্থায়ী কোন কিছু। সব কিছুই হবে আমাদের জীবনে কেবল অতীত ও স্মৃতির অংশ। কিন্তু যে কোন ছোট একটি কাজ হতে পারে এক নতুন আলোর বাতিঘর। যে কাজটি করবে সেই স্বাতন্ত্রের অধিকারী ‘আমরা ’৮৬’। সেই বিবেচনা থেকে তাৎক্ষনিক চিন্তার গুটিকয় বিক্ষিপ্ত প্রকাশ এখানে তুলে ধরা হলো। যা হয়তো অন্য বন্ধুদের আরও চিন্তাশীল মত ও ভাবনা একে সুনিদ্দিষ্ট করতে সাহায্য করবে। যে কোন একটি বিষয়, যে কোন একটি, আমরা বেছে নিতে পারি- আমাদের সীমিত সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ আন্তরিকতায়।
* আমাদের ব্যাচ থেকে একটি বৃত্তির কথা ভাবা (একই সাথে অন্যান্য ব্যাচের বন্ধুদের প্রতি আহ্বান রাখা এই ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে। যদি আমাদের আগে ও পরের ৫ থেকে ১০ টি ব্যাচকে এই উদ্যোগে সামিল করা যায় তাহলে হয়তো ৫ থেকে ১০ জন শিক্ষার্থীর জীবনে বা পরিবারে আমরা হব সাহস ও আশ্রয়)
*স্কুলের সব ব্লাকবোড গুলোকে পরিবর্তন করে হোয়াইট বোড করা (যদি তা হয়ে থাকে তাহলে এই বিবেচনা বাদ)।
*বিজ্ঞানাগার বা পাঠাগার কোন যন্ত্র বা বই দেয়া যেতে পারে (কেবল নিজেদের উদ্যোগেই নয় বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান কে উৎসাহিত করা এই ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে)।
*কম্পিউটার ল্যাব না থাকলে বা থাকলে সেখানে দুই/একটি কম্পিউটার দেয়া (বস্তুগত কোন কিছু উপহার দিলে সেখানে সৌজন্য উল্লেখ করা। কারণ নিজেদের মাহাত্ত্ব জাহির করা নয় বরং উদ্দ্যেশ্য অন্য ব্যাচের বন্ধুদের উৎসাহিত করা অনুরূপ কাজে ভূমিকা রাখার)।
*বৃক্ষরোপন বা পরিবেশ বান্ধব কোনকিছু করা (আমাদের ব্যাচের সবার স্বরণে একটি করে গাছ লাগানোর কথা ভাবা যেতে পারে)।
*শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অতীত গৌরব ও মর্যদা ফিরিয়ে আনতে কোন উদ্যোগ (নীতি, কৌশল, পরিবেশ ও বাস্তবতা বিবেচনা সাপেক্ষ্যে)।
আমরা চাই ফিরে ফিরে মিলন। কিন্তু কিভাবে? যেভাবে ভাবে অন্যরা? আমরাও কি সেভাবে? আমরা তো বরাবরই বোধহয় একটু অন্যরকম ছিলাম। মনে কি পরে আমাদের অনেক/সেই রোমাঞ্চকর ও বেপরোয়া তৎপরতার কথা? সর্বশেষ আয়োজনও কি সেই ধারাবাহিকতার জানান দেয় না? যদি সেই সত্য ও বোধই হয় আমাদের পরিচয়- তাহলেই ‘আমরা ৮৬’। আমি জানি আমাদের বন্ধুদের প্রায় সবাই পারিবারিক ও পেশাগত জীবনে ভীষণ ব্যস্ত। সময়, পরিবেশ ও বাস্তবতার সাথে তাল মেলাতে মুখোমুখি হতে হচ্ছে নানা চ্যালেঞ্জের। আত্বরক্ষা ও আত্বকেন্দ্রীকতাই যে সমাজের প্রধান ধারা সেখানে তৃতীয় একটি স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার চিন্তা কম শক্ত কাজ নয়। মনে হয় অনেক কিছুই, না হয় অন্তত একটা কিছু করি। মানুষ তৈরী কি’না ভাবিনি, তুমি সম্মত কি’না তাও নয়- অথচ চেয়েছি সমাজে বিপ্লব, জীবনে প্রেম।
আজ জীবন খুঁজে পাবি . .
তত্ত্ব ধূসর জীবন চীর হরিৎ। জীবন মানে প্রাণ, উৎসব, উচ্ছাস ও আনন্দ। মানে গতিশীলতা। মানে নিয়ত চলা ও নিয়ত করা। সেই সত্যের প্রতিদ্ধনিই যেন সতীর্থদের এই আয়োজন। তাকে কি করে দিতে পারি আমরা নিরন্তর চলার শক্তি। একটি চিন্তা, একটি স্বপ্ন, একটি উদ্যোগ হতে পারে সেই আকাঙ্খা অর্জনের আলোর রেখা। যদি তা পায় গতিশীলতা বা এগিয়ে যারাব বল তাহলে হয়তো একটা কিছু হবে। স্ফুলিঙ্গ যদি পায় একটু উত্তাপ দেবার সামর্থ তাহলে সে আলোকিত করতে পারে কোন এক দিগন্ত। জীবন যেখানে ছন্দের প্রতিশব্দ বয়ে চলাই সেখানে শেষ কথা। আর তার চাই সৃজনশীল ও ধারাবাহিক প্রকাশ।
আসলেই আমরা ফিরে ফিরে নিজেদের খুঁজে পাবার অনাবিল আনন্দে পেতে চাই। আর তা পেতে চাই গতানুগতিক ধারা থেকে একটু ভিন্ন মাত্রায়। মগজে দিতে চাই সেই ভাবনার খোরাক যা হবে হয়তো একটি বলয় তৈরীর কারণ। যে বলয় একটি দৃষ্টিভোঙ্গীর প্রতিনিধিত্ব করবে। ক্ষুদ্র কিন্তু স্বতন্ত্র। সামান্য কিন্তু অনন্য। যেখানে থাকবে সামান্য হিসেব কিন্তু তা বাণিজ্য বা বৈষয়িকতার নয় থাকবে দ্বায়বদ্ধতার। সে দ্বায় খাঁচার মেঝেটাকে প্রসারিত করার। জীবনকে ভালবাসার। এসো বন্ধু মিলি নিয়ত মিলনের বন্ধনে, বন্ধনহীন গ্রন্থীতে। খুব বেশী কিছু নয়, এসো করি কোন এক আঁধার কুঠির আলোকিত করবার আয়োজন। জীবনে জীবন ঘষে সেই আলোতে মিলব সবাই। পাবেই খুঁজে অন্য জীবন, অন্য ভাবে। অভিলাসী মন চন্দ্রে না হোক জ্যোস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই..।
ড. মঞ্জুরে খোদা টরিক, গবেষক, ইনসষ্টিটিউট অব পলিসি সাইন্স, আইচি গাকুইন বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান।
(এস. বি. রেলওয়ে কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়, সিরাজগঞ্জ, ১৯৮৬ সালের এস. এস. সি. ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের পূর্ণমিলনী উপলক্ষ্যে এই লেখা)
©somewhere in net ltd.