নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুরে খোদা টরিক

মঞ্জুরে খোদা টরিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাপানের বর্ষবরণঃ অর্থপূর্ণ খাবারসহ নানা আয়োজন

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:৫২

ড. মঞ্জুরে খোদা টরিক



গ্রিগোরিয়ান ক্যালেনডার অনুযায়ী জাপানে নতুন বছর পালন করা হয় যেটি খ্রীষ্টীয় ক্যালেনডার হিসেবে অধিক পরিচিত। সঙ্গতই পাশ্চাত্যের অনেক দেশের সাথে এশিয়ার এই দেশটিরও বর্ষবরণের আয়োজন চলে সমানতালে। জাপানের অন্যতম একটি প্রধান উৎসব নতুন বছরকে ঘিরেই, যাকে তাদের ভাষায় বলা হয় ‘ওসুগাৎসু’। তবে এদের বর্ষবরণ উদযাপনের একটি নিদ্দিষ্ট ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট আছে তা যে কারো মনোযোগ আকর্ষনের কারণ হবে। এটিই তাদের এই আয়োজনকে দিয়েছে স্বাতন্ত্র ও ভিন্নমাত্রা। এই আনন্দ ও উদযাপনের মধ্যে আছে নানা মিথ, ঐতিহ্য ও তাৎপর্য। জীবন, প্রকৃতি, পরিবেশের আধ্যাত্বিকতা, বাস্তবতা, সভ্যতা ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই আয়োজন হয়ে ওঠে আকর্ষণীয় ও উৎসাহের। যেখান থেকে পেতে পারি একটু বৈচিত্রতা ও জীবন প্রবাহের ভিন্ন স্বাদ।



নতুন বছর উপলক্ষে প্রত্যেক বাসা-বাড়ী, অফিস-আদালত, শিল্প-প্রতিষ্ঠান সবাই মিলে দিনভর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করবে। অফিস-আদালত ও শিল্প-প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বছরের শেষ কর্মদিবসে সভা ও মিলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের শীর্ষব্যক্তি বছরব্যাপী অনেক কাজ ও সহযোগিতা করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাবে। সভাশেষে খাবার পরিবেশন ও হাতে উপহার তুলে দেয়া, নতুন বছরে অনেক কাজ করার অঙ্গীকার করার মধ্যদিয়ে পুরানো বছরকে বিদায় জানানো হয়। চাকুরীজিবীরা বছরের দুটি বোনাসের একটি নববর্ষ উপলক্ষে পায়। প্রায় সব পরিবার খুলবে বাসৎরিক পারিবারিক আয়-ব্যায়ের নতুন হিসেবের খাতা। নববর্ষ উপলক্ষে বাসাবাড়ীতে পুরানো বাতি খুলে নতুন বাতি লাগানো হয়, নতুন আলোয় শুরু হয় তাদের নতুন বছর।



বছরের প্রথম দিনেই যখন পোষ্টবক্স খুলে আপনি পাবেন আপনার বন্ধু, শুভাকাঙ্খী ও আত্মীয়দের পাঠানো বান্ডিল বান্ডিল শুভেচ্ছা কার্ড সহসাই আপনার মন অজানা কৌতুহল আনন্দে ভরে উঠবে। হ্যাঁ এটাই স্বাভাবিক, পোষ্টকার্ডের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানানোর একটি নিজস্ব সংস্কৃতি আছে তাদের, যাকে বলা যায় ইউনিক। তথ্য-প্রযুক্তির বিষ্ময়কর বিকাশের কারণে ডাকবিভাগের অনেক কাজ কমে গেছে বা বিলুপ্তির পথে, তখন জাপানের এই বিশাল প্রতিষ্ঠানের কাজ কোন ভাবেই কমেনি। নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়ের একটি বড় দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় এই ডাকবিভাগ। জাপানের প্রত্যেক পরিবার নববর্ষে ডাকবিভাগ থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ডিজাইনের পোষ্টকার্ড কিনবে। সেই পোষ্টকার্ডের উপর পরিবারের ছবি বা নানা ধরণের অলংকরণ ও শিল্পকর্ম করে তা আত্মীয়, বন্ধু, শুভাকাঙ্খীদের বাসায় ডাকবিভাগের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়। আর বছর শুরুর দিন সবাই ঘরে বসে তা পেয়ে যাবে। এটি তাদের জন্য এক অন্যরকম আনন্দ ও শিহরণ।



বছরের এই লম্বা ছুটি তারা উপভোগ করে নানা আয়োজনে। অধিকাংশ মানুষ শেকড়ের টানে চলে যায় তাদের গ্রামের বাড়ী, বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনের বাসায়। অবিভাবক ও আত্মীয়রা শিশু-কিশোরদের সুন্দর রঙ্গীন খামের মধ্যে অর্থ উপহার দেয়। অনেকে নতুন বছরের সূর্যোদয় দেখতে পাহাড় ও নদীর ধারে যায় সেখান থেকে তা উপভোগ করে, যাতে তাদের বছরটা কাটে অমলিন আনন্দে। জাপানের ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত ও বনার্ঢ্য টিভি পরিবেশনায়ও অনেকের দারুণ আকর্ষণ। একটি অংশ মন্দিরে যায় খুব অল্প সময়ের জন্য। সেখানে হাতজোড় করে মিনিট খানেক দাড়িয়ে নিরবতা পালন ও প্রার্থণা করে অনাগত দিনের সুখ-সমৃদ্ধির।



নববর্ষ উপলক্ষে তাদের প্রধান আকর্ষন ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘ওসেচি’ ও ‘অতোছো’। অসেচি এমন এক ধরণের খাবারের সমষ্টি বা সম্মিলন যা অনেকগুলো ছোট ছোট খোপ দ্বারা বিভক্ত একটি বিশেষ নক্সার বাক্‌সের ভিতরে পরিবেশন করা হয়। একে ‘জু-বাকো’ বলা হয় তারমানে দশটি বাক্স। আর অতোছো হচ্ছে এক ধরণের জাপানি মদ। তাদের এই ঐতিহ্যবাহী খাবারে প্রচলন শুরু হয় হেইয়ান সময়কালে (৭৯৪-১১৮৫)। ঐতিহ্য অনুযায়ী তারা তাদের এই বিশেষ ধরণ ও প্রকারের খাবারের আয়োজন করে। পূর্বে গৃহিনীরা নিজেরাই ঘরে তা তৈরী করতো কিন্তু আজকাল ঐতিহ্যবাহী এই খাবার সরবরাহ ও পরিবেশনের জন্য বিভিন্ন ধরণের শিল্প ও রেষ্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। যাদের অর্ডার দিলে সেই একই খাবার অদ্ভুদ নান্দনিক সৌন্দর্যে তা ঘরে ঘরে পরিবেশন করে। তা পরিবারের সবাই মিলে দুপুর-রাতে তাদের আদপ অনুযায়ী আহার করে। এক সময় জাপানি বধুরা অনেক পরিশ্রম করে বাজার, রান্না, পরিবেশন, ধোঁয়মোছা ইত্যাদির চাপে সময়টিকে পরিবারের অন্যদের সাথে খুব বেশী উপভোগ করতে পারতো না কিন্তু যুগের হাওয়ায় সেই চিত্র পাল্টে গেছে। এখন তারাও নতুন বছরের এই সময়টিকে অধিক উপভোগ করতে পারে।

এবার দেখা যাক তাদের সেই অসেচি খাবারের বাহার আর তার আধ্যাত্বিক মাহাত্ম ও বর্ষবরণের দৃষ্টিভঙ্গি।



১. দাইদাই- এক ধরণের তেতো ছোট আকৃতির কমলা যাকে শিশুদের প্রতি শুভকামনা হিসেবে বিবেচনা করা হয় ২. দাতেমাকি- মাছের পেস্ট মেশানো এক ধরণের ডিম অমলেটের রোল, তারমানে আসন্ন দিনগুলোর সুন্দর ও সফলতার প্রত্যাশা। একই সাথে জাপানিজদের ঐতিহ্যবাহী কারুকাজময় নান্দনিক পরিচ্ছদের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয় (যুদ্ধবাজ সামুরাইদের পোষাক হিসেবেও খ্যাত)। ৩. কামাবোকো- এই খাদ্যের রঙ ও আকৃতির কারণে নববর্ষের সূর্যোদয় বিবেচনায় স্বাগত জানানো হয় ৪. কাজুনোকো- হচ্ছে মাছের ডিম, যে খাবারকে নতুন বছরে অনেক নবাগত শিশুর আগমন প্রত্যাশা করা হয় ৫. কোনবু- সামুদ্রিক শেওলা সদৃশ এই খাবারের মানে জীবনে জয় ও উদ্দিপনা ৬. কুরোমামে- কালো সীম মানে সারাবছর সুস্থ থাকার প্রত্যাশা (মামে মানে স্বাস্থ্যকর) ৭. তাই- হচ্ছে এক ধরণের মাছ আমাদের কাতল মাছ সদৃশ যার মাধ্যমে শুভদিনকে স্বাগতম জানানো হয় ৮. তাজুকুরি- খুব ছোট মাছ আমাদের কাছকি মাছের মত, যাকে ঘিরে পর্যাপ্ত ফসলের প্রত্যাশা করা ৯. জনি- রাইসকেক ঐতিহ্যবাহী জাপানিজ খাদ্য, আমাদের দইলা পিঠার মত কিন্তু অনেক শক্ত দেখতে চারকোনা, এটা একধরণের স্যুপ দিয়ে খায় ১০. নুডুলস্‌- লম্বা লম্বা হবার কারণে একে দীর্ঘায়ুর প্রতীক বিবেচনা করা হয় ১১. নিশিকি তামাগো- এটা হচ্ছে ডিম একে সোনা-রুপার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা।



নতুন বছরের খাবারের মধ্যেও তারা খুজে ফেরে এক ধরণের অর্থ যার বৈজ্ঞনিক মূল্য না থাকলেও আছে নৈতিক ও ভাবাবেগের মূল্য। যে ভাবাদর্শ ও বিষয়টি সমাজের জন্য বড় প্রয়োজন। যখন বহুজাতিক সংস্কৃতির ছোঁয়া ও থাবা আমাদের জীবনের অনেক কিছুকে গ্রাস করতে বসেছে তখন এই ভাবাবেগের মূল্যই বা কম কি? বাস্তব জীবনেও তাদের কথা ও কাজের অনেক মিল আছে। প্রধানত তারা যা বলে, মনে করে, বিশ্বাস করে তারা তাদের জীবনে তার প্রতিফলন ঘটায়, তা তাদের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের উন্নতি ও পরিবর্তন দেখলেই অনুমান করা যায়। কেবল ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টিয়ে আর কিছু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে তারা তাদের উদযাপনের ইতি টানে না তার অর্থপূর্ণ প্রকাশ ঘটায় সময় ও যাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। যা আমাদের মনোজগতের উন্নত ও গুণগত পরিবর্তনে ভাবনার খোরাক হতে পারে।



লেখকঃ গবেষক, ইনস্টিটিউট অব পলিসি সাইন্স, জাপান, সাবেক ছাত্রনেতা।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:১৮

নার্ড বলেছেন: কোথায় থাকেন জাপানে?

২| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৪২

েবনিটগ বলেছেন: torik কি apnar ashol nam naki Tarik er অপভ্রংশ

৩| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৫

মঞ্জুরে খোদা টরিক বলেছেন: নার্ড >> আমি নাগোয়াতে থাকি

৪| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১১

মঞ্জুরে খোদা টরিক বলেছেন: েবনিটগ>> টরিক' (Torik) আমার আসল নাম

৫| ২৩ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১১:৫৮

অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: আমার এক সার ছিলেন, উনার নাম ছিল মোঃ আব্দুল মতিন তো উনি প্রতিষ্ঠানে ২য় সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ট হয়ে এম এ মাটিন হয়ে গেলেন। দেশী বিদেশী সবাইকে উনি বলতে এম এ মাটিন, তেমন না তো?

হা হা হা .........


আপনার জ্ঞানগর্ভ লেখা আমাকে ভার লেগেছে। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.