নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

আমি এম টি উল্যাহ। আইনি উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah , Email- [email protected]

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাজেটে বরাদ্দ ও জলবায়ু তহবিল: উপকূলীয় উপজেলা সুবর্ণচর প্রেক্ষিত

১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৬

সময়ের অন্যতম আলোচিত বিষয় জলবায়ু পরিবর্তন। বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি (গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক) ইনডেক্স অনুযায়ী, বাংলাদেশ রয়েছে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ১০টি দেশের মধ্যে। প্রতি বছর বৈশ্বিক পরিবর্তনে এ দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ২ থেকে ৩ শতাংশ হ্রাস পায়। গত ৩৫ বছরে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে ঝড়সহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৯ লাখ বাংলাদেশি। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, গত দুই দশকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বিশ্বে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তার প্রায় ৬০ ভাগই হয়েছে বাংলাদেশে। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বিশ্বের ১৮২টি দেশের মধ্যে চরম আবহাওয়ায় আক্রান্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ বলে জানিয়েছে গবেষণা সংগঠন জার্মানওয়াচ।

ঠিক এমন পরিস্হিতিতে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপখাওয়ানোর তাগিদে এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, পরিবেশের সুরক্ষা, সচেতনতা সহ নানাবিধ গ্রহণ করতে হচ্ছে সরকারকে। বিশেষ করে ১৯ টি উপকূলীয় জেলার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে তার মধ্যে একটি জেলা হলো আমাদের নোয়াখালী। আর নোয়াখালীর দক্ষিণের উপজেলা হিসাবে সুবর্ণচর কতটুকু এ জলবায়ু তহবিল বলি আর সচেতনতা বলি তার সাথে সংশ্লিষ্ট তা আলোচনার প্রয়াসে এ কলাম। তার আগে আমরা দেখে নিতে পারি কিছু তথ্য।
সরকার ২০০৯ সালে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মেকাবেলায় আলাদা দু'টি তহবিল গঠন করে৷ একটি হলো বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট (বিসিসিটি) এবং অন্যটি বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ রেজিলিয়ান্স ফান্ড (বিসিসিআরএফ)৷ বিশ্বব্যাংকসহ উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে টানাপোড়েনের কারণে বিসিসিআরএফ তহবিল এখন প্রায় স্থবির৷ সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত বিসিসিটি তহবিলে ২০১৭ পর্যন্ত তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার৷
এ ছাড়া উন্নয়ন সহযোগীদের সমন্বয়ে গঠিত জাতিসংঘের গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড(জিসিএফ) বা সবুজ জলবায়ু নামের আরেকটি তহবিল থেকে সরকার এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ কোটি টাকার মতো পেয়েছে৷ তাছাড়া ২০২০ সাল থেকে জলবায়ুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া স্বল্পোন্নত দেশগুলো ১০০ বিলিয়ন ডলার পাবে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাংলাদেশও এর বিশাল একটি অংশ পেতে যাচ্ছে।

যাক সে সব হিসাব। আমরা ছোট আকারের অংকে আসলে দেখতে পাই ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট কাঠামোতে জলবায়ু পরিব্তনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারি বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়াকে জলবায়ু সংবেদনশীল করার লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরে ২০টি মন্ত্রণালায় ও বিভাগের জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় এবার বাজেটে বরাদ্দ মোট ১৮ হাজার ৯৪৮ দশমিক ৭৪ কোটি টাকা। যা খরচ করা হবে ওই ২০ মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মাধ্যমে ।শুধু তাই নয় সাথে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটি) বা জলবায়ু তহবিলে বরাদ্দ হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা ।
এর সাথে সাথে আরেকটি তথ্য হলো ইতিমধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কয়েক হাজার নারীকে অর্থসহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে জাতিসংঘের গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড এবং বাংলাদেশের নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় যৌথভাবে । শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রকৃতি-বিনাশি উন্নয়নের ফলে সৃষ্ট জলবায়ুর আকস্মিক পরিবর্তনে সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম দেশ হিসাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এমন নারীদের জন্য তিন কোটি ৩০ লাখ ডলার অর্থাৎ প্রায় ২৭০ কোটি ৩২ লাখ ৭৬ হাজার টাকার অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে। এই তহবিলে ৩৯ হাজার নারীর ভাগ্যোন্নয়ন ঘটবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
তথ্যগুলো মাথায় নেওয়ার সাথে আমাদের সুবর্ণচরের কি সম্পর্ক এইতো? তা পরিষ্কার হওয়ার স্বার্থে আরো কিছু তথ্য জানা দরকার। যেমন, ট্রাস্ট ফান্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ট্রাস্ট ফান্ড হতে সারাদেশে বাস্তবায়নের জন্য ৫০১টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে৷ তারমধ্যে ২১৩টি প্রকল্প সফলভাবে শেষ হয়েছে ২০১৭ তে৷

তার মধ্যে ট্রাস্ট ফান্ড থেকে উপকূলীয় ১৯টি জেলায় প্রায় ১২৩০ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৮৫টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এবং এর মধ্যে ৫২টি প্রকল্প শেষ হয়েছে৷ ১৩৩টি প্রকল্প ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাস্তবায়ন করার কথা৷শুধু তা নয় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় স্থানীয় সরকারের ১০৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে যার বাজেট বাজেট প্রায় ৩৫৪ কোটি টাকা।
এই দীর্ঘ তথ্য উপস্হাপনের মূল উদ্দেশ্যে হলো আমাদের ৫৭৬.১৪ বর্গ কিঃ মিঃ এর সুবর্ণভূমিতে গত কয়েক বছরে দৃশ্যমানভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে নানা ভাবে। চাষাবাদের জন্য নলকূপে পানি না পাওয়া, খরা, অতিবিৃষ্টি, হাতিয়া-সন্দীপের অবাধ ভাঙ্গনের প্রভাব সহ নানা প্রকতকূলতার সাথে এ অঞ্চলের মানুষ লড়াই করে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা আমরা যে উপকূলীয় উপজেলা তাতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ না থাকলেও সরকারের এই বিশাল জলবায়ু বাজেট ও ফান্ডের আওতায় গৃহিত প্রকল্পের কয়টি সুবর্ণচরে হয়েছে? পিকেএসএফ-সাগরিকার মাধ্যমে ১/২টি প্রকল্প বাস্তবায়নের হিসাব দেখা গেলেও তা কতটুকু সফল হয়েছে? জলবায়ু বাজেট আর স্হানীয় উন্নয়ন বাজেটের মধ্যে কি কোন ব্যবধান আমাদেরকে জানানো হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে সুবর্ণচরের প্রায় অর্ধশত শিক্ষিত তরুণকে এই জলবায়ু তহবিলের কোন প্রকল্প সম্পর্কে অবহিত কিনা জিঞ্জাসা করলে তারা বিষয়টি সম্পর্ক কোন ধারণা রাখে না মর্মে প্রতিয়মান হলো। ইউনিয়ন কিংবা উপজেলা পর্যায়ে এসব প্রকল্পের তথ্য/বোর্ড না থাকা কিংবা যেনতেনভাবে স্হানীয় সরকারের বাজেট থেকে রাস্তায় মাটি ফেলে কিংবা কিছু গাছ লাগিয়ে কিংবা বিদ্যমান গাছের সারি গুলোকে প্রকল্পে দেখিয়ে কি জলবায়ু ফান্ড হাওয়া হয়ে যাচ্ছে নাকি সত্যিই আমরা এ ফান্ড পাচ্ছি না? যদি না পায় তা কেন? হয় আমাদের জনপ্রতিনিধিরাও বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত না থাকার কারণে তদবির করে প্রকল্প আনতে পারছেন না অথবা জনগণ অন্ধকারে রয়েছে। তবে, তদবির ছাড়াও স্বাভাবিকভাবেই কিছু প্রকল্প থাকারই কথা ভৌগলিক বিবেচনায় সরকারের পক্ষ থেকে। সুতারাং কথা না বাড়িয়ে আমরা এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার, জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করে তথ্যগুলো শেয়ার করার কিংবা ওনাদের নিকট হইতে প্রকৃত তথ্য জানার এবং প্রয়োজনে ওনাদের সহযোগিতা করার দায়িত্ব আমার/আপনার রয়েছে। যা আমাদের সুবর্ণচর বাসীর জন্যই একান্ত আবশ্যক| ( উক্ত লেখার তথ্যের সাথে আপনার উপজেলার হিসাবও আপনি মিলিয়ে নিতে পারেন)
[email protected]
facebook.com/mohammad.toriqueullah

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:১০

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: মুল্যবান পোষ্ট!

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:০৩

এম টি উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২০ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: মন দিয়ে পড়লাম।

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:০৪

এম টি উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.