নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

আমি এম টি উল্যাহ। আইনি উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah , Email- [email protected]

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারত-প্রশান্ত মাহসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতায় যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজি ও বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:২৭


সমগ্র পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যার ভূমি ও বিশ্ব বাণিজ্যের অর্ধেকের চেয়েও বেশী অংশের নিয়ন্ত্রণকারী হিসাবে হিসেবে বিশ্বের ভূ-রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করে থাকে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল । এটি এশিয়া মহাদেশ ও আমেরিকা মহাদেশের সংযোগস্থল বিধায় বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্র হিসেবে অনন্য গুরুত্বের দাবিদার। একদিকে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদের উপর লোলুপ দৃষ্টিদানকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্যের ক্ষেত্রে এই অঞ্চল অন্যদিকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ দ্বীপাঞ্চল হওয়ায় এই অঞ্চলের মেইনল্যান্ডের রাষ্ট্রগুলোর মাঝে সর্বদা দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে। বিশেষ করে চীনের সুপার পাওয়ার হিসাবে উত্থানপর্বে জাপান ও ভারতের সহিত স্বার্থগত দ্বন্দ্ব, কোরিয়া-তাইওয়ানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি, মালাক্কা প্রণালী নিয়ে নানামুখী সমীকরণ এবং এ অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোর ভূ-খন্ড নিয়ে দ্বন্দ্ব ভূ-রাজনীতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। পরমানু শক্তিধর চীন, ভারত, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রই মূলত এ অঞ্চলের রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যার মধ্যে মূলত প্রধান দুই প্রতিযোগী চীন-যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব স্ট্র্যাটেজি রয়েছে এ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে। বিশেষত চীনের দি সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট অ্যান্ড দি টুয়েন্টি-ফার্স্ট সেঞ্চুরি মেরিটাইম সিল্ক রোড বা ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড সংক্ষেপে ওবিওআর (যেটি নিয়ে পূর্বে আমার লেখায় আলোচনা হয়েছে)। উপকূলবর্তী সিল্ক রোড তথা "টুয়েন্টি-ফার্স্ট সেঞ্চুরি মেরিটাইম সিল্ক রোড" একটি পরিপূরক বিনিয়োগ যার লক্ষ্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ওশেনিয়া, এবং উত্তর আফ্রিকায় বিভিন্ন জল-সংলগ্ন এলাকা ,দক্ষিণ চীন সাগর, দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর, এবং ব্যাপকতর ভারত মহাসাগর এলাকার মাধ্যমে সহযোগিতা পরিবেষ্টন এবং নিজেদের ক্ষমতার জাল বিস্তার।
কিন্তু আমার আজকের আলোচনা চীন নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে এবং বাংলাদেশের আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাদের ভাবনা নিয়ে।আর এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজি সম্পর্কে সহজ করে বলা যায়, বিশ্ব বাণিজ্যবলয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীন ঠাণ্ডা লড়াই মোকাবেলার কৌশলগত উপায় হিসেবে মূলত এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করেছে ( Indo-Pacific Strategy)। বিশ্ববাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ নীতিতে এ অঞ্চলের দেশগুলোতে সুশাসন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বঞ্চিত জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সহযোগিতার কথা বলা হলেও এর নেপথ্যে রয়েছে নতুন বাণিজ্যিক বলয় সৃষ্টির উদ্দেশ্য। আর এটাকে কেন্দ্র করে মহারথিদের সৃষ্ট প্রতিযোগিতার বাংলাদেশের মতো ছোট রাষ্ট্র গুলোর জন্য বড় কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে সমীকরণের খেলায়। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিক নীতি বাস্তবায়নে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বড় এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেছে ভারত। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা নীতির কাছে ভারতে গুরুত্ব বাড়ছে প্রতিনিয়ত। আর এই বাড়তি গুরুত্ব স্বীকৃতি দিতে গত মাসেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রায় ৪ লাখ সামরিক-বেসামরিক সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত ইউএস প্যাসিফিক কমান্ড বা পিএসিওএম এর নাম পরিবর্তন করে 'ইউএস ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড' নামকরণ করেছে।( দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গঠিত সবচেয়ে পুরনো ও বৃহত্তর কমান্ড ইউনিট) ।

এসব প্রাসঙ্গিক আলোচনার মূল কথা হলো এই ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বিশ্বরাজনীতিতে বড় একটা ফ্যাক্টর হিসেবে আমরা সকলেই অবহিত থাকলেও বাংলাদেশও যে যুক্তরাষ্ট্রের এ স্ট্র্যাটেজির অন্তভুক্ত গুরুত্ববহ একটি দেশ তা অনেকেরই জানা ছিলো না । যা পরিস্কার করেছেন গতকালকে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। তিনি গতকাল ঢাকায় কূটনৈতিক সাংবাদিকদের (Diplomatic Correspondents Association, Bangladesh) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় জানান ‘‘বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন ভারত-প্রশান্ত মাহসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতার সঙ্গে যুক্ত এবং ভারত-প্রশান্ত মাহসাগরীয় অঞ্চলকে ঘিরে নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র একই গণতান্ত্রিক নীতি ও ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ বিষয়টিই আমাদের দুই দেশের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। আর ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ সরকার অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ, যেখানে বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে।… বাংলাদেশ সরকার সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে- আমরা সেটাই দেখতে চাই।” (“The US and Bangladesh are built on the same democratic principles and foundations. This is what makes both of our countries strong. And a strong Bangladesh is crucial for the stability of the Indo-Pacific region. The government of Bangladesh has committed to hold free, fair, participatory and credible elections that reflect the will of Bangladeshi people.We look to the government to fulfill this commitment.”)। ২০১৪ সালের ৫ ই জানুয়ারীর নির্বাচনের পর থেকেই বিদেশী মহল ক্রমান্তয়ে গভীর থেকে গভীরতর ভাবে উদ্বিগ্তা প্রকাশ করে থাকলেও ঠিক এমন শব্দ ব্যবহার করে কূটনৈতিক সাংবাদিকদের আলোচনা সভায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের উক্তটি নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে সবাইকে। বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন ভারত-প্রশান্ত মাহসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতার সঙ্গে যুক্ত কথাটির মধ্য দিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে তাদের মাথা ঘামানের পাশাপাশি বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বেরও ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ১৬ কোটি জনগণের সুশাসন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সহযোগিতার কথা বলে পরাশক্তিগুলোর মাথা ঘামানোর আড়ালে সত্যিকার অর্থে কি হতে যাচ্ছে তা-ই দেখার বিষয়। কারণ, দেশের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক সংকটকে কাজে লাগিয়ে পরাশক্তিগুলোর নিজেদের থলে ভারী করার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ কতটুকু সুরক্ষা পাবে কিংবা গণতান্ত্রিকভাবে নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান করতে সচেষ্ট হবে তা-ই মূলত দেখার বিষয়।
--এম টি ‍উল্যাহ, আইনজীবী ও কথা সাহিত্যিক

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৪৩

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:



বাংলাদেশকে তার উন্নয়নের গতিপথে কোন বাধাকে তোয়াক্কা না করে একটি অবাধ সুষ্ঠ ও গঠনতান্ত্রিক নির্বাচন করুক সে প্রচেষ্টা দেখতে চাই! সেই সাথে কোন পরাশক্তির পদলেহন নয় বরং নিজ শক্তিতে বলিয়ান হয়ে বিশ্ববুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে সেই প্রত্যয় রাখুক!

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:১১

এম টি উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৫০

দীপ্ত একাত্তর বলেছেন: বাংলাদেশে মার্কিন প্রভাব খুব কম। ভারত চীন যেভাবে চাইবে সেভাবেই হবে।

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:১১

এম টি উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: এম টি উল্যাহ কে আপনি?
আপনি কথা সাহিত্যিক??
নিজেকে নিজেই কথা সাহিত্যিক বলছেন??? তাহলে অন্যরা কি বলবেন?

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:১১

এম টি উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.