নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

আমি এম টি উল্যাহ। আইনি উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah , Email- [email protected]

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এশিয়ার প্রভাব বিস্তারের রাজনীতিতে চীন-ভারতের দৌড়াদৌড়ি (মহাসাগর পর্ব)

৩০ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৬

প্রতিবেশী ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রী মৌদি দৌড়ে বেড়াচ্ছেন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বুকে। চীন ভারতের প্রতিযোগিতামূলক পররাষ্ট্রনীতিতে ধরাশয়ী মৌদি সরকারের জন্য নির্বাচনী মহূর্তে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বছর। বিশেষ করে ভারতের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ, ভুটান, পাকিস্তান, মায়ানমার, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সম্পর্কের খাতিরে চীনের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার নজির মৌদি সরকাররের পররাষ্ট্রনীতিকে অগ্রহণযোগ্য করে তুলছে বলে প্রতিয়মান। বাংলাদেশ বাদে বাকিরা মোটামুটি চীন মুখীই বলা চলে। আমরা একদিকে এই দুই শক্তির দ্বন্দ্বের সুযোগ আমরা নিতে চাইছি। এটা থেকে যাতে আমরা আহত না হয়ে বেরিয়ে আসতে পারি, অন্যদিকে ঘুরে ফিরে ভারত মুখী নীতির নিকট ধরাশয়ী হচ্ছি। দক্ষ, দূরদৃষ্টি এবং কূটনৈতিক প্রজ্ঞার প্রমাণ কি আমরা দিতে পারতেছি না হেরে যাচ্ছি তা ভবিষ্যত বলে দিবে।

যাইহোক,দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার তিনটি প্রধান দেশের সাথে সম্পর্ক মজবুত করতে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে পাঁচ দিনের সফরে গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রথমে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় দেশ ইন্দোনেশিয়া গেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। সেখানে ইন্দোনেশিয় প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বুধবার (৩০ মে) এব বৈঠকের পর দুই দেশ সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে সম্মত হয়। মি জোকো বলেন, প্রতিরক্ষা খাতে দুই নেতাই বিশেষ করে ইন্দো-প্রশান্ত কৌশলের অংশ হিসেবে নৌ সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। এখানে বলে রাখা ভাল, ইন্দো-প্রশান্ত কৌশল বলতে এই এলাকায় ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের জোটবদ্ধ কর্মকান্ড বুঝায়। অনেকেই এই তৎপরতাকে চীনকে মোকাবেলার অংশ হিসেবে দেখে থাকেন।

কারণ, চীনের দি সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট অ্যান্ড দি টুয়েন্টি-ফার্স্ট সেঞ্চুরি মেরিটাইম সিল্ক রোড বা ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড (সংক্ষেপে ওবিওআর) একটি উন্নয়ন কৌশল ও কাঠামো যেটি দি বেল্ট অ্যান্ড রোড (সংক্ষেপে বিএন্ডআর) অথবা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নামেও পরিচিত। এটিকে বলা হয়ে থাকে একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় উন্নয়ন কৌশল প্রকল্প।
বিআরআইয়ের মূল চাবিশব্দ হলো কানেকটিভিটি। এর উদ্দেশ্য এশিয়াকে বিশেষ বাণিজ্যের কেন্দ্রীয় ইঞ্জিন করে তোলা। এ পরিকল্পনায় থাকছে সমুদ্রপথে একগুচ্ছ আন্তর্জাতিক বন্দর, ভূমিতে আন্তসীমান্ত সড়ক, উচ্চগতির রেলপথ, বিমানবন্দর এবং ডিজিটাল যুক্ততার অবকাঠামো নির্মাণ। এর সমান্তরালে থাকবে বিদ্যুতের গ্রিড, গ্যাসের পাইপলাইন এবং বাণিজ্য–সহায়ক আর্থিক কার্যক্রম। এই বাণিজ্যপথ এশিয়ার বিস্তৃত এলাকায় জালের মতো ছড়িয়ে থাকবে, এশিয়াকে ভূমি-সমুদ্র-আকাশ ও ডিজিটাল মাধ্যমে ইউরোপ ও আফ্রিকার সঙ্গে যুক্ত করবে। পুঁজিবাদী বাজার অর্থনীতি যখন পশ্চিমাদের হাতছাড়া হতে বসেছে, তখন এশিয়ার পুরনো অর্থনৈতিক শক্তিগুলো চীনের নেতৃত্বে এক যুগান্তকারি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে এ প্রকল্পের আওতায় বলে মনে করা হচ্ছে। দুই হাজার বছর আগে চীনের জিয়ান থেকে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও রোমান সাম্রাজ্য পর্যন্ত যে সুসমৃদ্ধ বাণিজ্য পথ গড়ে উঠেছিল আরো ব্যাপক পরিসরে তার পুনরুজ্জীবনই চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মূল লক্ষ্য। সার কথা হলো, চীনের এই মূল সিল্ক রোডের অস্তিত্ব ছিল প্রায় দুই হাজার বছর আগে। এটা বাণিজ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পথ ছিল। এর মাধ্যমে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের মধ্যে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক চিন্তাধারার বিনিময় হয়েছে। চীনের প্রাচীন সমুদ্র ও সড়কপথের সিল্ক রোড পুনরুদ্ধারের প্রয়াস হলো ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগ, যে রাস্তাটি পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমের সংযোগ স্থাপন হয়েছিল। চীনের মতে, নতুন ‘সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট’ও একই কাজ করবে।
চীনের ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগ ঘুম হারাম করে দিলো মার্কিন-ভারত মিত্রের।এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসাবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারে অনানুষ্ঠানিকভাবে মরিয়া হয়ে ওঠেছে তারা। তারই অংশ হিসাবে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত নিয়মিতই এ বিষয়ে কথা বলছেন।দৌড়াদৌড়ি করতেছেন।
আসা যাক মুল আলোচনায়, মোদির ইন্দোনেশিয়া সফরের সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সাবাং দ্বীপে ভারতের প্রবেশাধিকার। মালাক্কা প্রণালীর কাছাকাছিই এই দ্বীপের অবস্থান। অর্থনৈতিক ও কৌশলগত বিবেচনায় বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র পথ হিসেবে পরিচিত মালাক্কা প্রণালী। ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে নৌ যোগাযোগের প্রধান পথ হলো এই মালাক্কা প্রণালী। বড় বড় শক্তিধর দেশগুলো যেমন চীন, জাপান, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া বাণিজ্যের জন্য এই প্রণালী ব্যবহার করে। সেই হিসেবে পৃথিবীর ব্যস্ততম প্রণালী এটা। ভারতের সাথে ইন্দোনেশিয়ার সাবাং বন্দর নিয়ে সমঝোতা চুক্তি চীনকে উদ্বিগ্ন করে তুলল। কারণ চীন মালাক্কা প্রণালী ব্যাপক হারে ব্যবহার করে। এর অর্থ হলো ইন্দোনেশিয়ার সাবাং বন্দরে ভারত সামরিক ঘাঁটি গড়লে চীনের অর্থনৈতিক ও জ্বালানি নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে শঙ্কিত। চীনের গ্লোবাল টাইমস ইতিমধ্যে এক সম্পাদকীয়তে বলেছে, চীন সবসময় ভারতের বিভিন্ন বন্দরে বিনিয়োগকে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করেছে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে ইন্দোনেশিয়ার সাথে ভারতের সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে চোখ বন্ধ করে থাকবে বেইজিং। নয়াদিল্লী যদি কৌশলগত সাবাং দ্বীপে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের চিন্তা-ভাবনা করে, তাহলে চীনের সাথে হয়তো সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়বে তারা এবং এ সিদ্ধান্তের জন্য তাদের হয়তো পস্তাতে হবে। সেক্ষেত্রে ভারত মহাসাগরে একই ধরনের ঘাঁটি গড়তে পারে চীন।
এইদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর শেষ করে আসার পরেই গতকালকেই ভারতের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ওশানোগ্রাফির (এনআইও)’র ডিরেক্টর সুনীল কুমার সিং জানান, ভারতের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ওশানোগ্রাফির (এনআইও) সমুদ্র গবেষণা বিজ্ঞানীরা বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (বিওআরআই) সাথে একত্রে কাজ করার সুযোগ পাবে। দেশের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনের (ইইজেড) যে সব জায়গায় এখনও কোন কাজ হয়নি সে সব ক্ষেত্রে কাজ করবেন তারা। এটাও নতুন করে বাংলাদেশ অংশে সাগরের খনিজ সম্পদ আহরণ নিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে হচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটা ভারতের জন্য একটা বড় পাওনা হয়ে গেল।
বাংলাদেশের সমুদ্র নিয়ে চীনের নজর সে আগে থেকেই। জাপান ও ভারতের সাথে এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগে বেশ সুবিধা করতে পারছে না চীন।এমন অবস্হা বিরাজমান থাকা কালীন এরই মধ্যে গত সপ্তাহে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ‘অবাধ ও মুক্তি ইন্দো-প্রশান্ত কৌশলের’ অংশ হিসেবে ভারত মহাসাগরের তিন দেশ – বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও শ্রীলংকায় বন্দর নির্মাণের জন্য বড় ধরনের ঋণ দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানান। যে তিনটি জায়গায় বন্দর নির্মাণের কথা ভাবা হচ্ছে, সেগুলো হলো বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মাতারবাড়ি, দক্ষিণপূর্ব মিয়ানমারের দাওয়েই এবং উত্তর শ্রীলংকার ত্রিণকোমালি। বাংলাদেশের মাতারবাড়িতে নতুন বন্দর নির্মাণ করা হবে যেখানে বহু বিলিয়ন ইয়েন খরচ হবে। ধারণা করা হচ্ছে নতুন বন্দরটিতে বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক কার্গো খালাস করা সম্ভব হবে। এর সাথে সাথে আশেপাশের এলাকাগুলোরও উন্নয়ন হবে। যদিও চীনও দাওয়েই এবং মাতারবাড়ির আশেপাশে বন্দর নির্মাণের চেষ্টা করছে। কিন্তু জাপানের পরিকল্পনার কারণে তারা ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণ শ্রীলংকার হামবানতোতা বন্দর ৯৯ বছরের জন্য পরিচালনার অধিকার পেয়েছে চীন। একইসাথে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে বন্দর উন্নয়নে সহায়তাও করছেন চীন।
সর্বোপরি চীনের সাথে পাল্লা দিয়ে ভারত-মার্কিন-জাপান-অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ কোরিয়া বলয়ের দৌড়ঝাপের অংশ হিসাবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার সাগরনীতি এক চরম পর্যায়ে অবতীর্ণ বলা চলে। চীনের ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড প্রকল্পের মাধ্যমে বৈশ্বিক রাজনীতিতে তাদের আধিপত্য কি রুখতে পারবে মার্কিন-ভারত সমর্থিত গোষ্ঠী? এক্ষেত্রে বাংলাদেশেরই বা নীতি কি কিংবা আমরা কি সিদ্ধান্ত নিতে পারছি? কূটনীতিক রাজনীতি বুঝাটা বড় দায়। কারণ, এ খেলায় নিজেদের বলয় বজায় রাখতেই কি স্বয়ং উত্তর কোরিয়া নীতিতে আলোচনায় বসতে চায় মার্কিন মোড়ল?তবে, সবকিছুতে ছাড়িয়ে ইহা সুষ্পষ্ট , চীন তার অর্থনীতিকে কাজে লাগিয়ে চলছে এক অদম্য গতিতে এবং বিশ্ব রাজনীতিতে সাগর বড় ভূমিকা রাখে তা একটু নজর রাখলেই বুঝা যায়। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:২৯

রাকু হাসান বলেছেন: ভাল লিখেছেন । আমাদের খুব ভাল কার্যকরি কূটনৈতিক দিকগুলো দেখা উচিত । এখানে যেমন নিজ দেশের স্বার্থ অনেক আছে ,তেমনি একটু এদিক সেদিক হলে লাভ বা স্বার্থের থেকে ক্ষতি বেশি হওয়ার সম্ভবনা । আমার মনে হয় এ যাত্রায় ভারত ও মিত্ররা চীনের সাথে পাল্লা দিয়ে পারবে না । যদিও ভাল প্রতিপক্ষ বলা যায় । এতে মিত্রদের তেমন কিছু না হলেও ভারতের বেশ কিছু বিরুপ নতুন সমস্যায় জড়িয়ে যেতে পারে ।

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:০৯

এম টি উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: খুব কঠিন বিষয় নিয়ে লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.