নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

আমি এম টি উল্যাহ। আইনি উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah , Email- [email protected]

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিষেধাজ্ঞা মামলা কি? অস্থায়ী ও চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা কখন দেওয়া হয় এবং যে যে ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা যায় না

০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৪:১১


নিষেধাজ্ঞা কাকে বলে (What is Injunction) ? নিষেধাজ্ঞা হল একটি বিচার বিভাগীয় কার্যক্রম যেখানে কোন পক্ষকে নির্দিষ্ট কোন কাজ করা বা করা হতে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করা হয়।

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, কোনো কিছু করা হতে মামলার পক্ষগণকে বিরত রাখা বা মামলা করার পর কোনো পক্ষের করা কাজের জন্য পরিবর্তিত কোনো সম্পত্তিকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনাকে ইনজাংশন বা নিষেধাজ্ঞা বলে।

চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলা আদালতে স্বাভাবিক মামলার মতোই পরিচালিত হয়। বাদীর অধিকারের বিপরীত কোনো কাজ থেকে বিবাদীকে চিরকালের জন্য বিরত থাকার নির্দেশ। এ নিষেধাজ্ঞা মামলার শুনানির পর প্রদত্ত ডিক্রির মাধ্যমে মঞ্জুর করা হয়। তবে এর আগে আদালতকে এই মর্মে সন্তুষ্ট করতে হবে যে আবেদনকারী পক্ষের অধিকার লঙ্ঘনের ফলে বাস্তব ক্ষতি বা সম্ভাব্য ক্ষতি নিরূপণের কোনো মানদ- নেই অথবা যেখানে আর্থিক প্রতিকার পর্যাপ্ত নয়। এ নিষেধাজ্ঞা পেতে হলে বাদীকে অবশ্যই সম্পত্তির দখলে থাকতে হবে।

নিষেধাজ্ঞার প্রধানত দুই প্রকার হতে পারে। যথাক্রমে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা। স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা অনন্তকালের জন্য চলতে পারে। মামলার রায় চূড়ান্ত আদেশ হওয়ার পর এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।

মামলা চলাকালীন সময়ে বিবাদী যাতে মামলার বিষয়বস্তু হস্তান্তর বা কোন প্রকার রূপান্তর ঘটাতে না পারে সেই জন্য মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিবাদীকে এই কাজ হতে বিরত থাকার জন্য সাময়িকভাবে যে আদেশ দেয়া হয় তাকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বলে।
দেওয়ানী কার্যবিধির ৩৯ আদেশের বিধি-১ বা বিধি-২ অনুসারে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার পিটিশন দাখিল করতে হয়।

অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রার্থনার সময় আবেদনকারীকে কিছু বিষয় প্রমাণ করতে হবে –

(১) আবেদনকারীকে অবশ্যই (Prima facie case) প্রমাণ করতে হবে। সংক্ষেপে বলতে গেলে মামলার গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে।

(২) আবেদনকারী আদালতকে এই মর্মে সন্তুষ্ট করবে যে অস্থায়ী নিষেধজ্ঞার আবেদন গ্রহণ করা না হলে অপূরণীয় ক্ষতি (Irreparable loss) হবার সম্ভাবনা আছে। যেখানে অপূরণীয় ক্ষতি বলতে সেই ক্ষতিকে বুঝাবে যা অর্থ দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়।

(৩) অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন গ্রহণ করার ক্ষেরে আদালত (The balance of convenience and inconvenience of the Parties) বিবেচনা করেন। তাই আবেদনকারীকে সুবিধা এবং অসুবিধার ভারসাম্য আদালতে উপস্থাপন করতে হবে।

(৪) জনস্বার্থে আদালতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করা যায়। যা সাধারণত সরকারের বিপক্ষে করা হয়। সেই ক্ষেত্রে জনস্বার্থ (Public interest) বিষয়টি কার্যকর ভাবে উপস্থাপন করতে হবে।

৩৯ আদেশের বিধি-১ অনুসারে আদালত স্থাবর বা অস্থাবর উভয় ক্ষেত্রে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রদান করতে পারেন। অন্যদিকে ৩৯ আদেশের বিধি-২(১) এর অধীন শুধুমাত্র চুক্তি ভঙ্গ (Breach of contract) বা ক্ষতি সাধন (The commission of an injury) করা হতে বিরত রাখতে আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করেন।

অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা যদি গ্রহণ করা হয় এবং সে সাথে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা হলে আদালত ৩৯ আদেশের বিধি-২(৩) আনুসারে অমান্যকারীর সম্পত্তি ক্রোক অথবা উক্ত অমান্যকারীকে ৬ মাস দেওয়ানী কারাবাসে আটক অথবা উভয় প্রকার দণ্ড প্রদান করতে পারেন। এই ক্রোকের মেয়াদকাল আবার কখনোই ১ বছরের বেশী সময় বলবৎ থাকবে না, বিধি-২(৪) অনুসারে।

নিষেধাজ্ঞা প্রদানের আগে ৩৯ আদেশের বিধি-৩ অনুসারে আদালত অপর পক্ষকে নোটিশ প্রদান করতে বলবেন যা বাধ্যতামূলক। এবং বিধি-৩ক ’তে বলা আছে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদনকারী পক্ষ অপর পক্ষকে নোটিশ দিলে, উক্ত নোটিশ বিনা জারিতে ফেরত আসলে, আবেদনকারীকে নোটিশ ফেরত আসার ৭ দিনের মাঝে আবার নোটিশ প্রদান করতে হবে।

বিধি-৫ অনুসারে কোন কর্পোরেশনের বা অফিসের উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে তা উহার কর্মকর্তাদের উপর বাধ্যতামূলক ভাবে কার্যকর হয়। বিধি-৫ক ‘তে বলা আছে অতি জরুরি বিষয় ছাড়া সরকারের বিপক্ষে এক-তরফা অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা যাবে না।

সকল কিছুর বিবেচনায় ৩৯ আদেশের বিধি-৪ অনুসারে আদালত যে কোন সময় অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ পরিবর্তন বা বাতিল করতে পারেন। সেই সাথে বিধি-৫ক(৪) আরো বলে কেউ যদি মিথ্যা বা প্রতারণামূলক ভাবে আদালত হতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা নিজের পক্ষে গ্রহণ করে, তবে আদালত তাকে ক্ষতিপূরণমূলক ১০,০০০/- টাকা পর্যন্ত খরচের আদেশ প্রদান করতে পারেন। এবং পরিবেশ পরিস্থিতির বিবেচনায় ৩৯ আদেশের (৬-১০) বিধিতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের আরো কিছু নিয়ম নীতি উল্লেখ করা আছে।

আবার যখন ৩৯ আদেশের বিধি-১ এবং বিধি-২ অনুসারে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা যখন মঞ্জুর করা যায় না সেই ক্ষেত্রে আদালত উক্ত কার্যবিধির ১৫১ ধারা অনুসারে অন্তর্নিহিত ক্ষমতা (Saving of inherent powers of Court) প্রয়োগ করে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে হবে যে, অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা না হলে তার অপূরণীয় ক্ষতি হবে। এই ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞাকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা না বলে ১৫১ ধারার নিষেধাজ্ঞা বলা হয়।

মামলায় জড়িত কোনো পক্ষ কর্তৃক মামলা সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি বিনষ্ট, ধ্বংস বা হস্তান্তর হওয়ার আশংকা দেখা দিলে অথবা কোনো ডিক্রি জারির দরুন বেআইনিভাবে বিক্রয় হওয়ার উপক্রম হলে অথবা বিবাদী তার পাওনাদারকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে তার সম্পত্তি অপসারিত বা হস্তান্তরিত করার ইচ্ছা প্রকাশ বা হুমকি প্রদর্শন করলে আদালত অনুরূপ কাজ রোধ করার জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিতে পারেন।

চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা/Perpetual Injunction-

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫৩ ধারায় Perpetual Injunction/চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে- ‘’চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র শুনানির পর মামলার গুণাগুণের উপর ভিত্তি করে প্রদত্ত ডিক্রি দ্বারাই মঞ্জুর করা যায়। তার দ্বারা প্রতিবাদীকে চিরস্থায়ীভাবে এমন একটি অধিকার প্রয়োগ হতে অথবা এমন একটি কাজ করা হতে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়, যা বাদীর অধিকারের বিপরীতে হতে পারে’’।

সাধারণ কথায় বলা যায়, যে নিষেধাজ্ঞা মোকদ্দমা শেষ হবার পর মামলার গুণাগুণের উপর ভিত্তি করে ডিক্রির মাধ্যমে মঞ্জুর করা হয় তাকে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বলে।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ দ্বারা চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার যাবতীয় বিধান নিয়ন্ত্রিত হয়। ‘Perpetual injunction when granted’ শিরোনামে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫৪ ধারায় চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

৫৪ ধারায় যে ৫টি বিষয়ে আদালত চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করতে পারেন-

(১) যেখানে বিবাদী আবেদনকারীর সম্পত্তির জিম্মাদার। জিম্মাদার বলতে কাদের বুঝাবে সে সম্পর্কে এই আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে, জিম্মাদার এমন ব্যক্তিকে বুঝাবে যার উপর বিশ্বাস পূর্বক মালিকানা ন্যস্ত করা হয়েছে।

(২) যেখানে অধিকার লঙ্গনের ফলে কৃত ক্ষতি অথবা সম্ভাব্য ক্ষতি নিরূপণের কোন মানদণ্ড নাই।

(৩) যেখানে অধিকার লংঘন এমন যে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পর্যাপ্ত প্রতিকার হবে না অর্থাৎ আর্থিক ক্ষতিপূরণের অপর্যাপ্ততা।

(৪) যেখানে এমন হস্তক্ষেপের ফলে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না অর্থাৎ আর্থিক ক্ষতিপূরণের অনিশ্চয়তা।

এবং (৫) To prevent a multiplicity of Judicial proceedings অর্থাৎ বিচারিক কার্যক্রমের সংখ্যাধিক্য রোধের জন্য।

যে সকল ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা যায় না-

১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ধারা-৫৬ অনুসারে ১১টি ক্ষেত্রে আদালতে নিষেধাজ্ঞা প্রার্থনা করা যায় না।

ক) বিচার বিভাগের কার্যধারা স্থগিত চেয়ে। তবে বিচারিক কার্যক্রমের পুনঃপৌনিকতা রোধ করার জন্য আবেদন করা যায়।

খ) আধীনস্ত নহে এমন আদালতের কার্যধারা স্থগিত চেয়ে।

গ) কোন ব্যক্তিকে আইন প্রণয়নকারী দলের কাছে আবেদন করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করলে।

ঘ) যদি কোন সরকারের কাজের উপর বা কোন সার্বভৌম রাষ্ট্রের কাজের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে।

ঙ) ফৌজদারি কার্যধারা স্থগিত চেয়ে।

চ) কার্যসম্পাদন যোগ্য নয়ে এমন চুক্তিভঙ্গ নিরোধ চেয়ে।

ছ) উপদ্রবের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন যেখানে উপদ্রবের বিষয়টি স্পষ্ট নয়।



জ) আবেদনকারীর মৌন সম্মতি রয়েছে এমন ক্রমাগত লঙ্ঘন নিরোধ চেয়ে আবেদন।



ঝ) ট্রাস্ট ভঙ্গ ছাড়া অন্য যেকোন বিষয়, যেখানে স্থগিতাদেশ বাদে অন্য কোন ভাবে যথাযথ প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থা থাকে।

ঞ) আবেদনকারীর বা তার প্রতিনিধির ব্যবহার বা কাজ বা আচরণ সৎ না হলে।

ট) যিনি স্থগিতাদেশ প্রার্থনা করছেন মামলায় যদি তার ব্যক্তিগত স্বার্থ না থাকলে।

এই সকল ক্ষেত্রে আদালত কখনো ‘নিষেধাজ্ঞা’ বা ‘ইনজাংশন’ মঞ্জুর করবে না। যা আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক।



#Lawyer_M_T_Ullah
[email protected]
01733594270

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৪:২৪

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ

০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:০৬

এম টি উল্লাহ বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.