নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

আমি এম টি উল্যাহ। আইনি উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah , Email- [email protected]

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্টনের মামলা/বাটোয়ারা মামলা

২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৩:৫৯



বাটোয়ারা/সম্পত্তি বন্টনের মামলার ( Partition Suit):
যৌথ বা এজমালী সম্পত্তি ভোগ-দখলে, সহ-মালিক কর্তৃক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে বা আপনার ন্যায়সংগত হিস্যাংশ প্রাপ্তিতে অন্তরায় বা বাঁধা সৃষ্টি হলে, আপনি মৌখিক বা লিখিতভাবে আপনার অংশ ভোগ-দখল দাবি করার পরেও যদি তিনি/তাঁরা বুঝিয়ে না দেন বা অস্বীকার করেন, এমতাবস্থায় দেওয়ানী আদালতে বাটোয়ারার মামলা দায়ের করা আপনার আইনসংগত অধিকার। ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পত্তির সীমানা চিহ্নিত করে যার যার প্রাপ্ত স্বত্ব বুঝে নেয়ার প্রক্রিয়াটি হচ্ছে ‘বণ্টন’। আদালতের মাধ্যমে উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টন করে নিলে জটিলতা অনেক কমে। এ জন্য সব শরিককে এখতিয়ারসম্পন্ন দেওয়ানি আদালতে একটি মামলা করতে হয় যা ‘বণ্টন মোকদ্দমা’ বা ‘বাটোয়ারা মামলা’ নামে পরিচিত। ইংরেজিতে একে ‘পার্টিশন স্যুট’ বলা হয়।

**বন্টনের মামলা/বাটোয়ারা মামলা কখন হয়ঃ

১. যখন নালিশী সম্পত্তিতে দাবীদার পক্ষ এবং অন্যান্য শরীকরা দখলে থাকে।
২. যদি নালিশী সম্পত্তিতে দাবিদার পক্ষ তার প্রাপ্য থেকে, কম দখলে থাকে।
৩. অন্যান্য পক্ষগণ যদি তার প্রাপ্য থেকে বেশী দখলে থাকে।
৪. যদি অন্যান্য পক্ষ দাবীদারের পক্ষের দাবীকৃত অংশ অস্বীকার করে।

সম্পত্তির শরিক দুই ধরনের হয়ে থাকে;
ক) উত্তরাধিকার সূত্রে শরিক এবং
খ) খরিদ সূত্রে শরিক ।

যদি কোন অংশীদার আপোষ মতে বণ্টন করতে রাজি না হন, সে ক্ষেত্রে যে কোনো অংশীদার বণ্টনের জন্য আদালতে মামলা করতে পারেন।

বাটোয়ারা মামলা করতে সম্পত্তির মালিকানা সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র যেমন ভূমি জরিপ খতিয়ান, নামজারি খতিয়ান, মালিকানা দলিল, উত্তরাধিকার সনদ ইত্যাদি সংগ্রহে রাখতে হবে।

বণ্টনের শর্তাবলি বণ্টনের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত জড়িত। যথাঃ

*সম্পত্তি পরিমাপ করে অংশীদারদের জমির সীমানা চিহ্নিত করতে হবে এবং বণ্টন তালিকায় প্রত্যেক সহ-মালিকের বরাদ্দকৃত সম্পত্তির উল্লেখ থাকতে হবে।
*তালিকায় মালিকানার বিভাজন সকল সহ-মালিক কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে।
*বণ্টনের বিবরণ সুস্পষ্ট হতে হবে; প্রত্যেকটি তালিকা সহ-মালিকদের কাছ থেকে স্বাক্ষরিত হতে হবে
*যথাযথভাবে স্ট্যাম্প শুল্ক দিয়ে দলিলটি রেজিস্ট্রি করতে হবে
*সহ-অংশীদাররা আপস বণ্টন করে পরবর্তীতে তাদের কেউ তা না মানলে দেওয়ানি আদালতের মাধ্যমে তা কার্যকর করা যায়।
*বাটোয়ারা মামলায় সাধারণত প্রত্যেক দাগের জমি সব সহ-শরিকের মধ্যে বণ্টিত হয়ে থাকে।

মেয়েরা কি বাটোয়ারা মামলা করতে পারে?
আমাদের সমাজে কিছু মানুষের ধারণা রয়েছে মেয়েরা পৈতৃক সম্পত্তি বা অংশীদারি সম্পত্তি মীমাংসার মাধ্যমে বুঝে না পেলে বাটোয়ারা মামলা করতে পারে না। কিন্তু এই ধারণা ভুল। মেয়েরা সাধারণত ভাইদের কাছে বাটোয়ারার কথা মুখ ফুটে বলতে পারে না। আর এই সুযগে ভাইয়েরা বোনের সম্পত্তি নিজেদের নামে জরিপ/রেকর্ড করিয়ে নেয়। কিছু বছর পর এই জমির হদিস পাওয়া যায়না। তবে বাটোয়ারা মোকদ্দমা করে জমি উদ্ধার করা যায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায় জমি দখলে থাকে না। তবে মাথায় রাখতে হবে বাটোয়ারা মোকদ্দমা করতে হলে শুধু মালিকানার অংশীদার হলেই হবে কোন দখলের প্রয়োজন নেই। তবে বাটোয়ারা মোকদ্দমার সাথে দখলের আবেদনও করতে হবে। ‘কোন বিধবা নারীও তাহার স্বামীর অংশের বাটোয়ারা চাইতে পারে।’ [এআইআর ২০১৬ ভিলিউম ২৯]

আপস-মীমাংসার সুযোগ
জমিজমার ভাগবাঁটোয়ারার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩খ ধারায় আপসমূলে বণ্টনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। আপস-মীমাংসার মাধ্যমে নিজেরা বণ্টন করে নিলেই সুবিধা বেশি। আদালতে যেহেতু দীর্ঘ সময় লাগে নিষ্পত্তি হতে, তাই নিজেরা আপস-মীমাংসার মাধ্যমে ভাগবাঁটোয়ারা করে নেওয়াই ভালো। নিজেদের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে একটি বণ্টনের দলিলও করে নিতে হবে। এ দলিলটি রেজিস্ট্রি করে নিতে হবে। উত্তরাধিকারসূত্রে জমির মালিক হলেও নামজারি বা মিউটেশন করা বাধ্যতামূলক। নামজারি করার সময় বণ্টননামা দলিল দাখিল করতে হয়। এ ছাড়া মোকদ্দমা চলা অবস্থায়ও আপস-মীমাংসা করে আদালত থেকে আপসমূলে ডিক্রি নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

**এ ধরনের মামলায় দুইবার দুটি ডিক্রি হয়, যার প্রথমটির নাম;
১)প্রাথমিক ডিক্রি আর পরেরটার নাম
২)চূড়ান্ত ডিক্রি।

>>প্রাথমিক ডিক্রিতে হিস্যা অনুযায়ী বণ্টনের আদেশ দেয়া হয়। আর চূড়ান্ত ডিক্রিতে প্রয়োজনে আমিন কমিশন পাঠিয়ে সরেজমিনে সম্পত্তির দখল দেয়া হয় এবং সীমানা পিলার দ্বারা বিভাজন (জমির ভাগ) করার মাধ্যমে চূড়ান্ত ডিক্রি প্রচার করা হয়। আদালত প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ করে সম্পত্তির সীমানা চিহ্নিত করে ডিক্রিপ্রাপককে সম্পত্তির দখল দেয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন।

**বণ্টন হওয়ার পর করণীয়ঃ
আদালতের মাধ্যমে বণ্টন হওয়ার পর এবং বণ্টন দলিল রেজিস্ট্রি করার পর অবশ্যই নিজ নামে নামজারি, জমাভাগ খতিয়ান করে নিতে হবে। পাশাপাশি খাজনাও প্রদান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, নামজারি হচ্ছে সরকারিভাবে সম্পত্তিকে নিজ নামে রেকর্ড করা।

**বণ্টনের পরও দখল না পেলে
আদালত থেকে বাটোয়ারা মামলার ডিক্রি পাওয়ার পরও সেই মোতাবেক দখল বুঝিয়ে দেয়া না হলে ‘উচ্ছেদের মামলা’ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে অংশীদারদের ভয়-ভীতি ও হুমকি দেয়া হলে সংশ্লিষ্ট ও নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা যেতে পারে। ভয়-ভীতি-হুমকি ও জীবননাশের আশঙ্কায় আদালতে ফৌজদারি মামলাও করা যায়।


** মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
০১৭৩৩৫৯৪২৭০ ( কল করার পূর্বে হোয়াটস্অ্যাপে ম্যাসেজ দিন)

লেখক- আইন বিষয়ক উপন্যাস 'নিরু" এবং 'অসমাপ্ত জবানবন্দী', মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস 'মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ' এবং 'একাত্তরের অবুঝ বালক' ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ ভোর ৪:৩৩

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: আপনি কি র্কোটে এব্যাপারে কেস নেন ?
................................................................
এই সব কেসের ব্যাপারে কোর্ট খরচ ও উকিল খরচ বাবদ
কি পরিমান টাকা খরচ হতে পারে ???

২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৪৩

এম টি উল্লাহ বলেছেন: বিস্তারিত আলোচনা করতে চেম্বারে আসতে পারেন কিংবা আপনার নিকটস্থ কোন বিজ্ঞ আইনজীবীর সহায়তা নিন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.