নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী। কর্মস্থল- হাইকোর্ট।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah
নিজের ব্যবসার জন্য বা প্রতিষ্ঠানের জন্য যদি কোনো নাম বা লোগো ব্যবহার করেন এটিও মেধাস্বত্ব হিসেবে ধরা হয়। একে ট্রেডমার্ক বলা হয়। ট্রেডমার্ক একটি ইউনিক নাম, লোগো, ট্যাগলাইন, শেপ, প্রতীক, চিহ্ন, শব্দ, স্লোগান যা কোন ব্যবসায় বা ব্যবসার পণ্যকে প্রকাশ করার জন্য বোঝানো হয়। একবার রেজিষ্ট্রেশন হয়ে গেলে এসব নাম, লোগো বা স্লোগান অন্য কোন অর্গানাইজেশন তাদের কমার্শিয়াল বেনেফিটের জন্য ব্যবহার করতে পারে না। স্বতন্ত্র পণ্যের মালিকানা স্বত্ব দাবি করার জন্য এবং নিজের ব্যান্ডকে আলাদা করে চেনানোর জন্য সাধারণত ট্রেডমার্ক ব্যবহার করা হয়। সত্ত্বধিকারী ছাড়া অন্য কেউ কোন পণ্যের ট্রেডমার্ক নিয়ে ব্যবসা করলে বা বিজ্ঞাপন দিলে তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
ট্রেডমার্ক নিবন্ধনঃ
ট্রেডমার্ক থাকলে হবে না তা নিবন্ধিত হয়ে থাকাটা জরুরি। এতে ভবিষ্যতের জন্য মালিকানা পাকাপোক্ত হবেমার্ক নিবন্ধন করা জরুরি। ট্রেডমার্ক নিবন্ধিনের জন্য বাংলাদেশের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রার বরাবরে পণ্যের ধরন অনুযায়ী নিবন্ধনের আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্র পাওয়া যাবে অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে। বর্তমানে বাংলায় নতুন আবেদন ফরম করা হয়েছে। আবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আবেদন ফি জমা করতে হয়। তবে প্রথমেই পণ্য ও সেবার আন্তর্জাতিক শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী আপনার পণ্য কোনো শ্রেণিভুক্ত তা জেনে নিতে হবে। আপনার ব্যবহৃত ট্রেডমার্ক বা প্রস্তাবিত ট্রেডর্মাকের সাথে অন্য কোনো মার্কের মিল আছে কি না তা আগে থেকেই জানার সুযোগ আছে। তবে অন্য মার্কের সঙ্গে মিল থাকলে এবং একই নাম আগে ব্যবহৃত হলে নিবন্ধন পাওয়া যাবে না। ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করা না হলে আদালতে ট্রেডমার্ক লংঘনের প্রতিকার পাওয়া যাবে না
ট্রেডমার্কের লঙ্ঘন কখন ও কিভাবে হয় :
যখন কোনো ব্যক্তি নিবন্ধিত স্বত্বাধিকারী বা ব্যবহারকারী না হওয়া সত্ত্বেও কোনো পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে নিজ ব্যবসায় স্বতন্ত্র বা প্রতারণামূলকভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ বা সাদৃশ্যমূলক কোনো মার্ক ব্যবহার করে এবং যে পণ্য বা সেবায় তা ব্যবহার করা হয় সেটা ট্রেডমার্কের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
যদি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত স্বত্বাধিকারী বা ব্যবহারকারী না হওয়া সত্ত্বেও অন্য কোন নিবন্ধিত ট্রেডমার্কের সহিত সাদৃশ্যপূর্ণ বা সাদৃশ্যমূলক কোন ট্রেডমার্ক প্রতারণামূলকভাবে অথবা স্বতন্ত্রভাবে নিজ পণ্যে বা সেবায় ব্যবহার করে তখন তা লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে।
ট্রেডমার্ক লঙ্ঘনের জন্য মামলা
ট্রেডমার্ক আইন ২০০৯ অনুযায়ী কোনো নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক নকল করলে ট্রেডমার্ক লঙ্ঘনের জন্য মামলা করা যাবে। আর যদি কোনো অনিবন্ধিত ট্রেডমার্ক নকল করা হয় তাহলে পাসিং অফের (অন্যের পণ্য নিজের নামে চালানো) মামলা করা যাবে। এসব মামলা করতে হয় জেলা জজ আদালতে। এ ছাড়া মিথ্যা ট্রেডমার্ক ব্যবহারের জন্য প্রথম শ্রেণির বিচারিক হাকিম বা মহানগর বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে। দায়ী ব্যক্তির সর্বনিম্ন ছয় মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত জেল বা সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
এ ছাড়া কোনো জিনিস আবিষ্কার করলে এর পেটেন্ট করানো যায়। আর কোনো কিছুর ডিজাইন থাকলে তারও নিবন্ধন করা যায়। পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরে এর নিবন্ধন করা যায়।
বাংলাদেশে প্রচলিত ট্রেডমার্ক আইন, ২০০৯ এবং দণ্ডবিধি, ১৮৬০ অধীনে ট্রেডমার্ক লঙ্ঘনের দায়ে দেওয়ানী এবং ফৌজদারি প্রতিকারের ব্যবস্থা রয়েছে।
দেওয়ানী প্রতিকার:
ট্রেডমার্ক আইন ২০০৯ এর ৯৬ ধারার অধীনে কোন নিবন্ধিত ট্রেডমার্কের লঙ্ঘন, নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক সংশ্লিষ্ট কোন অধিকার, নিবন্ধিত ট্রেডমার্কের সংশোধিত কোন অধিকার, এবং সাদৃশ্যপূর্ণ বা প্রতারণামূলকভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ কোন ট্রেডমার্ক নিবন্ধিত হোক বা না হোক বলে চালানো হলে যে কেউই জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবেন। এই ধারায় নিবন্ধিত এবং অ-নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক লঙ্ঘনের প্রতিকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৯৬ ধারার বিধানের ক্ষেত্রে এবং নিষেধাজ্ঞা, ঘোষণামূলক প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই জেলা জজ আদালতে মামলা করতে হবে। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে যেমন, নিবন্ধন বহি (রেজিস্ট্রি বই সংশোধনের) বা নিবন্ধন বাতিলের জন্য হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করতে হবে।
কিন্তু, প্রচলিত প্রথা অনুসারে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের আইনজীবীর মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করাও যায়, এক্ষেত্রে মামলা দায়েরের পূর্বেই প্রতিকার (লঙ্ঘন বন্ধ) পাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। তবে মামলা দায়েরের পূর্বে গোপন অনুসন্ধান করে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা জরুরী।
নিষেধাজ্ঞার দরখাস্ত দায়েরঃ
ট্রেডমার্কের স্বত্বাধিকারী ব্যক্তি অবৈধ ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে;
ক) অস্থায়ী (Temporary injunction) এবং
খ) স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Permanent injunction) চাইতে পারবে তবে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাইতে হলে তাকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, ইহা না দিলে তার অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হবে।
ক্ষতিপূরণ (Compensation): ট্রেডমার্কের স্বত্বাধিকারী ব্যক্তিটি যদি প্রমাণ করতে পারেন তার ট্রেডমার্কের সত্ত্বের অবৌধ ব্যবহার হয়েছে তবে তিনি আদালতের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারবেন এবং আদালত এতে সন্তুষ্ট হলে ক্ষতিপূরণ দিতে আদেশ দিতে পারবেন।
ট্রেডমার্ক লঙ্ঘন যখন ফৌজদারি অপরাধ ও প্রতিকারঃ-
মিথ্যা ট্রেডমার্ক বা ট্রেড বর্ণনা ব্যবহার, ট্রেডমার্ক নকল করা ও ট্রেডমার্ক নকল করার যন্ত্র দখলে রাখা ইত্যাদির বিষয়ে দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ৪৮২, ৪৮৩ এবং ৪৮৫ ধারার অপরাধ যার শাস্তি হলো সর্বোচ্চ দুই বছর এবং সর্বনিম্ন ছয় মাসের কারাদণ্ড সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ দুই লক্ষ এবং সর্বনিম্ন পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড।
ট্রেডমার্ক আইন ২০০৯ এর ৭৩ ধারা অনুসারে যদি কোন ব্যক্তি কোন ট্রেডমার্ককে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেন, কোন পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে ট্রেডমার্ক মিথ্যাভাবে ব্যবহার করেন অথবা করিবার উদ্দেশ্যে কোন যন্ত্র দখলে রাখেন অথবা মিথ্যা পরিচয় বহন করেন তা হইলে শাস্তি হলো সর্বোচ্চ দুই বছর এবং সর্বনিম্ন ছয় মাসের কারাদণ্ড সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ দুই লক্ষ এবং সর্বনিম্ন পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ সংঘটিত হইলে সর্বোচ্চ তিন বছর এবং সর্বনিম্ন এক বছর কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ তিন লক্ষ টাকা এবং সর্বনিম্ন পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডেরও বিধান রয়েছে।
দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ৪৮৬ ও ৪৮৭ ধারা এবং ট্রেডমার্ক আইন, ২০০৯-এর ৭৪ ধারা অনুসারে মিথ্যা মার্ক বা বর্ণনা যুক্ত পণ্য বিক্রি করা, এক ধরনের পণ্যের মোড়কে অন্য ধরনের পণ্য প্যাকেট করা দণ্ডনীয় অপরাধ। অপরাধ একই হলেও শাস্তির ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে। ট্রেডমার্ক আইনে প্রথমবার অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ২ বছর এবং সর্বনিম্ন ৬ মাসের কারাদণ্ড সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের ব্যবস্থা রয়েছে কিন্তু দণ্ডবিধিতে ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
ট্রেডমার্ক আইন ২০০৯ এর অপর ফৌজদারি প্রকৃতির অপরাধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ৭৬,৭৭ এবং ৭৮ এর অধীনে সংঘটিত অপরাধ। এইসব ধারার অপরাধ, যেমন অনিবন্ধিত ট্রেডমার্ককে নিবন্ধিত বলে প্রচার করা, নিবন্ধন বইতে মিথ্যা তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা বা করার চেষ্টা ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিবন্ধক বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট অপরাধ আমলে নিতে পারবেন।
ট্রেডমার্কের মেয়াদ:
‘ট্রেডমার্ক আইন ২০০৯ এর আওতায় বাংলাদেশে প্রথম ৭ বছর এর জন্য ট্রেডমার্ক রেজিষ্ট্রেশন দেয়া হয়। পরবর্তীতে ১০ বছর করে অনির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত ট্রেডমার্ক রেজিষ্ট্রেশন নবায়ন করা যায়।
মামলা দায়েরের সময়সীমাঃ-
ট্রেডমার্ক আইনের ৮৬ ধারার বিধান অনুসারে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার ৩ বছর অথবা বাদী কর্তৃক তথ্য উদঘাটিত হইবার অনধিক দুই বছরের মধ্যে (যা আগে ঘটে) মামলা দায়ের করতে হবে। দণ্ডবিধির ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান প্রযোজ্য।
এডভোকেট এম টি উল্যাহ
০১৭৩৩৫৯৪২৭০
[email protected]
©somewhere in net ltd.