![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী। কর্মস্থল- হাইকোর্ট।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah
অন্যান্য ফৌজদারি অপরাধে যেমন সংবাদদাতা নিজে বাদী হয়ে আদালতে মামলা করতে পারে তেমনি দুদকের অপরাধে সরাসরি আদালতে মামলা করা যায় কিনা? যেমন, কেউ ঘুষ খেলে বা টাকা আত্মসাৎ করলে আপসন বাদী হয়ে সরাসরি আদালতে মামলা করতে পারেন। তো স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, আপনার জানাশোনা কেউ ভয়াবহ দুর্নীতি করেছে এবং তার স্বপক্ষে প্রমাণাদি আপনার নিকট রয়েছে। সেক্ষেত্রে আপনি সরাসরি আদালতে মামলা করতে পারবেন কিনা?
এক কথায় বলতে গেলে আপনারও সে সুযোগ আইনে রয়েছে। অভাব শুধু চর্চার।
আমরা সাধারণত জানি কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে দায়ের করা যায় লিখিতভাবে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের বিষয়ে আপনি ক্ষেত্রভেদে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭ (সংশোধনী) ১৩(৩) বিধি তে বলা হয়েছে , দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের বিষয়ে আদালতে অভিযোগ দায়ের করা যাবে।
তবে, মামলা করার পূর্ব শর্ত হলো উক্ত বিষয় নিয়ে আপনাকে দুদকে লিখিত দায়ের করতে হবে। বিশ্বাসযোগ্য ঘটনা হওয়ার পরও দুদক যদি বিষয়টি গুরুত্ব না দেয় বা অভিযোগটি নিয়ে যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যাতিরেকে অগ্রসর না হয় সেক্ষে আপনি সরাসরি আদালতে দুর্নীতির মামলা দায়ের করতে পারবেন।
মামলা কোন আদালতে হবেঃ
মামলাটি করতে হবে সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে। সাধারণত জেলার ক্ষেত্রে দায়রা জজ/মহানগরের ক্ষেত্রে মহানগর দায়রা জজ সিনিয়র স্পোশাল জজ হিসেবে গণ্য হন। অন্যান্য মামলা যেমন সরাসরি এখতিয়ারাধীন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করতে হয় এটার ক্ষেত্রে সেটা না। এক্ষেত্রে সরাসরি সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলা দায়ের করতে হয়।
অভিযোগ পাওয়ার পর আদালত কি করবেনঃ
দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭ (সংশোধনী) ১৩ (৩) বিধি মোতাবেক, আদালত জিবানবন্দী গ্রহল করে সন্তুষ্ট হলে অভিযোগটি তদন্তের জন্য দুদকে নির্দেশ দিতে পারে।
এখন প্রশ্ন হলো দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ কোনগুলো?
দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের মধ্যে রয়েছে:
১. সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ বা উপঢৌকন নেওয়া।
২. বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিক যদি বেআইনিভাবে নিজ নামে কিংবা বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন।
৩. ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, সরকারি কর্মচারী এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মরত কর্মচারি যদি সরকারি অর্থ বা সম্পত্তি আত্মসাৎ কিংবা ক্ষতি সাধন করেন।
৪. সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যদি অনুমতি ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করেন।
৫. সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি কোনো অপরাধীকে শাস্তি থেকে রক্ষার চেষ্টা করেন।
৬. দুর্নীতি ও ঘুষ থেকে উদ্ভূত অর্থ পাচারসংক্রান্ত অপরাধ।
৭. ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, সরকারি কর্মচারী এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর প্রতারণা জাল-জালিয়াতি ইত্যাদি কাজ।
৮। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও জনপ্রতিনিধি বা যে কোন ব্যক্তি অবৈধভাবে সম্পত্তি অর্জন করলে কিংবা অর্জিত সম্পত্তি গোপন রাখলে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনায়ন করা যাবে।
অতএব, কোন দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তা দুদকে অভিযোগ দায়ের করার পর সন্তুষ্ট না হলে আদালতে মামলা দায়ের করা যায়। আইন না জানার কারণে এবং চর্চা না থাকার কারণে এমনটি করতে দেখা যায় না।
-মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
০১৭৩৩৫৯৪২৭০
* আইন বিষয়ক উপন্যাস ‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’ ‘নিরু’ এবং ‘গায়েবি শৃঙ্খল’ এর লেখক। ( এপার বাংলায় একমাত্র আইন বিষয়ক উপন্যাসিক)
©somewhere in net ltd.