![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মূলঃ রাবিয়া ফাহমা দাউদ
(ইংরেজী থেকে অনুদিত )
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
হিংসা বা ঈর্ষা হলো এমন একটি অনুভুতি, যা জীবনের কোনো না কোনো সময় আমরা সবাই এর ভেতর দিয়ে যায়। এটা হতে পারে প্রতিবেশীর নতুন গাড়ীর জন্য, পাশের বাড়ীর ভাবীর নতুন শাড়ীটির জন্য, হতে পারে সহকর্মীর প্রমোশন দেখে, স্কুলে কোনো সহপাঠির ফলাফল দেখে, হতে পারে ব্লগে কোনো ব্লগারের অসম্ভব জনপ্রিয়তা দেখ। এমন কি কারো জ্ঞানের গভীরতা দেখেও মানুষ ঈর্ষান্বিত হতে পারে। এটা একটি নেতিবাচক আবেগ যা আমাদের হৃদয়ে জাগ্রত হয়, যখন দেখি অন্য কারো এমন কোনো জিনিসের প্রাপ্তি ঘটেছে, যা আমরা নিজেরা কামণা করি, কিন্তু পাইনি। এটা একটি জঘন্য স্বভাব যা নিম্ন বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছেঃ
“ আবু হোরায়রা রাদিআল্লাহুআনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা হিংসা ত্যাগ কর, কেননা হিংসা নেক কাজকে সেরূপ খেয়ে ফেলে যেরূপ আগুন কাঠকে খায়”।
( সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং- ৪৮২৫ বাংলাদেশ তাজ কোম্পানি) এই হাদীস টিকে ইবনে হাজার ‘হাসান’ বলেছেন।
এখানে ঈর্ষা বা হিংসা জয়ের ৮ টি উপায় বর্ণিত হলোঃ
১। আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করুনঃ
যে ঈর্ষার উত্তাপ আপনি অনুভব করেন, তা শয়তান ব্যাতিত অন্য কারো দ্বারা প্রজ্বলিত নয়। এই জন্যই আল্লাহ আমাদের আল-কুরানুল কারীমের শেষ সুরাতে তাঁর কাছে আশ্রয় নেয়ার নির্দেশ দিচ্ছেনঃ
الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ (৫
যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে
مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ (৬
জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।
(সুরা আন-নাসঃ আয়াত ৫-৬ )
পরবর্তী সময়ে যদি এরূপ অনুভুতি জাগ্রত হওয়ার লক্ষণ পাওয়া যায়, তৎক্ষণাৎ এই ছোট ও শক্তিশালী অস্ত্রের প্রয়োগ করুন, বলুন, أعوذ بالله من الشيطان الرجيم (আউযবিল্লাহিমিনাশ শায়তোয়ানির রাজিম – আমি অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি).
২। ঈর্ষার বিরূদ্ধে বিদ্রোহ করুনঃ
এই ধাপটি আসলে আগের ধাপেরই সম্প্রসারণ। এখানে আমরা শুধু শয়তানের কু-মন্ত্রণা কে ফিরিয়ে দেবার জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করি তাই নয়, বরং সচেতন ভাবে শয়তান এবং নিজেদের নফস কে তাদের সাজানো খেলায় পরাজিত করারও চেষ্টা করি।
এটা আমাদের রক্ষণাত্মক থেকে আক্রমণাত্মক কৌশলে নিয়ে যায়!
সুতরাং আপনি যদি কখনো কোনো মানুষের প্রতি ঈর্ষান্বিত হন, নিজেকে বিরত রাখুন এবং অন্যের প্রতি খারাপ ধারণা পোষন করার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করুন। নিজেকে ছাড়িয়ে যান, এবং অপরের সম্পর্কে ভালো ধারণা করতে নিজেকে বাধ্য করুন। নিম্নলিখিত পয়েন্ট গুলি এই ধাপের ভালো উদাহরণ।
৩। প্রার্থনা করুনঃ
• নিজের জন্য – আপনার জীবনে কোনো কিছুর ঘাটতি আছে , এটা সার্বক্ষণিক ভাবে চিন্তা করার পরিবর্তে এটার ব্যাপারে কিছু করুন। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে, সবচেয়ে ভালো পন্থা হলো তাঁকে বলা, যিনি বাধ্য করেন ( আল-জব্বার), এবং তাঁর কাছে চাওয়া, যিনি প্রয়োজন মিটান ( আর-রাজ্জাক) এবং যিনি দান করেন ( আল-ওয়াহাব) তার কাছে কল্যাণ প্রার্থণা করুন। এই কাজ গুলো নিশ্চিত ভাবেই ফলাফল বয়ে আনবে। যেমন আল্লাহ ওয়াদা করেছেন,
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُواْ لِي وَلْيُؤْمِنُواْ بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ
আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে।
(সুরা বাকারাঃ আয়াত-১৮৬)
• অপরের জন্য –যখন কোন ঈর্ষান্বিত ব্যাক্তি খালেস ভাবে, যার প্রতি ঈর্ষা পোষন করা হয়, তার জন্য দোয়া করে, এটা উভয়ের মধ্যে সকল শত্রুতা দুর করে দেয়। এটা ঈর্ষা দুর করণে সবচেয়ে কার্যকরী পন্থা, এটা প্রার্থনা কারীর জন্য দুই ধরনের পুরস্কার এর কারন হয়ঃ
শয়তান এবং নিজের নফসের বিরূদ্ধে যাওয়ার জন্য পুরস্কার।
যে জিনিসের জন্য সে ঈর্ষান্বিত হয়েছে, তার জন্য যদি এর চেয়ে ভালো কিছু না হলেও, নুন্যপক্ষে সেই জিনিসের জন্য ফেরেস্তারা আল্লাহর নিকট দোয়া করে।
আবু দারদা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ কোনো মুসলমান বান্দা তার ভাই এর অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া করলে একজন ফেরেস্তা তার জবাবে বলে, “ আর তোমার জন্যও অনুরূপ”।
(সহীহ মুসলিমঃ হাদীস নং-৬৬৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদীস নং- ৬৬৮০, বাড কম্প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন্স)
৪। হাত মিলান ও সালাম বিনিময় করুনঃ
অন্যের সাথে হাত মিলানো ও সালাম বিনিময় করলে, অন্তরের মধ্যে জমে থাকা শত্রুতা দুর হয়, যেমন রসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ যখন দুইজন মুসলমান মিলিত হওয়ার পর মুসাফাহা ( হাত মিলানো) করে, তখন তারা বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে তাদের সব গুণাহ মাফ করে দেয়া হয়”। ( সুনানে আবু দাউদঃ হাদীস নং-৫১২৪, বাংলাদেশ তাজ কোম্পানী- হাদীসটিকে নাসিরুদ্দীন আলবানি সহীহ বলেছেন)
৫। নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করা বন্ধ করুনঃ
আল্লাহ কুরান মজীদে বলেছেনঃ
وَلاَ تَتَمَنَّوْاْ مَا فَضَّلَ اللّهُ بِهِ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ لِّلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِّمَّا اكْتَسَبُواْ وَلِلنِّسَاء نَصِيبٌ مِّمَّا اكْتَسَبْنَ وَاسْأَلُواْ اللّهَ مِن فَضْلِهِ إِنَّ اللّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا
আর তোমরা আকাঙ্ক্ষা করো না এমন সব বিষয়ে যাতে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের একের উপর অপরের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার অংশ এবং নারী যা অর্জন করে সেটা তার অংশ। আর আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত।
(সুরা নিসাঃ আয়াত -৩২)
৬। নিজের প্রাপ্ত অনুগ্রহ ও কল্যাণ কে গণনা করুনঃ
নিজের উপর প্রাপ্ত অনুগ্রহ ও কল্যাণ নিয়ে কৃতজ্ঞ থাকলে, তা শুধু নিজের অন্তরেই পরিতৃপ্তি আনেনা, আল্লাহ কল্যাণের পরিমানও বৃদ্ধি করেন! আল্লাহ বলেনঃ
وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِن شَكَرْتُمْ لأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ
যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর
(সুরা ইব্রাহীমঃ আয়াত-৭)
এটি একটি সুন্দর চক্র।
৭। যতটুকু সম্ভব সর্বোত্তম হওয়ার চেষ্টা করুনঃ
শুধুমাত্র একটি ব্যাপার যা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তাহলো আমাদের আমল বা কর্ম ও আচরণ। আমরা অন্যের কর্ম বা তকদির কে নিয়ন্ত্রণ করিনা, কিন্তু আমাদের নিজেদের প্রচেষ্টাকে সাধ্যের সর্বোচ্চ চুড়ায় নিয়ে যেতে পারি। সুতরাং আমরা নিজেদের দিকে মনযোগ নিবদ্ধ করি, জান্নাতকে আমাদের চুড়ান্ত লক্ষ্যে পরিণত করি, এ কাজে সর্বোচ্চ আত্ম-নিয়োগের মাঝেই পরিতৃপ্তি অন্বেষন করি।
৮। আল্লাহ এবং আল্লাহর পরিকল্পণার উপর ভরসা করুনঃ
সর্বোপরি, সর্বদা আল্লাহ সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষন করুন। তিনি জানেন, আপনাকে কখন কি দিতে হবে এবং একমাত্র তিনিই জানেন আপনার জন্য কোনটি সর্বোত্তমঃ
كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْ وَعَسَى أَن تَكْرَهُواْ شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ وَعَسَى أَن تُحِبُّواْ شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ وَاللّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ
তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না।
(সুরা বাকারাঃ আয়াত-২১৬)
SIMILAR POSTS YOU MAY LIKE TO READ:
দশটি সময় যখন দু’আ কবুল হয়
ইবাদতে পরিতৃপ্তি ও মিষ্ট স্বাদ
সালাত কি জীবনে পরিবর্তন আনে?
আমাদের দশটি বিনষ্ট জিনিস
জুমুআহঃ সপ্তাহের সেরা দিন
মদীনায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর দেয়া প্রথম খুতবা
১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৫৭
তট রেখা বলেছেন: নিশ্চয়ই সালাত মানুষকে অশ্লিল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।
২| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১০
লা-তাহ্যান বলেছেন: "( সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং- ৪৮২৫ বাংলাদেশ তাজ কোম্পানি) এই হাদীস টিকে ইবনে হাজার ‘হাসান’ বলেছেন।" এই কথাটা ঠিক বুঝলাম না।
চমৎকার উপদেশবাণী শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ। প্রিয়তে রাখলাম।
১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৪
তট রেখা বলেছেন: এই হাদীস টি বাংলাদেশ তাজ কোম্পানীর প্রকাশিত সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে স্থান পেয়েছে, হাদীসের ক্রম সংখ্যা ৪৮২৫ এবং প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনে হাজার আল আসকালানি হাদীসটিকে 'হাসান' হাদীসের মর্যাদা দিয়েছেন, যার অর্থ প্রহণযোগ্য। জাজাকাল্লাহ খায়রান।
৩| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৬
মোঃ আমানউল্লাহ বলেছেন: জাজাকাল্লাহ
১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৫
তট রেখা বলেছেন: ফা জাজাকা ওয়া বারাকাল্লাহু ফিক।
৪| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:১৪
প্রামানিক বলেছেন: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা হিংসা ত্যাগ কর, কেননা হিংসা নেক কাজকে সেরূপ খেয়ে ফেলে যেরূপ আগুন কাঠকে খায়”।
উত্তম কথা। ধন্যবাদ
১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:১৬
তট রেখা বলেছেন: জাজাকাল্লাহ খায়রান।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৪৮
আশরাফুল ইসলাম মাসুম বলেছেন: ধন্যবাদ,স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য!কিছুক্ষণ আগে নিজেরই একটা ঈর্ষার অনুভূতি হচ্ছিলো!নামাজ পড়ার পরই অনেকটা উপসম হয়ে গেলো!নামাজও এক্ষেত্রে খুবই উপকারী!
Click This Link