নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার বয়স বাড়ে, আমি বাড়ি না

মোহাম্মদ তৌফিকুর রহমান

মোহাম্মদ তৌফিকুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সমাপ্তি

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:৫৩

সুচরিতা আজ ক্লাসে যাবেনা। বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করছে না। মা কেন যে জানালাটা খুলে দিয়ে গেলো। চুল দিয়ে চোখ দুটো ঢাকলো সে। এই চুল দেখেই নাকি শোভন ওর প্রেমে পরেছিল।
আচ্ছা চুল দেখে প্রেমে পরার কী আছে? চুলই তো!! পাগল একটা।

ল্যাবে টেস্ট করার সময় যেদিন ওর হাত কেটে গিয়েছিলো শোভন দৌড়ে চলে এসেছিলো ওর কাছে। সবার সামনেই রুমাল বেঁধে দিলো ওর আংগুলে। লজ্বায় চোখ তুলে তাকাতে পারছিলো না সুচরিতা। বান্ধবীদের মুচকি হাঁসির কথা মনে পড়লে আজো লজ্বায় লাল হয়ে যায় ও।

এক সন্ধ্যায় শোভন ওর হাতে সাদা জবা দিয়ে প্রথম বলেছিল ভালোবাসি কিন্ত ১০৮ টা নীলপদ্ম এনে দিতে পারবোনা। গোলাপ আনোনি কেন? প্রিয় মানুষকে তো নিজের প্রিয় জিনিসই দিতে হয়।

মোবাইল হাতে নিল সুচরিতা। শোভনের এসএমএস চলে এসেছে। Good Morning, Princess . গত দুই বছর ধরে ওর প্রায় প্রতিটা দিন শুরু হয়েছে শোভনের এসএমএস দিয়ে। ছেলেটা ভোরে উঠে আবার ঘুমায়ও অনেক রাতে। কীভাবে যে পারে!
আজ ওরা দুজন সারাটা দিন ঘুরে বেরাবে। আজ শোভনের জন্মদিন। সুচরিতা ওকে জিজ্ঞেস করেছিল কী চাও জন্মদিনে? তোমার জীবন থেকে একটা দিন। শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছে ও। পড়াশোনায় প্রচন্ড সিরিয়াস সুচরিতা কখনো ক্লাস মিস দেয় না।

**********************************************

নিউমার্কেটের দুই নম্বর গেটের সামনে নীল পাঞ্জাবী পড়ে দাঁড়িয়ে আছে এক তরুণ। মাথায় কালো ক্যাপ। হাতে সাদা জবা। গোলাপ দেয়াটা আর শিখতে পারলোনা ও।

"কেন ভালোবাসো আমাকে?" কালরাতে অনেকক্ষণ ফোনে কথা হয়েছিল সুচরিতার সাথে।
"জানি না।" শোভন সত্যি জানে না।
"আমার চেয়ে কতো সুন্দর গুণবতী মেয়ে আছে। অবনী কত পছন্দ করতো তোমাকে। ওর সামনে আমি তো কিছুই না। আমি দেখতে শ্যামলা।ছেলেরাতো শুধু ফর্সা খোঁজে। আমার চেয়ে বেটার কাউকে তুমি সহজেই পেতে।"
"সুচি,তোমার চেয়ে বেটার কাউকে তো আমি চাইনি। আমি তোমাকেই চেয়েছি ।"

মাস দুই আগে ব্লাড ক্যান্সার ধরা পরেছে শোভনের। ডাক্তার বলেছে আর ছয় মাস। মাথার কালো ক্যাপের আড়ালে ঢাকা পড়েছে সর্বগ্রাসী কেমোথেরাপির ধ্বংসযজ্ঞ। শোভন জানে আজ ওর জীবনের শেষ জন্মদিন। অনেক কষ্ট করে এতদূর এসেছে ও। কথা ছিল সারাদিন ঘুরবে। ও জানে ও পারবে না। কিছুক্ষণ পরই ক্লান্ত হয়ে যাবে। অথচ একটা সময় ছিল সুচরিতার সাথে সারাদিন ঘুরে বেরাতো ও। একটুও ক্লান্ত হতো না। The worst thing about life is that it ends and he is facing a premature ending.

অনেক হিসাবের খাতা অসম্পুর্ণ রেখেই চলে যেতে হবে ওকে। থিসিস পেপারটা আর কমপ্লিট করা হল না ওর। রাতুল সেই যে দুহাজার টাকা ধার নিয়ে ছিল সেটাও আর ফেরৎ নেয়া হল না। খেলার জন্য কত পাগলামিই না করেছে। মেসি রোনালদোর গোলের হিসেব আর নেই ওর কাছে।কথা ছিল চাকরীর প্রথম বেতন দিয়ে মাকে শাড়ি আর বাবাকে শীতের চাদর কিনে দিবে। ওর ব্যাচের ক্লাস প্রায় শেষ।বন্ধুরা আজ চাকরীর জন্য সিভি তৈরি করছে। ওর আর সিভি লাগবে না।

সুচরিতাকে নিয়ে লেখা শেষ কবিতাটার ফিনিশিং মাথায় আসছিলো না দেখে ফেলে রেখেছিল অনেক দিন ধরে। ক্যান্সারের রিপোর্ট আসার পর কবিতার খাতা আর খুলেও দেখেনি। একসময় কবিতার ছন্দ মেলানোর জন্য কত নির্ঘুম রাত কেটেছে ওর চায়ের কাপে। ছন্দ মেলা না মেলায় আর কিছু যায় আসে না।

শোভন জানে সুচরিতা আর কাউকে কোনদিন ভালোবাসতে পারবে না। শোভনের স্মৃতি নিয়েই ওকে বেঁচে থাকতে হবে সারাজীবন। কবিতার খাতাটা সুচরিতার হাতে তুলে দিবে ও।আজ হঠাৎ মনে হল সুচরিতা কে নিয়ে লেখা ওর শেষ কবিতাটা শেষ করা দরকার। সুচরিতার স্মৃতিতে কোন অপূর্ণতা থাকুক ও চায়না। শুধু শেষ লাইনটা মাথায় আসছে না।

নীল শাড়ি পড়া এক তরুণী এগিয়ে আসছে ওর দিকে। কপালে নীল টিপ। শোভনের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে। একদিন আর হয়তো সুচরিতাকে চোখের সামনে দেখতে পাবেনা ও। কবিতার শেষ লাইন চলে এসেছে ওর মাথায়।

"জীবন এতো ছোট কেন?"

(তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় এর 'কবি' উপন্যাস থেকে শেষ লাইন সংগৃহীত)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.